Thursday, 5 November 2020

আত্মানাত্মবিবেকঃ-


ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য প্রণীত 'আত্মানাত্মবিবেক'-

সকল দৃশ্য প্রপঞ্চই অনাত্মা, দ্রষ্টাই বিবেকীর আত্মা হয়। এই আত্মানাত্মবিবেক বহুশাস্ত্রে কথিত হয়েছে।

আত্মা ও অনাত্মার পার্থক্য বিষয়ে বলা হচ্ছে-

প্রশ্ন-আত্মার দুঃখ কি নিমিত্ত হয়?

উত্তর-শরীর ধারণ নিমিত্ত হয়। এই বিষয়ে শ্রুতি রয়েছে,'যার দেহাভিমান রয়েছে তার সুখদুঃখের বিরতি নাই।'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৮।১২।১)

প্রশ্ন-শরীর ধারণ কি কারণে হয়?

উত্তর-কর্ম্মদ্বারা।

প্রশ্ন-কর্মই বা কি কারণে হয়?

উত্তর-(আসক্তি) রাগদ্বেষাদি কারণে হয়।

প্রশ্ন-রাগদ্বেষাদি কি কারণে হয়?

উত্তর-অভিমানবশতঃ।

প্রশ্ন-অভিমান কি কারণে হয়?

উত্তর-অবিবেকহেতু।

প্রশ্ন-যদি বলি অবিবেক কি কারণে হয়?

উত্তর-অজ্ঞানবশতঃ।

"প্রশ্ন- যদি বলি অজ্ঞান কি হেতু হয়?

উত্তর- অজ্ঞান কোন কারণ থেকে হয় না। অজ্ঞান অনাদি ও অনির্বচনীয়। অজ্ঞান থেকে অবিবেক উৎপন্ন হয়। অবিবেক থেকে অভিমান হয়। অভিমান থেকে আসক্তি প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। পাপ ও পুণ্যকর্মসমূহ থেকে শরীর ধারণ হয়। শরীর ধারণই দুঃখের কারণ। সর্বতোভাবে শরীর পরিগ্রহ বিনষ্ট হলে দুঃখের নিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন- 'সর্বাত্ম' এই পদটি কি কারণে প্রয়োগ হয়েছে?

উত্তর- সুষুপ্তি অবস্থায় দুঃখের নিবৃত্তি হলেও পুনরায় ব্যুত্থান কালে ঐ দুঃখ উৎপন্ন হয়; কারণ সুষুপ্তি অবস্থায় তা বাসনারূপে অর্থাৎ সূক্ষ্মভাবে থাকে। অতএব তার নিবৃত্তির জন্য 'সর্বাত্ম' পদটি প্রয়োগ হয়েছে সর্বতোভাবে শরীর পরিগ্রহ নিবৃত্ত হলে দুঃখের নিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন— শরীর পরিগ্রহের নিবৃত্তি কখন হয়?

উত্তর— সর্বতোভাবে কর্মনিবৃত্তি হলে শরীর পরিগ্রহের নিবৃত্তি হয় অর্থাৎ আর শরীর ধারণ হয় না।

প্রশ্ন— কর্মনিবৃত্তি কখন হয়?

উত্তর— সর্বতোভাবে আসক্তি প্রভৃতির নিবৃত্তি হলে কর্মনিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন— আসক্তি প্রভৃতির নিবৃত্তি কখন হয়?

উত্তর— সর্বতোভাবে অভিমাননিবৃত্তি হলে আসক্তি প্রভৃতির নিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন— কখন অভিমাননিবৃত্তি হয়?

উত্তর— সর্বতোভাবে অবিবেকনিবৃত্তি হলে অভিমাননিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন— অবিবেকনিবৃত্তি কখন হয়?

উত্তর— সর্বতোভাবে অজ্ঞাননিবৃত্তি হলে অবিবেকনিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন— অজ্ঞাননিবৃত্তি কখন হয়?

উত্তর— জীবব্রহ্মের ঐক্যবোধ হ'লে সর্বতোভাবে অজ্ঞাননিবৃত্তি হয়।

আচ্ছা, নিত্যকর্মসমূহের (অনুষ্ঠান শাস্ত্রে) বিধান থাকায় নিত্যকর্মসমূহের (অনুষ্ঠান) থেকেও অবিদ্যানিবৃত্তি হয়৷ জ্ঞানের কি প্রয়োজন—এরূপ আশঙ্কা হলে তদুত্তরে বলা হয়—কর্মাদি ব্যতীতই অবিদ্যানিবৃত্তি হয়। তাহা কিরূপে হয়, এরূপ যদি বল, তাহলে বলি—কর্ম ও অজ্ঞানের মধ্যে বিরোধ হয় না। জ্ঞান ও অজ্ঞানের মধ্যে বিরূদ্ধভাব হয়। অতএব জ্ঞানের দ্বারাই অজ্ঞানের নিবৃত্তি হয়।

প্রশ্ন— সেই জ্ঞান কিরূপে হয়?

উত্তর— বিচার থেকেই হয়। আত্মা ও অনাত্মার বিবেক বিষয়ক বিচার থেকেই ঐ জ্ঞান হয়।

.......................................................................................................
বিঃদ্রঃ-ধারাবাহিক ভাবে লিখব।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...