প্রত্যয়ের একতানতা অর্থাৎ একতত্ত্ববিষয়ে প্রবাহ। তাহাও দুই প্রকার—বিচ্ছিন্ন হইয়া জাত এবং সতত (প্রবাহমান)। ঐ দুইটি প্রকার যথাক্রমে ধ্যান ও সমাধি হয়। ইতোমধ্যে ধ্যান বিষয়ে পূর্ব লিখায় আলোচনা করিয়াছি। সেই ধ্যানই যখন তাহার বিষয়মাত্র প্রকাশে স্বরূপ-শূন্য-মতো হয়, তখন তাহা হইল সমাধি। ভগবান্ যোগসূত্রকার তাহাই বলিতেছেন—
তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং
স্বরূপশূন্যমিব সমাধিঃ।।(যোগসূত্র-৩/৩)
-তাহাই যখন
সমুদয় বাহ্যোপাধি পরিত্যাগ করিয়া কেবল অর্থমাত্রকে প্রকাশ
করে, তখন ‘সমাধি’ আখ্যা
প্রাপ্ত হয়।
ভাষ্যকার
ব্যাস বলিতেছেন— 'ধ্যেয়ের আকার প্রকাশক ধ্যানই
যখন নিজ জ্ঞান-বৃত্ত্যাত্মক
স্বরূপের দ্বারা শূন্য-মতো হইয়া যায়
ও ধ্যাতাতে ধ্যেয় বস্তুর স্বভাবের একটানা আবেশ ঘটায়, তখন
তাহাকে সমাধি বলা হইয়াছে।'
যোগবার্তিককারের
মতে জীবাত্মা ও পরমাত্মার যে
সমতা অর্থাৎ যখন জীবাত্মা মন
বুদ্ধি ও অস্মিতার মিলন
সত্ত্বা ভিন্ন অন্য পরম সত্ত্বায়
অর্থাৎ কেবলমাত্র পরমাত্মায় স্থিতি (ব্রাহ্মীস্থিতি লাভ) করে, তখনকার
সেই অবস্থা হইল সমাধি। ভগবান্
শঙ্করাচার্য্য অপরোক্ষানুভূতিতে তাহাই বলিতেছেন—'সম্পূর্ণ বিকাররহিত বৃত্তিদ্বারা পুনরায় ব্রহ্মের সহিত একাত্ম চিন্তন
দ্বারা যথাযথভাবে বৃত্তিসমুদায়ের বিস্মৃতিই জ্ঞানসংজ্ঞক সমাধি বলিয়া কথিত।'
সমাধি
দুই প্রকার। একটিকে ‘সম্প্রজ্ঞাত’ ও অপরটিকে ‘অসম্প্রজ্ঞাত’
বলে।
#সম্প্রজ্ঞাত
যোগসূত্রের সমাধিপাদে বর্ণিত আছে—"বিতর্কবিচারানন্দাস্মিতানুগমাৎ সম্প্রজ্ঞাতঃ" অর্থাৎ যে সমাধিতে বিতর্ক, বিচার, আনন্দ ও অস্মিতা অনুগত থাকে, তাহাকে সম্প্রজ্ঞাত সমাধি বলে। ধ্যানাভ্যাসের উৎকর্ষ হলে অহঙ্কার বর্জিত ব্রহ্মাকারা মনোবৃত্তির প্রবাহ হয়, তাকে সম্প্রজ্ঞাত সমাধি বলে। শ্রুতি তাহাই বলিতেছেন—
ব্রহ্মাকারমনোবৃত্তিপ্রবাহোঽহঙ্কৃতং
বিনা।সম্প্রজ্ঞাতসমাধিঃ
স্যাদ্ধ্যানাভ্যাসপ্রকর্ষতঃ॥-(মুক্তিকোপনিষৎ-২/৫৩)
#অসম্প্রজ্ঞাত
"বিরাম-প্রত্যয়াভ্যাসপূর্বঃ সংস্কারশেষোহন্যঃ" অর্থাৎ অন্যপ্রকার সমাধিতে সর্বদা সমুদয় মানসিক ক্রিয়ার বিরাম অভ্যাস করা হয়, কেবল চিত্তের দৃঢ় সংস্কার-মাত্র অবশিষ্ট থাকে। ইহাই পূর্ণ জ্ঞানাতীত ‘অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি’; এই সমাধি পরমানন্দদায়ী। শ্রুতি তাহাই বলিতেছেন—
প্রশান্তবৃত্তিকং
চিত্তং পরমানন্দদায়কম্।
অসম্প্রজ্ঞাতনামায়ং
সমাধির্যোগিনাং প্রিয়ঃ ॥-(মুক্তিকোপনিষৎ-২/৫৪)
যখন
এই অসম্প্রজ্ঞাত অর্থাৎ জ্ঞানাতীত অবস্থা লাভ হয়, তখন
ঐ সমাধি নির্বীজ হইয়া যায়।.....
শ্রীশুভ
চৌধুরী
মার্চ
১৭, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment