Monday, 29 June 2020

আত্মবোধ (১-৫)


শঙ্করাচার্য্য বিরচিত আত্মবোধঃ-
॥ আত্মবোধঃ ॥
তপোভিঃ ক্ষীণপাপানাং শান্তানাং বীতরাগিণাম্ ।
মুমুক্ষূণামপেক্ষ্যোঽয়মাত্মবোধো বিধীয়তে ॥ ১॥

বিবিধ তপস্যার দ্বারা যাহাদিগের পাপ ক্ষয় প্রাপ্ত হইয়াছে, যাঁহারা শান্ত ও বিষয়ে অনুরাগশূন্য, তাদৃশ মুমুক্ষুগণের অপেক্ষণীয় আত্মবোধ নামক গ্রন্থ রচিত হইতেছে।১
বোধোঽন্যসাধনেভ্যো হি সাক্ষান্মোক্ষৈকসাধনম্ ।
পাকস্য বহ্নিবজ্জ্ঞানং বিনা মোক্ষো ন সিধ্যতি ॥ ২॥

অন্য সাধন অপেক্ষা একমাত্র জ্ঞানই সাক্ষাৎ মোক্ষের কারণ, যেমন অন্নাদি পাকের মত যত কিছু উপায় আছে, তন্মধ্যে অগ্নিই প্রধান সাধন। কারণ জ্ঞান ব্যতীত মুক্তি লাভ হয় না।২
অবিরোধিতয়া কর্ম নাবিদ্যাং বিনিবর্তয়েৎ ।
বিদ্যাবিদ্যাং নিহন্ত্যেব তেজস্তিমিরসঙ্ঘবৎ ॥ ৩॥

অবিদ্যার সহিত কর্ম্মের কোন বিরোধ না থাকায়, কর্ম্ম কখনও অবিদ্যাকে নিবৃত্ত করিতে পারে না। (বিরোধিতাবশতঃ) আলোক যেমন অন্ধকাররাশি দূর করে, সেইরূপ বিদ্যা (জ্ঞান), অবিদ্যাকে (অজ্ঞানকে) নিবৃত্ত করিয়া থাকে।৩
পরিচ্ছন্ন ইবাজ্ঞানাত্তন্নাশে সতি কেবলঃ ।
স্বয়ং প্রকাশতে হ্যাত্মা মেঘাপায়েংঽশুমানিব ॥ ৪॥

আত্মা অজ্ঞানবশতঃ পরিচ্ছিনের ন্যায় প্রতীত হন, মেঘ অপসৃত হইলে সূর্য্য যেমন প্রকাশিত হয়, সেইরূপ অজ্ঞান বিনাশ প্রাপ্ত হইলে, শুদ্ধ স্বয়ংপ্রকাশ আত্মা প্রকাশিত হইয়া থাকেন।৪
অজ্ঞানকলুষং জীবং জ্ঞানাভ্যাসাদ্বিনির্মলম্ ।
কৃৎবা জ্ঞানং স্বয়ং নশ্যেজ্জলং কতকরেণুবৎ ॥ ৫॥

কতকরেণু (কতকবৃক্ষের ফল অর্থাৎ নির্মলী ফল কলুষিত জলে ফেলে দিলে তার দ্বারা জল স্বচ্ছ ও শুদ্ধ হয়) যেমন জলের মালিণ্য দূর করিয়া স্বয়ং বিলয়প্রাপ্ত হয়, সেইরূপ জ্ঞান অজ্ঞানের দ্বারা কলুষিত জীবকে অত্যন্ত নির্ম্মল করিয়া স্বয়ং বিনাশ প্রাপ্ত হয়। এখানে 'জ্ঞান' শব্দে ব্রহ্মাকার অন্তঃকরণের বৃত্তি বুঝিতে হইবে।৫

Friday, 19 June 2020

শ্রুতিবাক্য হইতে কর্তৃত্ব ও কর্ম্মত্ব প্রদর্শন দ্বারা মায়ারূপ উপাধিযুক্ত ব্রহ্মের নিমিত্তকারণতা ও উপাদানকারণতা প্রদর্শনঃ-


মহর্ষি বাদরায়ন ভগবৎ প্রণীতম্ বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রের ১ম অধ্যায়ের ৪র্থ পাদে বর্ণিত আছে-

