Wednesday, 16 September 2020

ব্রহ্মের পাদ-চতুষ্টয় নিরূপণঃ-



অথর্ববেদীয় মাণ্ডুক্য উপনিষদে ব্রহ্মের সর্ব্বাত্মকতা, আত্মস্বরূপতা নিরূপণ করার পর ব্রহ্মের পাদ-চতুষ্টয় নিরূপণ করা হইয়াছে-

....সোঽয়মাত্মা চতুষ্পাৎ ।। -(মাণ্ডুক্য উপনিষৎ-২)

ভগবৎপাদ্ শ্রী শঙ্করাচার্য্য প্রণীত 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- পরাপর ব্রহ্মভাবে অবস্থিত ওঙ্কার শব্দার্থ সেই এই আত্মা কার্যাপণের (কাহণের ন্যায়) চতুষ্পাৎ (চারি অংশ বিশিষ্ট)। 'বিশ্ব' প্রভৃতি পাদত্রয়ের মধ্যে পূর্ব্ব পূর্ব্ব পাদের বিলোপ সাধন দ্বারা (অসত্যতা প্রতিপাদন দ্বারা) তুরীয় ব্রহ্মের উপলব্ধি হইয়া থাকে; এইজন্য 'পাদ' শব্দটি করণবাচ্যে নিষ্পন্ন করিতে হয়; কিন্তু 'পাদ' শব্দটি যখন তুরীয়ের বোধক হয় তখন 'যাহা প্রাপ্ত হওয়া যায়' এই অর্থে উহা কর্ম্মবাচ্যে নিষ্পন্ন করিতে হয়।

টীকাঃ- ষোল পণে এক কাহণ কড়ি হয়। তাহার প্রত্যেক চারি পণকে একপাদ বলিয়া ব্যবহার করা হয়; বস্তুত ঐ কাহণ ও পাদ ব্যবহার কড়িতে আরোপিত হয় মাত্র। উহা কড়ির স্বাভাবিক ধর্ম্ম নহে। ব্রহ্ম যখন নিষ্কল, নিরংশ, তখন বাস্তবিকপক্ষে তাহারও পাদ ব্যবহার আরোপ মাত্র, সত্য নহে।

'বিশ্বাদি' পদে বিশ্ব, বৈশ্বানর, তৈজস ও প্রাজ্ঞ এই চারিটী পাদ বুঝিতে হইবে। এখানে আশঙ্খা হইয়াছিল যে, 'পদ্যতে যেন (যাহা দ্বারা পাওয়া যায়), এইরূপ 'করণ' অর্থে যদি 'পাদ' শব্দ নিষ্পন্ন করা হয়, তাহা হইলে 'পাদ' শব্দে ব্রহ্মপ্রাপ্তির সাধন (করণ) বিশ্বাদিকে মাত্র বুঝাইতে পারে; কিন্তু তুরীয় ব্রহ্মকে আর 'পাদ' বলা যাইতে পারে না। কারণ তুরীয় ব্রহ্ম স্বয়ং জ্ঞেয় স্বরূপই বটে, জ্ঞানসাধন নহে। আবার 'পাদ' শব্দটি যদি 'পদ্যতে'যঃ, স পাদঃ (যাহা প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহাই পাদ), এইরূপ কর্ম্মবাচ্যে নিষ্পন্ন করা হয়, তাহা হইলে 'পাদ' শব্দে কেবল তুরীয়কেই বুঝাইতে পারে, বিশ্ব তৈজসাদিকে আর বুঝাইতে পারে না; কারণ বিশ্বাদিরা কেবলই জ্ঞান সাধন, কিন্তু জ্ঞেয় নহে। তাই ভাষ্যকার ভগবান শঙ্কর বলিলেন যে 'পাদ' শব্দটি বিশ্বাদি অর্থে করণসাধন, আর তুরীয় অর্থে কর্ম্ম সাধন।


No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...