Saturday, 29 June 2024

ব্রহ্ম শাব্দজ্ঞান ও উপাসনার বিষয় ননঃ-

 


অদ্বয় নির্গুণ নিরুপাধিক ব্রহ্ম শাব্দজ্ঞানের অবিষয়। ভগবান্ শঙ্করাচার্য বেদান্তদর্শনের সমন্বয়াধিকরণের ভাষ্যে বলেছেনবিদিক্রিয়ার কর্মরূপে (—শাব্দজ্ঞানের বিষয়রূপে) ব্রহ্মের কার্যানুপ্রবেশ হয় না; যেহেতু 'অন্যদেব তদ্বিদিতাদথো অবিদিতাদধি'-(কেন উপনিষৎ-১।৪) অর্থাৎ "তিনি বিদিত হতে ভিন্ন এবং অবিদিত হতে ভিন্ন", ইত্যাদি শ্রুতিতে তাঁর বিদিক্রিয়াকর্মত্ব (—শাব্দজ্ঞানের বিষয় হওয়া) প্রতিষিদ্ধ হয়েছে। 'যেনেদং সর্বং বিজানাতি তং কেন বিজানীয়াৎ'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-২।৪।১৪) অর্থাৎ "যাঁর দ্বারা এই সমস্তকে জানা যায়, তাঁকে কার দ্বারা জানা যাবে", ইত্যাদি শ্রুতিতেও তাই বলা হচ্ছে।

উপাস্য উপাসকের মধ্যে ভেদ থাকলেই উপাসনা সম্ভব হওয়াই জীবাভিন্ন অদ্বয় নির্গুণ নিরুপাধিক ব্রহ্ম উপাসনাক্রিয়ার বিষয়ও নন। যেহেতু শ্রুতিতে 'যদ্বাচানভ্যুদিতং যেন বাগভ্যুদ্যতে' অর্থাৎ "যিনি বাগিন্দ্রিয় দ্বারা প্রকাশিত হন না, কিন্তু বাগিন্দ্রিয় যাঁর দ্বারা প্রকাশিত হয়", এরূপে ব্রহ্মের অবিষয়তা উল্লেখ করে, 'তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি, নেদং যদিদমুপাসতে'-(কেন উপনিষৎ-১।৫) "তাঁকেই তুমি ব্রহ্ম বলে জানবে, কিন্তু ইনি ব্রহ্ম নয়, যাকে এই পদের বাচ্যরূপে (—উপাধিপরিচ্ছিন্ন অনাত্মভূত দেবতারূপে) লোকে উপাসনা করে", এইপ্রকার বর্ণিত আছে।

এমতাবস্থায় সংশয় হল, ব্রহ্ম শাব্দজ্ঞানের অবিষয় হলে তাঁর শাস্ত্রযোনিত্ব অর্থাৎ 'শাস্ত্রযোনিত্বাৎ' সূত্রে ব্রহ্মকে যে শাস্ত্রপ্রমাণগম্যরূপে প্রতিপাদন করা হয়েছে, তার বিরোধ হবে। এই বিরোধ পরিহারের জন্য ভগবান্ ভাষ্যকার বলেছেনযেহেতু শাস্ত্র অবিদ্যাকল্পিত ভেদের নিবৃত্তিই প্রতিপাদন করে। শাস্ত্র ব্রহ্মকে এটা এই পদের বাচ্যরূপে অর্থাৎ শব্দের বিষয়রূপে প্রতিপাদন করে না। অর্থাৎ 'শাস্ত্র বাচক এবং ব্রহ্ম বাচ্য', এইরূপে প্রতিপাদন করে না। প্রত্যগাত্মা হওয়ায় তাঁকে অবিষয়রূপে প্রতিপাদন করতঃ অবিদ্যাকল্পিত জ্ঞেয়, জ্ঞাতা এবং জ্ঞান প্রভৃতির ভেদকে অপনয়ন করে। 'অবিজ্ঞাতং বিজানতাং বিজ্ঞাতমবিজানতাম্'-(কেন উপনিষৎ-২।৩) অর্থাৎ "সম্যগ্ জ্ঞানিগণের নিকট ব্রহ্ম অবিজ্ঞাত (—ফলব্যাপ্যরূপে তাঁদের জ্ঞানের বিষয় নন), আর অজ্ঞানীর নিকট জ্ঞানের বিষয়রূপে ব্রহ্ম বিজ্ঞাত", ইত্যাদি এইসকল শাস্ত্রও আছে।

শাস্ত্র ব্রহ্মবস্তুকে "এটা এইরূপ", এইপ্রকারে বিধিমুখে প্রতিপাদন করতে পারেন না, কিন্তু "নেতি নেতি" এইরূপে অনাত্ম-ভিন্নরূপে, অর্থাৎ অনাত্মা যে শরীরাদি, তা হতে ভিন্নভাবে নিষেধমুখে প্রতিপাদন করেন। এইপ্রকারে শাস্ত্র ব্রহ্মকে বিধিমুখে প্রতিপাদন করতে পারেন না বলে এখানে তাঁকে শাব্দজ্ঞানের অবিষয় বলা হচ্ছে। আবার 'নেতি নেতি', এইপ্রকারে নিষেধমুখে শাস্ত্র কর্তৃক বিজ্ঞাপিত হন বলে ব্রহ্মকে শাস্ত্রপ্রমাণগম্যও বলা হয়েছে।......

তথ্যসূত্রঃ- ভগবান্ শঙ্করাচার্যের শারীরক-মীমাংসা ভাষ্য।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুন ২৮, শুক্রবার, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।

ব্রহ্মচৈতন্যই জগতের প্রকাশকঃ-

 


ব্রহ্মসূত্রের অনুকৃত্যধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় ব্রহ্মচৈতন্যই জগতের প্রকাশক। " তত্র সূর্যো ভাতি চন্দ্রতারকং নেমা বিদ্যুতো ভান্তি কুতোঽয়মগ্নিঃ৷ তমেব ভান্তমনুভাতি সর্বং তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি।"-(মুণ্ডক উপনিষৎ-২।২।১০) অর্থাৎ সেই স্থলে সূর্য প্রকাশিত হয় না, চন্দ্রমা এবং তারকা প্রকাশিত হয় না, এই বিদ্যুৎ সকল প্রকাশিত হয় না, এই অগ্নি আর কি প্রকারে প্রকাশিত হবে? প্রকাশমান্ তাঁকেই অনুকরণকরতঃ সমস্ত পদার্থ (জগৎ) প্রকাশিত হচ্ছে, তাঁর দীপ্তির দ্বারা এই সমস্ত বস্তু বিবিধরূপে প্রকাশ প্রাপ্ত হচ্ছে, মুণ্ডকাধ্যায়িগণ এইপ্রকার পাঠ করেন। উক্ত শ্রুতিবাক্যে প্রকাশমান্ যাঁকে অনুসরণকরতঃ সমস্ত বস্তু প্রকাশিত হচ্ছে এবং যাঁর দীপ্তির দ্বারা এই সমস্ত বিবিধরূপে প্রকাশপ্রাপ্ত হচ্ছে, তিনি কি কোন প্রকার জ্যোতির্ময় জড় পদার্থ অথবা প্রাজ্ঞ আত্মা (—জ্ঞানস্বরূপ পরমাত্মা)? এই প্রকার সন্দেহ হলে ভগবান সূত্রকার সিদ্ধান্ত করছেন

অনুকৃতেস্তস্য চ৷৷ -(ব্রহ্মসূত্র-..২২)

প্রাজ্ঞ আত্মাই উক্তরূপে প্রতীয়মান বস্তু হওয়া উচিত। তাতে হেতু কি? যেহেতু অনুকরণ করে, অনুকৃতি শব্দের অর্থ অনুকরণ। 'তমেব ভান্তমনুভাতি সর্বম্' অর্থাৎ প্রকাশমান্ তাঁকেই অনুসরণকরতঃ সমস্ত পদার্থ প্রকাশিত হয়, উক্ত মুণ্ডক শ্রুত্যোক্ত এই যে অনুভান, এটাই অনুকরণ; তা স্বপ্রকাশ পরমাত্মা গৃহীত হলে সঙ্গত হয়। যেহেতু "ভারূপঃ সত্যসংকল্পঃ"-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-.১৪.) চৈতন্যরূপ দীপ্তিই যাঁর রূপ, যাঁর সঙ্কল্পসকল অমোঘএইপ্রকারে শ্রুতি স্বপ্রকাশ পরমাত্মাকে পাঠ করছেন। অন্য সমস্ত পদার্থ এই পরমাত্মার দীপ্তি অবলম্বনেই প্রকাশিত হয়, এটাই ভাব। কিন্তু সূর্য প্রভৃতি অন্য কোন উৎকৃষ্টতর জড় জ্যোতির্ময় বস্তুর দীপ্তিকে অবলম্বন করে স্বয়ং প্রকাশিত হয়, এটা প্রসিদ্ধ নয়। ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য বলছেন"যদুপলভ্যতে তৎসর্বং ব্রহ্মণৈব জ্যোতিষোপলভ্যতে; ব্রহ্ম তু নান্যেন জ্যোতিষোপলভ্যতে, স্বয়ং জ্যোতিঃস্বরূপত্বাৎ" অর্থাৎ এই সংসারমণ্ডলে যা কিছু উপলব্ধ হয়, সেই সমস্তই ব্রহ্মরূপ জ্যোতির দ্বারাই উপলব্ধ হয়। স্বয়ংজ্যোতিঃস্বরূপ হন বলে ব্রহ্ম কিন্তু অন্য জ্যোতির দ্বারা উপলব্ধ (প্রকাশিত) হন না। "আত্মনৈবায়ং জ্যোতিষাস্তে"-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৪।৩।৬) অর্থাৎ ইনি (—এই পুরুষ) আত্মরূপ জ্যোতির দ্বারাই উপবেশন করেন, ইত্যাদি শ্রুতিসকল হতে এটা অবগত হওয়া যায়।

