পঞ্চদশীর চিত্রদীপে আচার্য বিদ্যারণ্য মুনীশ্বর এক অদ্বিতীয় চৈতন্যের চারপ্রকার বিভাগ প্রদর্শন করেছেন। এই বিভাগ যে ঔপাধিক বা কাল্পনিক তা বলাই বাহুল্য। একই আকাশ যেমন ঘটাকাশ, জলাকাশ, মহাকাশ এবং মেঘাকাশভেদে চতুর্বিধরূপে কল্পিত হয়ে থাকে, সেরূপ এক অদ্বিতীয় চৈতন্যই বিভিন্ন উপাধি বশতঃ জীব, কূটস্থ, ঈশ্বর ও ব্রহ্ম এই চতুর্বিধ আখ্যা লাভ করে।
ঘটাবচ্ছিন্ন
অর্থাৎ ঘটের দ্বারা সীমাবদ্ধ
আকাশের নাম ঘটাকাশ। ঘটমধ্যস্থ
জলে প্রতিবিম্বিত আকাশের নাম জলাকাশ। অসীম
অপরিচ্ছিন্ন অনন্ত আকাশ মহাকাশ। মহাকাশের
মধ্যে সঞ্চরমাণ মেঘমণ্ডলে তুষারের আকারে যে জল অবস্থিত
থাকে, ঐ তুষারাকার জলে
প্রতিবিম্বিত আকাশকে বলে মেঘাকাশ। উল্লিখিতরূপে
একই আকাশের যেমন চারপ্রকার বিভাগ
সম্ভবপর হয়, সেরূপ এক
অখণ্ড চৈতন্যেরও জীব, ঈশ্বর, কূটস্থ
এবং ব্রহ্ম এই চারপ্রকার কল্পিত
বিভাগ উপপাদন অসম্ভব হয় না।
স্থূল
ও সূক্ষ্ম শরীরদ্বয়ের অধিষ্ঠান এবং উক্ত শরীরদ্বয়-পরিচ্ছিন্ন চৈতন্যই কূটস্থ চৈতন্য বা সাক্ষি-চৈতন্য
বলে অদ্বৈতবেদান্তে পরিচিত। সর্ববিধ বিকার প্রবাহের মধ্যে পড়েও চৈতন্য স্বতঃ 'কূটের' ন্যায় নির্বিকারে অবস্থান করে বলে, ঐ
চৈতন্যকে কূটস্থ আখ্যা দেয়া হয়। সূক্ষ্ম শরীর
কূটস্থ চৈতন্যে কল্পিত বলে সাব্যস্ত হলে,
সূক্ষ্মশরীরের অন্তর্গত মনঃ, বুদ্ধিও যে
কল্পিত হবে, তাতে সন্দেহ
কি? ঐ বুদ্ধি বা
অন্তঃকরণে প্রতিবিম্বিত চৈতন্যই জীব। জীব চৈতন্য
কূটস্থ চৈতন্যের প্রতিবিম্ব হলেও অজ্ঞানাধিক্যবশতঃ জীব
এবং কূটস্থ চৈতন্য যে অভিন্ন তা
সংসারী জরামরণশীল জীব বুঝতে পারে
না। ব্রহ্ম অনবচ্ছিন্ন বা অনাবৃত শুদ্ধচৈতন্য।
অর্থাৎ অপরিচ্ছিন্ন ভূমা চৈতন্যকে ব্রহ্মচৈতন্য
বলা হয়। মায়া ব্রহ্মাশ্রিত
বা শুদ্ধব্রহ্মে অধিষ্ঠিত। ব্রহ্মচৈতন্যে আশ্রিত বা অধিষ্ঠিত অনাদি
মায়ায় প্রতিবিম্বিত চৈতন্যকে ঈশ্বর চৈতন্য বলা হয়।
সুতরাং
উল্লিখিত আকাশের দৃষ্টান্ত অনুসারে বিচার করলে দেখা যায়
যে, কূটস্থ ঘটাকাশ স্থানীয়, জীব জলাকাশ, ব্রহ্ম
মহাকাশ এবং ঈশ্বর মেঘাকাশ
স্থানীয়। জলাকাশের দ্বারা যেমন ঘটাকাশ সম্পূর্ণরূপে
তিরোহিত হয়, সেরূপ জলাকাশ
স্থানীয় জীবের দ্বারাও ঘটাকাশস্থানীয় কূটস্থ তিরোহিত হয়ে থাকেন। এই
তিরোধান বেদান্তে 'অন্যোন্যাধ্যাস' বলে অভিহিত হয়।
জীব ও কূটস্থের অবিবেক
'মূলাবিদ্যা' বলে প্রসিদ্ধ।...
তথ্যসূত্রঃ-
১.
আচার্য বিদ্যারণ্য মুনীশ্বরের 'পঞ্চদশী'।
২.
আচার্য অপ্পয় দীক্ষিতের 'সিদ্ধান্তলেশসংগ্রহ'।
৩.
বেদান্তদর্শন, অদ্বৈতবাদ (তৃতীয় খণ্ড), আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।..
শ্রীশুভ
চৌধুরী
এপ্রিল
৩, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment