অষ্টাবক্র মুনি অষ্টাবক্র-গীতার শান্তিশতকম্ প্রকরণে বলছেন—
কৃত্যং
কিমপি নৈবাস্তি ন কাপি হৃদিরঞ্জনা।
যথা
জীবনমেবেহ জীবন্মুক্তস্য যোগিনঃ।।১৩।।
অনুবাদঃ-
জীবন্মুক্ত জ্ঞানীর সঙ্কল্পবশে কিছুই করার নেই। তাঁর মনেও কোন বিষয়ের প্রতি বিন্দুমাত্রও
অনুরাগ হয় না। কারণ আসক্তির হেতু অবিদ্যা তাঁর বিনষ্ট হয়ে গেছে। তথাপি জীবনহেতু অদৃষ্ট
অর্থাৎ প্রারব্ধ অনুসারেই তাঁর সর্ব কর্ম সম্পন্ন হয়ে থাকে।
সংসারদৃশ্য দর্শন করলেও অহংকাররাহিত্যবশতঃ জীবন্মুক্তের সদা ব্রাহ্মীস্থিতি অব্যাহত থাকে। অষ্টাবক্র মুনি অষ্টাবক্র-গীতার শান্তিশতকম্ প্রকরণে বলছেন—
"যস্যান্তঃ
স্যাদহঙ্কারো ন করোতি করোতি সঃ।
নিরহঙ্কার
ধীরেণ ন কিঞ্চিদকৃতং কৃতম্।।২৯
অর্থাৎ
অন্তঃকরণে অহংকারাধ্যাসবিশিষ্ট পুরুষ বাহ্য দৃষ্টিতে কিছু না করলেও কর্তৃত্বাভিমানবশতঃ
সঙ্কল্পাদি করে থাকে। কর্তৃত্বাধ্যাস-বিরহিত জ্ঞানী লোকদৃষ্টিতে কর্ম করেও স্বদৃষ্টিতে
বস্তুতঃ তিনি কিছুই করেন না।
পুনশ্চ
সেই সুমতি কে, যিনি সম্যকদর্শন করেন? তদুত্তরে শ্রীভগবান্ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলছেন—"যস্য
নাহংকৃতো ভাবো বুদ্ধির্যস্য ন লিপ্যতে৷"-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৮/১৭) অর্থাৎ 'যাঁর
অহংকৃত অর্থাৎ 'আমি কর্তা' এরূপ ভাব নেই তাঁর বুদ্ধি লিপ্ত হয় না।' ভগবান শঙ্করাচার্য
এই শ্লোকের ভাষ্যে বলছেন—
শাস্ত্র
এবং আচার্যের উপদেশ ও ন্যায়ের দ্বারা সংস্কৃত আত্মার অহংকৃত অর্থাৎ "আমি কর্তা" এইরূপ ভাব
অর্থাৎ ভাবনা বা প্রত্যয় হয় না। "অধিষ্ঠানাদি পাঁচটি অবিদ্যাদ্বারা আত্মাতে
কল্পিত, সর্বকর্মের কর্তা আমি নই, আমি সেই সকল ব্যাপারের সাক্ষী মাত্র, "অপ্রাণো
হ্যমনাঃ শুভ্রো হ্যক্ষরাত্পরতঃ পরঃ"-(মুণ্ডক উপনিষৎ- ২৷১৷২) 'অপ্রাণ (প্রাণরহিত)
অমন (মনরহিত), শুভ্র (শুদ্ধ), কূটস্থ অক্ষর হতেও পর অর্থাৎ পুরুষোত্তম', কেবল এবং অবিক্রিয়",
যিনি এইরূপ দর্শন করেন;—এইরূপ অর্থ।
আত্মার উপাধিস্বরূপ বুদ্ধি অর্থাৎ অন্তঃকরণ যাঁর লিপ্ত হয় না অর্থাৎ "আমি এই কাজ করেছি তার জন্য আমি নরকে যাব"—এইরূপ বুদ্ধিকৃত কর্মে অনুতাপ করেন না—এইরূপ যাঁর বুদ্ধি লিপ্ত হয় না, তিনিই সুমতি, তিনিই যথার্থদর্শী।
No comments:
Post a Comment