শ্রীমন্মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীতম্ বেদান্তদর্শনের ‘ঈক্ষ্ণতের্ন অশব্দম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-১/১/৫) এই সূত্রের ভাষ্যে ভগবৎপাদ্ শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য্য লিখিতেছেন- আর যে বলা হইয়াছে জগতের উৎপত্তির পূর্ব্বে শরীরাদির সহিত সম্বন্ধ না থাকায় ব্রহ্মের ঈক্ষণকর্তৃত্ব সঙ্গত হয় না তদুত্তরে সিদ্ধান্তী বলিতেছেন-
সেই প্রকার আশঙ্কা হইতে পারে না, যেহেতু সূর্য্যের প্রকাশের ন্যায় ব্রহ্মের জ্ঞানস্বরূপতা নিত্য হওয়ায় জ্ঞানের সাধন শরীর ও ইন্দ্রিয় প্রভৃতির প্রতি তাঁহার অপেক্ষা যুক্তিসঙ্গত নহে। দেখ, অবিদ্যাদিযুক্ত যে জীব, তাহারই শরীর প্রভৃতিকে অপেক্ষা করিয়া জ্ঞানোৎপত্তি হইয়া থাকে, কিন্তু যাঁহার জ্ঞানে কোনপ্রকার প্রতিবন্ধককারণ নাই, সেই ঈশ্বরের তাহা হয় না।
এই মন্ত্রদ্বয় ঈশ্বরের যে শরীর প্রভৃতির প্রতি অপেক্ষা নাই এবং তাঁহার জ্ঞানে যে কোনপ্রকার আবরণ নাই, ইহা প্রদর্শন করিতেছে, যথা-
'তাঁহার কার্য্য অর্থাৎ শরীর ও ইন্দ্রিয় নাই, তাঁহার সমান বা তাঁহা অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট কাহাকেও দেখা যায় না। ইহার পরাশক্তি অর্থাৎ মায়াশক্তি আকাশাদি-বিচিত্র-কার্য্যকারিণী হওয়ায় বিবিধ বলিয়ায় শ্রুতিতে বর্ণিত হয়। তাহার জ্ঞানরূপ বলের দ্বারা যে সৃষ্টিক্রিয়া তাহা স্বাভাবিক অর্থাৎ অনাদিময়াত্মক হওয়ায় অন্যকারণ নিরপেক্ষ।'-(শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ-৬।৮)
'তাঁহার হস্ত ও পদ নাই, তথাপি দ্রুত গমন করেন ও গ্রহণ করেন, চক্ষুহীন হইলেও দর্শন করেন, কর্ণহীন হইলেও তিনি শ্রবণ করেন। তিনি শরীর ও ইন্দ্রিয়াদির অপেক্ষা না করিয়া বেদ্য বিষয় সকলকে অবগত হন, তাহার কিন্তু বেত্তা কেহ নাই; নিত্য জ্ঞানস্বরূপ তাঁহাকে কেউ জ্ঞানের বিষয় করিতে পারে না, ব্রহ্মবিদ্গণ তাঁহাকে অগ্র্য অর্থাৎ অনাদি পুরুষ এবং মহান বিভু বলিয়া থাকেন।'-(শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ-৩।১৯)
No comments:
Post a Comment