ব্রহ্মপ্রতিবিম্ব জীব নানা নয়, এক। অন্তঃকরণরূপ উপাধির নানাত্ববশতঃ জীব নানা বলে ভ্রম হয়ে থাকে। অবিদ্যা এক, এক অবিদ্যায় নানা প্রতিবিম্ব পড়তে পারে না, জীবও সুতরাং নানা হতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল, জীব এবং জীবের অজ্ঞান যখন এক, তখন এক জীব মুক্ত হলে, কিংবা জীবের মধ্যে একজন তত্ত্বজ্ঞানী হলে সকলেই মুক্ত, সকলেই তত্ত্বজ্ঞানী হয় না কেন? একজীববাদে বন্ধ, মোক্ষ ব্যবস্থা যুক্তিযুক্ত হয় কিরূপে?
এটার
উত্তরে আচার্য সর্বজ্ঞাত্ম মুনি বলেন যে,
অজ্ঞান একই বটে, তবে
ঐ এক অজ্ঞানই অন্তঃকরণরূপ
উপাধিভেদে বিভিন্ন অসংখ্য জীবব্যক্তিকে আশ্রয় করে একই গোত্ব
যাতে যেমন নিখিল গোশরীরে
বিদ্যমান থাকে, এরূপ জাতিপদার্থের ন্যায়
অসংখ্য জীবে বিদ্যমান আছে।
যে ব্যক্তির জ্ঞানোদয় হচ্ছে, সেই ব্রহ্মজ্ঞ ব্যক্তির
অজ্ঞান বিনষ্ট হচ্ছে, তিনি মুক্ত হচ্ছেন;
অপরাপর অজ্ঞানীর অজ্ঞানবন্ধনই থেকে যাচ্ছে, সে
মুক্ত হচ্ছে না। এরূপে এক
অনাদি অজ্ঞান স্বীকার করলেও বন্ধ বা মুক্তির
কোন অসুবিধা হয় না।
আচার্য
মধুসূদন সরস্বতী আলোচ্য-মতের প্রতিধ্বনি করে
বলেছেন যে, অন্তঃকরণ-পরিচ্ছিন্ন
জীবের দ্রষ্টৃত্ব, ব্রহ্মজিজ্ঞাসা প্রভৃতিও যে অন্তঃকরণভেদে বিভিন্ন
হবে, তাতে সন্দেহ কি?
তবে, যেই অন্তঃকরণ-পরিচ্ছিন্ন
জীবের ব্রহ্মজিজ্ঞাসা তীব্রতর হয়, শাস্ত্র ও
গুরুবাক্যে অচলা শ্রদ্ধার উদয়
হয়, শ্রবণ-মনন প্রভৃতি আয়ত্ত
হয়, সেই ভাগ্যবান্ জিজ্ঞাসু
জীবই ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করেন। যাঁদের
অনুরূপ সাধনসম্পদ্ নেই, শ্রদ্ধার দৃঢ়তা
নেই, তাঁরাই অঘটন-ঘটন-পটীয়সী
মায়ার কুহকে মজে বন্ধনে আবদ্ধ
হয়। এরূপে বিচার করলে এক-জীববাদেও
বদ্ধ-মুক্ত-ব্যবস্থার অনুপপত্তি নেই।...
তথ্যসূত্রঃ-
১.
আচার্য সর্বজ্ঞাত্ম মুনির "সংক্ষেপ-শারীরকম্"।
২.
বেদান্তদর্শন অদ্বৈতবাদ, প্রথম খণ্ড ও তৃতীয়
খণ্ড, শ্রীআশুতোষ ভট্টাচার্য শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
এপ্রিল
১০, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment