Friday, 9 October 2020

মন দ্বারা ব্রহ্মকে মনন করিতে পারা যায় না, কারণ মনের প্রকাশক বলিয়া ব্রহ্মই হইতেছে মনের নিয়ন্তাঃ-



সামবেদের তলবকার ব্রাহ্মণের অন্তর্গত কেনোপনিষদের প্রথম খণ্ডে বর্ণিত আছে-

যন্মনসা ন মনুতে যেনাহুর্মনো মতম্ ৷

তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে ৷৷- (কেন উপনিষৎ-১।৫)

'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- ভগবান্ ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য্য বলিতেছেন- 'মন দ্বারা যাঁহাকে কেহ মনন করিতে পারে না'। মন বলিতে এখানে মন ও বুদ্ধির একত্বরূপে অন্তঃকরণরূপ অর্থ গ্রহণ করা হইয়াছে। যাহার দ্বারা মনন করা হয় তাহাকে মন বলে, এবং সকল ইন্দ্রিয়ের বিষয়েতে যুক্ত হয় বলিয়া ইহা সকল ইন্দ্রিয়ের জন্য সমান। আর-
'কামঃ সংকল্পো বিচিকিত্সা শ্রদ্ধাশ্রদ্ধা ধৃতিরধৃতির্হ্রীর্ধীর্ভীরিত্যেতত্সর্বং মন এব '-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-১।৫।৩)
অর্থাৎ কামনা, সঙ্কল্প, সংশয়, শ্রদ্ধা, অশ্রদ্ধা, ধৈর্য, অধৈর্য, লজ্জা, বুদ্ধি ও ভয়-এই সমস্তই (মনোধর্ম্ম বলিয়া) মনই।
এই শ্রুতি অনুসারে কামনাদি বৃত্তিযুক্ত যাহা তাহাই মন। সে মনের দ্বারা লোকে মনের প্রকাশক সেই চৈতন্যজ্যোতিঃকে কিন্তু মনন করিতে অর্থাৎ সঙ্কল্প বা নিশ্চয় করিতে পারে না, কারণ মনের প্রকাশক বলিয়া চৈতন্যজ্যোতিঃই হইতেছে মনের নিয়ন্তা। আত্মচৈতন্যই সকল বিষয়ের প্রত্যক্ অর্থাৎ মূলসত্ত্বা বলিয়া অন্তঃকরণ প্রত্যাগাত্মাতে প্রবৃত্ত হইতে পারে না। অন্তঃস্থ চৈতন্যজ্যোতির দ্বারা প্রকাশিত হইলেই মনের মননের সামর্থ্য লাভ হয়। সেইজন্য বৃত্তির সহিত মন ব্রহ্মের দ্বারা জ্ঞাত হয় অর্থাৎ প্রকাশিতরূপে ব্যাপ্তিযুক্ত হয়-ইহা ব্রহ্মবিদ্গণ বলিয়া থাকেন। অতএব মনের অন্তরাত্মরূপ প্রকাশক সেই আত্মাকে ব্রহ্ম বলিয়া জানিও। এমনকি এই যে লোকে বিবিধ অনাত্ম-উপাধিরূপ ভেদবিশিষ্ট ঈশ্বরাদিকে উপাসনা অর্থাৎ ধ্যান করে ইনিও শুদ্ধ ব্রহ্মসংজ্ঞক নন। এই বাক্য দ্বারা অনাত্মা উপাধি প্রভৃতির অব্রহ্মত্ব বলা হইয়াছে। নির্বিশেষ আত্মাতেই ব্রহ্মবুদ্ধি করিতে হইবে এই নিয়ম করিবার জন্য অথবা আত্মভিন্ন পদার্থে ব্রহ্মবুদ্ধির নিবৃত্তি করিবার জন্য 'ইহা ব্রহ্ম নহে' এই বাক্য শ্রুত হইয়াছে।...........

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...