মধুসূদন সরস্বতীর বিদ্যা গুরু ছিলেন আচার্য শ্রীরাম তীর্থ। "শ্রীরাম বিশ্বেশ্বর-মাধবানাম্" মন্ত্রে গুরু প্রণাম জ্ঞাপন করেছেন মধুসূদন সরস্বতী তদীয় অদ্বৈতসিদ্ধি গ্রন্থের মঙ্গলাচরণে। মধুসূদন বেদান্তগুরুর সন্ধানে কাশীধামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। কাশীধাম জ্ঞান পীঠ। মধুসূদন কাশীধামে আগমন করে অবলোকন করলেন— এই ধাম বিশ্ব বিশ্রুত সর্বশাস্ত্র পারঙ্গম সারস্বত মণ্ডলী দ্বারা পরিশোভিত। মধুসূদনের কাশীধামে আগমনের হেতু, বেদান্ত—মীমাংসা দর্শনে জ্ঞানার্জন। তিনি দেখতে পেলেন গঙ্গার ঘাট, সন্ন্যাসীর মঠ, মন্দির প্রাঙ্গণ সর্বত্র নিরন্তর বেদবেদান্তাদি শাস্ত্রালোচনায় ও বিচার-দ্বন্দ সভায় মুখরিত। তৎকালীন সময়ে শ্রীরাম তীর্থ, নৃসিংহাশ্রম, উপেন্দ্র আশ্রম, নারায়ণ ভট্ট, অপ্পয় দীক্ষিত প্রমুখ দিগ্বিজয়ী সাধু সারস্বতগণ কাশীধামে অবস্থান করে এই পুণ্যতীর্থের মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করেছেন স্বীয় জ্ঞান সাধনায়। শ্রীরাম তীর্থ মধুসূদনের সদাচার, সোম্যমূর্তি, ন্যায়-শাস্ত্রে তীক্ষ্ণ বিচার ধারা ও কবিত্ব শক্তি দর্শনে বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বেদান্তের বিদ্যার্থীরূপে গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। পরমেশ্বর শ্রীবিশ্বনাথ শিবের কৃপায় মণি-কাঞ্চন যোগ হল এইখানে।
শ্রীরাম
তীর্থের সময় ১৪৭৫-১৫৭৫
খৃষ্টাব্দের মধ্যে অনুমান করা যায়। শ্রীরাম
তীর্থের গুরু ছিলেন কৃষ্ণ
তীর্থ। শ্রীরাম তীর্থ মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের পরম ভক্ত ছিলেন।
শ্রীরাম তীর্থ বেদান্ত দর্শনের শারীরক টীকা অন্বয়ার্থ প্রবেশিকার
প্রারম্ভে লিখেছেন—
সত্যজ্ঞান
সুখাত্মকেঽখিল মনোহর স্থানু ভূত্যত্মনি।
শ্রীরামে
রমতাং মনো মম সদা
হেমাম্বুজৈহংসবৎ।
এই
গ্রন্থে শ্রীরাম বন্দনা ব্যতীত বিদ্বন্মনোরঞ্জিনী গ্রন্থের সমাপ্তি শ্লোকেও শ্রীরামচন্দ্রের সহিত অভিন্নরূপে নিজেকে
স্থাপন করতে বিস্মরণ ঘটে
নি তাঁর। কাশীধামের সন্নিকটবর্তী অযোধ্যা। সুতরাং তাঁর উপর অযোধ্যাপতি
শ্রীরামচন্দ্রের প্রভাব পড়া স্বাভাবিক।
শ্রীরাম
তীর্থের রচিত গ্রন্থাবলী—
১.
পদ যোজনিকা, এটা ভগবান্ শঙ্করাচার্যকৃত
উপদেশ সাহস্রীর টীকা।
২.
শারীরক টীকা, অন্বয়ার্থ প্রবেশিকা।
৩.
সুরেশ্বরাচার্য কৃত দক্ষিণামূর্তি বার্তিক
টীকা, এই বার্তিক শঙ্করাচার্যের
দশশ্লোকীর উপর লিখিত ছিল।
৪.
শারীরক রহস্যার্থ তত্ত্ব প্রবেশিকা।
৫.
সদানন্দ যোগীন্দ্রের বেদান্তসারের উপর বিদ্বন্মনোরঞ্জনী টীকা।
৬.
বাক্যার্থ দর্পণ, এটা শারীরক শাস্ত্রার্থ
সংগ্রহরূপ।
এইসব
দুরহ গ্রন্থ প্রণয়ন দ্বারাই শ্রীরাম তীর্থের গভীর বিদ্যাবত্তার পরিচয়
পাওয়া যায়। তিনি তৎকালীন সারস্বত
সমাজের উজ্জ্বল মার্তণ্ড ছিলেন। অদ্বৈতবেদান্তের শ্রীবৃদ্ধি সাধনে এই আচার্যের অবদান
অপরিসীম।....
তথ্যসূত্রঃ-
"অদ্বৈত সিদ্ধি, মধুসূদন সরস্বতী", শ্রীব্যোমকেশ ভট্টাচার্য, ভাগবত-রত্ন।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
জ্যৈষ্ঠ
পূর্ণিমা, জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
Photo editing credit Thākur
Vishāl