Friday, 26 July 2019

"বেদসারশিবস্তোত্রম্"

 "বেদসারশিবস্তোত্রম্" ও ইহার ভাবার্থঃ-


শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের এই প্রখ্যাত স্তোত্রম্ ভক্তদের নিত্যপাঠ্য। আচার্য্য এই স্তোত্রম্ এ মহেশ্বর শিবের মূর্ত্ত ও বিমূর্ত্তরূপের অদ্বৈতজ্ঞান বা তত্ত্বের স্তুতি করিয়াছেন। স্তোত্রমে বেদসার শিবতত্ত্ব প্রস্ফুটিত হইয়াছে এইভাবে-

॥ অথ বেদসারশিবস্তোত্রম্॥
পশূনাং পতিং পাপনাশং পরেশং
গজেন্দ্রস্য কৃত্তিং বসানং বরেণ্যম্ ।
জটাজূটমধ্যে স্ফুরদ্গাঙ্গবারিং
মহাদেবমেকং স্মরামি স্মরারিম্ ॥ ১॥

যিনি পশুগণের পতি ও পাপনাশকারী পরমেশ্বর, যিনি বরেণ্য ও গজচর্ম পরিধান করিয়া থাকেন, যাঁহার জটাসমূহমধ্যে গঙ্গাবারি তরঙ্গায়িত, সেই অদ্বিতীয় মদনভস্মকারী মহাদেবকে স্মরণ করি ।১
মহেশং সুরেশং সুরারাতিনাশং
বিভুং বিশ্বনাথং বিভূত্যঙ্গভূষম্ ।
বিরূপাক্ষমিন্দ্বর্কবহ্নিত্রিনেত্রং
সদানন্দমীডে প্রভুং পঞ্চবক্ত্রম্ ॥ ২॥

যিনি মহেশ্বর, দেবগণের ঈশ্বর এবং দেবগণের শত্রনাশক, যিনি বিভূ, বিশ্বনাথ এবং ভস্ম যাঁহার অঙ্গের ভূষণ, যিনি বিরূপাক্ষ এবং চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নি যাঁহার ত্রিনেত্র, সেই পঞ্চমুখ সদানন্দ প্রভুকে স্তুতি করি ।২
গিরীশং গণেশং গলে নীলবর্ণং
গবেন্দ্রাধিরূঢং গুণাতীতরূপম্ ।
ভবং ভাস্বরং ভস্মনা ভূষিতাঙ্গং
ভবানীকলত্রং ভজে পঞ্চবক্ত্রম্ ॥ ৩॥

যিনি গিরীশ ও প্রমথগণের পতি, যাঁহার কন্ঠ নীলবর্ণ, যিনি বৃষভ্রাজে আরূঢ় ও গুণাতিত, যিনি ভব ভাস্বর ভস্মভূষিতাঙ্গ এবং ভবানীপতি, সেই পঞ্চবদনকে ভজনা করি।৩
শিবাকান্ত শংভো শশাঙ্কার্ধমৌলে
মহেশান শূলিঞ্জটাজূটধারিন্ ।
ত্বমেকো জগদ্ব্যাপকো বিশ্বরূপঃ
প্রসীদ প্রসীদ প্রভো পূর্ণরূপ ॥ ৪॥

হে উমাপতি, হে শম্ভু, হে অর্ধচন্দ্রমৌলি, হে মহেশ্বর, হে শূলি, হে জটাজূটধারি তুমি একমাত্র জগদ্ব্যাপী এবং বিশ্বরূপ; হে পূর্ণস্বরূপ, হে প্রভু তুমি প্রসন্ন হও।৪
পরাত্মানমেকং জগদ্বীজমাদ্যং
নিরীহং নিরাকারমোংকারবেদ্যম্ ।
য়তো জায়তে পাল্যতে য়েন বিশ্বং
তমীশং ভজে লীয়তে য়ত্র বিশ্বম্ ॥ ৫॥

যিনি পরমাত্মা, অদ্বিতীয়, জগদ্বীজ, আদ্য, নিরীহ , নিরাকার এবং ওঙ্কার বেদ; যাঁহা হইতে জগৎ জাত হয়; যাঁহার দ্বারা পালিত হয় এবং যাঁহাতে লীন হয়; সেই ঈশ্বরকে ভজনা করি।৫
ন ভূমির্নং চাপো ন বহ্নির্ন বায়ু-
র্ন চাকাশমাস্তে ন তন্দ্রা ন নিদ্রা ।
ন চোষ্ণং ন শীতং ন দেশো ন বেষো
ন য়স্যাস্তি মূর্তিস্ত্রিমূর্তিং তমীডে ॥ ৬॥

