সামবেদের তলবকার ব্রাহ্মণের অন্তর্গত কেন উপনিষদে বর্ণিত আছে-
'ন তত্র চক্ষুর্গচ্ছতি ন বাগ্গচ্ছতি নো মনো ন বিদ্মো ন বিজানীমো যথৈতদনুশিষ্যাত্ ৷৷'-(কেন উপনিষৎ-১।৩)
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ- যেহেতু ব্রহ্ম শ্রোত্রাদি ইন্দ্রিয়সকলেরও শ্রোত্রাদিস্বরূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপ, অতএব তাঁহাতে অর্থাৎ সেই ব্রহ্মে চক্ষু-ইন্দ্রিয় যাইতে পারে না, কারণ নিজ সত্তায় নিজের গমন সম্ভব হয় না। সেইরূপ শব্দ বা বাগিন্দ্রিয়ও তাঁহাতে গমন করে না। কেননা বাগিন্দ্রিয়ের দ্বারা উচ্চারিত শব্দ যখন স্বীয় বক্তব্য বিষয়কে প্রকাশ করে তখন এইরূপ বলা হয় যে বাগিন্দ্রিয় বা উচ্চারিত শব্দ বক্তব্য বিষয়ে পৌঁছিতেছে। কিন্তু যেহেতু সেই শব্দেরও শব্দসম্পাদক বাগিন্দ্রিয়ের প্রকৃত স্বরূপ আত্মা হইতেছেন ব্রহ্ম, অতএব শব্দ বা বাগিন্দ্রিয় নিজস্বরূপ ব্রহ্মে গমন করিতে পারে না। যেমন অগ্নি কাষ্ঠাদি অন্য বস্তুর দাহক ও প্রকাশক হইলেও কিন্তু নিজেকে দগ্ধ করে না কিংবা প্রকাশও করে না।
সেইরূপ মন অর্থাৎ মনবুদ্ধিও নিজস্বরূপ ব্রহ্মে পোঁছিতে অর্থাৎ তৎবিষয়ক সঙ্কল্প অধ্যবসায়াদি করিতে পারে না। কারণ মন অন্য পদার্থের সঙ্কল্প ও নিশ্চয়কারী হইলেও নিজের মূল সত্তা প্রত্যগাত্মাকে সঙ্কল্প ও নিশ্চয় করিতে পারে না, কেননা ব্রহ্ম মনেরও আত্মস্বরূপ।
অতএব যে প্রকারে অপর গুরু কর্তৃক এই ব্রহ্মের অনুশাসন-শিষ্যের প্রতি উপদেশ হইতে পারে তাহাও আমরা জানিনা। কারণ যাহা ইন্দ্রিয়ের বিষয় তাহাকে জাতি, গুণ, ক্রিয়া, ও বিশেষণের দ্বারা অপরকে উপদেশ করা যাইতে পারে। কিন্তু ব্রহ্ম সেই জাতি প্রভৃতি বিশেষণ বিশিষ্ট না। সেইজন্য শিষ্যদিগকে উপদেশের দ্বারা ব্রহ্মকে বুঝানো দুরহ ব্যাপার।
No comments:
Post a Comment