Saturday, 15 March 2025

বাচস্পতি মিশ্রঃ-

 


বাচস্পতি মিশ্র একজন ভারতীয় দার্শনিক অদ্বৈতবেদান্তের একটি স্তম্ভ বিশেষ। তাঁর রচিত "ভামতী" শাঙ্করভাষ্যের অতি অপূর্ব টীকা। তিনি মিথিলার বরপুত্র। তিনি একাধারে বৈদান্তিক নৈয়ায়িক ছিলেন। খৃষ্টীয় নবম শতকের প্রথম ভাগে (৮০১-৮৮১খৃঃ) তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। বাচস্পতি মিশ্র কেবল বেদান্তেরই টীকা রচনা করেছেন, এমন নয়। তিনি সাংখ্যদর্শনের টীকা "সাংখ্যতত্ত্ব-কৌমুদী", পাতঞ্জলের টীকা "তত্ত্ববৈশারদী", ন্যায়দর্শনের "ন্যায়-বার্তিক তাৎপর্য" "ন্যায়সূচি-নিবন্ধ", মীমাংসাদর্শনের ভট্টমতের "তত্ত্ববিন্দু", মণ্ডনমিশ্রের বিধিবিবেকের টীকা "ন্যায়-কণিকা", ব্রহ্মসিদ্ধির টীকা "তত্ত্ব-সমীক্ষা" প্রভৃতি রচনা করে ষড়দর্শনের টীকাকার বলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। সকল টীকায় বাচস্পতিমিশ্র বিভিন্ন দর্শনশাস্ত্রে অসামান্য পাণ্ডিত্যের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর টীকার বিশেষত্ব এই যে, তিনি যখন যেই দর্শনের টীকা রচনা করেছেন, তখন সেই দর্শনের যা প্রকৃত সিদ্ধান্ত, তাই তদীয় টীকায় লিপিবদ্ধ করেছেন। অপরাপর দর্শনের বিভিন্নমুখী চিন্তার ধারা তাঁর সিদ্ধান্তকে কলুষিত করে নি। ষড়দর্শনের টীকাকারের পক্ষে এরূপ চিন্তার স্বাতন্ত্র্য কদাচিৎ দৃষ্ট হয়। এজন্য ষড়দর্শন টীকাকার বাচস্পতিমিশ্র "সর্বতন্ত্র-স্বতন্ত্র" বলে পণ্ডিতমণ্ডলীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন।

তবে তাঁর সকল গ্রন্থাবলীর মধ্যে কালজয়ী গ্রন্থ হল বেদান্তের শাঙ্করভাষ্যের প্রসিদ্ধ টীকা "ভামতী" তাই তিনি ভামতীকার নামেই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। বাচস্পতি মিশ্র তার সহধর্মিণীর নাম অনুসারে তদীয় শাঙ্করভাষ্যের টীকার নাম করেছিলেন বলে একটি আখ্যায়িকা এদেশে শুনতে পাওয়া যায়। একদিন গভীর রজনীতে শাস্ত্রচিন্তায় তন্ময় হয়ে বাচস্পতি যখন ভামতী টীকা রচনা করছিলেন, তখন হঠাৎ প্রদীপটি নিভে যায়। বাচস্পতির সহধর্মিণী গৃহান্তর হতে এসে প্রদীপটি জ্বেলে দিলেন এবং তাঁর পতিকে কিছু বলবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। শাস্ত্র-সাধনায় তন্ময় বাচস্পতি তখন বাহ্যজ্ঞানরহিত। তিনি তাঁর সহধর্মিণীকে চিনতে পর্যন্ত পারলেন না, জিজ্ঞাসা করলেন, ললনা! তুমি কে? এটা শোনামাত্র স্ত্রীর নয়ন জলে ভরে গেল। তিনি উত্তর করলেন, আমি আপনার শ্রীচরণের দাসী। আমার দুর্ভাগ্য, আপনি আমাকে চিনতে পারেন না, পরে আমাকে কে চিনবে? আমার পুত্র হলো না, পিণ্ডলোপ তো হলোই, মৃত্যুর পর আমার নাম পর্যন্ত চিরতরে বিলুপ্ত হবে। সহধর্মিণীর এই করুণ উক্তি বাচস্পতির হৃদয় স্পর্শ করল। তিনি বললেন, সাধ্বি! তুমি হিন্দুরমণীর আদর্শস্থানীয়া। তুমি তোমার স্মৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আক্ষেপ করছো? আমি তোমাকে বিদ্বন্মণ্ডলীর চিরস্মরণীয় করে রাখবো। আমার এই শাঙ্করভাষ্যের টীকা, তোমার নাম অনুসারে "ভামতী" বলে প্রসিদ্ধি লাভ করবে। তোমার নাম দার্শনিক সাহিত্য-ফলকে স্বর্ণাক্ষরে চিরকালের জন্য অঙ্কিত থাকবে। বাচস্পতির এই উক্তি সার্থক হয়েছে। তিনি তাঁর সহধর্মিণী ভামতীকে বাস্তবিকই অমর করেছেন।

ভামতী টীকায় বাচস্পতি ন্যায় মীমাংসার যে সকল সূক্ষ্ম বিচারের অবতারণা করেছেন, তা অন্য কোন টীকায় পাওয়া যায় না। এইজন্য ভামতীর স্থান বহু উর্ধ্বে। ভামতী টীকাকে অবলম্বন করে পরবর্তীতে অদ্বৈতবেদান্তের ভামতী-প্রস্থান নামে একটি স্বতন্ত্র প্রস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ভামতীর উপর অমলানন্দ স্বামী "বেদান্তকল্পতরু" টীকা এবং বেদান্তকল্পতরুর উপর অপ্পয়দীক্ষিত "কল্পতরু-পরিমল" নামে টীকা রচনা করে বাচস্পতির সংক্ষিপ্ত এবং সারগর্ভ উক্তির তাৎপর্য জিজ্ঞাসুর নিকট সুগম করে দিয়েছেন। ভামতীর দার্শনিক রহস্য বুঝতে হলে কল্পতরু পরিমলের বিচারশৈলী এবং মতবাদের সহিতও পরিচিত হওয়া আবশ্যক। ধর্মজীবনে বাচস্পতি নিষ্কাম কর্মযোগী ছিলেন। অভিমান তাঁর ছায়াও স্পর্শ করতে পারে নি। তিনি তাঁর সমস্ত দার্শনিক গ্রন্থরাজি ভগবানের রাঙাচরণে উপহার অর্পণ করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছেন।....

তথ্যসূত্রঃ-

. "অদ্বৈতসিদ্ধি" মধুসূদন সরস্বতী, শ্রীব্যোমকেশ ভট্টাচার্য, ভাগবতরত্ন।

. "বেদান্তদর্শনঅদ্বৈতবাদ", প্রথম খণ্ড, আশুতোষ ভট্টাচার্য শাস্ত্রী, বিদ্যাবাচস্পতি।

শ্রীশুভ চৌধুরী

দোল পূর্ণিমা, ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।

Tuesday, 11 March 2025

অন্তর্যামীর স্বরূপ—

 


শ্রুতিতে যাজ্ঞবল্ক্য বলছেন"যঃ পৃথিব্যাং তিষ্ঠন্পৃথিব্যা অন্তরো যং পৃথিবী বেদ যস্য পৃথিবী শরীরং যঃ পৃথিবীমন্তরো যময়ত্যেষ আত্মাঽন্তর্যাম্যমৃতঃ॥" -(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-..)

যিনি পৃথিবীতে অবস্থিত পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ এবং পৃথিবী যাকে জানে না; পৃথিবী যার শরীর, এবং যিনি অভ্যন্তরে থেকে পৃথিবীকে পরিচালিত করছেন; তিনিই তোমার জিজ্ঞাসিত অবিনাশী অন্তর্যামী আত্মা।

