অথর্ববেদীয়া মাণ্ডুক্য শ্রুতিতে আত্মার দ্বিতীয় পাদ কথিত হইতেছে—স্বপ্নদর্শন ইহার স্থান, অন্তরে (অবাহ্য বিষয়ে) ইহার জ্ঞান, সুতেজঃপ্রভৃতি পূর্বোক্ত সাতটি ইহার অঙ্গ, এবং পূর্ব্বোক্ত জ্ঞানেন্দ্রিয়াদি একশটি ইহার মুখ, কেবল সংস্কারোপস্থাপিত বিষয়ভোগী এই তৈজস (তেজোময় অন্তঃকরণস্বামী [আত্মার] দ্বিতীয় পাদ।।
স্বপ্নস্থানোঽন্তঃ প্রজ্ঞাঃ সপ্তাঙ্গ একোনবিংশতিমুখঃ
প্রবিবিক্তভুক্তৈজসো দ্বিতীয়ঃ পাদঃ।।-(মাণ্ডুক্য উপনিষৎ-৪)
'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- স্বপ্নই এই তৈজসের স্থান, এইজন্য ইহাকে স্বপ্নস্থান বলা হইয়া থাকে; অনেকবিধ সাধন-সাধ্য জাগ্রৎকালীন জ্ঞান কেবল মন ব্যাপার হইলেও, যেন বাহ্য বিষয়-গত হইয়াই প্রতীত হইয়া মনেতে তাদৃশ সংস্কার সমুৎপাদন করে। চিত্রিত বস্ত্রের ন্যায় তথাবিধ সংস্কার সম্পন্ন সেই মনই অবিদ্যা, বাসনা ও তৎকৃত কর্ম্ম-প্রেরিত হইয়া বাহ্য সাধননিরপেক্ষভাবে জাগ্রৎ অবস্থার ন্যায় প্রতিভাত হইয়া থাকে। অন্যত্রও ইহা উক্ত আছে-
'সর্ব্বাবৎ (সর্ব্বপ্রকার সাধন সম্পন্ন) এই জাগরিত অবস্থার বাসনা গ্রহণ করিয়া স্বপ্ন দর্শন করে'-ইত্যাদি। সেইরূপ 'অপরাপর ইন্দ্রিয়াপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ স্বভাব মনে (স্বপ্নকালে সমস্তই) একীভূত হইয়া থাকে।' এইরূপ ভূমিকার পর আথর্ব্বণ শ্রুতিতে বলা হইয়াছে যে-'এই স্বপ্নাবস্থায় এই স্বপ্রকাশ দ্রষ্টা মহিমা-মনের বিভূতি অনুভব করিয়া থাকে।'
মন স্বভাবতঃই ইন্দ্রিয়াপেক্ষা অন্তঃস্থ, স্বপ্নাবস্থায় তাঁহার স্থান সেই মানস-বাসনাময় হয়, এইকারণে তিনি অন্তঃপ্রজ্ঞ; আর শব্দাদি বিষয়বিহীন-কেবলই প্রকাশময় প্রজ্ঞার (জ্ঞানের) বিষয়ী হয় বলিয়া, তাহার নাম তৈজস। পূর্বোক্ত 'বিশ্ব' সংজ্ঞক প্রথম পাদের শব্দাদি বাহ্য বিষয়ে ভোগ বিদ্যমান থাকে, এই জন্য স্থূল প্রজ্ঞা তাহার ভোজ্য; কিন্তু এই তৈজসের কেবল বাসনাময় প্রজ্ঞাই একমাত্র ভোগ্য, এইজন্য ইহার ভোগও প্রবিবিক্ত (সূক্ষ্ম)। অপর সপ্তাঙ্গ একোনবিংশতিমুখাদি বিষয়ে ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য্য পূর্বশ্রুতিতে ব্যাখ্যা করিয়াছেন।
এই তৈজসই আত্মার দ্বিতীয় পাদ।.................
No comments:
Post a Comment