আকারবিশিষ্টতা উপদেশকারিণী এবং নিরাকারতা উপদেশকারিণী ব্রহ্মবিষয়িণী শ্রুতিসকল থাকায় ব্রহ্ম নিরাকারই অর্থাৎ নির্বিশেষই,, কিন্তু তাহার বিপরীত নহে, ইহা কি প্রকারে অবধারণ করা হইতেছে? এইপ্রকার সংশয় হওয়ায় ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ উত্তর দিতেছেন-
'অরূপদেব হি তৎপ্রধানত্বাৎ।।'-ব্রহ্মসূত্র ৩।২।১৪।।
শারীরকভাষ্যম্ অনুসারে ভাবার্থঃ- ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল-'ব্রহ্মকে রুপাদি আকাররহিতরূপেই অবধারণ করিতে হইবে, তিনি রূপাদিযুক্ত নহেন। যেহেতু তাহার প্রধানতা আছে। শ্রুতি তাহা প্রদর্শন করিতেছেন এইভাবে-
'ইনি স্থুল নহেন, অণু নহেন, হ্রস্ব নহেন, দীর্ঘ নহেন'-(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ৩।৮।৮);
'তিনি শব্দরহিত, স্পর্শরহিত, রূপবিহীন, ক্ষয়রহিত'-(কঠ উপনিষদ্-১।৩।১৫);
'যিনি শ্রুতিতে আকাশনামে প্রসিদ্ধ, তিনিই নাম ও রূপের অভিব্যক্তিকর্ত্তা, নাম ও রূপ যাঁহার মধ্যে অবস্থিত, তিনিই ব্রহ্ম'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৮।১৪।১);
'যেহেতু দিব্য জ্যোতির্ম্ময় এবং সর্বপ্রকার মূর্ত্তিবর্জ্জিত পুরুষ শরীরের বাহিরে ও অভ্যন্তরে অবস্থিত, সেইহেতু তিনি জন্মরহিত'-(মুণ্ডক উপনিষদ্-২।১।২);
'সেই এই ব্রহ্ম অপূর্ব্ব অর্থাৎ কারণবিহীন, অনপর অর্থাৎ কার্য্যবিহীন, অনন্তর অর্থাৎ স্বগতভেদহীন, অবাহ্য অর্থাৎ ইহার বাহিরে কিছুই নাই তথা সজাতীয় ও বিজাতীয় ভেদবিহীন, সর্ব্ববিষয়ের অনুভবকর্ত্তা এই আত্মাই ব্রহ্ম।'-(বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ২।৫।১৯);
ইত্যাদি এইসকল বাক্য সর্ব্বপ্রপঞ্চাতীত ব্রহ্মাত্মতত্ত্বকে প্রধানভাবে প্রতিপাদন করে, এই বাক্যসকল দ্বারা যথাশ্রুত নিরাকার ব্রহ্মকেই অবধারণ করিতে হইবে।
কিন্তু সাকার অর্থাৎ সপ্রপঞ্চ সবিশেষ ব্রহ্মবিষয়ক অন্যান্য বাক্যসকল তৎপ্রধান নহে অর্থাৎ প্রধানভাবে সবিশেষতা প্রতিপাদন করে না, যেহেতু তাহারা প্রধানভাবে উপাসনাবিধি প্রতিপাদন করে অর্থাৎ বিধিবোধিত উপাসনার অঙ্গরূপে ব্রহ্মকে সমর্পন করে।....................................