ভগবান্ ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য এই শ্রুতির ভাষ্যে বলেছেনদেবতার যে, শরীর ইন্দ্রিয়বর্গ, সাক্ষিস্বরূপ ঈশ্বর-সান্নিধ্যই সে সমুদায়ের প্রবৃত্তি নিবৃত্তি ঘটিয়ে থাকে; ঈদৃশ শক্তিসম্পন্ন, নারায়ণনামক যে ঈশ্বর পৃথিবীকেপৃথিবীর দেবতাকে অন্তরে থেকে যথানিয়মে কর্তব্যবিষয়ে নিয়মিত বা পরিচালিত করছেন; তিনি তোমার, আমার এবং সর্বভূতের আত্মা। তিনিই তোমার জিজ্ঞাসিত অন্তর্যামী অমৃত অর্থাৎ জন্মমরণাদি সর্বপ্রকার সংসারধর্ম-বর্জিত অবিনাশী আত্মা।

যিনি জলে, অগ্নিতে, অন্তরিক্ষে, বায়ুতে, দ্যুলোকে, আদিত্যে, চতুর্দিকে, চন্দ্র তারকামণ্ডলে এবং আকাশে অবস্থিত। যিনি তমেআবরণস্বভাব বাহ্য অন্ধকারে, তেজে অর্থাৎ সমস্ত প্রকাশময় বস্তুতে সাধারণতঃ বিদ্যমান তিনিই অন্তর্যামী অমৃতাত্মা। এতক্ষণ অন্তর্যামী বিষয়ে অধিদৈবত অর্থাৎ দেবতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হল, অতঃপর শ্রুতিতে অধিভূত অর্থাৎ ব্রহ্মাদি স্থাবরান্ত ভূতবিষয়ে অন্তর্যামী-বিজ্ঞান বর্ণিত হচ্ছে"যঃ সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্সর্বেভ্যো ভূতেভ্যোঽন্তরো সর্বাণি ভূতানি বিদুর্যস্য সর্বাণি ভুতানি শরীরং যঃ সর্বাণি ভূতান্যন্তরো যময়ত্যেষ আত্মাঽন্তর্যাম্যমৃত।"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-..১৫)

যিনি সমস্ত ভূতে আছেন, সমস্ত ভূতের অভ্যন্তর, সমস্ত ভূত যাকে জানে না; সমস্ত ভূত যার শরীর, এবং যিনি সমস্ত ভূতের অভ্যন্তরে থেকে সমস্ত ভূতকে পরিচালিত করেন, তিনি তোমার অন্তর্যামী অবিনাশী আত্মা।

অতঃপর শ্রুতিতে অধ্যাত্ম (দেহ-সম্বন্ধী) অন্তর্যামীর কথা বলা হচ্ছে। যিনি প্রাণে অর্থাৎ প্রাণসংযুক্ত ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে, যিনি বাগিন্দ্রিয়ে, চক্ষুতে, শ্রবণেন্দ্রিয়ে, মনে, ত্বকে, বিজ্ঞানেবুদ্ধিতে, রেতে অর্থাৎ প্রজননে বর্তমান তিনিই অন্তর্যামী অবিনাশী আত্মা।

"আত্মাঽন্তর্যাম্যমৃতোঽদৃষ্টো দ্রষ্টাঽশ্রুতঃ শ্রোতাঽমতো মন্তাঽবিজ্ঞতো বিজ্ঞাতা। নান্যোঽতোঽস্তি দ্রষ্টা নান্যোঽতোঽস্তি শ্রোতা নান্যোঽতোঽস্তি মন্তা নান্যোঽতোঽস্তি বিজ্ঞাতৈষ আত্মাঽন্তর্যাম্যমৃতোঽতোঽন্যদার্তং।"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-..২৩)