আত্মকৃতেঃ পরিণামাৎ ৷৷ ব্রহ্মসূত্র ১.৪.২৬ ৷৷

শাঙ্করভাষ্য অনুবাদঃ-এই সূত্রাবলম্বনে ভগবৎপূজ্যপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের ভাষ্য হইল-আর এইহেতু বশতঃ ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ, যেহেতু শ্রুতি ব্রহ্মবোধক প্রক্রিয়াতে 'তদাত্মানং স্বয়মকুরুত'-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।৭) অর্থাৎ "তিনি নিজেই নিজেকে জগৎরূপ করিয়াছিলেন' এই প্রকারে আত্মার কর্ম্মত্ব (উপাদানকারণতা) এবং কর্ত্তৃত্ব (নিমিত্তকারণতা) প্রদর্শন করিতেছেন। 'নিজেকে' এইরূপে কর্ম্মত্ব এবং 'নিজেই করিয়াছিলেন' এইরূপে কর্ত্তৃত্ব প্রদর্শিত হইয়াছে।
আচ্ছা এখন প্রশ্ন হইল, যিনি পূর্ব্বসিদ্ধ (পূর্ব্ব হইতে বিদ্যমান) কর্ত্তৃরূপে অবস্থিত সদ্বস্তু, তাঁহার ক্রিয়মানতা (-জগৎরূপে উৎপন্ন হওয়া) কি প্রকারে সম্পাদন করা যায়? তদুত্তরে আমরা বলিব-যেহেতু পরিণাম হয়। আত্মা পূর্ব্বসিদ্ধ হইলেও বিশেষ বিকারাত্মকরূপে (মিথ্যা কার্য্যরূপে) নিজেকে পরিণত (বিবর্ত্তিত) করিয়াছিলেন। ঠিক যেমন মৃত্তিকা প্রভৃতি উপাদানকারণ সকলে (ঘটাদি) কার্য্যরূপে পরিণাম উপলব্ধ হয়। আর উক্ত শ্রুতিবাক্যে 'স্বয়ম' এই প্রকার বিশেষণ থাকায় তিনি যে অন্য নিমিত্তকারণের অপেক্ষা করেন না, ইহাও প্রতীত হইতেছে।
অথবা 'পরিণামাৎ' ইহা পৃথকসূত্র। তাঁহার অর্থ এই -আর এই হেতুবশতঃ ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ, যেহেতু-
'সচ্চ ত্যচ্চাভবন্নিরুক্তং চানিরুক্তং চ' -(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।৬)
অর্থাৎ "তিনি সৎ(মূর্ত্ত) এবং ত্যৎ (অমূর্ত্ত) হইলেন। মূর্ত্তামূর্ত্ত অর্থাৎ আত্মাতে স্থিত অনভিব্যক্তি নামরূপ, অন্তঃপ্রবিষ্ট আত্মার নিমিত্ত মূর্ত্তামূর্ত্ত শব্দসংজ্ঞায় অভিব্যক্ত হইল। তিনি নিরুক্ত (পরিচ্ছিন্ন) ও অনিরূক্ত (অপরিচ্ছিন্ন) হইলেন। নিরূক্ত হইতেছে সজাতীয় বিজাতীয় পদার্থসকল হইতে পৃথক্ করিয়া স্থানকালবিশিষ্টরূপে অর্থাৎ 'ইহা তাহা' এই রূপে যাহা কথিত আর অনিরুক্ত হইতছে তাহার বিপরীত।"
ইত্যাদি এইরূপ সামানাধিকরণ্যের দ্বারা অর্থাৎ সমান বিভক্তিযুক্ত পদপ্রয়োগের দ্বারা ব্রহ্মেরই বিকারাত্মকরূপে (কার্য্যবস্তুরূপে) পরিণাম (বিবর্ত্ত) শ্রুতিতে পঠিত হইতেছে।
ইতি ভাষ্যানুবাদ।

Monday, 8 June 2020

প্রশ্নোত্তররত্নমালিকা


ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত 'প্রশ্নোত্তর রত্নমালিকা':-

এই প্রশ্নোত্তররূপ রত্নমালা কন্ঠে ধারণ করিলে দৃষ্ট ও অদৃষ্ট অর্থ সাধনে সমর্থ কোন ব্যক্তি অলঙ্কৃত না হন। যদি প্রশ্নোত্তররূপ রত্নমালা কন্ঠে ধারণ করা যায়, তাহা হইলে লোকের নিকটে সমাদরলাভরূপ দৃষ্ট প্রয়োজন সাধিত হয়। আর প্রশ্নোত্তররত্নমালিকানামক গ্রন্থ কন্ঠস্থ করিলে অদৃষ্ট অর্থাৎ অলৌকিক তত্ত্বজ্ঞান উদিত হয় যদ্যপি তত্ত্বজ্ঞান দৃষ্টফল, তথাপি লোকসিদ্ধ নহে বলিয়া অদৃষ্টফল বলা হয়েছে।।১।।

শিষ্য গুরুকে জিজ্ঞাসা করিলেন-"ভগবান! উপাদেয় কি? অর্থাৎ কোন বস্তু গ্রহণযোগ্য?".. গুরু বলিলেন- "গুরুর বাক্য।"

শিষ্য-"হেয় অর্থাৎ ত্যাজ্য কি?"... গুরু বলিলেন-"অসৎকার্য্য।"

