ভগবৎপাদ্ শ্রী শঙ্করাচার্য বিরচিত-"ত্রিপুরসুন্দরি
অষ্টকম্"
কদম্ববনচারিণীং মুনিকদম্বকাদম্বিনীং
নিতম্বজিতভূধরাং সুরনিতম্বিনীসেবিতাম্ ।
নবাম্বুরুহলোচনাং অভিনবাম্বুদশ্যামলাং
ত্রিলোচনকুটুম্বিনীং ত্রিপুরসুন্দরীমাশ্রয়ে ॥ ১॥
অনুবাদঃ যিনি কদম্ববনমধ্যে সর্ব্বদা বিচরন করেন,
যিনি মুনিগনের হৃদয়াকাশে মেঘমালাস্বরূপা, যাঁহার নিতম্ব পর্ব্বতকে জয় করিয়াছে, সুর-নিতম্বিনীগন
যাঁহার সেবা করেন, যাঁহার নয়নযুগল নবোৎপন্ন কমলের ন্যায় সুদৃশ্য, যিনি নবীন নীরদের
ন্যায় শ্যামবর্ণা এবং যিনি ত্রিলোচনের গৃহিণী, সেই ত্রিপুর সুন্দরীর ( ভক্তি সহকারে
) আমি আশ্রয় গ্রহন করিতেছি।।১।।
কদম্ববনবাসিনীং কনকবল্লকীধারিণীং
মহার্হমণিহারিণীং মুখসমুল্লসদ্বারুণীম্ ।
দয়াবিভবকারিণীং বিশদলোচনীং চারিণীং
ত্রিলোচনকুটুম্বিনীং ত্রিপুরসুন্দরীমাশ্রয়ে ॥ ২॥
অনুবাদঃ যিনি কদম্ববনে বাস করেন, যিনি কনকবীণা
ধারণ করিতেছেন, যিনি মহামূল্য মণিসমুহের হার পরিধান করিয়াছেন, যাঁহার মুখ কমলে বারুণী
উল্লসিত থাকে, যিনি দয়াবিভবকারিণী বিশদলোচনী অর্থাৎ নির্ম্মল-জ্ঞানদায়িনী এবং সুন্দরগমনা
ত্রিলোচনের গেহিনী, সেই ত্রিপুরসুন্দরীর আমি আশ্রয় গ্রহন করিতেছি।।২।।
কদম্ববনশালয়া কুচমরোল্লসন্মালয়া
কুচোপমিতশৈলয়া গুরুকৃপালসদ্বেলয়া ।
মদারুণকপোলয়া মধুরগীতবাচালয়া
কয়াঽপি ঘননীলয়া কবচিতা বয়ং লীলয়া ॥ ৩॥
অনুবাদঃ যিনি কদম্ববনে গৃহ স্থাপন করিয়াছেন, যাঁহার
স্তনযুগলে মণিময় হার বিরাজমান আছে, যাঁহার কুচযুগল গিরিবরের ন্যায়, যাঁহার মহতী কৃপা
সর্ব্বকালে বিরাজমান, যাঁহার কপোলদেশ মদভরে আরক্ত, যিনি সর্ব্বদা মধুর গীতধ্বনি করিতেছেন,
যিনি নবজলধরের ন্যায় নীলবর্ণা, সেই প্রকার দেহ লীলাবশে আমাদিগের রক্ষাকবচ হইয়াছেন ।।
৩ ।।
কদম্ববনমধ্যগাং কনকমণ্ডলোপস্থিতাং
ষড়ম্বুরুহবাসিনীং সততসিদ্ধসৌদামিনীম্ ।
বিড়ম্বিতজবারুচিং বিকচচন্দ্রচূড়ামণিং
ত্রিলোচনকুটুম্বিনীং ত্রিপুরসুন্দরীমাশ্রয়ে ॥ ৪॥
অনুবাদঃ যিনি কদম্ববনমধ্যবর্ত্তিনী, যিনি সুবর্ণমণ্ডলোপরি
উপবিষ্টা আছেন, যিনি মূলাধারাদি ষটচক্রপথে বাস করেন, যিনি সর্ব্বদা সিদ্ধিবিকাশে সৌদামিনীতুল্যা,
যাঁহার দেহকান্তি জবাপুষ্পের শোভা তিরস্কৃত করিয়াছে, যাঁহার চূড়াতে পূর্ণচন্দ্র মণিস্বরূপে
বিদ্যমান রহিয়াছে, যিনি ত্রিলোচনের কুটুম্বিনী আমি সেই ত্রিপুরসুন্দরীর আশ্রয় গ্রহণ
করিতেছি।।৪।।
কুচাঞ্চিতবিপঞ্চিকাং কুটিলকুন্তলালংকৃতাং
কুশেশয়নিবাসিনীং কুটিলচিত্তবিদ্বেষিণীম্ ।
