আজকের
আলোচ্য বিষয় ব্রহ্মের প্রাজ্ঞ-সংজ্ঞক তৃতীয় পাদ নিরূপণ এবং তাহারই সর্ব্বান্তর্য্যামিত্ব
ও সর্ব্বকারণত্ব কথন। অথর্ববেদীয়া মাণ্ডুক্য উপনিষদে বর্ণিত আছে—
সুষুপ্ত
পুরুষ যে স্থানে বা অবস্থায় কোনরূপ ভোগ্য বিষয় প্রার্থনা করে না; কোনরূপ স্বপ্ন দর্শন
করে না; তাহাই ‘সুষুপ্ত’। এই সুষুপ্ত যাহার স্থান, (বাহ্য ও আন্তর সর্ব্বপ্রকার বিষয়
বিজ্ঞান না থাকায়) যিনি একীভাবপ্রাপ্ত, যিনি কেবলই প্রকৃষ্ট জ্ঞানমূর্ত্তি, প্রচুর
আনন্দপূর্ণ ও আত্মানন্দভোজী এবং স্বীয় বোধশক্তি যাঁহার মুখস্বরূপ, সেই প্রাজ্ঞ আত্মা
ইহার তৃতীয় পাদ। শ্রুতি আরো বলিতেছেন—"এষ সর্বেশ্বরঃ এষ সর্বজ্ঞ এষোঽন্তর্যাম্যেষ
যোনিঃ সর্বস্য প্রভবাপ্যযৌ হি ভূতানাম্"
অর্থাৎ 'ইনি (প্রাজ্ঞ) সকলের ঈশ্বর, ইনি সর্ব্বজ্ঞ, ইনি অন্তর্যামী (যিনি অভ্যন্তরে
থাকিয়া সকলকে নিয়মিত করেন), এবং যেহেতু ইনিই সমস্ত ভূতের উৎপত্তি ও বিলয় স্থান, অতএব
ইনিই সর্ব্ব জগতের কারণ।'
ভাষ্যকার
শঙ্করাচার্য এই শ্রুতির ভাষ্যে বলিতেছেন—"উপাধির প্রাধান্য বিলুপ্ত হইয়া যখন
কেবল চৈতন্যেরই প্রাধান্য হয়, তাহাই স্বরূপাবস্থা,
সেই অবস্থাপন্ন এই প্রাজ্ঞই সর্ব্বেশ্বর, অর্থাৎ আধিদৈবিকের সহিত সমস্ত কার্য্যজগতের
ঈশ্বর—ঈশিতা অর্থাৎ শাসনকর্ত্তা। ঈশ্বর পদার্থটি অপরাপরের ন্যায় ইহা হইতে পৃথক পদার্থ
নহে (তৎস্বরূপই বটে)। 'হে সোম্য, প্রাণশব্দাভিহিত ব্রহ্মই মনের অর্থাৎ মন-উপাধিক আত্মার
বন্ধন বা পর্য্যবসান-স্থান।' এই শ্রুতিও এই অর্থের গ্রাহক। সর্ব্বপ্রকার বিভাগাপন্ন
এই প্রাজ্ঞই সকলের জ্ঞাতা; এই কারণে সর্ব্বজ্ঞ; ইনিই অন্তর্যামী, অর্থাৎ ইনিই সর্ব্বভূতের
অন্তরে প্রবেশপূর্ব্বক নিয়মনকারীও বটে; এবং
যেহেতু ইনিই সমস্ত ভূতের উৎপত্তি ও বিলয়স্থান; অতএব, ইনিই বিভিন্ন প্রকার জগৎ প্রসব
করেন; সেইজন্য সমস্ত জগতের যোনি বা উৎপত্তি-স্থানও
ইনিই।"
No comments:
Post a Comment