Monday, 9 May 2022

দেবীভুজঙ্গস্তোত্রম্

॥ শ্রীঃ ॥

॥ অথ দেবীভুজঙ্গস্তোত্রম্ ॥

বিরিঞ্চ্যাদিভিঃ পঞ্চভির্লোকপালৈঃ

সমূঢ়ে মহানন্দপীঠে নিষণ্ণম্ ।

ধনুর্বাণপাশাঙ্কুশপ্রোতহস্তং

মহস্ত্রৈপুরং শঙ্করাদ্বৈতমব্যাৎ ||১||

ভাবার্থ - ব্রহ্মাদি পঞ্চলোকপাল দ্বারা সম্যকরূপে বাহিত ( ধৃত ) মহানন্দময় আসনে উপবিষ্ট ধনুর্বাণ-পাশাঙ্কুশযুক্ত হস্তবিশিষ্ট শঙ্কর হতে অভিন্ন ত্রিপুরসম্বন্ধী তেজঃ রক্ষা করুন ||১||

যদন্নাদিভিঃ পঞ্চভিঃ কোশজালৈঃ

শিরঃ পক্ষপুচ্ছাত্মকৈরন্তরন্তঃ ।

নিগূঢে মহাযোগপীঠে নিষণ্ণং

পুরারেরথান্তঃপুরং নৌমি নিত্যম্ ||২||

ভাবার্থ - অনন্তর মনোমধ্যে যে অন্নাদি পঞ্চ প্রকার কোশ দ্বারা ব্যাপ্ত শিরঃ পক্ষ ও পুচ্ছাত্মক বস্তু দ্বারা গুপ্ত মহাযোগপীঠে উপবিষ্ট ত্রিপুরারি শিবের অন্তঃপুর অর্থাথ গৃহিণীকে সর্বদা প্রণাম করছি ||২||

বিরিঞ্চাদিরূপৈঃ প্রপঞ্চে বিহৃত্য

স্বতন্ত্রা যদা স্বাত্মবিশ্রান্তিরেষা ।

তদা মানমাতৃপ্রমেয়াতিরিক্তং

পরানন্দমীড়ে ভবানি ত্বদীয়ম্ ||৩||

ভাবার্থ - প্রপঞ্চে ( অর্থৎ জগৎ প্রপঞ্চে ) বিরিঞ্চি প্রভৃতি রপে বিহার করে যখন নিজ স্বরপে বিশ্রামকারিণী ইনি স্বতন্ত্র হন, তখন হে ভবানি; প্রমাণ, প্রমাতা ও প্রমেয়াতিরিক্ত তোমার পরানন্দ স্বরূপে স্তুতি করি ||৩||

বিনোদায় চৈতন্যমেকং বিভজ্য

দ্বিধা দেবি জীবঃ শিবশ্চেতি নাম্না ।

শিবস্যাপি জীবত্বমাপাদয়ন্তী

পুনর্জীবমেনং শিবং বা করোষি ||৪||

ভাবার্থ - হে দেবী, একই চৈতন্য বস্তুকে নিজ আনন্দের নিমিত্ত ( লীলার নিমিত ) জীব ও শিব এই দুই নামে বিভাগপূর্বক শিবেরও জীবত্ব সম্পাদনকারিণী তুমি পুনরায় একেই জীব বা শিব ( যাই ইচ্ছা হয় তাই ) করে থাক। অর্থাৎ জীবত্ব বা শিবত্ব উভয়ই তােমার ইচ্ছার-তােমার লীলার নিমিত্তই হয়ে থাকে ||৪||

সমাকুঞ্চ্য মূলং হৃদি ন্যস্য বায়ুং

মনো ভ্রূবিলং প্রাপয়িত্বা নিবৃত্তাঃ ।

ততঃ সচ্চিদানন্দরূপে পদে তে

ভবন্ত্যম্ব জীবাঃ শিবত্বেন কেচিৎ ||৫||

ভাবার্থ - হে মাতঃ! মূলদেশকে (মুলাধারকে) আকুঞ্চিত করে বায়ুকে হদয়ে স্থাপিত করে মনকে ভ্রূদ্বয়-মধ্যে রক্ষা করে অনন্তর তোমার সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ পাদপদ্মে অবস্থিত কতিপয় জীব শিবত্বযুক্ত হন ||৫||

শরীরেঽতিকষ্টে রিপৌ পুত্রবর্গে

সদাভীতিমূলে কলত্রে ধনে বা ।

ন কশ্চিদ্ বিরজ্যত্যহো দেবি চিত্রং

কথং ত্বৎকটাক্ষং বিনা তত্ত্ববোধঃ ||৬||

ভাবার্থ - হে দেবী, অতি কষ্টের স্থান শরীর, রিপু্বর্গ ( কাম-ক্রোধাদি ), পুত্রাদিতে, ও সর্বদা ভয়ের কারণ কলত্র ও ধনে কেউই বিরক্ত ( বৈরাগ্যযুক্ত ) হয় না, এ অতি আশ্চর্যজনক, ( তবে ) তোমার কৃপাকটাক্ষ ব্যতিরেকে তত্ত্বজ্ঞান হবেই বা কি প্রকারে? অর্থাৎ তোমার কৃপাদৃষ্টি না হলে কারও তত্ত্বজ্ঞান হয় না, সুতরাং সংসারে বৈরাগ্যও আসে না ||৬||

শরীরে ধনেঽপত্যবর্গে কলত্রে

বিরক্তস্য সদ্দেশিকাদিষ্টবুদ্ধেঃ ।

যদাকস্মিকং জ্যোতিরানন্দরূপং

সমাধৌ ভবেৎ তত্ত্বমস্যম্ব সত্যম্ ||৭||

ভাবার্থ - হে মাতা, শরীর, ধন, আপত্যবর্গ ও কলত্রের প্রতি বিরক্ত ও সদগুরুর নিকট হতে প্রাপ্ত ইষ্টবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির সমাধি কালে যে আকস্মিক আনন্দস্বরূপ জ্যোতিঃ ( উদ্ভূত ) হয়, সত্যই তা তুমি ||৭||

মৃষান্যো মৃষান্যঃ পরো মিশ্রমেনং

পরঃ প্রাকৃতং চাপরো বুদ্ধিমাত্রম্ ।

প্রপঞ্চং মিমীতে মুনীনাং গণোঽয়ং

তদেতত্ত্বমেবেতি ন ত্বাং জহীমঃ ||৮||

ভাবার্থ - কেউ মিথ্যা, কেউ অমিথ্যা ( সত্য ) কেউ বা প্রকৃতিজাত, কেউ বা বুদ্ধিমাত্র ( অর্থাৎ বাস্তব নহ ) ( এই প্রকার ) এই মুনিগণ এই প্রপঞ্চকে জানেন। সুতরাং এই সকল ( জগৎ ) তুমিই, এই হেতু আমরা তোমাকে ত্যাগ করছি না অর্থাৎ আমরা তােমাতেই সংলগ্ন আছি ||৮||

নিবৃত্তিঃ প্রতিষ্ঠা চ বিদ্যা চ শান্তি-

স্তথা শান্ত্যতীতেতি পঞ্চীকৃতাভিঃ ।

কলাভিঃ পরে পঞ্চবিংশাত্মিকাভি-

স্ত্বমেকৈব সেব্যা শিবাভিন্নরূপা ||৯||

ভাবার্থ - নিবৃত্তি, প্রতিষ্ঠা, বিদ্যা, শান্তি ও শান্ত্যতীতা এই পঞ্চীকৃত পঞ্চবিংশাত্মক কলা হতে পরভাগে ( কলাগুলির ভেদ করার পর ) শিব হতে অভিন্নস্বরূপা তুমিই এক মাত্র সেব্যা ||৯||

অগাধেঽত্র সংসারপঙ্কে নিমগ্নং

কলত্রাদিভারেণ খিন্নং নিতান্তম্ ।

মহামোহপাশৌঘবদ্ধং চিরান্মাং

সমুদ্ধর্তুমম্ব ত্বমেকৈব শক্তা ||১০||

ভাবার্থ - হে মাতা, এই অগাধ সংসাররূপ পঙ্কে নিমগ্ন, কলত্রাদিরূপ ভার দ্বারা অত্যন্ত ক্লিষ্ট, বহুকাল যাবৎ মহামোহপাশ সমূহ দ্বারা বদ্ধ আমাকে উদ্ধার করতে তুমিই এক মাত্র সমর্থ ( অন্য কেউ নয় ) ||১০||

