প্রথমত বলে রাখি শুধুমাত্র সত্য প্রকাশের নিমিত্ত ও বিবিধ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জবাব দেবার জন্যই আমি এই খণ্ডনকর্মে প্রবৃত্ত হচ্ছি। নিজেদের বৈষ্ণব দাবি করা একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের অনুসারীরা শ্রীমদ্ভাগবত্ পুরাণের প্রথম স্কন্ধের তৃতীয় অধ্যায়ের ৫ম শ্লোকের তাৎপর্যে বলেন—
পূর্বপক্ষ—শিব
কোন সাধারণ জীব নন, তিনি ভগবানের অংশ। কিন্তু যেহেতু শিব সরাসরিভাবে জড়া প্রকৃতির
সঙ্গে যুক্ত, তাই তিনি ঠিক বিষ্ণুর মতো পূর্ণরূপে গুণাতীত নন। তাঁদের পার্থক্য অনেকটা
দুধ এবং দইয়ের মধ্যে পার্থক্যের মতো। দই দুধ ছাড়া আর কিছুই নয়, তবুও তা দুধ নয়।
সিদ্ধান্ত—
এইধরণের কোন তাৎপর্যই আলোচ্য শ্লোকের মূল বা শ্রীধর টীকাতে নেই। প্রথমে মূলে কি বলা
আছে অনুবাদসমেত দেখে নেয়া যাক—
এতন্নানাবতারাণাং
নিধানং বীজমব্যয়ম্ ।
যস্যাংশাংশেন
সৃজ্যন্তে দেবতির্যঙ্নরাদয়ঃ ॥ ৫॥
অনুবাদঃ-
উল্লিখিত কারণোদকশায়ী রূপই লীলাবসানে নানা অবতারের প্রবেশস্থলী অক্ষয় এবং উদ্গমস্থান—
যাঁর অংশ ব্রহ্মা ও ব্রহ্মাংশ মরীচাদি ঋষিগণ, (তিনিই) দেব-নর-তীর্যক-সর্বপ্রকার প্রাণী
সৃষ্টি করেন।
এবার
শ্রীচৈতন্যদেবাদি মান্য শ্রীমদ্ভাগবতের সর্বপ্রাচীনতম
ও পণ্ডিতগণ স্বীকৃত প্রখ্যাত টীকাকার পূজ্যপাদ্ আচার্য শ্রীধর স্বামী ভাবার্থদীপিকায়
কি বলছেন দেখে নেয়া যাক।
শ্রীধরটীকাঃ-
এতত্তু কূটস্থং ন ত্বন্যাবতারবদাবির্ভাব-তিরোভাববদিত্যাহ—এতদিতি।
এতত্তু আদিনারায়ণরূপম। নিধীয়তেহস্মিন্নিতি নিধানং, কার্যাবসানে প্রবেশস্থানমিত্যর্থঃ।
বীজমন্ত্র উদ্গমস্থানং বীজত্বেহপি নান্যবীজতুল্যং কিন্ত্বব্যয়ম। ন কেবলমবতারাণামেব
বীজং, কিন্তু সর্বপ্রাণিনামিত্যাহ, যস্যাংশো ব্রহ্মা তস্যাংশো মরীচ্যাদিস্তেন।
টীকানুবাদঃ-
এটি কূটস্থ অর্থাৎ অন্য অবতারের মতো এখানে আবির্ভাব-তিরোভাব নেই—এই
কথা বলার জন্য 'এতৎ' ইত্যাদি শ্লোক। 'এতৎ' শব্দের অর্থ আদিনারায়ণরূপ। নিধানম—এখানে
রক্ষিত হয়। অর্থাৎ লীলাবসানে যেটি প্রবেশস্থল। 'বীজম'—উদ্গমস্থান, এখানে শব্দটি বীজ
হলেও অন্য বীজের মত নয়। কারণ এই বীজ অক্ষয়—অব্যয়। আবার কেবল অবতারদেরই বীজ নয়, অন্য সর্বপ্রকার
প্রাণীদেরও বীজস্বরূপ, এই কথা বোঝানোর জন্য বলা হলো, 'যস্যাংশো ব্রহ্মা তস্যাংশো মরীচ্যাদিস্তেন'—যাঁর
অংশ ব্রহ্মা, আবার সেই ব্রহ্মার অংশ মরীচাদি ঋষিগণ, তাঁর দ্বারাই (সৃষ্ট হয়)।......
No comments:
Post a Comment