Monday, 27 December 2021

মুখ্য প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তিঃ-

 

সদানন্দযোগীন্দ্র সরস্বতী বেদান্তসারে বলিতেছেন-"পণ্ডিতেরা সেই প্রথমোৎপন্ন আকাশাদি পঞ্চভূতকে সূক্ষ্মভূত, তন্মাত্রা ও অপঞ্চীকৃত মহাভূত বলিয়া থাকেন।"-(বেদান্তসারঃ, ৫৯)

অপঞ্চীকৃত পঞ্চ সূক্ষ্মভূতকে পণ্ডিতেরা তন্মাত্র বলেন কেন?

ভগবান শঙ্করাচার্যের "অহংকারাৎ পঞ্চতন্মাত্রাণি" এই পঞ্চীকরণ সূত্রের বার্ত্তিকাভরণম্ এ অভিনবনারায়ণেন্দ্র সরস্বতী বলছেন-

বিষ্ণুপুরাণেও এইরূপ উক্ত হয়েছে- 'শব্দ স্পর্শাদি বিশেষ বিশেষ ধর্ম আকাশাদি পৃথক্ পৃথক্ ভূত সকলে তাদাত্ম্য সম্বন্ধেই থাকে, অন্যত্র থাকে না। অর্থাৎ শব্দ আকাশেই থাকে, স্পর্শ বায়ুতেই থাকে ইত্যাদি। এইজন্য স্মৃতি শাস্ত্রে উহাদের নাম তন্মাত্র বলা হয়েছে।'

সূক্ষ্মশরীর কি?

সদানন্দযোগীন্দ্র সরস্বতী বেদান্তসারে বলিতেছেন- "আকাশাদি এইসকল পাঁচটি সূক্ষ্মভূত থেকে সূক্ষ্মশরীর সকল উৎপন্ন হয়। সতেরটি অবয়ব বিশিষ্ট লিঙ্গশরীরকে সূক্ষ্মশরীর বলে। পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয়, পাঁচটি বায়ু, মন ও বুদ্ধি- এই সতেরোটি অবয়ব নিয়ে সূক্ষ্মশরীর গঠিত।"-(বেদান্তসার,৬০-৬২)

লিঙ্গশরীর কেন বলা হয়?

তদুত্তরে বলিব, ইহার দ্বারা আত্মা জ্ঞাপিত হয় বলিয়া ইহাকে বলা হয় 'লিঙ্গ'।

আনন্দ গিরি পঞ্চীকরণ বিবরণে তাহাই বলিতেছেন- "এই লিঙ্গ কোন প্রকারে প্রত্যাগাত্মার জ্ঞাপক- এইকারণে‌ ইহাকে 'লিঙ্গ' এইরূপে ব্যাখ্যা করা হয়। এই লিঙ্গের কার্য্যত্ব বলিয়া ফলতঃ ভৌতিকত্ব বলায় লিঙ্গে অহম্ অভিমান অর্থাৎ 'লিঙ্গই আমি' এইরূপ অভিমান অপ্রামাণিক- ইহাই মনে করিতেছেন। অতএব এই অপঞ্চীকৃত ভূতপঞ্চক্বই লিঙ্গ। এই পূর্বোক্ত সপ্তদশ অবয়বযুক্ত লিঙ্গ ভূতকার্য বলিয়া ভৌতিক।"-(পঞ্চীকরণ বিবরণ-১৩)

বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের প্রাণোৎপত্ত্যধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় পরমেশ্বর হইতে আকাশাদির ন্যায় ইন্দ্রিয়াদিও উৎপন্ন হইয়াছে। এক্ষণে সেই আকাশাদি মহাভূত হইতে লিঙ্গশরীরের উৎপত্তি বিষয়ক আলোচনার সূচনা হইবে। ইন্দ্রিয়সকল কি অনাদি অথবা পরমেশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ বলিতেছেন-

তথা প্রাণাঃ ৷৷ ব্রহ্মসূত্র ২.৪.১৷৷

ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য শারীরক মীমাংসা ভাষ্যে বলিতেছেন- এই স্থলে প্রাণ সকলের (-মুখ্য প্রাণ ও ইন্দ্রিয়সকলের) উৎপত্তিবোধক শ্রুতি বাক্যসকলই উদাহরণ, যথা-

'এতস্মাদাত্মনঃ সর্বে প্রাণাঃ সর্বে লোকাঃ সর্বে দেবাঃ সর্বাণি ভূতানি ব্যুচ্চরন্তি'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-২।১।১০)

"এই আত্মা হইতে সকল প্রাণ, সকল লোক, সকল দেবতা এবং সকল প্রাণী নানাভাবে উদ্গত হয়।"

উক্ত শ্রুতিবাক্যে যেমন লোক প্রভৃতি পরব্রহ্ম হইতে উৎপন্ন হয়, 'তথা'(-তদ্রূপ) প্রাণসকলও উৎপন্ন হয়, ইহাই অর্থ।

এইপ্রকারে 'এতস্মাজ্জায়তে প্রাণো মনঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি চ৷ খং বায়ুর্জ্যোতিরাপঃ পৃথিবী বিশ্বস্য ধারিণী'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-২।১।৩)

"ইঁহা হইতে প্রাণ, মন, ইন্দ্রিয়সকল, আকাশ, বায়ু, বহ্নি, জল এবং সকলের আধারভূতা পৃথিবী উৎপন্ন হয়।"

ইত্যাদি এইসকল শ্রুতিবাক্যেও আকাশাদির ন্যায় প্রাণ সকলের উৎপত্তি শ্রুত হয়। সুতরাং প্রাণসকল যে বিকার (-কার্য্য বস্তু) শ্রুতিপ্রমাণ হেতু তাহা সিদ্ধ হইল।

আবার ছান্দোগ্য শ্রুতিতে স্পষ্টতই বুঝাইতেছে যে, যে-ভূতবর্গ স্বয়ং ব্রহ্ম হইতে জাত সেই ভূতবর্গ হইতেই ইন্দ্রিয়াদি উৎপন্ন হইয়াছে। ছান্দোগ্যের এই প্রকরণেই বাগিন্দ্রিয়, প্রাণ ও মনের যথাক্রমে তেজঃ, জল ও ক্ষিতি হইতে উৎপত্তি পঠিত হইতেছে, যথা-

'অন্নময়ং হি সোম্য মন আপোময়ঃ প্রাণস্তেজোময়ী বাক্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।৫।৪)

"হে সৌম্য, মন অন্নের বিকার (-কার্য্য), প্রাণ জলের বিকার এবং বাগেন্দ্রিয় তেজের বিকার" ইত্যাদি। এইস্থলে ক্ষিত্যাদি পরম্পরাতে প্রাণসকলের (-মুখ্য প্রাণ ও ইন্দ্রিয়সকলের) ব্রহ্মকার্য্যতাই সিদ্ধ হয়।........

Saturday, 25 December 2021

নর্মদাষ্টকং স্তোত্র

 


|| শ্রী গণেশায় নমঃ ||

সবিন্দুসিন্ধুসুস্খলত্তরঙ্গভঙ্গরঞ্জিতং

দ্বিষৎসু পাপজাতজাতকাদিবারিসংয়ুতম্ ।

কৃতান্তদূতকালভূতভীতিহারিশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||১||

ভাবার্থ - হে সুখদায়িনি, ( তোমার ) তরঙ্গভঙ্গ, বিন্দু এবং সিন্ধু ( নদীপ্রবাহ ) চুম্বিত দৃষৎ অর্থাৎ শিলাতটে আস্ফালিত হয়ে যার শোভা সম্পাদন করেছে, যা পাপরাশিবিনাশিনী ও পুনর্জন্মনিবারিণী তোমারই বারিধারার বিধৌত, যা প্রাণিগণের কৃতান্তদূতভীতি এবং মৃত্যুভীতি নিবারণ করে, দেবি নর্মদে তোমার সেই চরণকমলে আমি প্রণাম করছি ।

[ নর্মদাপ্রপাতস্থলে উপরিভাগে শিলাখণ্ড-স্খলিত জলবিন্দু যে শুত্র কুসুমরাশি বর্ষণ করছে, অধোদেশে দুগ্ধাবর্তবৎ প্রবাহ, –পাষাণময় উভয় তটে আস্ফালিত তরঙ্গমালা তুলে যে আবেগে ছুটেছে, এই বন্দনায় তার স্বরূপ অভিব্যক্ত। দুঃখ এই, পাঠ-বিকৃতি, এই অর্থকে এত দিন ফুটিতে দেয় নাই ] ||১||

ত্বদম্বুলীনদীনমীনদিব্যসম্প্রদায়কং

কলৌ মলৌঘভারহারিসর্বতীর্থনায়কম্ ।

সুমৎস্যকচ্ছনক্রচক্রবাকচক্রশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||২||

ভাবার্থ - হে মৎস্য-শোভিত-সজল-তটশালিনি, হে কুম্ভীর-চক্রবাক- মণ্ডল-সুখদায়িনী, দেবি নর্মদে, –তোমার জলে যে সকল নগণ্য মীন লয় প্রাপ্ত হয়, তাদের দিব্য সম্পৎপ্রাপ্তি যার প্রসাদে হয়, কলিমল-রাশি-ভারহারি সর্বতীর্থ-নায়িকা তোমার সেই চরণকমলে নমস্কার করি ||২||

মহাগভীরনীরপূরপাপধূতভূতলং

ধ্বনৎসমস্তপাতকারিদারিতাপদাচলম্ ।

জগল্লয়ে মহাভয়ে মৃকণ্ডুসূনুহর্ম্যদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৩||

ভাবার্থ - হে দেবী, যৎসংসৃষ্ট মহাগভীর জলস্পর্শে পাপগ্রস্তভূতল পূত হয়েছে, যদীয় গর্জনপরায়ণ বারি নিখিলপাতকবিনাশী এৰং পর্বত বিদীর্ণ করে প্রবাহিত, ভীতিপ্রদ মহা প্রলয়কালে হে মার্কণ্ডেয় মুনির আশ্রয়দায়িনী, হে দেবী নর্মদে! তোমার সেই চরণকমলে নমস্কার ||৩||

গতং তদৈব মে ভয়ং ত্বদম্বু বীক্ষিতং যদা

মৃকণ্ডুসূনুশৌনকাসুরারিসেবিতং সদা ।

পুনর্ভবাব্ধিজন্মজং ভবাব্ধিদুঃখশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৪||

ভাবার্থ - হে দেবি, মার্কণ্ডেয়-শৌনকাদি মুনিগণ ও সুরগণের সদাসেবিত ভবদীয় বারি আমি যখন দর্শন করছি, তখনই পুনঃ সংসার-সাগরে জন্মজনিত ভয় গিয়েছে, ( অতএব ) হে ভবসমুদ্রদুঃখবারিণী হে দেবি নর্মদে, তোমার চরণকমলে নমস্কার করি ||৪||

অলক্ষ্যলক্ষকিন্নরামরাসুরাদিপূজিতং

সুলক্ষনীরতীরধীরপক্ষিলক্ষকূজিতম্ ।

বসিষ্ঠশিষ্টপিপ্পলাদিকর্দমাদিশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৫||

ভাবার্থ - হে বশিষ্ট-শিষ্ট-পিপ্পলাদ-কর্দমাদি মহর্ষিগণসুখদায়িনী, দেবি নর্মদে, অসংখ্য কিন্নর অমর ও অসুর প্রভৃতি পুজিত সুলক্ষণ নীরতীরস্থ লক্ষপক্ষিকুজনসুচিত তদীয় চরণকমলে নমস্কার করি ||৫||

সনৎকুমারনাচিকেতকশ্যপাত্রিষট্পদৈঃ

ধৃতং স্বকীয়মানসেষু নারদাদিষট্পদৈঃ ।

রবীন্দুরন্তিদেবদেবরাজকর্মশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৬||

ভাবার্থ - হে সূর্য চন্দ্র দেবরাজ ও রাজা রন্তিদেবের কর্মানুসারে সুখবিধায়িনী দেবি নর্মদে, সনৎকুমার, নাচিকেত, কশ্যপ, অত্রি প্রমুখ ঋষির ছয়টি আশ্রমস্থানে ও ভ্রমরসদৃশ নারদাদি মুনিগণের মানসমধ্যে স্থিত ত্বদীয় চরণকমলে নমস্কার করি ||৬||

অলক্ষলক্ষলক্ষপাপলক্ষসারসায়কং

ততস্তু জীবজন্তুতন্তুভুক্তিমুক্তিদায়কম্ ।

বিরিঞ্চিবিষ্ণুশঙ্করস্বকীয়ধামশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৭||

ভাবার্থ - হে ব্রহ্মলোক, বিষ্ণুলোক ও শিবলোক-সুখ-বিধায়িনী দেবি নর্মদে, অলক্ষ্য লক্ষ লক্ষ পাপ যার ভেদ্য-লক্ষ্য–সেইরপ শরস্বরূপে যিনি অবস্থিত, যিনি ভূচর জীব, খেচর জন্ত এবং গ্রাহ প্রভৃতি জলচরকেও ভোগ-মোক্ষ প্রদান করেনঃ তোমার সেই বিশাল চরণকমলে নমস্কার করি ||৭||

অহোঽমৃতং সমং শ্রুতং মহেশকেশজাতটে

কিরাতসূতবাড়বেষু পণ্ডিতে শঠে নটে ।

দুরন্তপাপতাপহারি সর্বজন্তুশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৮||

ভাবার্থ - হে সর্বজীবসুখবিধায়িনী দেবী নর্মদে, তোমার এই অমৃত ( জল ) গোদাবরীতটে, কিরাত, সূত ও বাড়ব জাতিতে এবং পণ্ডিত ও শঠে সর্বত্র সমান, এ শান্ত্রে শত হয়েছে, অতএব তোমার চরণকমলে নমস্কার করি ||৮||

ইদং তু নর্মদাষ্টকং ত্রিকালমেব যে সদা

পঠন্তি তে নিরন্তরং ন যান্তি দুর্গতিং কদা ।

সুলভ্যদেহদুর্লভং মহেশধামগৌরবং

পুনর্ভবা নরা ন বৈ বিলোকয়ন্তি রৌরবম্ ||৯||

ভাবার্থ - হে দেবি! যে ব্যক্তি প্রতিদিন প্রাতঃকালাদি সন্ধ্যাত্রয়ে ভক্তিপূর্বক এই নর্মদাষ্টক পাঠ করে, সে কখনো দুঃখভোগ করে না, এই নিত্য লভ্য দেহে দুর্লভ মহেশ্বরলোকের গৌরবলাভ করে, আর সেই ব্যক্তি পুনর্বার সংসারযাতনা ভোগ করে না এবং কখনও তার রৌরব নরকদর্শন হয় না ||৯||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ নর্মদাষ্টকং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য ভগবতঃ বিরচিত নর্মদাষ্টক স্তোত্র সমাপ্ত

 

Thursday, 9 December 2021

প্রলয়কালে সৃষ্টির বিপরীতক্রমে ভূতসকলের লয়ঃ-


অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টিক্রম বিষয়ক ধারাবাহিক আলোচনায় আজকের আলোচ্য বিষয় প্রলয়ে উৎপত্তিক্রমের বৈপরীত্য। বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের বিপর্যয়াধিকরণম্ এর প্রতিপাদ্য বিষয় প্রলয়কালে সৃষ্টির বিপরীতক্রমে ভূতবর্গ লয় প্রাপ্ত হয়। এখন প্রশ্ন হইতেছে- বিশ্বের প্রলয়ের সময় পদার্থসমূহ যে ব্রহ্মে লীন হয় তাহা কি সৃষ্টিকালীন ক্রমানুসারে না বিপরীতক্রমে? ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-

বিপর্যয়েণ তু ক্রমোত উপপদ্যতে চ৷৷ ব্রহ্মসূত্র-২.৩.১৪

ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য এই সূত্রের ভাষ্যে সিদ্ধান্ত করিতেছেন- সেহেতু আমরা বলিতেছি- প্রলয়ের ক্রম এই উৎপত্তিক্রম হইতে বিপরীতভাবেই হওয়া উচিত। যেহেতু লোকমধ্যে সেইপ্রকারই পরিদৃষ্ট হইতেছে, যে ক্রমে সোপানে আরূঢ় হয়, তাহার বিপরীতক্রমে অবরোহন করে। আর দেখাও যাইতেছে- মৃত্তিকা হইতে উৎপন্ন ঘট ও শরা প্রভৃতি বিলয়কালে মৃত্তিকাভাবই প্রাপ্ত হয়, আবার জল হইতে উৎপন্ন হিমশিলা প্রভৃতি বিলয়কালে মৃত্তিকাভাবই প্রাপ্ত হয়, ইত্যাদি। এইহেতু ইহা সঙ্গত যে, পৃথিবী জল হইতে উৎপন্ন হইয়া স্থিতিকাল অতীত হইলে জলে লয় প্রাপ্ত হইবে, আর জলও তেজঃ হইতে উৎপন্ন হইয়া তেজে লয় প্রাপ্ত হইবে। এই প্রকারে ক্রমশঃ সূক্ষ্ম ও সূক্ষ্মতর অনন্তর অনন্তর কারণে লয় প্রাপ্ত হইয়া সমস্ত কার্য্য-প্রপঞ্চ পরমকারণ ও পরমসূক্ষ্ম ব্রহ্মে বিলীন হয়, এইপ্রকার অবগত হইতে হইবে। যেহেতু নিজের কারণকে অতিক্রম দ্বারা কারণ এর কারণে কার্য্যের বিলয় ন্যায্য নহে। স্মৃতিতেও তত্তৎস্থলে-

জগত্প্রতিষ্ঠা দেবর্ষে পৃথিব্যপ্সু প্রলীয়তে৷ জ্যোতিষ্যাপঃ প্রলীৎন্তে জ্যোতির্বায়ৌ প্রলীয়তে'-(মহাভারত, শান্তিপর্ব-৩৩৯।২৯)

"হে দেবর্ষি, জগতের প্রতিষ্ঠা (উপাদান) পৃথিবী জলে প্রলীন হয়, জল তেজে প্রলীন হয়, তেজঃ বায়ুতে প্রলীন হয়", ইত্যাদি এইসকল স্থলে উৎপত্তিক্রমের বিপরীতভাবেই প্রলয়ের ক্রম প্রদর্শিত হইয়াছে।

উৎপত্তিক্রম কিন্তু ভুতসকলের উৎপত্তিতেই শ্রুত হইয়াছে বলিয়া প্রলয়েও গৃহীত হইতে পারে না। আর তাহা (—সেই শ্রৌত উৎপত্তিক্রম) অযোগ্য হওয়ায় প্রলয়কর্ত্তৃক আকাঙ্ক্ষিত হয় না, কার্য্য ধ্রিয়মাণ (—কারণাবলম্বনে বর্ত্তমান) থাকিলে কারণের প্রলয় নিশ্চয়ই সঙ্গত নহে, যেহেতু কারণের নাশ হইলে কার্য্যের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত নহে। কিন্তু কার্য্যের বিনাশ হইলে কারণের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত, যেহেতু মৃত্তিকা প্রভৃতিতে এইপ্রকার পরিদৃষ্ট হয়।

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...