সমারভ্য মূলং গতো ব্রহ্মচক্রং

ভবদ্দিব্যচক্রেশ্বরীধামভাজঃ ।

মহাসিদ্ধিসংঘাতকল্পদ্রুমাভান্

অবাপ্যাম্ব নাদানুপাস্তে চ যোগী ||১১||

ভাবার্থ - হে মাতা, মূলদেশ হতে আরস্ত করে ব্রহ্মচক্র ( ব্রহ্মরন্ধ্র ) পর্যন্ত গত ( ষট্চক্র ভেদপূর্বক ) দিব্যচক্রেশ্বরীর লোকপ্রাপ্তির যোগ্য হয়ে যোগী ব্যক্তি মহাসিদ্ধিসমূহরূপ কল্পদ্রুমবৎ নাদসমূহকে প্রাপ্ত হয়ে উপাসনা করেন ||১১||

গণেশৈর্গ্রহৈরম্ব নক্ষত্রপংক্ত্যা

তথা যোগিনীরাশিপীঠৈরভিন্নম্ ।

মহাকালমাত্মানমামৃশ্য লোকং

বিধৎসে কৃতিং বা স্থিতিং বা মহেশি ||১২||

ভাবার্থ - হে মাতা, গণেশ, গ্রহ, নক্ষত্রপংক্তি এবং যােগিনীরাশিপীঠ উপলক্ষিত মহাকাল, লােক, ( জগৎ ) কৃতি, স্থিতি প্রভৃতিকে ও নিজেকে অভিন্ন বিচার করে বিধান কর। অর্থাৎ এদেরকে তুমি নিজস্বরপ বিবেচনায় সৃষ্টি কর ||১২||

লসত্তারহারামতিস্বচ্ছচেলাং

বহন্তীং করে পুস্তকং চাক্ষমালাম্ ।

শরচ্চন্দ্রকোটিপ্রভাভাসুরাং ত্বাং

সকৃদ্ভাবয়ন্ ভারতীবল্লভঃ স্যাৎ ||১৩||

ভাবার্থ - মুক্তাহারশােভিতা অতিস্বচ্ছ বস্ত্রপরিহিতা, পুস্তক ও জপমালা ( বা রুদ্রাক্ষমালা ) হস্ত দ্বারা বহনকারিণী ( যিনি হস্তে পুস্তক ও অক্ষমালা ধারণ করেন ) কোটিসংখ্যক শরৎকালীন চন্দ্রের প্রভাবৎ প্রভা দ্বারা উজ্জ্বলা ( কোটি শরৎকালীন চন্দ্রের ন্যায় অতি মনোজ্ঞ তেজঃসম্পন্না ) তােমাকে একবার মাত্র চিন্তা করলে ( মনুষ্য ) ভারতীর ( সরস্বতীর ) প্রিয়পাত্র হয় ||১৩||

সমুদ্যৎসহস্রার্কবিম্বাভবক্ত্রাং

স্বভাসৈব সিন্দূরিতাজাণ্ডকোটিম্ ।

ধনুর্বাণপাশাঙ্কুশান্ ধারয়ন্তীং

স্মরন্তঃ স্মরং বাপি সংমোহয়েয়ুঃ ||১৪||

ভাবার্থ - সম্যকরূপে উদিত সহস্রসূর্য্যবিম্বের ন্যায় মুখমণ্ডলযুক্তা, নিজ তেজঃ দ্বারা কোটি ব্রহ্মাণ্ডকে সিন্দূর বর্ণে রঞ্জনকারিণী, ( যাহার শরীরের রক্ত বর্ণচ্ছটায় কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড রক্তবর্ণ ধারণ করে ) ধনুর্বাণ, পাশ ও অঙ্কুশধারিণী, তােমাকে স্মরণকারী মনুষ্যগণ কামদেবকেও সংমােহিত করতে সমর্থ হয় ||১৪||

মণিস্যূততাটঙ্কশোণাস্যবিম্বাং

হরিৎপট্টবস্ত্রাং ত্বগুল্লাসিভূষাম্ ।

হৃদা ভাবয়ংস্তপ্তহেমপ্রভাং ত্বাং

শ্রিয়ো নাশয়ত্যম্ব চাঞ্চল্যভাবম্ ||১৫||

ভাবার্থ - হে মাতা মণিখচিত তাটঙ্ক ( নামক কর্ণভূষণ ) বৎ রক্তবর্ণ মুখমগণ্ডলবিশিষ্টা, হরিৎবর্ণ পট্টবস্ত্রপরিহিতা ত্বকই যার উল্লসিত অলঙ্কার ( স্বভাবালঙ্কৃতা ), তপ্তস্বর্ণবৎ প্রভাসম্পন্না, তােমাকে হৃদয়ে চিন্তা করে লক্ষ্মীরও চাঞ্চল্য দূর হয়। অর্থাৎ চপলা লক্ষ্মীরও স্থৈর্য্য আসে, অন্য ব্যক্তির স্থৈর্য্য সম্বন্ধে বলা বাহুল্যমাত্র ||১৫||

মহামন্ত্ররাজান্তবীজং পরাখ্যং

স্বতো ন্যস্তবিন্দু স্বয়ং ন্যস্তহার্দম্ ।

ভবদ্বক্ত্রবক্ষোজগুহ্যাভিধানং

স্বরূপং সকৃদ্ভাবয়েৎ স ত্বমেব ||১৬||

ভাবার্থ - যিনি পরসংজ্ঞক মহামন্ত্রাজান্ত বীজ, স্বতঃ যাতে বিন্দু ন্যস্ত আছে, স্বয়ং যাতে স্নেহ ন্যস্ত হয়েছে, এবম্ভূত তােমার মুখ বক্ষ ও গুহ্য-সংজ্ঞক ( মন্ত্রাত্মক ) স্বরূপ একবার মাত্র চিন্তা করেন, তিনি তুমিই অর্থাৎ তিনি তােমার সহিত অভিন্ন হয়ে থাকেন ||১৬||

তথান্যে বিকল্পেষু নির্বিণ্ণচিত্তা-

স্তদেকং সমাধায় বিন্দুত্রয়ং তে ।

পরানন্দসংধানসিন্ধৌ নিমগ্নাঃ

পুনর্গর্ভরন্ধ্রং ন পশ্যন্তি ধীরাঃ ||১৭||

ভাবার্থ - এইরূপ বিকল্প বিষয়ে নির্বেদযুক্ত চিত্তবিশিষ্ট, তােমার ( মন্ত্রস্থিত ) সেই বিন্দুত্রয়কে একে পরিণত করে পরমানন্দ-সিন্ধুতে নিমগ্ন অন্য কুশল বা পণ্ডিত ব্যক্তিগণ পুনরায় গর্ভরন্ধ্রকে দর্শন করেন না ( অর্থাৎ পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না ) ||১৭||

ত্বদুন্মেষলীলানুবন্ধাধিকারান্

বিরিঞ্চ্যাদিকাংস্ত্বদ্গুণাম্ভোধিবিন্দূন্ ।

ভজন্তস্তিতীর্ষন্তি সংসারসিন্ধুং

শিবে তাবকীনা সুসম্ভাবনেয়ম্ ||১৮||

ভাবার্থ - হে শিবে, তােমার হতে জগতের উন্মেষ, ( সৃষ্টি ) লীলা ( স্থিতি ) ও অনুবন্ধ ( সংহার ) বিষয়ে অধিকারী এবং তােমার গুণ-সমুদ্রের বিন্দু মাত্রস্বরূপ ব্রহ্মাদি দেবগণকে ভজনাকারী মনুষ্যগণ সংসারসিন্ধু উত্তীর্ণ হতে ইচ্ছা করে, এ তােমার সম্বন্ধে উৎকৃষ্ট আশা। অর্থাৎ তােমার গুণসমুদ্রের বিন্দুমাত্র স্বরূপ ব্রহ্মাদির ভজনায় যদি সংসার-সমুদ্র পার হওয়া যায় তবে তােমাকে ভজনা করলে ওর সম্বন্ধে সন্দেহ থাকতে পারে না ||১৮||

কদা বা ভবৎপাদপোতেন তূর্ণং

ভবাম্ভোধিমুত্তীর্য পূর্ণান্তরঙ্গঃ ।

নিমজ্জন্তমেনং দুরাশাবিষাব্ধৌ

সমালোক্য লোকং কথং পর্য্যুদাসে ||১৯||

ভাবার্থ - কবে তােমার পাদরূপ নৌকার দ্বারা শীঘ্র সংসারসমুদ্র উত্তীর্ণ হয়ে ( তোমার ) পূর্ণ অন্তরঙ্গ হয়ে এই দুরাশারূপ বিষসমুদ্রে নিমজ্জনোন্মুখ লোককে ( সংসারকে ) কি ভাবে উদ্ধার করব ||১৯||

কদা বা হৃষীকাণি সাম্যং ভজেয়ুঃ

কদা বা ন শত্রুর্ন মিত্রং ভবানি ।

কদা বা দুরাশাবিষূচীবিলোপঃ

কদা বা মনো মে সমূলং বিনশ্যেৎ ||২০||

ভাবার্থ - কবে। আমার ইন্দ্রিয়গুলি সমতা প্রাপ্ত হবে ( অর্থাৎ বিষয় হতে নিবৃত্ত হবে, বিষয় হতে নিবৃত্তি ব্যতিরেকে ইন্দ্রিয়গুলির সমতা হয় না, কারণ ওরা ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। ওদের কার্যও ভিন্ন ভিন্ন ) কবে আমি শক্র বা মিত্র কিছুই হব না ( অর্থাৎ আমার শক্র বা মিত্রভাব কবে লােপ হবে ) দুরাশারূপ বিসূচিকার ( ভােগ ) লােপ কবে হবে। কবেই বা আমার মন সমূলে বিনষ্ট হবে। ( অহঙ্কার হতে মনঃ প্রভৃতি উৎপন্ন, সুতরাং সমূল মন বিনাশপ্রাপ্ত হতে গেলে অহঙ্কারাদির বিনাশ আবশ্যক ) ||২০||

নমোবাকমাশাস্মহে দেবি যুষ্মৎ-

পদাম্ভোজয়ুগ্মায় তিগ্মায় গৌরি ।

বিরিঞ্চ্যাদিভাস্বৎকিরীটপ্রতোলী-

প্রদীপায়মানপ্রভাভাস্বরায় ||২১||

ভাবার্থ - হে দেবী গৌরি, তীক্ষ্ণ ( ভাস্বর ) ব্রহ্মাদির উজ্জ্বল কিরীটের- হট্টমধ্যস্থ পথে প্রদীপের ন্যায়-প্রভা দ্বারা সমুজ্জ্বল ( অর্থাৎ ব্রহ্মাদির মস্তকস্থ কিরীটগুলি যেন হট্টমধ্যস্থ পথের প্রদীপের ন্যায় তােমার চরণযুগলকে নিজ প্রভা দ্বারা উজ্জ্বল করছে ) তােমার সেই চরণকমলযুগলে নমস্কার বাক্যপ্রয়োেগ পূর্ব্বক প্রার্থনা করছি ||২১||

কচে চন্দ্ররেখং কুচে তারহারং

করে স্বাদুচাপং শরে ষট্পদৌঘম্ ।

স্মরামি স্মরারেরভিপ্রায়মেকং

মদাঘূর্ণনেত্রং মদীয়ং নিধানম্ ||২২||

ভাবার্থ - কেশপাশে চন্দ্ররেখাযুক্ত, বক্ষোদেশে মুক্তাহার শোভিত, হস্তে মনোহর ধনু শােভিত, শরে ( বাণটিতে ) ভ্রমরসমূহ বিশিষ্ট, মদহেতু আঘূর্ণিত নয়ন, আমার আশ্রয়স্থল, মদনান্তক শিবের একমাত্র অভিলাষের বস্তুকে স্মরণ করছি ||২২||

শরেষ্বেব নাসা ধনুষ্বেব জিহ্বা

জপাপাটলে লোচনে তে স্বরূপে ।

ত্বগেষা ভবচ্চন্দ্রখণ্ডে শ্রবো মে

গুণে তে মনোবৃত্তিরম্ব ত্বয়ি স্যাৎ ||২৩||

ভাবার্থ - হে মাতা, আমার নাসিকা ( তোমার ) শরে ( তােমার শর কুসুমময় এজন্য ), জিহ্বা ধনুতে (কারণ পূর্বে ঐ ধনু স্বাদু বলা হয়েছে )-( ২২ শ্লোক দেখ ) চক্ষুর্দ্বয় তোমার জপাপুষ্পবৎ ঈষৎ রক্ত ও শ্বেতবর্ণ স্বরূপে ( আকৃতিতে ) এই ত্বক তােমার মস্তকস্থিত চন্দ্রখণ্ডে ( কারণ ওটা অমৃত ও শীতল ) কর্ণ ( শ্রবণেন্দ্রিয় ) তোমার গুণে গুণশ্রবণে এবং মনের ( যাবতীয় ) বৃত্তি তােমার বিষয়েই হোক। অর্থাৎ আমার তাবৎ ইন্দ্রিয় তােমাতেই আবদ্ধ থাকুক ||২৩||