শিষ্য-"গুরু কে?"... গুরু-"যিনি ব্রহ্মতত্ত্ব লাভ করিয়াছেন এবং যিনি সর্ব্বদা শিষ্যের হিতে রত।"২ 

শিষ্য-"বিদ্বান ব্যক্তির কোন কার্য্য শীঘ্র করণীয়?", গুরু-"অবিচ্ছিন্ন সংসারের বিনাশ।" শিষ্য-"মুক্তি বৃক্ষের কারণ কি? ,গুরু-"সম্যক্ জ্ঞান অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞান, যে জ্ঞান কর্ম্মানুষ্ঠান করিতে করিতে সিদ্ধ হয়।"৩

শিষ্য-"অতিশয় হিতকর বস্তু কি?" ....গুরু-"ধর্ম্ম।" শিষ্য-"এই সংসারে শুচি কে?"...গুরু-"যাঁহার চিত্তশুদ্ধ।" শিষ্য-"পণ্ডিত কে?..গুরু-"বিবেকী অর্থাৎ যিনি আত্মা ও অনাত্মার বিবেক করিয়াছেন।" শিষ্য-"বিষ কি? গুরু-"গুরুর প্রতি অবজ্ঞা।"৪ 

শিষ্য-সংসারে সার কি? গুরু-যাহা অনেকবার চিন্তার দ্বারা নির্ণীত হইয়াছে। শিষ্য-নিরতিশয় অভিলষিত বস্তু কি? গুরু-যিনি নিজ ও পরের হিতে রত তাদৃশ ব্যক্তির জন্মলাভ।৫

শিষ্য- মদিরার ন্যায় মোহজনক বস্তু কি? গুরু-স্নেহ। শিষ্য-দস্যু কাহারা? গুরু-বিষয়সমূহ। শিষ্য-সংসার বন্ধনের রজ্জু কি? গুরু-বিষয়তৃষ্ণা। শিষ্য-শত্রু কে? গুরু-যাহার কোনরূপ উদ্যোগ বা চেষ্টা নাই।৬

শিষ্য-এই সংসারে জীব কোন বস্তু হইতে ভীত হয়? গুরু-মরণ হইতে। শিষ্য-অন্ধ হইতে বিশিষ্ট অর্থাৎ অত্যন্ত অন্ধ কে? গুরু-সংসারে যাঁহার অনুরাগ। শিষ্য-শূর কে? গুরু-যিনি রমণীগণের নয়নবাণের দ্বারা বিদ্ধ হন না।৭ 

শিষ্য- এই সংসারে কোন্ অমৃত কর্ণরূপ অঞ্জলির দ্বারা পান করা যুক্তিসঙ্গত? গুরু- সদুপদেশ।

শিষ্য- গৌরবের কারণ কি? গুরু- কাহারও নিকট প্রার্থনা না করা।।৮।।

শিষ্য- গহন অর্থাৎ দুর্বোধ বস্তু কি? গুরু- স্ত্রীচরিত্র।

শিষ্য- চতুর কে? গুরু- যিনি স্ত্রীজিত নহেন, অথবা স্ত্রীচরিত্রে মুগ্ধ নহেন।

শিষ্য- দুঃখ বা দারিদ্র্য কাকে বলে? গুরু- অসন্তোষ।

শিষ্য- লঘুতা কাহাকে বলে? গুরু- অধমের নিকট প্রার্থনা।।৯।।

শিষ্য- প্রাণীগণের জীবন অর্থাৎ বেঁচে থাকা কাহাকে বলে? গুরু- দোষশূন্যতা।

শিষ্য- জড়তা কাহাকে বলে? গুরু- শরীরের সামর্থ্য থাকিলেও বিষয় প্রকাশ না হওয়া অথবা অধ্যয়ন করিলেও অভ্যাস না করা।

শিষ্য- কে জাগরিত থাকেন? গুরু- বিবেকী।

শিষ্য- নিদ্রা কাহাকে বলে? গুরু- মূঢ়তা।। ১০।।

শিষ্য- পদ্মপত্রস্থ জলের ন্যায় চঞ্চল কি? গুরু- যৌবন, ধন ও আয়ুঃ।

শিষ্য- চন্দ্রকিরণের তুল্য নির্ম্মল চরিত্র কারা? গুরু- সজ্জনগণ।।১১।।

শিষ্য- নরক কাহাকে বলে? গুরু- পরাধীনতা।

শিষ্য- সুখ কি? গুরু- সমস্তসঙ্গ-নিবৃত্তি।

শিষ্য- সত্য বা সাধ্য কি? গুরু- প্রাণীগণের কল্যাণসাধন।

শিষ্য- প্রাণীগণের প্রিয় কি? গুরু- প্রাণ।।১২।।

শিষ্য- যাহার ফল অনর্থ এমন বস্তু কি? গুরু- মান।

শিষ্য- সুখপ্রদ বস্তু কি? গুরু- সাধু ব্যক্তির সহিত মিত্রতা।

শিষ্য- কোন ব্যক্তি সর্ব্বপ্রকার ব্যসন দূরীভূত করিতে সমর্থ? গুরু- যিনি ত্যাগী।।১৩।।

শিষ্য- মরণ কাহাকে বলে? গুরু- মূর্খতা।।

শিষ্য- অনর্ঘ অর্থাৎ অমূল্য বস্তু কে? গুরু- যথাসময়ে দান।৷

শিষ্য- মরণকাল পর্য্যন্ত শল্য অর্থাৎ শল্যের ন্যায় ব্যথাপ্রদ কি? গুরু- গোপনীয় পাপ।।১৪।।

শিষ্য- কোন বিষয়ে যত্ন করা উচিত? গুরু- সর্ব্বদা বিদ্যার্জ্জনে, ঔষধসেবনে ও দানে।

শিষ্য- কোন্ বস্তুতে অবজ্ঞা প্রদর্শনকরা কর্ত্তব্য? গুরু- খল, পরস্ত্রী ও পরধনে।।১৫।।

শিষ্য- দিবারাত্রি কোন্ বিষয়ের চিন্তা করা উচিত? গুরু- সংসারের অসারতা, কিন্তু স্ত্রীবিষয়ে চিন্তা করা উচিত নহে।

শিষ্য- প্রিয়তর বস্তু বলিয়া কি চিন্তনীয়? গুরু- দীনে দয়া ও সজ্জনের সহিত মিত্রতা৷।১৬।।

শিষ্য- প্রাণ কন্ঠাগত হইলেও কাহার চিত্ত জয় করিতে পারা যায় না? গুরু- মূর্খের, শঙ্কিত ব্যক্তির, বিষাদগ্রস্ত ও কৃতঘ্ন ব্যক্তির।।১৭।।

শিষ্য- সাধু কে? গুরু- যিনি সচ্চরিত্র।

শিষ্য- কাহাকে অধম বলা যায়? গুরু- যে অসচ্চরিত্র।

শিষ্য- কে এই জগৎকে জয় করিয়াছেন? গুরু- সত্যনিষ্ঠ ও শীতোষ্ণাদি দ্বন্দসহিষ্ণু ব্যক্তি।১৮।।

শিষ্য- দেবগণ কাহাকে নমস্কার করিয়া থাকেন? গুরু- দয়াপ্রধান ব্যক্তিকে।

শিষ্য- সংসারারণ্য হইতে কাহাদের উদ্বেগ উপস্থিত হয়? গুরু- সুধী ব্যক্তি।।১৯।।

শিষ্য- প্রাণীগণ কাহার বশীভূত? গুরু- সত্য ও প্রিয়ভাষী বিনীত ব্যক্তির।

শিষ্য- কোথায় স্থাতব্য? গুরু- দৃষ্টাদৃষ্টলাভযুক্তন্যায্য পথে।।২০।।

শিষ্য- অন্ধ কে? গুরু- যিনি অসৎকার্য্যে নিরত।

শিষ্য- বধির কে? গুরু- যে হিতোপদেশ শ্রবণ না করে।

শিষ্য- মূক (বোবা) কে? গুরু- যে যথাকালে প্রিয়বাক্য বলিতে জানে না।।২১।।

শিষ্য- দান কি? গুরু- যাহাতে আকাঙ্ক্ষা নাই।

শিষ্য- মিত্র কে? গুরু- যিনি পাপ হইতে নিবারণ করেন।

শিষ্য- অলঙ্কার কি? গুরু- চরিত্র।

শিষ্য- বাক্যের ভূষণ কি? গুরু- সত্য।।২২।।

শিষ্য- বিদ্যুৎ প্রভার ন্যায় চঞ্চল বস্তু কি? গুরু- দুর্জ্জনসঙ্গ ও যুবতীগণ।

শিষ্য- কুল ও চরিত্রের দ্বারা অটল অর্থাৎ কুলশীলবান্ কাহারা? গুরু- যাহারা কলিকালেও সজ্জন।। ২৩।।

শিষ্য -এই সংসার এ চিন্তামণির ন্যায় দুর্লভ কি? গুরু-বলিতেছি, তাহা 'চতুভদ্র' অর্থাৎ চারিটী কল্যাণপ্রদ বস্তু। শিষ্য - অজ্ঞানশূন্য ব্যক্তিরা তাহাকে আবার বিশেষভাবে কি বলেন?।।২৪।।

গুরু- প্রিয়বাক্যসহিত দান,গর্ব্ববিহীন জ্ঞান, ক্ষমাযুক্ত শৌর্য্য, ত্যাগসহিত ধন এই চতুভদ্র জগতে দুর্ল্লভ।। ২৫।।

শিষ্য- শোচ্য অর্থাৎ দুঃখের বিষয় কি? গুরু- ঐশ্বর্য থাকিতে কৃপণতা। শিষ্য- প্রশংসনীয় বস্তু কি? গুরু- উদারতা। শিষ্য- বিদ্বদগণেরও পূজ্য কে? গুরু- যিনি স্বভাবতঃ বিনীত।।২৬।।

শিষ্য- কুলরূপ পদ্মের সূর্য্যস্বরূপ কে অর্থাৎ কে কুলের গৌরব বর্দ্ধিত করে? গুরু- গুন থাকিতেও যিনি নম্র। শিষ্য- জগৎ কাহার বশীভূত? গুরু- যাঁহার বাক্য প্রিয় ও হিতকর যিনি ধর্ম্মপরায়ণ।।২৭।।

শিষ্য- কোন বস্তু বিদ্বদগণের চিত্তাকর্ষক? গুরু- উৎকৃষ্ট কবিতা ও বোধরূপ রমণী অর্থাৎ ভাল কবিতা ও জ্ঞান বিদ্বদগণের মনঃ হরণ করে। শিষ্য- বিপৎ কাহাকে স্পর্শ করে না? গুরু- যে ব্যক্তি বৃদ্ধবাক্যের অনুসরণ করেন এবং যিনি ইন্দ্রিয় নিগ্রহ করিয়াছেন।।২৮।।

শিষ্য- লক্ষ্মী কাহার প্রতি প্রসন্না হন? গুরু- যাহার চিত্তে অালস্য নাই এবং যিনি নীতিপথ অনুসরণ করেন। শিষ্য- লক্ষ্মী কাহাকে হঠাৎ পরিত্যাগ করেন? গুরু- যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণ, গুরু ও দেবতার নিন্দা করে এবং আলস্যপরায়ণ।।২৯।।

শিষ্য- কোথায় বাস করা কর্ত্তব্য? গুরু- সাধুগণের নিকটে অথবা কাশীতে। শিষ্য- কোন দেশ পরিত্যায্য? গুরু- পিশুনযুক্ত অর্থাৎ ক্রূরজনযুক্ত স্থল এবং লোভী রাজা যেখানে আছে, সে দেশ।।৩০।।

শিষ্য- কাহার দ্বারা লোক শোচ্য অর্থাৎ দুঃখভাগী হয় না? গুরু- প্রণত অর্থাৎ বশীভূত স্ত্রী এবং স্থিতিশীল সম্পদের দ্বারা পুরুষ দুঃখভাগী হয় না। শিষ্য- এই সংসারে কে দুঃখভাগী হয়? গুরু- অর্থ থাকিতে যে দান করে না।।৩১।।

শিষ্য- লঘুতার কারণ কি? গুরু-সাধারণ লোকের নিকট প্রার্থনা। শিষ্য- রাম অপেক্ষা শূর কে? গুরু- কামবাণের আঘাতে যিনি চঞ্চল হন না।।৩২।।

শিষ্য- সর্ব্বদা চিন্তনীয় বস্তু কি? গুরু- ভগবানের চরণ,সংসার নহে। শিষ্য- কাহারা চক্ষুঃ থাকিতেও অন্ধ? গুরু- যাহারা নাস্তিক মানব।।৩৩।।

শিষ্য- এই সংসারে পঙ্গু বলিয়া প্রসিদ্ধ কে? গুরু- যে বৃদ্ধকালে তীর্থে গমন করে। শিষ্য- কোন তীর্থটী প্রধান? গুরু- যাহা চিত্তের মল দূরীভূত করে।।৩৪।।

শিষ্য- মানবের কোনটী স্মরণীয়? গুরু- হরিনাম স্মরণ করা কর্ত্তব্য কিন্তু যবনের ভাষা নহে। শিষ্য- সুধী ব্যক্তির কোন বিষয় বক্তব্য নহে? গুরু- পরদোষ ও মিথ্যাবাক্য।।৩৫।।

শিষ্য- মানবের কোনটী সম্পাদনীয়? গুরু- বিদ্যা,ধন,বল, যশঃ ও পুণ্য। শিষ্য- কোনটি সকল কোনটী সকল গুণনাশক? গুরু- লোভ। শিষ্য- শত্রু কে? গুরু- কাম।।৩৬।।

শিষ্য- কোন সভা ত্যাজ্য? গুরু- বৃদ্ধমন্ত্রিবিহীন। শিষ্য- এই সংসারে মানবের কোন বিষয়ে সাবধান হওয়া উচিত? গুরু- রাজ সেবাতে।।৩৭।।

শিষ্য- প্রাণ অপেক্ষা রমণীয় কি? গুরু- কুলধর্ম্ম ও সাধুসঙ্গ। শিষ্য- কোন কির্ত্তী রক্ষা করা উচিত? গুরু- পতিব্রতা স্ত্রী ও নিজের বুদ্ধি।।৩৮।।