আর ভগবদ্গীতাতেও প্রাজ্ঞ আত্মারই এতাদৃশ স্বরূপ স্মৃত হয়েছে। যথা—" তদ্ভাসয়তে সূর্যো শশাঙ্কো পাবকঃ৷ যদ্গত্বা নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম"-(শ্রীগীতা-১৫।৬) অর্থাৎ যাঁকে লাভ করলে সংসারে আর পুনর্জন্ম হয় না, যা চন্দ্র, সূর্য অগ্নি প্রকাশ করতে পারে না, তাই আমার পরমধাম (—স্বরূপ) "যদাদিত্যগতং তেজো জগদ্ভাসয়তেঽখিলম্৷ যচ্চন্দ্রমসি যচ্চাগ্নৌ তত্তেজো বিদ্ধি মামকম্৷"-(শ্রীগীতা-১৫।১২) অর্থাৎ যে জ্যোতিঃ সূর্যে, চন্দ্রে অগ্নিতে আছে এবং যা সমগ্র জগৎকে প্রকাশ করে, সেই জ্যোতিঃ আমার জানবে।  অতএব এটা সিদ্ধ হল যে পরমাত্মা অন্য কর্তৃক প্রকাশিত হন না, কিন্তু স্বয়ং সমস্ত বিশ্বের প্রকাশক।.....

তথ্যসূত্রঃ-

. ভগবান শঙ্করাচার্য বিরচিত "শারীরকমীমাংসাভাষ্য"

. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা "শাঙ্করভাষ্য"

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুন ২৩, রবিবার, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।

ব্রহ্ম নির্গুণ নির্বিশেষ হলে শ্রুত্যুক্ত সগুণব্রহ্মবোধক বাক্য কি নিরর্থক?

 


তর্কের ভিত্তিতে বিচার করলে দেখা যায় যে, নির্গুণকে বুঝতে গেলেই সগুণকে জানা প্রয়োজন হয়। নির্গুণ বাক্য দ্বারা উপনিষদে ব্রহ্মে সর্ববিধ গুণের নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধের কোন বিষয় না থাকলে, কার নিষেধ তা না বুঝালে, নিষেধের সেক্ষেত্রে কোনই অর্থ হয় না। সগুণ বাক্যের দ্বারা ব্রহ্মের যে সকল গুণরাজি বর্ণিত হয়েছে, নির্গুণ বাক্যে সেই সমুদয় গুণেরই নিষেধ সূচিত হয়েছে। সগুণ বাক্য না থাকলে, নির্গুণ বাক্যের অবতারণাই অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রহ্মের গুণ-সম্পর্ক কল্পিত না হলে, সত্য স্বাভাবিক গুণের নিষেধ কোন মতেই সম্ভবপর হয় না। সে অবস্থায় গুণের নিষেধে গুণীরও নিষেধ হয়ে যায়। আবার সগুণবাক্যের প্রাধান্য দিলে, উপনিষদে যে অসংখ্য নির্গুণবাক্য দেখতে পাওয়া যায়, তা নির্বিষয় এবং অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় অদ্বৈতবাদীর দৃষ্টিতে নির্গুণ বাক্যের প্রাধান্য স্বীকার করলে, উপাসনা জগতে সগুণ ব্রহ্মবোধক বাক্যেরও নির্দিষ্ট স্থান পাওয়া যায়। সগুণ এবং নির্গুণ কোনরূপ উপনিষদের উক্তিই মিথ্যা এবং অপ্রমাণ হয় না। আচার্য মধুসূদন সরস্বতী বলেছেন"সগুণবাক্যানাম্ ঔপাধিকগুণবিষয়েত্বেন স্বাভাবিকনির্ধর্মকত্বশ্রুতের্নবিরোধঃ। (অদ্বৈতসিদ্ধি) স্থূলদর্শী সাধকের উপাসনার সুবিধার জন্য ব্রহ্মের সগুণ ভাবের কল্পনা করা হয়ে থাকে। যিনি স্বতঃ নির্গুণ, তিনিই মায়া উপাধিবশতঃ সগুণ সবিশেষ হন। এই সগুণভাব তাঁর লীলামাত্র। তিনি মায়াধীশ, তাঁর উপর মায়ার কোন প্রভাব নেই।

'সর্বকর্মা সর্বকামঃ সর্বগন্ধঃ সর্বরসঃ'-(ছান্দোগ্য উপনিষদ্-৩।১৪।২) প্রভৃতি শ্রুতি ব্রহ্মের সগুণভাব প্রকাশ করছে। "নিষ্কলং নিষ্ক্রিয়ং শান্তং নিরবদ্যং নিরঞ্জনম্"-( শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ-৬।১৯) ইত্যাদি শ্রুতি দ্বারা ব্রহ্মের নির্বিশেষ ভাব প্রতিপাদিত হয়েছে। এই অবস্থায় কোন শ্রুতিবাক্য দুর্বল, কোনটি প্রবল? তা বিচার করতে গেলে দেখা যায় যে, প্রথমতঃ ব্রহ্মের গুণ বর্ণনা না করলে, নির্গুণ বাক্যে গুণের যে নিষেধ করা হয়েছে, তার তো কোন অর্থ হয় না। সুতরাং গুণ থাকলে তবেই তো ওটার নিষেধ হবে? গুণ না থাকলে নিষেধ হবে কার? নির্গুণ সুতরাং সগুণকে অপেক্ষা করে। এই অবস্থায় "অপচ্ছেদ" ন্যায় অনুসারে গুণসাপেক্ষ নির্গুণ বাক্য যে সগুণ বাক্য অপেক্ষা প্রবল, তাতে সন্দেহ কি? সেই প্রবল নির্গুণ বাক্যের দ্বারা সগুণ বাক্যের বাধ হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। ননু নির্গুণবাক্যং সগুণবাক্যং বাধতে, নতু সগুণবাক্যং তদিতি কিমত্র নিয়ামকম্? নিষেধকতয়া নির্গুণবাক্যং প্রবলম্, 'অসদ্বা' ইত্যাদিবাক্যস্য সদেব ইত্যাদিবাক্যাৎ প্রাবল্যাপত্তেরিতি চেন্ন, অপচ্ছেদন্যায়েন প্রাবলস্য প্রাগেবোক্তেঃ। (অদ্বৈতসিদ্ধি)

"অপচ্ছেদ" ন্যায়টি মীমাংসা দর্শনের একটি ন্যায়। অপচ্ছেদ শব্দের অর্থ বিরোধ বা ব্যাঘাত। পূর্ববর্তী পরবর্তী উক্তির মধ্যে অপচ্ছেদ ঘটলে, পূর্বটি দুর্বল এবং পরবর্তী উক্তিটি সবল হয়ে থাকে। উপরিউক্ত ছান্দোগ্য শ্রুতির ব্রহ্মের সবিশেষতা সম্পাদক গন্ধ রূপরসাদি উপাধিসকল অবিদ্যা কর্তৃক প্রত্যুপস্থাপিত। সুতরাং নির্বিশেষ ব্রহ্মই বেদান্ত প্রতিপাদ্য, সবিশেষতা উপাসনার সৌকর্যের জন্য। যেহেতু সকল স্থলেই অর্থাৎ উপনিষদ্ সকলে ব্রহ্মস্বরূপ প্রতিপাদনপর 'অশব্দমস্পর্শমরূপমব্যয়ম্'-(কঠ উপনিষৎ-১।৩।১৫) অর্থাৎ 'শব্দরহিত, স্পর্শরহিত, রূপবিহীন, ক্ষয়রহিত' ইত্যাদি এই বাক্যসকলে যাঁ হতে সমস্ত বিশেষ নিরাকৃত হয়েছে, সেই ব্রহ্মই উপদিষ্ট হচ্ছেন। কিন্তু সাকার অর্থাৎ সপ্রপঞ্চ সবিশেষ ব্রহ্মবিষয়ক অন্যান্য বাক্যসকল তৎপ্রধান নয় অর্থাৎ প্রধানভাবে সবিশেষতা প্রতিপাদন করে না, যেহেতু তারা প্রধানভাবে উপাসনাবিধি প্রতিপাদন করে অর্থাৎ বিধিবোধিত উপাসনার অঙ্গরূপে ব্রহ্মকে সমর্পন করে।....

তথ্যসূত্রঃ-

. ভগবান শঙ্করাচার্যের শারীরক-মীমাংসা ভাষ্য।

. আচার্য মধুসূদন সরস্বতীর অদ্বৈতসিদ্ধি।

. বেদান্তদর্শন অদ্বৈতবাদ, তৃতীয় খণ্ড, আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুন ২০, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।

Friday, 28 June 2024

অধ্যাস ও অধ্যাসের লক্ষণঃ-

 


আত্ম-মীমাংসা বা ব্ৰহ্ম-মীমাংসাই বেদান্তদর্শনের প্রাণ। আত্মার অস্তিত্ব স্বতঃসিদ্ধ, আত্মার অস্তিত্ব সম্বন্ধে কাহারও কোন বিবাদ নাই। আত্মাই ব্রহ্ম, সুতরাং ব্রহ্মের অস্তিত্বও সর্ববাদিসিদ্ধ। 'সর্বস্যাত্মত্বাচ্চ ব্রহ্মাস্তিত্বপ্রসিদ্ধিঃ৷'-(ব্রহ্মসূত্র শঙ্করভাষ্য ১।১।১) এই স্বতঃসিদ্ধ আত্মা বা ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, তদ্ব্যতীত সমস্তই অসত্য। আত্মা সচ্চিদানন্দস্বরূপ, এইরূপ আত্মজ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান, তদ্ভিন্ন সমস্তই অজ্ঞান। ইহাই অদ্বৈতবেদান্তের মর্মকথা। আত্মা-জিজ্ঞাসা বা ব্রহ্ম-জিজ্ঞাসাই সকল জিজ্ঞাসার পার বলিয়া বেদান্তে তাহাই সর্বপ্রথমে উপদিষ্ট হইয়াছেঅথাতো ব্ৰহ্মজিজ্ঞাসা।' (ব্রহ্মসূত্র ১।১।১)

অহম্‌” বলিয়া লোকে যে প্রত্যক্ষ করে, সেখানে বিচার করিলে দেখা যায় যে, দেহী তাঁহার শরীরের মধ্যে বিরাজমান শবীরাভিমানী চৈতন্যকেইঅহম্‌” বলিয়া উপলব্ধি করে। শরীর ইন্দ্রিয়াদির আবেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত চৈতন্যের সঙ্গে জড় শরীরের যে মৌলিক বিভেদ আছে, তাহাও সে ভুলিয়া যায়। শরীর, ইন্দ্রিয় অন্তঃকরণের ধর্মকে আত্মার ধর্ম বলিয়া ভ্রম করে। আমি স্থূল, আমি কৃশ, আমি অন্ধ, আমি বধির, আমি সুখী, আমি দুঃখী, এইরূপেই সাধারণতঃ লোকেরআমিত্বেরপ্রত্যক্ষ হইয়া থাকে। আত্মা কি কখনও স্থূল বা কৃশ হয়? অন্ধ বধির হয়? স্থূল বা কৃশ হয় শরীর, অন্ধ বা বধির হয় ইন্দ্রিয়। সেই ইন্দ্রিয় শরীরের ধর্ম লোকে ভ্রমবশতঃ আত্মায় আরোপ করিয়া থাকে। ফলে, আত্মার যথার্থ সচ্চিদানন্দরূপটি সাধারণের দৃষ্টিতে প্রকাশ পায় না, আত্মার কল্পিত ভ্রান্তরূপই প্রত্যক্ষগোচর হইয়া থাকে।

আত্মার স্বরূপ সম্বন্ধে অনাদিকাল হইতেই এইরূপ ভ্রান্ত দৃষ্টি চলিয়া আসিতেছে। অধ্যাসই এই ভ্রান্ত দৃষ্টির মূল। অধ্যাস কাহাকে বলে? ভগবান্ শঙ্করাচার্য অধ্যাসভাষ্যে বলিতেছেন"অধ্যাসঃ নাম অতস্মিন্ তদ্বুদ্ধিঃ ইতি অবোচাম।" অর্থাৎ যে বস্তু বাস্তবিক যাহা নহে, সেইরূপে বস্তুকে জানার নামই অধ্যাস বা মিথ্যাজ্ঞান। রজ্জু বাস্তবিক সৰ্প নহে, রজ্জুকে সর্প রূপে জানার নামই রজ্জুতে সর্পের অধ্যাস। এইরূপ আত্মা বাস্তবিক স্থূল বা কৃশ নহে, আত্মাকে স্থূল বা কৃশরূপে বোঝাই আত্মাতে দেহধর্মের অধ্যাস। আমি অন্ধ, আমি বধির, আমি সুখী, আমি দুঃখী এইরূপ আত্মজ্ঞান আত্মায় ইন্দ্রিয় অন্তঃকরণ-ধর্মের অধ্যাসবশতঃ উৎপন্ন হইয়া থাকে। আলোক উপস্থিত হইলে যেমন অন্ধকার বিদূরিত হয়, সেইরূপ যথার্থ আত্মজ্ঞানের উদয় হইলে, জীবের ঐরূপ (অধ্যাস) অজ্ঞান বা মিথ্যা বুদ্ধি বিদূরিত হয়। জীব শাশ্বতশান্তি লাভ করে।অবিদ্যাধ্বান্তং বিদ্যাপ্রদীপেন বিধূয় আত্মৈব কেবলো নির্বৃত্তঃ সুখী ভবতি৷'-(ব্রহ্মসূত্র, শঙ্করভাষ্য-২।৩।৪০)