জগৎকর্মধীরান্বচোধূতকীরান্

কুচন্যস্তহারান্ কৃপাসিন্ধুপূরান্ ।

ভবাম্ভোধিপারান্মহাপাপদূরান্

ভজে বেদসারান্ শিবপ্রেমদারান্ ||২৪||

ভাবার্থ - জগৎকার্যে ধীর ( অর্থাৎ জগৎরূপ মহৎ বস্তু সৃষ্টিকার্য্যে কুশল ) বাক্য দ্বারা শুকপক্ষীকে ভৎর্সনাকারিণী ( অর্থাৎ শুকপক্ষী হতেও মনোজ্ঞ বাক্যযুক্তা ) বক্ষোদেশে স্থাপিত হারযুক্তা, কৃপারূপ সিন্ধুর প্রবাহস্বরূপ সংসাররূপ সমুদ্রের পার ( অর্থাৎ অন্তস্বরূপ ) মহাপাপ দূরকারিণী, বেদের সারভূত, শিবের আদরের পত্নীকে ভজনা করছি ||২৪||

সুধাসিন্ধুসারে চিদানন্দনীরে

সমুৎফুল্লনীপে সুরত্রান্তরীপে ।

মণিব্যূহসালে স্থিতে হৈমশালে

মনোজারিবামে নিষণ্ণং মনো মে ||২৫||

ভাবার্থ - সুধাসিন্ধুর সারভূত, চিৎ ও আনন্দের জলাশয় মধ্যবর্তী, বিকসিত কদম্ববৃক্ষযুক্ত, রত্নময়দ্বীপে অবস্থিত, মণিসমূহনির্মিত প্রাকারপরিবেষ্টিত, স্বর্ণবাটিকায় মদনান্তক শিবের বামভাগে ( অর্থাৎ পার্বতীতে ) আমার মন অবস্থিত ( আছে ) ||২৫||

দৃগন্তে বিলোলা সুগন্ধীষুমালা

প্রপঞ্চেন্দ্রজালা বিপৎসিন্ধুকূলা ।

মুনিষ্বান্তশালা নমল্লোকপালা

হৃদি প্রেমলোলামৃতস্বাদুলীলা ||২৬||

ভাবার্থ - তুমি দর্শনীয়াকৃতি, সুগন্ধময়ী, অনিত্য জগৎ প্রপঞ্চের ইন্দ্রজালস্বরূপা, বিপদ্রূপ অপারসিন্ধুর তট অর্থাৎ আশ্রয়স্থৃলী, মুনিজনের হৃদয়াধিকারিণী, লোকপালগণের নমস্যা, হৃদয়ের মনোহর প্রেমমূর্তি এবং তুমি অমৃততুল্য হৃদয়গ্রাহী লীলাকারিণী ||২৬||

জগজ্জালমেতত্ত্বয়ৈবাম্ব সৃষ্টং

ত্বমেবাদ্য যাসীন্দ্রিয়ৈরর্থজালম্ ।

ত্ববেকৈব কর্ত্রী ত্বমেকৈব ভোক্ত্রী

ন মে পুণ্যপাপে ন মে বন্ধমোক্ষৌ ||২৭||

ভাবার্থ - হে মাতা, এই জগৎ সমূহ তােমার কর্তৃকই সৃষ্ট হয়েছে, অদ্য ( এক্ষণে ) ইন্দ্রিয়পথে তুমিই অর্থ ( বিষয় ) সমূহে গমন করছ, একা তুমিই কর্ত্রী ও ভোক্ত্রী; আমার পুণ্য-পাপ বা বন্ধ-মােক্ষ কিছুই নাই ||২৭||

ইতি প্রেমভারেণ কিঞ্চিন্ময়োক্তং

ন বুধ্বৈব তত্ত্বং মদীয়ং ত্বদীয়ং ।

বিনোদায় বালস্য মৌর্খ্যং হি মাত-

স্তদেতৎ প্রলাপস্তুতিং মে গৃহাণ ||২৮||

ভাবার্থ - এই প্রকারে তােমার ( দেবীর ) ও আমার তত্ত্ব ( যথার্থস্বরূপ ) না বুঝেই ভক্তিভরে কিঞ্চিৎ আমা কর্তৃক উক্ত হল। যেহেতু, বালকের মূর্খতা আনন্দদায়কই হয়; সুতরাং আমার এই প্রলাপ ( অসঙ্গত উক্তিপূর্ণ ) স্তুতি গ্রহণ কর। ( কারণ আমি তােমার অবােধ শিশু সন্তান, আমার অসঙ্গত উক্তিও তােমার আনন্দদায়কই হওয়া উচিত ) ||২৮||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ দেবীভুজঙ্গপ্রয়াত স্তোত্রম্ সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত দেবীভুজঙ্গপ্রয়াত স্তোত্র সমাপ্ত।

 

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...