বিভিন্ন উপাধিতে ব্রহ্মের অভিন্নতাই শাস্ত্র তাৎপর্য্য, ঔপাধিক রূপভেদ উপাসনার জন্য। শ্রীমন্মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীতম্ উত্তর মীমাংসা বেদান্তদর্শনে বর্ণিত আছে-
'ন ভেদাদিতি চেন্ন প্রত্যেকমতদ্বচনাৎ৷৷'-ব্রহ্মসূত্র ৩.২.১২৷৷
ভগবৎপাদ্
শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ-
যেহেতু প্রত্যেক বিদ্যাতে ব্রহ্মের বিভিন্ন আকারসকল উপদিষ্ট হইতেছে, যথাঃ- 'চারিটী চরণযুক্ত ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৩।১৮।২), 'ষোলটী কলাযুক্ত ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৪।৫।২), 'বামনী প্রভৃতি লক্ষণযুক্ত ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৪।১৫।৩), 'বৈশ্বানরশব্দের দ্বারা বর্ণিত ত্রৈলোক্যশরীর ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৫।১৮।২) ইত্যাদি এই জাতীয় শ্রুতি রহিয়াছে সেইহতু ব্রহ্মের সবিশেষতাও অঙ্গীকার করিতে হবে। কিন্তু শঙ্কা হইল কথিত হইয়াছে ব্রহ্মের সবিশেষ ও নির্বিশেষ উভয়াত্মকতা সম্ভব নহে, ইত্যাদি। এই পূর্বসমাধানও বিরুদ্ধ নহে, যেহেতু ব্রহ্মের আকারভেদ উপাধিকৃত। অন্যথা উপাধিকৃত রূপভেদ স্বীকার না করিলে ব্রহ্মের ভেদবোধক অর্থাৎ বিভিন্নতাবোধক শাস্ত্র নির্বিষয় হইয়া পড়িবে, এইপ্রকার যদি বলা হয় তাহলে সিদ্ধান্ত এই যে-
তাহা নহে, ইহাই আমরা বলিতেছি। কোন হেতুবলে বলিতেছি? উত্তর হইল- যেহেতু প্রত্যেক স্থলে তদ্বচনের অর্থাৎ ভেদকথনের অভাব আছে। যেহেতু শাস্ত্র প্রত্যেকটী উপাধিভেদে ব্রহ্মের অভেদতাই অর্থাৎ অভিন্নতাই শ্রবণ করাইতেছেন, যথা-
‘যশ্চাযমস্যাং পৃথিব্যাং তেজোময়োমৃতময়ঃ
পুরুষো যশ্চাযমধ্যাত্মং শারীরস্তেজোমযোমৃতময়ঃ পুরুষোযমেব স যোয়মাত্মা'-(বৃহদারণ্যক
উপনিষদ্-২।৫।১)
'এই পৃথিবীতে যিনি এই তেজোময় অমৃতময় পুরুষ এবং যিনি শরীরসম্বন্ধী ও শরীরে অবস্থিত তেজোময় অমৃতময় পুরুষ, ইনিই তিনি, যিনি এই আত্মা' ইত্যাদি।
আর
এইহেতু বিভিন্ন আকারের সহিত ব্রহ্মের সত্য সম্বন্ধ শাস্ত্রীয়, ইহা বলিতে পারা যায় না,
যেহেতু ঔপাধিক ভেদ অর্থাৎ বিভিন্নতা উপাসনার জন্য, এবং যেহেতু ব্রহ্মের অভেদতাতেই শাস্ত্রের
তাৎপর্য্য।
No comments:
Post a Comment