অদ্বয় নির্গুণ নিরুপাধিক ব্রহ্ম শাব্দজ্ঞানের অবিষয়। ভগবান্ শঙ্করাচার্য বেদান্তদর্শনের সমন্বয়াধিকরণের ভাষ্যে বলেছেন— বিদিক্রিয়ার কর্মরূপে (—শাব্দজ্ঞানের বিষয়রূপে) ব্রহ্মের কার্যানুপ্রবেশ হয় না; যেহেতু 'অন্যদেব তদ্বিদিতাদথো অবিদিতাদধি'-(কেন উপনিষৎ-১।৪) অর্থাৎ "তিনি বিদিত হতে ভিন্ন এবং অবিদিত হতে ভিন্ন", ইত্যাদি শ্রুতিতে তাঁর বিদিক্রিয়াকর্মত্ব (—শাব্দজ্ঞানের বিষয় হওয়া) প্রতিষিদ্ধ হয়েছে। 'যেনেদং সর্বং বিজানাতি তং কেন বিজানীয়াৎ'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-২।৪।১৪) অর্থাৎ "যাঁর দ্বারা এই সমস্তকে জানা যায়, তাঁকে কার দ্বারা জানা যাবে", ইত্যাদি শ্রুতিতেও তাই বলা হচ্ছে।
উপাস্য
ও উপাসকের মধ্যে ভেদ থাকলেই উপাসনা
সম্ভব হওয়াই জীবাভিন্ন অদ্বয় নির্গুণ নিরুপাধিক ব্রহ্ম উপাসনাক্রিয়ার বিষয়ও নন। যেহেতু শ্রুতিতে
'যদ্বাচানভ্যুদিতং যেন বাগভ্যুদ্যতে' অর্থাৎ
"যিনি বাগিন্দ্রিয় দ্বারা প্রকাশিত হন না, কিন্তু
বাগিন্দ্রিয় যাঁর দ্বারা প্রকাশিত
হয়", এরূপে ব্রহ্মের অবিষয়তা উল্লেখ করে, 'তদেব ব্রহ্ম ত্বং
বিদ্ধি, নেদং যদিদমুপাসতে'-(কেন
উপনিষৎ-১।৫) "তাঁকেই তুমি ব্রহ্ম বলে
জানবে, কিন্তু ইনি ব্রহ্ম নয়,
যাকে এই পদের বাচ্যরূপে
(—উপাধিপরিচ্ছিন্ন অনাত্মভূত দেবতারূপে) লোকে উপাসনা করে",
এইপ্রকার বর্ণিত আছে।
এমতাবস্থায়
সংশয় হল, ব্রহ্ম শাব্দজ্ঞানের
অবিষয় হলে তাঁর শাস্ত্রযোনিত্ব
অর্থাৎ 'শাস্ত্রযোনিত্বাৎ' সূত্রে ব্রহ্মকে যে শাস্ত্রপ্রমাণগম্যরূপে প্রতিপাদন করা
হয়েছে, তার বিরোধ হবে।
এই বিরোধ পরিহারের জন্য ভগবান্ ভাষ্যকার
বলেছেন—যেহেতু শাস্ত্র অবিদ্যাকল্পিত ভেদের নিবৃত্তিই প্রতিপাদন করে। শাস্ত্র ব্রহ্মকে
এটা এই পদের বাচ্যরূপে
অর্থাৎ শব্দের বিষয়রূপে প্রতিপাদন করে না। অর্থাৎ
'শাস্ত্র বাচক এবং ব্রহ্ম
বাচ্য', এইরূপে প্রতিপাদন করে না। প্রত্যগাত্মা
হওয়ায় তাঁকে অবিষয়রূপে প্রতিপাদন করতঃ অবিদ্যাকল্পিত জ্ঞেয়,
জ্ঞাতা এবং জ্ঞান প্রভৃতির
ভেদকে অপনয়ন করে। 'অবিজ্ঞাতং বিজানতাং বিজ্ঞাতমবিজানতাম্'-(কেন উপনিষৎ-২।৩)
অর্থাৎ "সম্যগ্ জ্ঞানিগণের নিকট ব্রহ্ম অবিজ্ঞাত
(—ফলব্যাপ্যরূপে তাঁদের জ্ঞানের বিষয় নন), আর অজ্ঞানীর
নিকট জ্ঞানের বিষয়রূপে ব্রহ্ম বিজ্ঞাত", ইত্যাদি এইসকল শাস্ত্রও আছে।
শাস্ত্র
ব্রহ্মবস্তুকে "এটা এইরূপ", এইপ্রকারে
বিধিমুখে প্রতিপাদন করতে পারেন না,
কিন্তু "নেতি নেতি" এইরূপে
অনাত্ম-ভিন্নরূপে, অর্থাৎ অনাত্মা যে শরীরাদি, তা
হতে ভিন্নভাবে নিষেধমুখে প্রতিপাদন করেন। এইপ্রকারে শাস্ত্র ব্রহ্মকে বিধিমুখে প্রতিপাদন করতে পারেন না
বলে এখানে তাঁকে শাব্দজ্ঞানের অবিষয় বলা হচ্ছে। আবার
'নেতি নেতি', এইপ্রকারে নিষেধমুখে শাস্ত্র কর্তৃক বিজ্ঞাপিত হন বলে ব্রহ্মকে
শাস্ত্রপ্রমাণগম্যও বলা হয়েছে।......
তথ্যসূত্রঃ-
ভগবান্ শঙ্করাচার্যের শারীরক-মীমাংসা ভাষ্য।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
জুন
২৮, শুক্রবার, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment