খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতকে শ্রীহর্ষের পাশাপাশি আরও একটি নক্ষত্রের আবির্ভাব হয়েছিল অদ্বৈতবেদান্তের আকাশে। আনন্দবোধ ভট্টারকাচার্য, যিনি দক্ষিণ দেশে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। আনন্দবোধেন্দ্র ভট্টারকাচার্যের অন্যতম কীর্তি হল 'ন্যায়মকরন্দ', 'প্রমাণমালা', 'ন্যায়-দীপাবলী' নামক তিনখানা অতুল্য গ্রন্থ প্রণয়ন। তৎকালীন সময়ে নব্যন্যায়মত যখন প্রবলাকার ধারণ করে তখন নৈয়ায়িকগণের সূক্ষ্ম বিচারশৈলী অনুসরণ করে প্রতিপক্ষ মত খণ্ডনে ও স্বীয় অদ্বৈত মত-স্থাপনে তিনি বদ্ধপরিকর হন। ন্যায়মকরন্দে আনন্দবোধ অকপটচিত্তে স্বীকার করেছেন যে, পূর্ববর্তী নিবন্ধকারগণের নিবন্ধ-কুসুমাকর হতে নির্মল ভাব-কুসুম আহরণ করে তিনি তাঁর চিন্তার কুসুমদাম রচনা করেছেন। আনন্দবোধের উক্তি হতে তার পূর্বেও যে বিবিধ অদ্বৈতবেদান্ত-নিবন্ধ রচিত হয়েছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। কিন্তু ঐ সকল গ্রন্থরাজির এখন আর বিশেষ কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না।
উল্লেখিত
গ্রন্থ তিনখানার মধ্যে ন্যায়মকরন্দই আয়তনে নাতিবৃহৎ এবং প্রমেয়বহুল। আনন্দবোধ
তদীয় ন্যায়মকরন্দে ভ্রমজ্ঞানের ব্যাখ্যায় ন্যায়, মীমাংসা, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি দর্শনের
বিভিন্ন খ্যাতিবাদ বা ভ্রমবাদের যুক্তিজাল
আলোচনা করে ঐ সকল
মতের অসারতা প্রদর্শন করে স্বীয় অনির্বাচ্য
খ্যাতিবাদ সুদৃঢ় যুক্তির সাথে স্থাপন করেন।
খণ্ডন ও মণ্ডন এই
দুই প্রকার চিন্তাধারাই আনন্দবোধের গ্রন্থে তরঙ্গায়িত হয়ে সুধীগণের সশ্রদ্ধ
দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই গ্রন্থখানা পরবর্তী
দার্শনিক আচার্যগণেরও অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ন্যায়মকরন্দের উপর
চিৎসুখাচার্য ও তাঁর শিষ্য
সুখপ্রকাশ ন্যায়মকরন্দ-টীকা ও ন্যায়মকরন্দ-বিবেচনী নামে টীকা রচনা
করেছেন। সুখপ্রকাশ ন্যায়দীপাবলীর উপরও ন্যায়দীপাবলী-তাৎপর্য
টীকা রচনা করেছিলেন বলে
জানা যায়। আনন্দজ্ঞানের গুরু অনুভূতি স্বরূপাচার্য
আনন্দবোধের তিনখানা গ্রন্থেরই টীকা রচনা করেছিলেন
বলে শোনা যায়। দ্বৈতবেদান্ত-কেশরী ব্যাসতীর্থ তদীয় ন্যায়ামৃতে মায়াবাদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা
করেছিলেন, তাতে তিনি আনন্দবোধ
ভট্টারকাচার্যকে অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষরূপে গ্রহণ করে আনন্দবোধের যুক্তিজাল
ছিন্নভিন্ন করার প্রয়াস করেছিলেন।
এটা হতেই অদ্বৈত চিন্তায়
আনন্দবোধের দান কতটা মহার্ঘ,
তা বুঝতে পারা যায়।
তথ্যসূত্রঃ-
বেদান্তদর্শন—অদ্বৈতবাদ, প্রথম খণ্ড, আশুতোষ ভট্টাচার্য শাস্ত্রী বিদ্যাবাচস্পতি।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
মে
৩০, ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।
Photo editing credit Thākur
Vishāl
No comments:
Post a Comment