অনাদিকাল-সঞ্চিত মিথ্যাজ্ঞানের ফলে অসঙ্গ চৈতন্যময় নির্বিশেষ আত্মায় নানা কল্পিত সম্বন্ধের সৃষ্টি হইয়া থাকে এবং কল্পিত সম্বন্ধ দ্বারা আত্মার যথার্থ রূপটি আবৃত হইয়া পড়ে। ইহাই অজ্ঞানের কার্য বা অধ্যাসের ফল। আত্মা প্রকাশক, জড় প্রকাশ্য। যাহা প্রকাশ্য, তাহা প্রকাশক নহে, যেমন আলোকপ্রকাশ্য ঘট, আলোক নহে। অতএব আত্মা কখনও জড় হইতে পারে না, বা জড়ের সহিত তাহার কোন যথার্থ সম্বন্ধও থাকিতে পারে না। আত্মা চৈতন্যময়। আত্মা ব্যতীত সমস্তই অনাত্মা এবং জড়। 'অহম্' শব্দে স্বপ্রকাশ চিদানন্দঘন আত্মাকে বুঝায়, 'ইদম্' শব্দে অনাত্মা বা জড়বস্তুকে বুঝায়। আত্মা অনাত্মা, অহং এবং ইদম্, আলোক-অন্ধকারের মত পরস্পর বিরুদ্ধ। ইহাদের (চৈতন্য জড়বস্তুর) অভেদ কখনও সম্ভব নহে। অধ্যাস বা অবিদ্যার ফলে আত্মা অনাত্মার মধ্যে কল্পিত সম্বন্ধের সৃষ্টি হয় এবং 'আমি ইহা' 'আমার ইহা' এইরূপ ভ্রান্তবোধ উৎপন্ন হইয়া থাকে। দেহ ইন্দ্রিয়াদির বন্ধনে আবদ্ধ আত্মাকে দেহাদি হইতে অভিন্ন বলিয়া মনে হইয়া থাকে। বেদান্তের পরিভাষায় ইহাইচিদচিদগ্ৰন্থি' এই চিদচিদ্গ্ৰন্থি-রহস্য আচার্য শঙ্কর ব্রহ্মসূত্রের অধ্যাস-ভাষ্যে প্রাণস্পর্শী ভাষায় বিবৃত করিয়াছেন। আচার্য বলেন যে, চিদানন্দস্বভাব আত্মা অপরিবর্তনীয়, সুতরাং সত্য, আর জড় স্বভাব দৃশ্যবস্তু নিয়ত পরিবর্তনশীল, সুতরাং মিথ্যা। এই সত্য মিথ্যার অধ্যাস বা মিলনের ফলেই জীবের সংসারজীবন চলিতেছে এবং উহা সত্য স্বাভাবিক বলিয়া মনে হইতেছে। 

ভাষ্যকার অধ্যাসকে 'সত্যানৃতের মিথুন' বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ভাষ্যকারের উক্তির মর্ম এই যে, অনাদি মিথ্যা অজ্ঞানের ফলে চিদাত্মা এবং জড়দেহাদির মধ্যে যে মৌলিক বিভেদ আছে, তাহা ভ্রান্তদর্শী ভুলিয়া যায়, এবং সত্য চিদবস্তু মিথ্যা জড়বস্তু, এই দুইকে মিশাইয়া ফেলে। কেন মিশাইয়া ফেলে? এই প্রশ্নের উত্তরে ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য বলিতেছেন যে, "ইতরেতরাবিবেকেন"  চিৎ জড়বস্তুর প্রকৃত রূপ যে কি, তাহা জানে না বলিয়াই লোকে চিৎ জড়কে অভিন্ন করিয়া ধরিয়া নেয়; চৈতন্যের ধর্মকে জড়ের ধর্ম, এবং জড়ের ধর্মকে চৈতন্যের ধর্ম মনে করিয়া ভুল করে। সত্য মিথ্যাকে এক করিয়া লয়, ইহাই সত্যানৃতের মিথুন, চিদচিদগ্রন্থি বা অধ্যাস বলিয়া বেদান্তে অভিহিত হইয়াছে। ভাষ্যকারের উক্তির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিতে গিয়া বাচস্পতি বলিয়াছেন যে, মিথ্যা অজ্ঞানবশতঃ যে সকল জাগতিক ব্যবহার চলিতেছে এবং লোকে ব্যবহারকে সত্য এবং স্বাভাবিক বলিয়া মনে করিতেছে, অধ্যাসই তাহার মূল বলিয়া জানিবে, অধ্যাস বা সত্য মিথ্যার মিলন যতক্ষণ আছে, সকল মিথ্যা ব্যবহারও ততক্ষণ আছে।

