আচার্য শঙ্কর কৃষ্ণযজুর্বেদের কঠ শাখার অন্তর্গত কঠোপনিষৎ ভাষ্যে বলিতেছেন- ব্রহ্ম বা আত্মচৈতন্য ব্রহ্মাদি হইতে আরম্ভ করিয়া স্থাবর (বৃক্ষলতাদি) পর্যন্ত সমস্ত প্রাণীতে বর্তমান আছেন এবং সেই সেই বিশেষ দেহরূপ উপাধিনিমিত্ত অব্রহ্মের ন্যায় প্রতীয়মান হইতেছেন, তিনি পরব্রহ্ম হইতে ভিন্ন সংসারী-এইরূপ আশঙ্কা কাহারও না হউক, এইজন্য শ্রুতি এই অদ্বয়তত্ত্ব বলিতেছেন-
যদেবেহ তদমুত্র যদমুত্র তদন্বিহ। মৃত্যোঃ স মৃত্যুমাপ্নোতি য ইহ নানেব পশ্যতি।।-(কঠ উপনিষৎ-২।১।১০)
'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- যে আত্মচৈতন্যস্বরূপ এখানে অর্থাৎ কার্যোপাধি (দেহে) ও কারণোপাধি (মায়াতে) যুক্ত হইয়া জীব, ব্রহ্মা ইত্যাদিরূপে অবিবেকিগণের নিকট সংসারধর্ম্মবিশিষ্ট বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছেন, স্বস্বরূপে স্থিত সেই আত্মচৈতন্যস্বরূপই আবার অমুত্র অর্থাৎ ঐ নিত্য বিজ্ঞানঘনস্বরূপ সম্পূর্ণ সংসার ধর্মশূন্য ব্রহ্ম। যে আত্মচৈতন্যস্বরূপ ঐ স্বরূপে স্থিত তাহাই আবার নামরূপাত্মক কার্যকারণরূপ উপাধি অনুযায়ী (জীব, ব্রহ্মা ইত্যাদি) বিবিধরূপে প্রতীত হন, কিন্তু তিনি ভিন্ন তাহা অন্য কেহই নয়।
এইরূপ (একত্ব) হইলেও যে ব্যক্তি ভেদদৃষ্টিই যে অন্তঃকরণরূপ উপাধির স্বভাব, সেই ভেদদৃষ্টিরূপ অধ্যাসের দ্বারা মোহিত হইয়া অভিন্নস্বরূপ সমরস ব্রহ্মে 'আমি পরব্রহ্ম হইতে ভিন্ন এবং পরব্রহ্মও আমা হইতে ভিন্ন' এইপ্রকার ভিন্নবৎ উপলব্ধি করেন তিনি মৃত্যু হইতে অপর মৃত্যু অর্থাৎ পুনঃ পুনঃ জন্মমরণভাব প্রাপ্ত হন। অতএব এইরূপ ভেদদর্শন করিবে না। পরন্তু 'আমি ভেদরহিত সমরস বিজ্ঞানস্বরূপ আকাশতুল্য পরিপূর্ণ ব্রহ্ম' এইরূপ উপলব্ধি করিবে।
ইতি শ্রতি বাক্যার্থ..
No comments:
Post a Comment