Friday, 26 July 2019

শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্

ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ও ইহার বঙ্গানুবাদঃ-
॥ শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ॥



দেবি সুরেশ্বরি ভগবতি গঙ্গে ত্রিভুবনতারিণি তরলতরঙ্গে ।
শঙ্করমৌলিবিহারিণি বিমলে মম মতিরাস্তাং তব পদকমলে ॥ ১॥

সুরেশ্বরী, ভগবতী, ত্রিভুবনতারিণী, তরলতরঙ্গযুক্তা, শংকর-মৌলি-বিহারিণী অর্থাৎ মহাদেবের মস্তকে বিহারিণী, নির্মলা, দেবী গঙ্গা, তোমার পাদপদ্মে আমার সুমতি হোক।১
ভাগীরথি সুখদায়িনি মাতস্তব জলমহিমা নিগমে খ্যাতঃ ।
নাহং জানে তব মহিমানং পাহি কৃপাময়ি মামজ্ঞানম্ ॥ ২॥

ভাগীরথী সুখদায়িনী মা, তোমার জলের মহিমা বেদাদিতে খ্যাত ; আমি তোমার মহিমা জানি না ; হে কৃপাময়ী, অজ্ঞ আমাকে ত্রাণ করো। ২
হরিপদপদ্মতরঙ্গিণি গঙ্গে হিমবিধুমুক্তাধবলতরঙ্গে ।
দূরীকুরু মম দুষ্কৃতিভারং কুরু কৃপয়া ভবসাগরপারম্ ॥ ৩॥

হরির পাদপদ্ম থেকে তরঙ্গাকারে নির্গতা এবং তুষার চন্দ্র ও মুক্তার মতো শুভ্রতরঙ্গযুক্তা গঙ্গা, আমার দুষ্কর্মের ভার দূর করো এবং কৃপাপূর্বক আমায় ভবসাগর থেকে উদ্ধার করো।৩
তব জলমমলং যেন নিপীতং পরমপদং খলু তেন গৃহীতম্ ।
মাতর্গঙ্গে ত্বয়ি যো ভক্তঃ কিল তং দ্রষ্টুং ন যমঃ শক্তঃ ॥ ৪॥

তোমার নির্মল জল যে পান করেছে সে সর্বশ্রেষ্ঠ ধামপ্রাপ্ত হয়েছে। মা গঙ্গা, যে তোমার ভক্ত তাকে যম নিশ্চয় দেখতে অসমর্থ, সে অমর। ৪
পতিতোদ্ধারিণি জাহ্নবি গঙ্গে খণ্ডিতগিরিবরমণ্ডিতভঙ্গে ।
ভীষ্মজননি হে মুনিবরকন্যে পতিতনিবারিণি ত্রিভুবনধন্যে ॥ ৫॥

হে পতিত-উদ্ধারিণী, জাহ্নবী, খণ্ডিত গিরিবরের দ্বারা মণ্ডিত তরঙ্গশালিনী, ভীষ্মজননী, জহ্নুকন্যা, পতিত-নিবারিণী গঙ্গা, তুমি ত্রিভুবনে ধন্যা। ৫
কল্পলতামিব ফলদাং লোকে প্রণমতি যস্ত্বাং ন পততি শোকে ।
পারাবারবিহারিণি গঙ্গে সুরবনিতাকৃত-তরলাপাঙ্গে ॥ ৬॥

পারাবারবিহারিণী, দেববধূগণ কর্তৃক চঞ্চল কটাক্ষে অবলোকিতা গঙ্গা পৃথিবীতে কল্পলতার মতো ফলদা তোমাকে যে প্রণাম করে সে শোকে পতিত হয় না। ৬
তব চেন্মাতঃ স্রোতঃ স্নাতঃ পুনরপি জঠরে সোঽপি ন জাতঃ ।
নরকনিবারিণি জাহ্নবি গঙ্গে কলুষবিনাশিনি মহিমোত্তুঙ্গে ॥ ৭॥

নরক-নিবারিণী, কলুষবিনাশিনী, স্বমহিমায় অতি যশস্বিনী জাহ্নবী গঙ্গা কেউ যদি তোমার স্রোতে স্নান করে তবে সে পুনর্বার মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে না। ৭
পুনরসদঙ্গে পুণ্যতরঙ্গে জয় জয় জাহ্নবি করুণাপাঙ্গে ।
ইন্দ্রমুকুটমণিরাজিতচরণে সুখদে শুভদে ভৃত্যশরণ্যে ॥ ৮॥

উজ্জ্বল অঙ্গবিশিষ্টা, পবিত্রতরঙ্গশালিনী, কৃপাকটাক্ষময়ী, ইন্দ্রের মুকুটমণির দ্বারা চরণে প্রণত, সুখপ্রদায়িনী, মঙ্গলপ্রদায়িনী, সেবকের আশ্রয়স্বরূপিণী, জাহ্নবী, তুমি জয়যুক্ত হও, জয়যুক্তা হও। ৮
রোগং শোকং তাপং পাপং হর মে ভগবতি কুমতিকলাপম্ ।
ত্রিভুবনসারে বসুধাহারে ত্বমসি গতির্মম খলু সংসারে ॥ ৯॥

ভগবতী, তুমি আমার রোগ শোক পাপ তাপ ও কুমতিকলাপ দূর করো। ত্রিভুবনশ্রেষ্ঠা, বসুধার হারস্বরূপা তুমি নিশ্চয় সংসারে আমার একমাত্র গতি।৯
অলকানন্দে পরমানন্দে কুরু করুণাময়ি কাতরবন্দ্যে ।
তব তটনিকটে যস্য নিবাসঃ খলু বৈকুণ্ঠে তস্য নিবাসঃ ॥ ১০॥

স্বর্গের আনন্দবিধায়িনী, পরমানন্দরূপিণী, কাতরজনের বন্দিতা তুমি আমার প্রতি করুণা করো। তোমার তটসমীপে যার বাস তার বৈকুণ্ঠেই নিবাস বলতে হবে।১০
বরমিহ নীরে কমঠো মীনঃ কিং বা তীরে শরটঃ ক্ষীণঃ ।
অথ গব্যূতৌ শ্বপচো দীনস্তব ন হি দূরে নৃপতিকুলীনঃ ॥ ১১॥

এই জলে বরং কচ্ছপ বা মৎস্য, কিংবা এই তীরে ক্ষুদ্র টিকটিকি অথবা দুইক্রোশ মধ্যে দীন কুক্কুরভোজী হয়ে থাকাও ভাল, তথাপি তোমা হতে দূরে নৃপতি শ্রেষ্ঠ হওয়া ভাল নয়।
ভো ভুবনেশ্বরি পুণ্যে ধন্যে দেবি দ্রবময়ি মুনিবরকন্যে ।
গঙ্গাস্তবমিমমমলং নিত্যং পঠতি নরো যঃ স জয়তি সত্যম্ ॥ ১২॥

হে ভুবনেশ্বরি, পুণ্যময়ী, ধন্যে, দ্রবময়ি, মুনিবরকন্যা দেবী, যে মনুষ্য এই অমল গঙ্গাস্তব নিত্য পাঠ করে সে অবশ্যই জয়যুক্ত হয়।১২
যেষাং হৃদয়ে গঙ্গাভক্তিস্তেষাং ভবতি সদা সুখমুক্তিঃ ।
মধুরমনোহরপজ্ঝটিকাভিঃ পরমানন্দকলিতললিতাভিঃ ॥ ১৩॥
গঙ্গাস্তোত্রমিদং ভবসারং বাঞ্ছিতফলদম্ বিদিতমুদারং ।
শঙ্করসেবকশঙ্কররচিতং পঠতু চ বিষয়ীদমিতি সমাপ্তম্ ॥ ১৪॥

যাদের হৃদয়ে গঙ্গাভক্তি আছে তাহারা সর্বদা অনায়াসে মুক্ত হয়। সংসারের সারস্বরূপ, বাঞ্ছিতফলপ্রদ, বিখ্যাত এবং উদার এই গঙ্গাস্তোত্রটী পরমানন্দে নিবদ্ধ, সুন্দর, মধুর ও মনোমুগ্ধকর পজ্ঝটিকা ছন্দে মহাদেবের সেবক শঙ্করের দ্বারা রচিত হয়েছে। এবং যে ব্যক্তি বিষয়ভোগে নিমগ্ন, সে ইহা পাঠ করুক। ইতি সমাপ্ত। ১৩,১৪
॥ ইতি শ্রীমচ্ছঙ্করাচার্যবিরচিতং গঙ্গাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ॥
ইতি শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত গঙ্গাস্তোত্র সম্পূর্ণ।

No comments:

আত্মানাত্মবিবেকঃ-

  আত্মা ও অনাত্মা অর্থাৎ আত্মা ভিন্ন দেহের পৃথকত্বের বিবেকবোধই আত্মানাত্মবিবেক। দেহকেই আমরা ' আমি ' ভাবিয়া থাকি। ...