মনই সংসারের মূল। ভগবান্ বশিষ্ঠদেব বলেছেন—"সর্ব উপদ্রবদায়ী এই সংসারবৃক্ষের নিগ্রহের একটিই উপায় আছে, তা হলো নিজের মনের নিগ্রহ।" মনোনাশেই দুঃখনিবৃত্তি ও অক্ষয়শান্তি। মনোনিগ্রহ বা চিত্তজয়ের চারটি উপায় লঘুযোগবাশিষ্ঠের উপশম প্রকরণে বর্ণিত হয়েছে—
"অধ্যাত্মবিদ্যাধিগমঃ সাধুসংগম্ এব
চ।।
বাসনাসম্পরিত্যাগঃ
প্রাণস্পন্দনিরোধনম্।
এতাস্তু
যুক্তয়ঃ পুষ্টাঃ সন্তি চিত্তজয়ে কিল।।
-(লঘুযোগবাশিষ্ঠ, উপশমপ্রকরণ,২৮/১২৮,১২৯)
অধ্যাত্মবিদ্যার
অর্জন, সাধুসঙ্গ, বাসনার সম্যগ্রূপে ত্যাগ ও প্রাণসংযম—এই
চারটি যুক্তি চিত্তজয়ে নিশ্চিত পুষ্ট হয়, অর্থাৎ সফল
হয়।
আচার্য
বিদ্যারণ্য স্বামী জীবন্মুক্তিবিবেকে এই উপায়গুলোর সাবলীল
ব্যাখ্যা করেছেন। অধ্যাত্মবিদ্যা হ'ল দৃগ্-দৃশ্য-বিবেক। সেই অধ্যাত্মবিদ্যাও দৃশ্যের
মিথ্যাত্ব ও দ্রষ্টার স্বয়ং
প্রকাশস্বরূপতা জানায়। এরূপ হলে এই
মন নিজ গোচরীভূত দৃশ্যসমূহে
প্রয়োজনের অভাব এবং প্রয়োজনের
বস্তু দ্রষ্টাকে মনের অগোচর জেনে
ইন্ধনবিহীন অগ্নির মতো নিজেই শান্ত
হয়ে যায়। সেরূপ শ্রুতিতেও বলা হয়েছে—"যেরূপ
ইন্ধনবিহীন অগ্নি নিজকারণে উপশান্ত হয়, সেরূপ বৃত্তি
ক্ষয় হওয়ায় চিত্তও নিজকারণে উপশান্ত হয়।"-(মৈত্রায়ণি উপনিষৎ-৪/১)
কিন্তু যে বুঝিয়ে দিলেও আত্মতত্ত্বকে যথাযথ বোঝে না এবং যে ভুলে যায়, তাদের উভয়ের সাধুসঙ্গই উপায়। যেহেতু সাধুরা বারংবার জানিয়ে দেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু যে বিদ্যার অহঙ্কার প্রভৃতি দুর্বাসনা দ্বারা পীড়িত হয়ে সাধুদের অনুসরণ করতে উৎসাহী হয় না, তার পূর্বোক্ত বিবেক অভ্যাস দ্বারা বাসনাত্যাগই উপায়। বাসনাসমূহের প্রাবল্যবশত ত্যাগ করতে অসমর্থ হলে, প্রাণস্পন্দনের নিরোধই উপায়। প্রাণস্পন্দন ও বাসনা চিত্তের প্রেরক হওয়ায় তাদের নিরোধ করলে চিত্তের শান্তি উপপন্ন হয়।......
শ্রীশুভ
চৌধুরী
মে
১৬, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment