বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের রংহত্যধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় জীবের পরলোকে গমনাগমন বিচার। ইতোমধ্যে জীবের ভোগসাধনভূত লিঙ্গশরীর নিরূপিত হইয়াছে। এক্ষণে সেই লিঙ্গশরীরকে অবলম্বন করতঃ তদুপাধিযুক্ত জীবের পরলোকে গত্যাগতি সম্বন্ধে বিচার করা হইতেছে।
ভগবান
ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য শারীরক মীমাংসা ভাষ্যে বলিতেছেন— জীব কি দেহের বীজভূত ভূতসূক্ষ্মসকলের
দ্বারা পরিবেষ্টিত না হইয়া লোকান্তরে গমন করে, অথবা পরিবেষ্টিত হইয়া গমন করে? তদুত্তরে
আচার্য ভগবান বাদরায়ন বলিতেছেন—"তদন্তরপ্রতিপত্তৌ রংহতি..…"-(ব্রহ্মসূত্র-৩.১.১)
'তদন্তরপ্রতিপত্তৌ'—দেহান্তর
প্রাপ্তিতে দেহের বীজভূত ভূতসূক্ষ্মসকলের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া জীব 'রংহতি' অর্থাৎ
গমন করে।
শ্রীভারতী
তীর্থ বৈয়াসিক ন্যায়মালায় বিষয়টা আরও স্পষ্ট করিতেছেন—কেবল ভূত সুলভ হইলেও দেহের
বীজসকল দুর্লভ হওয়ায় জীবদ্দশাতে ভূতরূপ আধার ব্যতিরেকে জীবের উপাধিভূত ইন্দ্রিয়সকলের
গমন পরিদৃষ্ট হয় না, সেইহেতু নিরাধার ইন্দ্রিয়গণের গমন সম্ভব না হওয়ায় এবং
'ইতি
তু পঞ্চম্যামাহুতাবাপঃ পুরুষবচসো ভবন্তি'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৫/৯/১)
"পঞ্চম
আহুতিতে জল পুরুষ সংজ্ঞা লাভ করে", এই শ্রুতিবোধিত পঞ্চম আহুতিযুক্ত হওয়ায় জীব
সেই ভূতসূক্ষ্মসকলের দ্বারা বেষ্টিত হইয়া পরলোক গমন করে।
ছান্দোগ্য
শ্রুতির এইস্থলে ব্রহ্মলোক প্রাপ্তির সাধনভূত পঞ্চাগ্নিবিদ্যার কথা বলা হইতেছে। সেই
স্থলে ভূতসূক্ষ্মদ্বারা পরিবেষ্টিত ইষ্টাপূর্ত্তকর্ম্মানুষ্ঠানকারী মনুষ্যের চন্দ্রলোকে
ভোগোপযোগী শরীরলাভ এবং কর্ম্মক্ষয়ে তথা হইতে বিভিন্ন অবস্থান্তর প্রাপ্তিদ্বারা পুনঃ
মনুষ্যাদি জন্মলাভ পর্যন্ত অবস্থা সকলকে পাঁচটী আহুতিরূপে চিন্তার দ্বারা উপাসনার বিধান
আছে।
No comments:
Post a Comment