মদারুণবিলোচনাং মনসিজারিসংমোহিনীং
মতঙ্গমুনিকন্যকাং মধুরভাষিণীমাশ্রয়ে ॥ ৫॥
অনুবাদঃ যিনি কুচোপরি বীণা রাখিয়া থাকেন, যিনি
কুটিল কুন্তলে অলঙ্কৃতা, যিনি কমলাসনা, যিনি কুটিলহৃদয় লোকদিগের দ্বেষ করেন, যাঁহার
লোচনযুগল সর্ব্বদা মদবশে আরক্ত, যিনি মদনান্তক মহাদেবকেও মোহিত করিয়াছেন, যিনি মতঙ্গমুনির
কন্যারূপে আবির্ভূতা হইয়াছিলেন, আমি সেই মধুরভাষিণীর আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি।।৫।।
স্মরপ্রথমপুষ্পিণীং রুধিরবিন্দুনীলাম্বরাং
গৃহীতমধুপাত্রিকাং মধুবিঘূর্ণ নেত্রাঞ্চলাম্ ।
ঘনস্তনভরোন্নতাং গলিতকূলিকাং শ্যামলাং
ত্রিলোচনকুটুম্বিনীং ত্রিপুরসুন্দরীমাশ্রয়ে ॥ ৬॥
অনুবাদঃ যাঁহাকে প্রথমপুষ্পিণী বলিয়া স্মরণ করা
বিহিত, যাঁহার নীলাম্বরে রুধিরবিন্দু বিরাজিত আছে, যিনি মধুপাত্র ধারণ করিয়াছেন, মধুপানে
যাঁহার লোচন সর্ব্বদা ঘূর্ণ্যমান এবং স্তনদ্বয় অতি ঘন ও উন্নত, যাঁহার কেশপাশ আলুলায়িত,
যিনি শ্যামবর্ণা ও ত্রিলোচনের কুটুম্বিনী, সেই ত্রিপুরসুন্দরীর আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি।।৬।।
সকুঙ্কুমবিলেপনাং অলকচুম্বিকস্তূরিকাং
সমন্দহসিতেক্ষণাং সশরচাপপাশাঙ্কুশাম্ ।
অশেষজনমোহিনীং অরুণমাল্যভূষাম্বরাং
জবাকুসুমভাসুরাং জপবিধৌ স্মরাম্যম্বিকাং ॥ ৭॥
অনুবাদঃ যাঁহার অঙ্গে কুঙ্কুমাদি বিলেপন রহিয়াছে,
যাঁহার অলকপ্রান্ত কস্তূরচূর্ণে সজ্জিত, যিনি মন্দ হাস্যসহকারে দৃষ্টিপাত করিতেছেন,
যিনি চারি হস্তে বাণ, ধনু, পাশ ও অঙ্কুশ ধারণ করিয়াছেন, যিনি জগতের সকল জনকে মোহিত
করেন, যিনি রক্তমাল্য, রক্তবর্ণ অলঙ্কার ও রক্তবসনে বিভুষিতা, যাঁহার দেহকান্তি জবাপুষ্পের
ন্যায় অতিশয় সমুজ্জ্বল, সেই জগজ্জননীকে জপকার্য্যে আমি স্মরণ করি।।৭।।
পুরন্দরপুরন্ধ্রিকাং চিকুরবন্ধসৈরিন্ধ্রিকাং
পিতামহপতিব্রতাং পটুপটীরচর্চ্চারতাম্ ।
মুকুন্দরমণীমণীং লসদলঙ্ক্রিয়াকারিণীং
ভজামি ভুবনাম্বিকাং সুরবধূটিকাচেটিকাম্ ॥ ৮॥
অনুবাদঃ যিনি পুরন্দরপুরের পুরন্ধ্রীস্বরূপা (
ইন্দ্রাণী ), যিনি কেশবন্ধনে সৈরিন্ধ্রী, যিনি ব্রহ্মার পতিব্রতা শক্তি (ব্রহ্মাণী),
যিনি মণিময় ভূষণ ধারণ করেন, যিনি উত্তম চন্দনে অনুলিপ্তা, যিনি মুকুন্দের রমণীরূপা
(বৈষ্ণবী), যিনি নিখিল ভুবনের জননী এবং সুরবধূগন যাঁহার দাসীকার্য্যে নিরত আছেন, তাঁহাকে
সেবা করি।।৮।।
ইতি পরমহংস পরিব্রাজক আচার্য গোবিন্দভগবৎ পূজ্যপাদ
শিষ্য শ্রীশঙ্কর ভগবৎ প্রণীত ত্রিপুরসুন্দরি অষ্টকম্ সমাপ্ত।
No comments:
Post a Comment