ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি ব্রহ্ম চতুষ্পাৎ এবং ব্রহ্ম যখন নিষ্কল, নিরংশ, তখন বাস্তবিকপক্ষে তাহারও 'পাদ' ব্যবহার আরোপ মাত্র, সত্য নহে। ব্রহ্ম চতুষ্পাৎ কি প্রকারে?-অথর্ববেদীয়া মাণ্ডুক্য শ্রুতি বলিতেছে-
জাগরিতস্থানো বহিঃপ্রজ্ঞঃ সপ্তাঙ্গ একোনবিংশতিমুখঃ স্থূল
ভুগ্বৈশ্বানরঃ প্রথমঃ পাদঃ ।।-(মাণ্ডুক্য উপনিষৎ- ৩)
ভগবৎপাদ্ শ্রী শঙ্করাচার্য্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- জাগরণ যাহার স্থান অর্থাৎ কার্য্যভূমি তিনি জাগরিত স্থান; স্বীয় আত্মাতিরিক্ত বিষয়ে যাঁহার প্রজ্ঞা বা বুদ্ধিবৃত্তি, তিনিই বহিঃপ্রজ্ঞ। অভিপ্রায় এই যে, তাঁহার অবিদ্যাজনিত জ্ঞান বাহ্যবিষয়াবলম্বীর ন্যায় প্রতিভাত হয়। সেইরূপ সাতটি যাঁহার অঙ্গ, অর্থাৎ 'সেই এই বৈশ্বানর নামক আত্মার সম্বন্ধে এই সুতেজা (দ্যুলোকই) শীর্ষস্বরূপ, বিশ্বরূপ (সূর্য্য) তাঁহার চক্ষু, পৃথগ্ বর্ত্মাত্মা (বায়ু) তাঁহার প্রাণ, বহুল (আকাশ) তাঁহার দেহ, রয়ি (অন্ন বা জল) তাঁহার বস্তি (মূত্রাশয়) এবং পৃথিবীই তাঁহার পাদ', এই শ্রুতিতেই কল্পিত অগ্নিহোত্র যজ্ঞের অঙ্গরূপে অগ্নিকে মুখরূপ আহবনীয় (হোমকুণ্ড) বলা হইয়াছে, উক্তপ্রকার সাতটি যাঁহার অঙ্গ, তিনি 'সপ্তাঙ্গ'।
সেইরূপ একোনবিংশতিটি (ঊনিশটি) যাঁহার মুখ, অর্থাৎ পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও পঞ্চ কর্ম্মেন্দ্রিয় মিলাইয়া দশ, প্রাণাদি পঞ্চ বায়ু, মন,বুদ্ধি, অহঙ্কার ও চিত্ত, এই (ঊনিশটি) যাঁহার মুখ-মুখের ন্যায় অর্থাৎ উপলব্ধির উপায়। এবংবিধ বিশেষণ বিশিষ্ট বৈশ্বানর উক্ত দ্বারসমূহ দ্বারা স্থুল বিষয়সমূহ ভোগ করেন বলিয়া 'স্থূলভূক্'। সমস্ত নরগণের অনেক প্রকার সুখাদি সম্পাদন করেন বলিয়া 'বিশ্বানর' অথবা সর্ব্বনরস্বরূপ বলিয়া তিনি বিশ্বানর; বিশ্বানরই 'বৈশ্বানর'। সমস্ত দেহ হইতে অপৃথক বা অভিন্ন বলিয়া তিনি প্রথম পাদ। পরবর্তী পাদত্রয়ের পূর্বেই ইঁহাকে জানিতে হয়, এইজন্য ইঁহার প্রাথমিকত্ব।
'অয়ম্ আত্মা' এই শ্রুতি প্রতিপাদিত প্রত্যক্ আত্মার পাদ-চতুষ্টয় প্রতিপান করাই এখানে প্রস্তুত বা বর্ণনীয় বিষয়, তবে দ্যুলোক প্রভৃতিকে মূর্দ্ধপ্রভৃতি অঙ্গরূপে বর্ণনা করা হইতেছে কেন? না-এ দোষ হয় না; কারণ আধিদৈবিকের সহিত সমস্ত জগৎপ্রপঞ্চকে এই আত্মা দ্বারা চতুষ্পাদরূপে বর্ণনা করাই এখানে বিবক্ষিত। এইরূপ হইলেই সমস্ত জগৎপ্রপঞ্চের নিবৃত্তিতে অদ্বৈতভাব সিদ্ধ হইতে পারে এবং সর্ব্বভূতস্থিত আত্মার একত্ব এবং আত্মাতেও সর্ব্বভূতের অবস্থিতি সাক্ষাৎকৃত হইতে পারে।...........
..............এই বিষয়ে ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করের ভাষ্য অতিবৃহৎ। এখানে মর্মার্থটুকু তুলে ধরা হইল মাত্র।
No comments:
Post a Comment