॥স্বাত্মপ্রকাশিকা॥
ভগবৎপাদ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য বিরচিত 'স্বাত্মপ্রকাশিকা' ও ইহার ভাবার্থ-
জগৎকারণমজ্ঞানমেকমেব চিদন্বিতম্।
এক এব মনঃ সাক্ষী জানাত্যেবং জগত্ত্রয়ম্॥১॥
শিষ্য বলিতেছেন- একমাত্র ব্রহ্মাশ্রিত অজ্ঞান জগতের উপাদান, মনের সাক্ষীস্বরূপ একই আত্মা এই ত্রিজগৎকে জানেন।১
বিবেকয়ুক্তবুদ্ধ্যাহং জানাম্যাত্মানমদ্বয়ম্।
তথাপি বন্ধমোক্ষাদিব্যবহারঃ প্রতীয়তে॥২॥
আমি বিবেকযুক্ত বুদ্ধিদ্বারা অদ্বিতীয় আত্মাকে জানি, তথাপি বন্ধন, মোক্ষ প্রভৃতি ব্যবহার প্রতীত হইয়া থাকে। ২
বিবর্তোঽপি প্রপঞ্চো মে সত্যবদ্ভাতি সর্বদা।
ইতি সংশয়পাশেন বদ্ধোঽহং ছিন্দ্ধি সংশয়ম্॥৩
এই জগৎপ্রপঞ্চ ব্রহ্মের বিবর্ত্ত হইলেও ইহা আমার নিকট সত্যের ন্যায় সর্বদা প্রতীয়মান হইতেছে। হে গুরু! আমি এইরূপ সংশয়রূপ বন্ধনের দ্বারা বদ্ধ হইয়াছি, আমার বন্ধন ছেদন করুন। ৩
এবং শিষ্যবচঃ শ্রুৎবা গুরুরাহোত্তরং স্ফুটম্।
নাজ্ঞানং ন চ বুদ্ধিশ্চ ন জগন্ন চ সাক্ষিতা॥৪॥
শিষ্যের এইরূপ বাক্য শ্রবণ করিয়া শ্রীগুরু স্পষ্টভাষায় উত্তর করিলেন-অজ্ঞান, বুদ্ধি, জগৎ ও তাহার সাক্ষীএই সমুদায় কিছুই নাই। ৪
গন্ধমোক্ষাদয়ঃ সর্বে কৃতাঃ সত্যেহদ্বয়ে ত্বয়ি।
ভাতীত্যুক্তে জগৎসর্বং সদ্রূপং ব্রহ্ম তদ্ভবেৎ॥৫॥
কিন্তু সত্য, অদ্বিতীয়, ব্রহ্মস্বরূপ তোমাতে বন্ধনমোক্ষ প্রভৃতি সমুদায় কল্পিত হইয়াছে, এবং তোমাতে সকল জগৎ প্রকাশ পাইতেছে- একথা বলিলে সৎস্বরূপ সেই ব্রহ্মই প্রকাশ পাইতেছেন, ইহা বুঝিতে হইবে। ৫
সর্পাদৌ রজ্জুসত্তেব ব্রহ্মসত্তৈব কেবলম্।
প্রপঞ্চাধাররূপেণ বর্ততে তজ্জগন্ন হি॥৬॥
রজ্জুতে আরোপিত সর্পে যেমন রজ্জুর সত্তা, সেইরূপ জগতে কেবল ব্রহ্মেরই সত্তা। প্রপঞ্চের আধাররূপে অবস্থান করিতেছেন। জগৎ সৎ নহে। ৬
যথেক্ষুমভিসংব্যাপ্য শর্করা বর্ততে তথা।
আশ্চর্যব্রহ্মরূপেণ ৎবং ব্যাপ্তোঽসি জগত্ত্রয়ম্॥৭॥
যেমন চিনি সমস্ত ইক্ষুকে ব্যাপিয়া অবস্থান করে সেইরূপ তুমি আশ্চর্যস্বরূপ ব্রহ্মরূপে ত্রিজগৎ ব্যাপিয়া আছ। ৭
মরুভূমৌ জলং সর্বং মরুভূমাত্রমেব তৎ।
জগত্ত্রয়মিদং সর্বং চিন্মাত্রং সুবিচারতঃ॥৮॥
মরভূমিতে যে জল দৃষ্ট হয়, তাহা মরুভূমিমাত্র, সেইরূপ ত্রিজগৎ চৈতন্যমাত্র-ইহা উত্তমরূপে বিচারের দ্বারা অবগত হও। ৮
ব্রহ্মাদিস্তম্বপর্যন্তাঃ প্রাণিনস্ত্বয়ি কল্পিতাঃ।
বুদ্বুদাদিতরঙ্গান্তা বিকারাঃ সাগরে যথা॥৯॥
যেমন বুদ্বুদ্ ও তরঙ্গ প্রভৃতি সমস্তবিকার সাগরে কল্পিত আছে, সেইরূপ ব্রহ্মা হইতে স্থাবর পর্যন্ত সকল প্রাণী ব্রহ্মস্বরূপ তোমাতে কল্পিত রহিয়াছে।৯
তরঙ্গ ত্বং ধ্রুবং সিন্ধুর্ন বাঞ্ছতি যথা তথা।
বিষয়ানন্দবাঞ্ছা তে মহদানন্দরূপতঃ॥১০॥
সমুদ্র যেমন তরঙ্গ হইতে চায় না, সেইরূপ তুমি পরমানন্দস্বরূপ , তোমারও বিষয়ানন্দে বাঞ্ছা হইতে পারে না।
.........................................................................
বিঃদ্রঃ-ধারাবাহিকভাবে লিখব
No comments:
Post a Comment