Thursday, 16 January 2020

ব্রহ্মের তটস্থ লক্ষণঃ-

পারমার্থিক দৃষ্টিতে জগৎ মিথ্যা হওয়ায় সেই কল্পিত জগতের কর্তৃত্ব ব্রহ্মে পরমার্থতঃ না থাকিলেও, ব্যবহারিক দৃষ্টিতে জগতের জন্মাদির কারণ হওয়া-রূপ লক্ষণটি অন্য বস্তু হইতে ভিন্নভাবে ব্রহ্মকে বোধ করায় বলিয়া ইহা ব্রহ্মের তটস্থলক্ষণ। জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-লয় যাহা হইতে হয় তিনিই ব্রহ্ম। ইহাই ব্রহ্মের তটস্থ লক্ষণ। বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীত বেদান্তসূত্রে ব্রহ্মের লক্ষণ নিরূপণ হইতেছে এইভাবে

জন্মাদ্যস্য যতঃ।-(ব্রহ্মসূত্র ১।১।২)

ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য শারীরক ভাষ্যে বলিতেছেন

'জন্ম অর্থ উৎপত্তি, তাহা আদি ইহার', এইরূপে তদ্গুণসংবিজ্ঞান বহুব্রীহি সমাস বুঝিতে হইবে। জন্ম, স্থিতি লয়, ইহাই সমাসটীর অর্থ। আর জন্মের যে আদিত্ব, তাহা শ্রুতির নির্দ্দেশকে বস্তুর স্থিতিকে অপেক্ষা করে। মূলশ্রুতির নির্দ্দেশ এই'যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে৷ যেন জাতানি জীবন্তি৷ যত্প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি৷ তদ্বিজিজ্ঞাসস্ব৷ তদ্ব্রহ্মেতি৷' এই শ্রুতিবাক্যটীতে জন্ম, স্থিতি এবং প্রলয়ের ক্রম পরিদৃষ্ট হয়। সূত্রস্থ 'অস্য' এই স্থলে, প্রত্যক্ষ প্রভৃতির দ্বারা উপস্থাপিত জগদ্ রূপ ধর্ম্মীর 'ইদম' শব্দের দ্বারা নির্দ্দেশ হইয়াছে। ষষ্ঠী বিভক্তিটী জন্ম প্রভৃতি ধর্ম্মের সম্বন্ধ বুঝাইবার জন্য। সূত্রস্থ 'যতঃ' এই পদটী জগতের কারণকে নির্দ্দেশ করিতেছে। এইরূপে বাক্যটীর অর্থ হইলনাম রূপের দ্বারা ব্যাকৃত অর্থাৎ অভিব্যক্ত এই জগৎ, যাহা অনেক কর্ত্তা এবং ভোক্তার সহিত সংযুক্ত, যাহা প্রতিনিয়ত দেশ কাল নিমিত্ত ক্রিয়া এবং ফলের আশ্রয়, যাহার রচনার স্বরূপ মনের দ্বারা চিন্তাও করা যায় না তাহার জন্ম স্থিতি লয় যে সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিসস্পন্ন কারণ হইতে হয় তিনিই ব্রহ্ম।

কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার অন্তর্গত তৈত্তিরীয় উপনিষদের ভৃগুবল্লীতে সেই শ্রুতিটি বর্ণিত আছেবরুণের পুত্র প্রসিদ্ধ ভৃগু পিতা বরুণের নিকট ব্রহ্মতত্ত্ব স্পষ্টরূপে জানিতে ইচ্ছা করিলে পিতা সেই ভৃগুকে ব্রহ্মের লক্ষণ বলিলেন'যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে৷ যেন জাতানি জীবন্তি৷ যত্প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি৷ তদ্বিজিজ্ঞাসস্ব৷ তদ্ব্রহ্মেতি৷'-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-৩।১।১)

অর্থাৎ  যাঁহা হইতে এই ব্রহ্মাদি তৃণপর্য্যন্ত দেহবর্গ উৎপন্ন হয়, উৎপন্ন হইয়া প্রাণধারণ করে অর্থাৎ বর্ধিত হয়, আবার বিনাশকালে যাঁহাকে প্রাপ্ত হয়, যাহাতে প্রবেশ করে অর্থাৎ অভেদ হইয়া যায় অর্থাৎ উৎপত্তি,স্থিতি লয়কালে দেহবর্গ যৎসত্তা ত্যাগ করে না, এইরূপ যে ব্রহ্মের লক্ষণ, সেই ব্রহ্মকে স্পষ্ট করিয়া জান।.....

তথ্যসূত্রঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্যের শারীরক-মীমাংসা ভাষ্য তৈত্তিরীয় উপনিষদ্ ভাষ্য।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জানুয়ারি ১৫, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...