অর্থাৎ তিনি অদৃষ্ট অর্থাৎ চাক্ষুষ দর্শনের বিষয়ীভূত নন, কিন্তু নিজে স্বপ্রকাশস্বরূপে সর্বদা চক্ষুতে বিদ্যমান থাকেন বলে দ্রষ্টা; সেরূপ, অশ্রুত অর্থাৎ শ্রবণেন্দ্রিয়ের বিষয়ীভূত নন, অথচ তাঁর নিজের শ্রবনশক্তি কখনও বিলুপ্ত হয় না; সকল শ্রবণেন্দ্রিয়ে তাঁর সন্নিধান আছে বলে তিনি শ্রোতা। এরূপ তিনি মানসিক সংকল্প বিকল্পের বিষয়ীভূত নন; কারণ, যা চক্ষু দ্বারা দৃষ্ট কিম্বা শ্রবণ দ্বারা শ্রুত হয়, মন তদ্বিষয়েই সংকল্প করতে পারে, কিন্তু অন্তর্যামী যখন অদৃষ্ট এবং অশ্রুত, তখন তদ্বিষয়ে মনের সংকল্প করবার ক্ষমতা নেই; কাজেই তিনি অমত; তাঁর মনন শক্তি কখনও বিলুপ্ত হয় না, এবং নিখিল মনেতেই তাঁর নিত্য সন্নিধান রয়েছে; কারণে তিনি মন্তা (মননকর্তা); সেরূপ তিনি অবিজ্ঞাত, অর্থাৎ বাহ্য রূপরসাদির ন্যায় এবং আন্তর সুখ-দুঃখাদির ন্যায় নিশ্চয়াত্মক জ্ঞানের বিষয়ীভূত হন না, অথচ তাঁর জ্ঞানশক্তি কখনও বিলুপ্ত না হওয়ায় এবং নিরন্তর বিজ্ঞান-ক্ষেত্র বুদ্ধিতে সন্নিহিত থাকায় তিনি নিজে বিজ্ঞাতা।

উক্ত অন্তর্যামীর অতিরিক্ত কোন দ্রষ্টা নেই, এবং এর অতিরিক্ত অপর শ্রোতাও নেই, এর অতিরিক্ত অপর কেউ মন্তামননকর্তা নেই এবং এতদতিরিক্ত আর বিজ্ঞাতাও নেই। যার অতিরিক্ত দ্রষ্টা শ্রোতা মন্তা বিজ্ঞাতা নেই, যিনি স্বয়ং অপরের অদৃষ্ট অথচ দ্রষ্টা; অপরের অশ্রুত অথচ শ্রোতা; অপরের অমত অথচ মন্তা, এবং অন্যের অবিজ্ঞাত হয়েও বিজ্ঞাতা, তিনিই তোমার অন্তর্যামী অমৃত আত্মা। এই অন্তর্যামিসংজ্ঞক আত্মস্বরূপ ঈশ্বরের অতিরিক্ত সমস্ত বস্তুই আর্ত (বিনাশশীল)......

তথ্যসূত্রঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের বৃহদারণ্যক উপনিষদ্ ভাষ্য।

শ্রীশুভ চৌধুরী

মার্চ , ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।

ব্যাবহারিক জীব, প্রাতিভাসিক জীব ও পারমার্থিক জীবঃ-

 


অনাদিকাল হতে আরম্ভ করে মোক্ষ প্রাপ্তির পূর্বপর্যন্ত, এই জীব জগৎ ব্যবহারকে আশ্রয় করে অবস্থান করে। সেহেতু তদুভয়কে ব্যাবহারিক বলে। জীব জগৎ উভয়ই অনির্বচনীয় মায়ার কার্য বলে মোক্ষদশায় থাকে না। এই দুইটি কেবলমাত্র ব্যবহারকালে থাকে। আবরণবিক্ষেপশক্তিরূপিণী নিদ্রা চিদাভাসে অবস্থিত থেকে ব্যাবহারিক জীব এবং জগৎকে আবৃত করে নূতন প্রাতিভাসিক জীবজগৎ সৃজন করে। স্বপ্নকালে অনুভূয়মান জীব এবং জগতের প্রতীতিকালেই অর্থাৎ স্বপ্নজ্ঞানকালেই মাত্র স্থিতি হয়ে থাকে বলে জীব এবং জগৎ প্রাতিভাসিক। কারণ, একবার স্বপ্ন হতে যে ব্যক্তি প্রবুদ্ধ হয়েছে, সেই ব্যক্তির স্বপ্নদৃষ্ট জীব এবং জগৎ পুনঃ স্বপ্নাবস্থায় স্থিতি অনুভূত হয় না। এরূপে অর্থাৎ প্রাতিভাসিকরূপে বর্ণিত হওয়াতে স্বপ্নের জীব জগৎ প্রতীতিকালেই থাকে এবং পুনঃ স্বপ্নকালে থাকে না বলে তারা মিথ্যা। যেরূপ স্বপ্নের জীব জগৎ নিদ্রার কার্য, সেরূপ ব্যাবহারিক জীব জগৎ মায়ার কার্য।

যে জীব স্বপ্নকল্পিত প্রাতিভাসিক, সে সেই প্রাতিভাসিক জগৎকে সত্য বলে জানে। কিন্তু অপর অর্থাৎ ব্যাবহারিক জীব তাকে মিথ্যা বলে জানে। যে জীব ব্যাবহারিক, সে সেই মায়াকল্পিত ব্যাবহারিক জগৎকে সত্য বলে জানে, কিন্তু অন্য অর্থাৎ পারমার্থিক জীব তাকে মিথ্যা বলে জানে। ব্যাবহারিক জীব জগৎ অনাদি হলেও, "গতাঃ কলাঃ পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাঃ" (মুণ্ডক উপনিষৎ-//)এই শ্রুতিবচনানুসারে বর্তমান দেহরাহিত্যরূপ কৈবল্যদশায় সেই ব্যাবহারিক জীব জগতের প্রতীতিরও আত্যন্তিক নাশ নিশ্চিত এবং শ্রুতি আচার্যের উপদেশ অনুভব করবার ফলে স্বভাবসিদ্ধ ব্রহ্মাত্মস্বরূপতার সাক্ষাৎকার লাভ হলে, ভাবিদেহনিবৃত্তিরূপ যে জীবন্মুক্তিদশা লাভ হয়, তাতে সেই ব্যাবহারিক জীব জগতের কখনো কখনো প্রতীতি হয় বটে। তদুভয়ের সত্তার আত্যন্তিক নাশ শ্রুতি, যুক্তি অনুভব সিদ্ধ বলে প্রাতিভাসিক জীব এবং জগৎ যেমন মিথ্যা, ব্যাবহারিক জীব জগৎ ঠিক সেইরূপই মিথ্যা। পারমার্থিক জীব সচ্চিদানন্দস্বরূপ ব্রহ্মকেই নিজের স্বরূপ এবং পারমার্থিক সত্য বলে জানেন। তিনি আপনাভিন্ন (ব্রহ্মভিন্ন) অন্য কিছুই দেখেন না। প্রারব্ধবশতঃ ব্যুত্থানকালে জীব জগৎ দৃষ্ট হলে তৎসমুদয়কে মিথ্যা বলে দেখেন। যে জীব শাস্ত্রের তাৎপর্য অনুভবসহিত সম্যক অবধারণ করে বুঝেন যে, কার্যকারণভাব পারমার্থিক নয়, কিন্তু আকাশে তলমলিনতাদির প্রতীতির ন্যায় পূর্ণব্রহ্মে জীবত্ব ভ্রান্তিবশতই প্রতীত হয়, সেই জীব পারমার্থিক জীবএটা শাস্ত্রতত্ত্ববিদ্গণের উক্তি। কেননা শ্রুতি বলছেন'যত্র নান্যৎ পশ্যতি'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-/২৪/)—

ভূমার স্বরূপ নির্দেশ করে বলছেন যে, ভূমাতে তিনি অন্য কিছু দর্শন করেন না। 'যত্র ত্বস্য (বা অস্য ) সর্বমাত্মৈবাভূৎ' (বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-//১৪/, //১৫)—পক্ষান্তরে সাধকের যে অবস্থায় সমস্তই (জগৎই) আত্মস্বরূপ হয়ে যায়, আত্মাতিরিক্ত কোন বস্তুর সত্তাস্ফূর্তি হয় না তখন কিসের দ্বারা কাকে আঘ্রাণ করবে? প্রবল প্রারব্ধবশে স্বরূপাবস্থান হতে চিদাভাসের আকারে ব্যুত্থিত হয়ে যদি কোন সময়ে জীব, জগৎ প্রভৃতি দেখেন, তাহলে মিথ্যা বলেই দেখেন; কখনোই সত্য বলে দেখেন না, এটাই তাৎপর্য।........

তথ্যসূত্রঃ- ভগবান্ শঙ্করাচার্য (মতান্তরে ভারতী তীর্থ) বিরচিত "দৃগ্দৃশ্যবিবেক" (বাক্যসুধা), আনন্দ গিরি ব্রহ্মানন্দ ভারতীর টীকা সমেত।

শ্রীশুভ চৌধুরী

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...