শিষ্য- সংসারে কল্পবৃক্ষ কাহাকে বলে? গুরু- সাধুশিষ্যে অর্পিত বিদ্যাকে। শিষ্য- অক্ষয়বটবৃক্ষ কি? গুরু- বিধিপূর্ব্বকসৎপাত্রে দান।।৩৯।।

শিষ্য- সকলের শস্ত্র কি? গুরু- যুক্তি। শিষ্য- মাতা কে? গুরু- ধেনু। শিষ্য- বল কি? গুরু- ধৈর্য। শিষ্য- মৃত্যু কি? গুরু- অসাবধানতা।।৪০।।

শিষ্য- বিষ কোথায় থাকে? গুরু- দুষ্ট মনুষ্যে। শিষ্য- সংসারে মানবের অশৌচ কি? গুরু- ঋণ। শিষ্য- অভয় কোনটী? গুরু- বৈরাগ্য। শিষ্য- সকলের ভয় কোনটী? গুরু- ধন।।৪১।।

শিষ্য- মানবের দুর্ল্লভ কি? গুরু- হরিভক্তি। শিষ্য- পাপ কি? গুরু- হিংসা। শিষ্য- কে ভগবানের প্রিয়? গুরু- যিনি নিজে উদ্বেগশূন্য হইয়া অপরের উদ্বেগ জন্মান না।।৪২।।

শিষ্য- কোথা হইতে সিদ্ধিলাভ কর্ত্তব্য? গুরু- তপস্যা হইতে। শিষ্য- কোথায় বুদ্ধি স্থাপনীয়? গুরু- ব্রাহ্মণে। শিষ্য- বুদ্ধি কোথা হইতে উৎপন্ন হয়? গুরু- বৃদ্ধসেবার দ্বারা। শিষ্য- বৃদ্ধ কে? গুরু- যাঁহারা ধর্ম্মতত্ত্ব জানেন।।৪৩।।

শিষ্য- সম্মানিত ব্যক্তির মরণ অপেক্ষা অধিক কি? গুরু- নিন্দা। শিষ্য- এই সংসারে সুখী কে? গুরু- ধনবান। শিষ্য- ধন কাহাকে বলে? গুরু- যাহা হইতে অভিলাষিত ফল প্রাপ্ত হওয়া যায়।।৪৪।।

শিষ্য- সকল সুখের কারণ কি? গুরু- পুণ্য। শিষ্য- কোথা হইতে দুঃখ উৎপন্ন হয়? গুরু- পাপ হইতে। শিষ্য- কাহার নিকট ঐশ্বর্য্য আছে? গুরু- যিনি ভক্তি সহকারে শিবের আরাধনা করেন।।৪৫।।

শিষ্য- কাহার উন্নতি হয়? গুরু- বিনীত ব্যক্তির। শিষ্য- কে পরাভূত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়? গুরু-যে ব্যক্তি গর্ব্বিত। শিষ্য- কাহাকে বিশ্বাস করা উচিৎ নহে? গুরু- যে সর্ব্বদা মিথ্যা কথা বলে।।৪৬।।

শিষ্য- কিরূপ মিথ্যা বাক্যে পাপ নাই? গুরু- যাহা ধর্ম্মরক্ষার্থ কথিত হয়। শিষ্য- কোন ধর্ম্ম সকলের অভিমত? গুরু- যাহা শিষ্ট ব্যক্তিগণের নিজ নিজ কুলপরাপরাগত।।৪৭।।

শিষ্য- সাধুর বল কি? গুরু- দৈব। শিষ্য- সাধু কে? গুরু- যিনি সর্ব্বদা সন্তুষ্ট। শিষ্য- দৈব কি? গুরু- পুণ্য। শিষ্য- পুণ্যবান কে? গুরু- সাধুরা যাহার সুনাম করে।।৪৮।।

শিষ্য-গৃহস্থের মিত্র কে? গুরু- স্ত্রী। শিষ্য- গৃহী কে? গুরু- যিনি যাগ করে। শিষ্য- যজ্ঞ কাহাকে বলে? গুরু- যাহা বেদে বিহিত এবং যাহা মনুষ্যগণের শ্রেয়স্কর।।৪৯।।

শিষ্য- কাহার ক্রিয়া ফলবতী হয়? গুরু- যে শিষ্ট ব্যক্তি আচারবাণ্। শিষ্য- শিষ্ট কে? গুরু- যিনি বেদরূপ প্রমাণে বিশ্বাসী। শিষ্য- হত কে? গুরু- যিনি ক্রিয়াভ্রষ্ট।।৫০।।

শিষ্য- ধন্য কে? গুরু- সন্ন্যাসী। শিষ্য- মান্য কে? গুরু- যিনি পণ্ডিত ও সাধু। শিষ্য- কাহার সেবা করণীয়? গুরু- যিনি দাতা। শিষ্য- দাতা কে? গুরু- যিনি যাচকের তৃপ্তি সাধন করেন।।৫১।।

শিষ্য- প্রাণীগণের ভাগ্য কি? গুরু- আরোগ্য। শিষ্য- সফল কে? গুরু- কৃষিকার্য্যকারী মানব। শিষ্য- কাহার পাপ নাই? গুরু- জপকারী পুরুষের। শিষ্য- পূর্ণ কে? গুরু- যিনি সন্ততিযুক্ত।।৫২।।

শিষ্য- মানবগণের দুষ্কর কি? গুরু- সর্ব্বদা মনের নিগ্রহ। শিষ্য- কে ব্রহ্মচর্য্যবাণ অর্থাৎ ব্রহ্মচারী? গুরু- যিনি উর্দ্ধরেতাঃ হইতে স্খলিত হন নাই অর্থাৎ যিনি অস্খলিতবীর্য্য।।৫৩।।

শিষ্য- শাস্ত্রে কাহাকে শ্রেষ্ঠ দেবতা বলিয়াছেন? গুরু- চিচ্ছক্তি অর্থাৎ চৈতন্য। শিষ্য- কে জগৎ রক্ষা করেন? গুরু- সূর্য্য। শিষ্য- সকলের জীবনহেতু কে? গুরু- মেঘ।।৫৪।।

শিষ্য- শূর কে? গুরু- যিনি ভয় হতে রক্ষা করেন। শিষ্য- রক্ষক কে? গুরু- গুরু। শিষ্য - কাহাকে জগদগুরু বলা যায়? গুরু- মহাদেবকে। শিষ্য- জ্ঞান কোথা হইতে পাওয়া যায়? গুরু- শিব হইতে।।৫৫।।

শিষ্য- কোথা হইতে মুক্তি লাভ হয়? গুরু- মুকুন্দভক্তি হইতে। শিষ্য- মুকুন্দ কে? গুরু- যিনি অবিদ্যার পরপারে লইয়া যান। শিষ্য- অবিদ্যা কাহাকে বলে? গুরু- যাহা আত্নপ্রকাশের প্রতিবন্ধক।।৫৬।।

শিষ্য- কাহার শোক নাই? গুরু- যাঁহার ক্রোধ নাই। শিষ্য- সুখ কি? গুরু- সন্তোষ। শিষ্য- রাজা কে? গুরু- যিনি প্রজারঞ্জন করেন। শিষ্য- কুকুর কে? গুরু- যে নিচজনের সেবা করে।।৫৭।।

শিষ্য- মায়াবী কে? গুরু- পরমেশ্বর। শিষ্য- ইন্দ্রজালতুল্য কে? গুরু- এই সংসার। শিষ্য- স্বপ্নসদৃশ্য কি? গুরু- জাগ্রৎকালিক ব্যবহার। শিষ্য - সত্য কি? গুরু- ব্রহ্ম।।৫৮।।

শিষ্য- মিথ্যা কি? যাহা জ্ঞানের দ্বারা নাশ্য হয়। শিষ্য- তুচ্ছ কি? গুরু- শশশৃঙ্গ, আকাশকুসুম, বন্ধ্যাপুত্র, কূর্ম্মলোম প্রভৃতি। শিষ্য- অনির্ব্বচনীয় কি? গুরু- মায়া। শিষ্য- কল্পিত পদার্থ কি? গুরু- দ্বৈত।।৫৯।।

শিষ্য- পারমার্থিক অর্থাৎ যথার্থ বস্তু কি? গুরু- অদ্বৈত। শিষ্য- অজ্ঞান কোথা হইতে উৎপন্ন হয়? গুরু- অজ্ঞান অনাদিকাল হইতে অাছে। শিষ্য - শরীরের পোষক অর্থাৎ রক্ষক কি? গুরু- প্রারদ্ধকর্ম্ম। শিষ্য- অন্নদাতা কে? গুরু- আয়ুঃ।।৬০।

শিষ্য- ব্রাহ্মণের উপাস্য কি? গুরু- গায়ত্রী, সূর্য্য ও অগ্নির দ্বারা ভগবান শম্ভূই উপাস্য। শিষ্য- গায়ত্রী, সূর্য ও শম্ভূই উপাস্য কেন? গুরু- তাহা তত্ত্ব অর্থাৎ সত্য বস্তু।।৬১।।

শিষ্য- প্রত্যক্ষদেবতা কে? গুরু- মাতা। শিষ্য- পূজ্য ও গুরু কে? গুরু- পিতা। শিষ্য- সর্ব্বদেবতাস্বরূপ কে? গুরু- জ্ঞান - কর্ম্ম বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ।।৬২।।

শিষ্য- কুলক্ষয়ের কারণ কি? গুরু- সজ্জনগণের প্রতি সন্তাপ অর্থাৎ দুখোঃৎপাদন করা। শিষ্য- কাহাদের বাক্য অমোঘ অর্থাৎ সত্য? গুরু- যাঁহাদের সত্য, মৌন ও শম অর্থাৎ ইন্দ্রিয় সংযম করিবার সামর্থ্য আছে।।৬৩।।

শিষ্য- জন্ম কি? গুরু- বিষয়সঙ্গ। শিষ্য- মানবের পরবর্তী জন্ম কি? গুরু- পুত্র। শিষ্য- কোন বস্তুকে ত্যাগ করা যায় না? গুরু- মৃত্যু। শিষ্য- কোথায় পাদবিন্যাস করা কর্ত্তব্য? গুরু- নয়নের দ্বারা প্রত্যক্ষীকৃত স্থানে।।৬৪।।

শিষ্য- অন্নদানের পাত্র কি? গুরু- ক্ষুধার্ত্ত ব্যক্তি। শিষ্য- কাহার অর্চ্চনা করা উচিত? গুরু- ভগবানের অবতারের। শিষ্য- ভগবান কে? গুরু- শঙ্কর ও নারায়ণের ঐক্যরূপ মহেশ্বর।।৬৫।।

শিষ্য- ভগবদ্ভক্তির ফল কি? গুরু- সেই সেই লোকের স্বরূপ সাক্ষাৎকার। শিষ্য- মোক্ষ কি? গুরু- অবিদ্যা নাশ। শিষ্য- সকল বেদের উৎপত্তিস্থান কি? গুরু- ওঁকার।।৬৭।।

এই প্রশ্নত্তোর রত্নমালিকা যাঁহাদের কন্ঠস্থ থাকে, তাঁহারা মুক্তাভরণপরিহিত ব্যাক্তিগণের ন্যায় নির্ম্মল হইয়া সমস্ত সাধুসমাজে শোভা পাইয়া থাকেন।।৬৭।।

ইতি পরমহংস পরিব্রাজক আচার্য গোবিন্দ ভগবৎপূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য ভগবান বিরচিত প্রশ্নোত্তর রত্নমালিকা সমাপ্ত।

 

 

Saturday, 6 June 2020

ব্রহ্মের উপাদানকারণতা প্রতিপাদনের জন্য অন্য হেতুর সংগ্রহঃ-


ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি, অনাগত সৃষ্টিবিষয়ক সঙ্কল্প প্রদর্শন দ্বারা মায়ারূপ উপাধিযুক্ত সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান্ পরমেশ্বর জগতের অভিন্ন নিমিত্তোপাদান কারণ। আবার ব্রহ্ম হইতে উৎপন্ন ও তাঁহাতেই প্রলীন হয় বলিয়া ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ, তাহা স্পষ্ট করিবার জন্য মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ এই সূত্রটীর অবতারণা করিতেছেন-
'সাক্ষাচ্চোভয়াম্নানাৎ৷৷' -(ব্রহ্মসূত্র- ১.৪.২৫)
শঙ্করাচার্য্যের 'শাঙ্করভাষ্য' অনুবাদঃ- এই সূত্রটী উপাদানকারণতার অভ্যুচ্চয় অর্থাৎ ব্রহ্মের উপাদানকারণতা প্রতিপাদনের জন্য অন্য হেতুর সংগ্রহ। আর এই হেতুবশতঃও ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ, যেহেতু সাক্ষাৎভাবে ব্রহ্মকেই কারণরূপে গ্রহণ করিয়া উৎপত্তি ও প্রলয়, এই দুইটী পঠিত হইতেছে, যথা-
'সর্বাণি হ বা ইমানি ভূতানি আকাশাৎ এব সমুত্পদ্যন্তে৷ আকাশং প্রত্যস্তং যন্তি' -(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-১।৯।১)
অর্থাৎ "স্থাবরজঙ্গমাত্মক এই সমস্ত ভূতবর্গ আকাশ হইতেই সমুৎপন্ন হয় ও আকাশে অস্তগমন করে।" ইত্যাদি শ্রুতি।

যাহা হইতে যাহা উৎপন্ন হয় এবং যাহাতে প্রলীন হয়, তাহা তাহার উপাদান, ইহা প্রসিদ্ধ, যেমন পৃথিবী ধান্য ও যবাদির উপাদান। উপরোক্ত 'আকাশাৎ এব' শ্রুতিবাক্যগত 'এব' কারণটীর দ্বারা যে অন্য উপাদানের অগ্রহণ সূচিত হয়, তাহাকে ভগবান সূত্রকার 'সাক্ষাৎ' এই পদটীর দ্বারা প্রদর্শন করিতছেন। আর কার্য্যবস্তুর যে প্রলয়, তাহা উপাদান হইতে অন্যস্থলে পরিদৃষ্ট হয় না। (সুতরাং আকাশশব্দিত ব্রহ্মবস্তুই জগতের উপাদান, ইহাই নির্ণীত হয়।)
ইতি ভাষ্যানুবাদ।

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...