Friday, 26 July 2019

"শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্"



"শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্"

ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ একটি কৃষ্ণভক্তিমূলক স্তোত্র। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এটি আবৃত্তি করিয়াছিলেন এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা এই জগন্নাথাষ্টকম্ নিত্য পাঠ করেন। শঙ্করের লিখনীতে শ্রীভগবান্ জগন্নাথের প্রতি ভক্তি নিবেদিত হইয়াছে এইভাবে

কদাচিৎকালিন্দীতটবিপিনসঙ্গীতকরবো

মুদা গোপীনারীবদনকমলাস্বাদমধুপঃ।

রমাশম্ভুব্রহ্মামরপতিগণেশার্চিতপদো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

যিনি এক সময়ে কালিন্দী (যমুনা) তটবৰ্ত্তী অরণ্য মধ্যে সঙ্গীত শ্ৰবণে চঞ্চল হইয়া প্রীতিভরে ভ্রমরের ন্যায় গোপাঙ্গণাগণের মুখপদ্মের মধু আস্বাদন করিয়াছিলেন; লক্ষ্মী, শম্ভু, ব্ৰহ্মা, ইন্দ্র গণেশ যাঁহার পদযুগল অৰ্চনা করেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথবৰ্ত্তী হউন।

ভুজে সব্যে বেণুং শিরসি শিখিপিচ্ছং কটিতটে

দুকূলং নেত্রান্তে সহচরকটাক্ষং বিদধৎ

সদা শ্রীমদ্বৃন্দাবনবসতিলীলাপরিচয়ো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

যিনি বামভুজে বেণু, মস্তকে ময়ুরপুচ্ছ এবং কটিতটে পীতাম্বর নয়ন প্ৰান্তে সহচরী গোপালাদিগের প্রতি কটাক্ষপাত করিয়া সদা বৃন্দাবন ধামে বাস লীলা করিতে প্ৰবৃত্ত আছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার দৃষ্টি পথগামী হউন।

মহাম্ভোধেস্তীরে কনকরুচিরে নীলশিখরে

বসন্ প্রাসাদান্তঃ সহজবলভদ্রেণ বলিনা

সুভদ্রামধ্যস্থঃ সকলসুরসেবাবসরদো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

যিনি মহাসমুদ্রের তীরদেশে, সুবর্ণাভ নীলাদ্রির শিখরে প্রাসাদাভ্যন্তরে সুভদ্রাকে মধ্যভাগে স্থাপনপূর্বক বলশালী ভ্রাতা বলরামের সহিত বাসকরতঃ সমস্ত দেবগণকে সেবা করার অবসর প্রদান করিতেছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথবৰ্ত্তী হউন।

কৃপাপারাবারঃ সজলজলদশ্রেণিরুচিরো

রমাবাণীরামঃ স্ফুরদমলপদ্মোদ্ভবমুখৈঃ

সুরেন্দ্রৈরারাধ্যঃ শ্রুতিগণশিখাগীতচরিতো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

যিনি কৃপাসিন্ধু তুল্য, যাঁহার কান্তি জলপূর্ণ মেঘমালার ন্যায় শ্যামল, যিনি লক্ষ্মী সরস্বতীর আনন্দনিধান, যাঁহার মুখমণ্ডল অমল কমলবৎ শোভমান, দেবেন্দ্ৰগণ যাঁহাকে আরাধনা করিয়া থাকেন, শ্রুতিসমূহ যাঁহার চরিত্র গান করেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ দেব আমার নয়নপথগামী হউন।

রথারূঢ়ো গচ্ছন্ পথি মিলিতভূদেবপটলৈঃ

স্তুতিপ্রাদুর্ভাবং প্রতিপদমুপাকর্ণ্য সদয়ঃ

দয়াসিন্ধুর্বন্ধুঃ সকলজগতাং সিন্ধুসুতয়া

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

রথে আরোহণ করিয়া গমন করিলে পথিমধ্যে ব্ৰাহ্মণগণ মিলিত হইয়া যাঁহার স্তব করিয়া থাকেন, যিনি তাদৃশ স্তব শ্রবণে পদে পদে প্ৰসন্ন হয়েন, সেই লক্ষ্মী-সম্মিলিত দয়াসিন্ধু, সর্বজগদ্বন্ধু জগন্নাথ স্বামী আমার নয়ন পথগামী হউন।

পরব্রহ্মাপীড়ঃ কুবলয়দলোৎফুল্লনয়নো

নিবাসী নীলাদ্রৌ নিহিতচরণোঽনন্তশিরসি

রসানন্দো রাধাসরসবপুরালিঙ্গনসুখো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

নিরাকার পরব্রহ্ম স্তবনীয় হইলেও সাকার অবস্থায় যাঁহার নেত্র পদ্মপলাশের ন্যায় প্ৰফুল্ল, যিনি নীলাদ্রিতে বাস করেন এবং অনন্তনাগের শিরে চরণ স্থাপন করেন, যিনি রস আনন্দস্বরূপ; যিনি শ্ৰীরাধিকার রসময় দেহ আলিঙ্গনে সুখী, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়নপথগামী হউন।

বৈ প্রার্থ্যং রাজ্যং কনকতাং ভোগবিভবে

যাচেঽহং রম্যাং নিখিলজনকাম্যাং বরবধূং

সদা কালে কালে প্রমথপতিনা গীতচরিতো

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

আমি রাজ্য চাহি না, স্বর্ণ-মাণিক্যাদি বৈভবও প্রার্থনা করি না এবং সকল লোক কমনীয়া মনোহারিণী কামিনীও চাই না, আমি সর্ব্বদা একান্ত মনে প্রার্থনা করি যেন ভূতনাথ যাঁহার চরিত্র কীৰ্ত্তন করেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়নপথগামী হয়েন।

হর ত্বং সংসারং দ্রুততরমসারং সুরপতে

হর ত্বং পাপানাং বিততিমপরাং যাদবপতে

অহো দীনানাথং নিহিতমচলং নিশ্চিতপদং

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে

হে সুরপতি! তুমি আমার এই অসার সংসার হরণ কর, হে যাদবপতি! তুমি আমার অশেষ পাপভারও হরণ কর। আহা! আত্মসমর্পিত দীন অনাথজনকে সতত রক্ষা করিবার জন্য অচলভাবে স্থিত, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়নপথগামী হউন ৷৷

জগন্নাথাষ্টকং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্ৰযতঃ শুচিঃ

সৰ্ব্বপাপ বিশুদ্ধাত্মা বিষ্ণুলোকং সগচ্ছতি।।

যে ব্যক্তি শুচি হইয়া, এই জগন্নাথাষ্টক পাঠ করে, সে ব্যক্তি সৰ্ব্ব পাপ হইতে বিশুদ্ধ হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করিয়া থাকে॥

ইতি শ্রীমচ্ছঙ্করভগবতঃ কৃতৌ জগন্নাথাষ্টকং সম্পূর্ণং॥

ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত জগন্নাথাষ্টক সম্পূর্ণ।

শ্রীশুভ চৌধুরী

রথযাত্রা, ২০১৯ খৃষ্টাব্দ

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...