এই অধ্যাসকে ভাষ্যকার মিথ্যা অজ্ঞানমূলক (চিদচিদ্গ্রন্থি) বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ভাষ্যকারের উক্তির ব্যাখ্যায় আচার্য পদ্মপাদ্ বলিয়াছেন যে, এখানে মিথ্যা শব্দের অর্থ অনির্বচনীয়, আর অজ্ঞান শব্দের অর্থ জড় অবিদ্যাশক্তি। ফলে, অনির্বচনীয় অবিদ্যাশক্তিই অধ্যাসের উপাদান ইহাই বুঝা গেল। অধ্যাস অজ্ঞানমূলক হইলেও ইহাকে নৈসর্গিক বা স্বাভাবিক বলিয়াই মনে হয়। ইহাই অধ্যাসের বৈচিত্র্য।

এখন প্রশ্ন, অধ্যাসের লক্ষণ কি? তদুত্তরে ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য ব্রহ্মসূত্রের অধ্যাসভাষ্যে বলিতেছেন"স্মৃতিরূপঃ পরত্র পুর্ব্বদৃষ্টাবভাসঃ।"-(ব্রহ্মসূত্র অধ্যাসভাষ্য) অর্থাৎ

পরত্র বা অন্য কোন অপেক্ষাকৃত সত্যবস্তুতে পূর্বে দৃষ্ট কোন বস্তু বা জ্ঞানের সংস্কারমূলে যে ভাতি বা প্রকাশ তাহারই নাম অধ্যাস। রজ্জু প্রভৃতিতে ব্যবহারিক সর্প প্রভৃতির স্মৃতিজ্ঞানের সদৃশ যে জ্ঞান পূর্বদর্শনপ্রযুক্ত উৎপন্ন হয়, অর্থাৎ সর্পাদির পূর্বানুভবজন্য সংস্কার প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন হয়, তাহাই অধ্যাস বা অধ্যস্ত জ্ঞান।

এই অধ্যাস পদ্মপাদাচার্যের মতে স্মৃতি নহে, তবে স্মৃতির মত অর্থাৎ স্মৃতি যেমন সংস্কারজন্য, মিথ্যা জ্ঞানও সেইরূপ পূর্বসংস্কারজন্য, বিশেষ এই যে, স্মৃতির যাহা বিষয় অর্থাৎ যে বিষয়ে স্মৃতি উৎপন্ন হয়, তাহা স্মরণকর্তার সম্মুখে উপস্থিত থাকে না, কিন্তু ভ্রমের বিষয় রজতাদি বস্তু ভ্রান্ত ব্যক্তির সম্মুখে উপস্থিত থাকে। এইজন্যই ভ্রমজ্ঞান, প্রত্যক্ষজ্ঞান স্মৃতি নহে। রজ্জুরূপ অধিষ্ঠান বা আশ্রয়ে সাপের ভ্রমজ্ঞানের উদয় হয়। সচ্চিদানন্দ পরব্রহ্মই অনাদি অনির্বচনীয় অবিদ্যাবিভ্রমের অধিষ্ঠান বা আশ্রয়। অনাদিবিভ্রমবশতঃ এক ব্রহ্ম নানারূপে, জীব জগৎরূপে প্রতিভাত হইয়া থাকেন। তাঁহার মতে কোনরূপ অধিষ্ঠানকে অবলম্বন করিয়াই ভ্রমজ্ঞান উৎপন্ন হইয়া থাকে। অধ্যাসবাদ শূন্যবাদ নহে ইহা বুঝাইবার জন্য লক্ষণে "পরত্র" পদের অবতারণা করা হইয়াছে। এই বিষয়ে পঞ্চপাদিকা দ্রষ্টব্য।

ভামতীকার বাচস্পতি মিশ্র বলেন— "অবভাসঃ" এই পদটীই অধ্যাসের সংক্ষিপ্ত লক্ষণ। "স্মৃতিরূপঃ" এবং "পূর্বদৃষ্টঃ" ইত্যাদি পদগুলি তাহার উপব্যাখ্যান মাত্র। সুতরাং অধ্যাস একপ্রকার 'অবভাস' অর্থাৎ পূর্বদৃষ্ট কোন বস্তুর অপরবস্তুতে প্রতীতিরূপ মিথ্যা প্রত্যয় মাত্র এবং উহা স্মৃতিজ্ঞানের মত পূর্বপ্রতীতি অনুসারে উৎপন্ন হয়। ইহা একটি আপাত প্রতীতি অর্থাৎ আপাত সত্য, যাহা পরবর্তী সময়ে মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত হয়। অন্যভাবে বলা যায় ইহা একটি মিথ্যা জ্ঞান। সত্যের (সত্য অধিষ্ঠানের) সহিত অনৃতের বা মিথ্যার মিলন হইলেই অধ্যাস হইবে। আরোপ্য বস্তুটি যে মিথ্যা, তাহা লক্ষণস্থ "পূর্ব-দৃষ্ট" কথাটির দ্বারাই সূচিত হইয়াছে। বাচস্পতি মিশ্র লক্ষণস্থ পূর্ব-দৃষ্ট কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিয়া আরোপ্য বস্তুটিকে অনৃত বা মিথ্যা বলিয়াছেন এবং পরত্র পদটির দ্বারা অধিষ্ঠানের আপেক্ষিক সত্যতার ইঙ্গিত করিয়াছেন। "স্মৃতিরূপ" পদটির দ্বারা অধ্যাসকে স্মৃতির তুল্য বলা হইয়াছে। স্মৃতিজ্ঞানের বিষয়বস্তু স্মরণকর্তার সম্মুখে উপস্থিত না থাকিলেও যেমন স্মৃতি হইতে কোন বাধা নাই, অনুপস্থিত বিষয় সম্পর্কেই স্মৃতিজ্ঞান উৎপন্ন হয়, ভ্রমের বিষয় মিথ্যা-রজত প্রভৃতিও সেইরূপ ভ্রান্তদর্শীর সম্মুখে অনুপস্থিত থাকিয়াই ভ্রম উৎপাদন করে। এই দৃষ্টিতেই বাচস্পতি মিশ্র ভ্রমকে স্মৃতির তুল্য বলিয়াছেন। আলোচ্য অধ্যাস লক্ষণের "স্মৃতিরূপ" কথাটির দ্বারা বাচস্পতির মতে আরোপ্য রজতাদির অধিষ্ঠানে অনুপস্থিতিই সূচনা করা হইয়াছে। ফলে, অদ্বৈতবাদীর ভ্রমবাদ যে সৎখ্যাতিবাদ থেকে স্বতন্ত্র, ইহা বুঝা গেল, আর "অবভাস" কথাটি দ্বারা অনুপস্থিত আরোপ্য বস্তুরও সত্য বস্তুর ন্যায় সাময়িক ভাতি বা প্রকাশ অঙ্গীকার করায়, অধ্যাসবাদ যে শূন্যবাদ বা অসৎখ্যাতি নহে, ইহাও প্রদর্শিত হইল।

আলোচ্য অধ্যাস লক্ষণ অনির্বচনীয়খ্যাতিবাদের কথাই বলিতেছে। সমস্ত পদার্থই চৈতন্যে অধ্যস্ত। রজ্জু চৈতন্যেই অধ্যস্ত, আর এই রজ্জু-অবিচ্ছিন্ন-চৈতন্যের উপরই অনির্বচনীয় সর্পের অধ্যাস হয়। অনির্বচনীয় শব্দের অর্থ মিথ্যা। "যাহা সৎ নহে, অসৎ নহে এবং সদসদ্ও নহে", অর্থাৎ যাহাকে 'আছে' বলা যায় না, 'নাই' বলা যায় এবং 'আছে নাই' উভয়ও বলা যায় না, তাহাকে মিথ্যা বা অনির্বচনীয় বলে। এই অর্থে এই শব্দটী পারিভাষিক। রজ্জু-অবিচ্ছিন্ন-চৈতন্যে অধ্যস্ত সর্প যদি সৎ হইত, তবে রজ্জুর জ্ঞানে তাহার বাধ হইত না। যদি অসৎ হইত, তবে বন্ধ্যাপুত্রের ন্যায় উক্ত সর্প কদাপি দৃষ্টিগোচর হইত না। আবার উক্ত সর্পকে সদসদ্ও বলা যায় না, কারণ একই বস্তু একই কালে সৎ অসৎ, এই উভয়প্রকার বিরুদ্ধধর্ম্মবিশিষ্ট হইতে পারে না; আর তাদৃশ্য বস্তু কাহারও বুদ্ধিগ্রাহ্যও হইতে পারে না।

তথ্যসূত্রঃ-

. ভগবান শঙ্করাচার্য বিরচিত শারীরক মীমাংসা "অধ্যাসভাষ্য"

. পদ্মপাদাচার্যের পঞ্চপাদিকা বাচস্পতি মিশ্রের ভামতী।

. বেদান্তদর্শনঅদ্বৈতবাদ, আশুতোষ শাস্ত্রী কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।

শ্রীশুভ চৌধুরী

জুন ১৪, শুক্রবার, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...