Tuesday, 15 September 2020

অদ্বৈতই পরমার্থঃ-


অথর্ববেদীয় মাণ্ডুক্য উপনিষৎ-৭ এর উপর পরমগুরু আচার্য্য গৌড়পাদ্ বিরচিত মাণ্ডুক্যকারিকায় বর্ণিত আছে-

প্রপঞ্চো যদি বিদ্যেত নিবর্তেত ন সংশয়ঃ ।

মায়ামাত্রমিদং দ্বৈতমদ্বৈতং পরমার্থতঃ ॥ ১৭॥

ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য প্রণীত 'শাঙ্করভাষ্য' অনুবাদঃ- প্রপঞ্চ নিবৃত্তিতে যদি প্রতিবোধ হয়, তবে প্রপঞ্চ নিবৃত্তি না হইলে অদ্বৈত হয় কি রূপে? উত্তর বলা হইতেছে- নিশ্চয় এই আপত্তি হইতে পারিত, প্রপঞ্চ যদি বিদ্যমান থাকিত অর্থাৎ সত্য হইত; বাস্তবিক পক্ষে ইহা নাই-রজ্জুতে কল্পিত সর্পের ন্যায় ইহা অসৎ। আর যদি বিদ্যমানই থাকিত, তাহা হইলে নিশ্চয় নিবৃত্ত হইত, ইহাতেও সংশয় নাই।

দেখ ভ্রমবশতঃ রজ্জুতে যে সর্প কল্পিত হয়, সেই সর্প কখনই সেখানে সত্তা লাভ করিয়া বিবেকজ্ঞানের সাহায্যে নিবৃত্ত হয় না,; এবং মায়াবী ঐন্দ্রজালিক কর্তৃক প্রযুক্ত মায়া (ভেল্কী) প্রথমে সত্তা লাভ করিয়া যে, দর্শকবৃন্দের চক্ষুদোষ অপনীত হইলে নিবৃত্ত (অদৃশ্য) হইয়া যায় তাহা নহে।

এই প্রপঞ্চ নামক দ্বৈতও ঠিক তদ্রূপ কেবল মায়ামাত্র (অসৎ), আর উক্ত রজ্জু ও মায়াবীর ন্যায় অদ্বৈতই পরমার্থ সৎ। অভিপ্রায় এই যে প্রপঞ্চ বলিয়া কোন পদার্থ প্রবৃত্ত বা নিবৃত্ত নাই।....

স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী তাঁহার 'জ্ঞানীগুরু' শীর্ষক গ্রন্থে বলিয়াছেন-

"নানাবিধ শ্রুতিপ্রমাণে জানা যায়, অদ্বৈতই পরমার্থ এবং দ্বৈত সেই অদ্বৈতের কার্য। যখন সমাধি উপস্থিত হয় তখন দ্বৈতবুদ্ধি থাকে না। যাঁহারা দ্বৈতবাদী, তাঁহারা ভ্রান্ত; কারণ শ্রুতিতে উক্ত আছে যে 'একমেবাদ্বিতীয়ম্'-সেই পরমাত্মা এক  অদ্বিতীয়, সুতরাং অদ্বৈত বৈদিক মত সর্বথা অবিরুদ্ধ।"

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...