Thursday, 24 October 2019

প্রমাদরূপী মৃত্যুনাশের উপায়ঃ-


পরমপ্রাচীন সনাতন ঋষি সনৎ-সুজাত বলিতেছেন-
এবং মৃত্যুং জায়মানং বিদিত্বা জ্ঞানেন তিষ্ঠন্ন বিভেতি মৃত্যোঃ। বিনশ্যতে বিষয়ে তস্য মৃত্যুঃ মৃত্যোর্ষথা বিষয়ং প্রাপ্য মর্ত্যঃ।।-(শ্রীমহাভারত, উদ্যোগপর্ব, দ্বি-চত্বারিংশোহধ্যায়, সনৎ-সুজাতীয় সম্বাদ-১৬)
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- এইরূপে কামক্রোধাদি হইতে উৎপন্ন প্রমাদাখ্য মৃত্যুই সর্বানর্থের বীজ, ইহা জানিয়া ঐ কামক্রোধাদি পরিহারপূর্বক অক্রোধাদি গুণসম্পাদন সহায়ে অদ্বিতীয় ব্রহ্মত্মস্বরূপে স্থিতিলাভবশতঃ জ্ঞানী আর মৃত্যু হইতে ভয় পান না। পরমাত্মসাক্ষাৎকারবশতঃ সেই জ্ঞানীর প্রমাদরূপী মৃত্যু বিনাশ প্রাপ্ত হয়। মরণশীল জীব যে প্রকারে মৃত্যুর বিষয়সংসার অর্থাৎ কামাদি দ্বারা কবলিত হইয়া বিনষ্ট হয় জ্ঞানীরও সেইরূপ প্রমাদরূপী মৃত্যুর বিনাশ ঘটিয়া থাকে। অর্থাৎ আত্মসাক্ষাৎকার হইলে শরীরাধ্যাস বা অজ্ঞানরূপ মৃত্যু স্বতই বিনষ্ট হইয়া থাকে- ইহাই ভাবার্থ।

বলহীন ব্যক্তির কখনো আত্মজ্ঞান লাভ হয় নাঃ-


অথর্ববেদের শৌনকীয় শাখার অন্তর্গত মুণ্ডক উপনিষদে বর্ণিত আছে-
নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যো ন চ প্রমাদাত্তপসো বাপ্যলিঙ্গাৎ ৷ এতৈরুপায়ৈর্যততে যস্তু বিদ্বাংস্তস্যৈষ আত্মা বিশতে ব্রহ্মধাম ৷৷ মুণ্ডক উপনিষদ্- ৩.২.৪ ৷৷

ভগবৎপূজ্যপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- এই আত্মা বলহীন কর্তৃক অর্থাৎ আত্মাতে নিষ্ঠাজনিত বীর্যহীন তথা সামর্থ্যহীন কর্তৃক লভ্য হন না, লৌকিক পুত্র, পশু, প্রভৃতি বিষয়ে আসক্তিজনিত যে প্রমাদ সেই প্রমাদবশতও লভ্য হন না, সেইরূপ লিঙ্গরহিত তপস্যা হইতেও লভ্য হন না। এখানে তপঃ অর্থ জ্ঞান এবং লিঙ্গ অর্থ কর্ম্মসন্ন্যাস। অর্থাৎ সন্ন্যাসরহিত জ্ঞান হইতেও লভ্য হন না। কিন্তু যে বিদ্বান্ বিবেকী আত্মবিৎ এইসকল উপায় অবলম্বনে অর্থাৎ ঐ বল, অপ্রমাদ, সন্ন্যাস ও জ্ঞান সহায়ে তদ্গত হইয়া প্রযত্ন করেন সেই বিদ্বানের সূক্ষ্মশরীর ব্রহ্মধামে অর্থাৎ সত্যব্রহ্মেতে সম্যগ্ রূপে প্রবিষ্ট হয়।

Saturday, 12 October 2019

ব্রহ্মের অভেদতাতেই শাস্ত্রের তাৎপর্য্যঃ-


বিভিন্ন উপাধিতে ব্রহ্মের অভিন্নতাই শাস্ত্র তাৎপর্য্য, ঔপাধিক রূপভেদ উপাসনার জন্য। শ্রীমন্মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীতম্ উত্তর মীমাংসা বেদান্তদর্শনে বর্ণিত আছে-

'ন ভেদাদিতি চেন্ন প্রত্যেকমতদ্বচনাৎ৷৷'-ব্রহ্মসূত্র ৩.২.১২৷৷

ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ-

যেহেতু প্রত্যেক বিদ্যাতে ব্রহ্মের বিভিন্ন আকারসকল উপদিষ্ট হইতেছে, যথাঃ- 'চারিটী চরণযুক্ত ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৩।১৮।২), 'ষোলটী কলাযুক্ত ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৪।৫।২), 'বামনী প্রভৃতি লক্ষণযুক্ত ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৪।১৫।৩), 'বৈশ্বানরশব্দের দ্বারা বর্ণিত ত্রৈলোক্যশরীর ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৫।১৮।২) ইত্যাদি এই জাতীয় শ্রুতি রহিয়াছে সেইহতু ব্রহ্মের সবিশেষতাও অঙ্গীকার করিতে হবে। কিন্তু শঙ্কা হইল কথিত হইয়াছে ব্রহ্মের সবিশেষ ও নির্বিশেষ উভয়াত্মকতা সম্ভব নহে, ইত্যাদি। এই পূর্বসমাধানও বিরুদ্ধ নহে, যেহেতু ব্রহ্মের আকারভেদ উপাধিকৃত। অন্যথা উপাধিকৃত রূপভেদ স্বীকার না করিলে ব্রহ্মের ভেদবোধক অর্থাৎ বিভিন্নতাবোধক শাস্ত্র নির্বিষয় হইয়া পড়িবে, এইপ্রকার যদি বলা হয় তাহলে সিদ্ধান্ত এই যে-

তাহা নহে, ইহাই আমরা বলিতেছি। কোন হেতুবলে বলিতেছি? উত্তর হইল- যেহেতু প্রত্যেক স্থলে তদ্বচনের অর্থাৎ ভেদকথনের অভাব আছে। যেহেতু শাস্ত্র প্রত্যেকটী উপাধিভেদে ব্রহ্মের অভেদতাই অর্থাৎ অভিন্নতাই শ্রবণ করাইতেছেন, যথা-

‘যশ্চাযমস্যাং পৃথিব্যাং তেজোময়োমৃতময়ঃ পুরুষো যশ্চাযমধ্যাত্মং শারীরস্তেজোমযোমৃতময়ঃ পুরুষোযমেব স যোয়মাত্মা'-(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্-২।৫।১)

'এই পৃথিবীতে যিনি এই তেজোময় অমৃতময় পুরুষ এবং যিনি শরীরসম্বন্ধী ও শরীরে অবস্থিত তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, ইনিই তিনি, যিনি এই আত্মা' ইত্যাদি।

আর এইহেতু বিভিন্ন আকারের সহিত ব্রহ্মের সত্য সম্বন্ধ শাস্ত্রীয়, ইহা বলিতে পারা যায় না, যেহেতু ঔপাধিক ভেদ অর্থাৎ বিভিন্নতা উপাসনার জন্য, এবং যেহেতু ব্রহ্মের অভেদতাতেই শাস্ত্রের তাৎপর্য্য।

 

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...