আত্মজ্ঞান
অভিলাষী মুমুক্ষুগণ কর্তৃক চিত্তশুদ্ধির জন্য সর্বদাই নিত্যনৈমিত্তিক কর্মের অনুষ্ঠান কর্তব্য। এই অর্থে সর্বজ্ঞ
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বচনই প্রমাণ। যথা— "আরুরুক্ষোর্মুনের্যোগং কর্ম কারণমুচ্যতে৷ যোগারূঢ়স্য তস্যৈব শমঃ কারণমুচ্যতে"-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৬/৩) অর্থাৎ
যোগে আরোহণেচ্ছু ব্যক্তির পক্ষে কর্মই উপায়। তিনি যোগারূঢ় হলে, তাঁর পক্ষে সর্বকর্ম হতে নিবৃত্তি অর্থাৎ সন্ন্যাসই উপায়।
নিত্যকর্মানুষ্ঠানের
দ্বারা ধর্মোৎপত্তি, ধর্মোৎপত্তির দ্বারা পাপহানি, তারপরে চিত্তশুদ্ধি, তারপরে সংসারের স্বভাবজ্ঞান অর্থাৎ অনিত্যত্ব প্রভৃতি দোষদর্শন, তারপরে বৈরাগ্য, তারপরে মুমুক্ষুত্ব, তারপরে উপায় অন্বেষণ, তারপরে সর্বকর্ম ও তৎসাধন ত্যাগ,
তারপরে যোগাভ্যাস, তারপরে চিত্তের প্রত্যক্প্রবণতা, তারপরে "তত্ত্বমসি" প্রভৃতি বাক্যার্থপরিজ্ঞান, তারপরে অবিদ্যার উচ্ছেদ এবং তারপরে আত্মস্বরূপে অবস্থান। কারণ এটা শ্রত আছে যে—"ব্রহ্মৈব সন ব্রহ্মাপ্যেতি"-(বৃহদারণ্যকোপনিষৎ-৪/৪/৬) অর্থাৎ ব্রহ্ম
হয়ে ব্রহ্মকেই প্রাপ্ত হয়, "বিমুক্তশ্চ বিমুচ্যতে"-(কঠোপনিষৎ-২/২/১),
বিমুক্ত হয়ে বিমুক্ত হয়।
এরূপে
পরম্পরাদ্বারা কর্ম অবিদ্যানিবৃত্তির কারণ হয়। কিন্তু জ্ঞানের ন্যায় সাক্ষাৎ অবিদ্যানিবারক হয় না। কারণ ওটা অবিদ্যার বিরোধী নয়। ক্রিয়াফল চার প্রকার, যথা—উৎপাদ্য, আপ্য, সংস্কার্য ও বিকার্য। মুক্তি
এদের অন্যতম নয় বলে, কর্ম সাক্ষাৎ মুক্তির সাধন নয়। অবিদ্যা-অধ্যারোপিত মিথ্যা কর্তৃত্বাদি-অভিমানের সহিত কর্ম সম্বন্ধ, কিন্তু জ্ঞান পরমার্থ আত্মবস্তুবিষয়ক, অতএব কর্মের বিরোধী। সুতরাং সূর্যালোক ও অন্ধকারের ন্যায়
তাদের সমুচ্চয় হয় না।.....
তথ্যসূত্রঃ-জ্ঞানোত্তমকৃত চন্দ্রিকা টীকা অবলম্বনে ভগবান্ শঙ্করাচার্যের শিষ্য শ্রীসুরেশ্বরাচার্য প্রণীত "নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধি"।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
সেপ্টেম্বর
১২, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment