Thursday, 9 December 2021

প্রলয়কালে সৃষ্টির বিপরীতক্রমে ভূতসকলের লয়ঃ-


অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টিক্রম বিষয়ক ধারাবাহিক আলোচনায় আজকের আলোচ্য বিষয় প্রলয়ে উৎপত্তিক্রমের বৈপরীত্য। বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের বিপর্যয়াধিকরণম্ এর প্রতিপাদ্য বিষয় প্রলয়কালে সৃষ্টির বিপরীতক্রমে ভূতবর্গ লয় প্রাপ্ত হয়। এখন প্রশ্ন হইতেছে- বিশ্বের প্রলয়ের সময় পদার্থসমূহ যে ব্রহ্মে লীন হয় তাহা কি সৃষ্টিকালীন ক্রমানুসারে না বিপরীতক্রমে? ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-

বিপর্যয়েণ তু ক্রমোত উপপদ্যতে চ৷৷ ব্রহ্মসূত্র-২.৩.১৪

ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য এই সূত্রের ভাষ্যে সিদ্ধান্ত করিতেছেন- সেহেতু আমরা বলিতেছি- প্রলয়ের ক্রম এই উৎপত্তিক্রম হইতে বিপরীতভাবেই হওয়া উচিত। যেহেতু লোকমধ্যে সেইপ্রকারই পরিদৃষ্ট হইতেছে, যে ক্রমে সোপানে আরূঢ় হয়, তাহার বিপরীতক্রমে অবরোহন করে। আর দেখাও যাইতেছে- মৃত্তিকা হইতে উৎপন্ন ঘট ও শরা প্রভৃতি বিলয়কালে মৃত্তিকাভাবই প্রাপ্ত হয়, আবার জল হইতে উৎপন্ন হিমশিলা প্রভৃতি বিলয়কালে মৃত্তিকাভাবই প্রাপ্ত হয়, ইত্যাদি। এইহেতু ইহা সঙ্গত যে, পৃথিবী জল হইতে উৎপন্ন হইয়া স্থিতিকাল অতীত হইলে জলে লয় প্রাপ্ত হইবে, আর জলও তেজঃ হইতে উৎপন্ন হইয়া তেজে লয় প্রাপ্ত হইবে। এই প্রকারে ক্রমশঃ সূক্ষ্ম ও সূক্ষ্মতর অনন্তর অনন্তর কারণে লয় প্রাপ্ত হইয়া সমস্ত কার্য্য-প্রপঞ্চ পরমকারণ ও পরমসূক্ষ্ম ব্রহ্মে বিলীন হয়, এইপ্রকার অবগত হইতে হইবে। যেহেতু নিজের কারণকে অতিক্রম দ্বারা কারণ এর কারণে কার্য্যের বিলয় ন্যায্য নহে। স্মৃতিতেও তত্তৎস্থলে-

জগত্প্রতিষ্ঠা দেবর্ষে পৃথিব্যপ্সু প্রলীয়তে৷ জ্যোতিষ্যাপঃ প্রলীৎন্তে জ্যোতির্বায়ৌ প্রলীয়তে'-(মহাভারত, শান্তিপর্ব-৩৩৯।২৯)

"হে দেবর্ষি, জগতের প্রতিষ্ঠা (উপাদান) পৃথিবী জলে প্রলীন হয়, জল তেজে প্রলীন হয়, তেজঃ বায়ুতে প্রলীন হয়", ইত্যাদি এইসকল স্থলে উৎপত্তিক্রমের বিপরীতভাবেই প্রলয়ের ক্রম প্রদর্শিত হইয়াছে।

উৎপত্তিক্রম কিন্তু ভুতসকলের উৎপত্তিতেই শ্রুত হইয়াছে বলিয়া প্রলয়েও গৃহীত হইতে পারে না। আর তাহা (—সেই শ্রৌত উৎপত্তিক্রম) অযোগ্য হওয়ায় প্রলয়কর্ত্তৃক আকাঙ্ক্ষিত হয় না, কার্য্য ধ্রিয়মাণ (—কারণাবলম্বনে বর্ত্তমান) থাকিলে কারণের প্রলয় নিশ্চয়ই সঙ্গত নহে, যেহেতু কারণের নাশ হইলে কার্য্যের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত নহে। কিন্তু কার্য্যের বিনাশ হইলে কারণের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত, যেহেতু মৃত্তিকা প্রভৃতিতে এইপ্রকার পরিদৃষ্ট হয়।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...