যিনি ভূমি নহেন, জল নেহেন, অগ্নি নহেন, বায়ু নহেন, এবং আকাশ নহেন; যাঁহার তন্দ্রা নাই, নিদ্রা নাই,গ্রীষ্ম নাই, শীত নাই, দেশ নাই, গৃহ নাই এবং যাঁহার কোনও মূর্তি নাই; সেই ত্রিমূর্তিধারীকে পূজা করি।৬
অজং শাশ্বতং কারণং কারণানাং
শিবং কেবলং ভাসকং ভাসকানাম্ ।
তুরীয়ং তমঃপারমাদ্যন্তহীনং
প্রপদ্যে পরং পাবনং দ্বৈতহীনম্ ॥ ৭॥

যিনি জন্মরহিত, শাশ্বত কারণসমূহেরও কারণ; যিনি শিব(মঙ্গলস্বরূপ), স্ব-স্বরূপে বর্তমান সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি; যিনি তুরীয়; যিনি অন্ধকারের অতীত এবং আদি, অন্তহীন, আমি সেই দ্বৈতবিহীন পরম পাবনের শরণ লই।৭
নমস্তে নমস্তে বিভো বিশ্বমূর্তে
নমস্তে নমস্তে চিদানন্দমূর্তে ।
নমস্তে নমস্তে তপোয়োগগম্য
নমস্তে নমস্তে শ্রুতিজ্ঞানগম্য ॥ ৮॥

হে বিশ্বরূপধারী বিভু, তোমাকে বারংবার নমস্কার কর; চিদানন্দরূপী তোমাকে বারংবার নমস্কার, তপস্যা ও যোগের অধিগম্য তোমাকে বারংবার নমস্কার;বেদজ্ঞানের দ্বারা জ্ঞেয় তোমাকে বারংবার নমস্কার।৮
প্রভো শূলপাণে বিভো বিশ্বনাথ
মহাদেব শংভো মহেশ ত্রিনেত্র ।
শিবাকান্ত শান্ত স্মরারে পুরারে
ত্বদন্যো বরেণ্যো ন মান্যো ন গণ্যঃ ॥ ৯॥

হে প্রভু,হে শূলপাণি, হে বিভু, হে বিশ্বনাথ, হে মহাদেব, হে শম্ভু, হে মহেশ, হে ত্রিনেত্র, হে শিবাকান্ত, হে শান্ত, হে মদনারি, হে ত্রিপুরারি, তোমা অপেক্ষা কেহ বরেণ্য, মান্য বা গণ্য নাই।৯
শংভো মহেশ করুণাময় শূলপাণে
গৌরীপতে পশুপতে পশুপাশনাশিন্ ।
কাশীপতে করুণয়া জগদেতদেক-
স্ত্বংহংসি পাসি বিদধাসি মহেশ্বরোঽসি ॥ ১০॥

হে শম্ভু, হে মহেশ, হে করুণাময়, হে শূলপাণি, হে গৌরিপতি, হে পশুপতি, হে জীববন্ধননাশি,হে কাশীনাথ, একমাত্র তুমিই করুণাবশত; এই জগতের ধ্বংস, পালন ও সৃজন করিতেছ। তুমিই মহেশ্বর।১০
ত্বত্তো জগদ্ভবতি দেব ভব স্মরারে
ত্বয়্যেব তিষ্ঠতি জগন্মৃড বিশ্বনাথ ।
ত্বয়্যেব গচ্ছতি লয়ং জগদেতদীশ
লিঙ্গাত্মকে হর চরাচরবিশ্বরূপিন্ ॥ ১১॥

হে দেব, হে ভব, হে স্মরারি, তোমা হইতেই জগৎ হইয়া থাকে; হে মৃ্ড়, হে বিশ্বনাথ , তোমাতেই জগৎ অবস্থান করে; হে ঈশ, হে হর, হে চরাচর-বিশ্বরূপী, লিঙ্গরূপী তোমাতেই এই জগৎ লয়প্রাপ্ত হয়।১১
ইতি শ্রীমত্পরমহংসপরিব্রাজকাচার্যস্য
শ্রীগোবিন্দভগবত্পূজ্যপাদশিষ্যস্য
শ্রীমচ্ছংকরভগবতঃ কৃতৌ
বেদসারশিবস্তোত্রং সংপূর্ণম্ ।

ইতি শ্রীগোবিন্দভগবৎপূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্করভগবৎপাদাচার্য্য কৃত বেদসারশিবস্তোত্রং সম্পূর্ণ।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...