Wednesday, 16 December 2020

শ্রুতি ও স্মৃতি বলে জীবের বিভুত্ব প্রতিপাদনঃ-


এক্ষণে জীব কি পরিমাণবিশিষ্ট, ইহা চিন্তা করা হইতেছে। তাহা কি অণুপিমাণ, অথবা মধ্যম পরিমাণ অথবা মহাপরিমাণ অর্থাৎ বিভু,সর্ব্বব্যাপক? কিন্তু আত্মা উৎপন্ন হয় না এবং নিত্যচৈতন্যস্বরূপ, ইহা কথিত হইয়াছে। আর সেই হেতু পরমাত্মাই জীব ইহা আসিয়া পড়িতেছে। আবার পরমাত্মার অনন্ততা শ্রুতিতে পঠিত হইয়াছে, তাহাতে জীবের পরিমাণবিষয়ক বিচারের অবতারণা কি প্রকারে হইতেছে? তদুত্তরে বলা হইতেছে হ্যাঁ ইহা সত্য, কিন্তু উৎক্রান্তি, চন্দ্রলোকাদিতে গতি এবং তথা হইতে আগমন প্রতিপাদক শ্রুতিবাক্যসকল জীবের পরিচ্ছেদ (সসীমতা) প্রাপ্ত করাইতেছে। আর কোন কোন স্থলে স্ব (-অণুপরিমাণতা) বোধক শব্দের দ্বারা জীবের অণুপরিমাণতা পঠিত হইতেছে। সেই শ্রুতি বাক্যসকলের পরস্পর অবিরোধ প্রতিপাদনের জন্য ভগবান বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-

তদ্গুণসারত্বাত্তু তদ্ব্যপদেশঃ প্রাজ্ঞবৎ ৷৷ ব্রহ্মসূত্র-২.৩.২৯৷৷
শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- ভগবাৎপাদ্ শ্রীশঙ্করাচার্য্য শারীরকভাষ্যম্ এ বলিতেছেন-সূত্রস্থ 'তু' শব্দটী (বিরোধী) পক্ষকে ব্যাবৃত্ত (খণ্ডিত) করিতেছে। আত্মা (জীব) অণু ইহা শ্রুতিতে নাই। জীবের উৎপত্তি শ্রুতিতে বর্ণিত না হওয়ায়, পরব্রহ্মেরই জীবরূপে প্রবেশ শ্রুতিতে বর্ণিত হওয়াই এবং ব্রহ্মের সহিত জীবের তাদাত্ম্য অর্থাৎ তৎস্বরূপতা বা অভিন্নতা উপদিষ্ট হওয়ায় পরব্রহ্মই জীব, ইহা কিন্তু পূর্বে কথিত হইয়াছে। আর যদি জীব পরব্রহ্মই হয়, তাহা হইলে পরব্রহ্ম যতটা জীবও ততটা হওয়া উচিত। আর পরব্রহ্মের বিভুতা শ্রুতিতে পঠিত হইয়াছে, সেইহেতু জীব বিভু। তাহা হইলে-
'স বা এষ মহানজ আত্মা যোযং বিজ্ঞানমযঃ প্রাণেষু'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪।৪।২২)
"সেই এই মহান জন্মরহিত আত্মা, যিনি ইন্দ্রিয়সকলের মধ্যে বিজ্ঞানময়(-বুদ্ধিরূপ উপাধিযুক্ত)", ইত্যাদি এই জাতীয় জীববিষয়ক বিভুত্বপ্রতিপাদক শ্রুতি ও স্মৃতি সকল সমর্থিত হইয়া থাকে।.......................................

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...