অবস্থাত্রয় হ'ল জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি। আত্মা এই অবস্থাত্রয়ের সাক্ষী। জীব এই তিন অবস্থায় বিচরণ করে। এই তিন অবস্থায় জ্ঞাতা, দ্রষ্টা আত্মা। যখন স্থূল ইন্দ্রিয়সহায়ে বিষয় উপলব্ধি হয় সেই অবস্থাকে জাগ্রত অবস্থা বলা হয়। যখন আমরা নিদ্রা যাই, তখন সেখানে বাহ্য ইন্দ্রিয়সমূহ অকেজো হয়ে থাকে। তারা তখন নিশ্চেষ্ট অবস্থায় অবস্থান করে। তথাপি ঐ সময়ে আমরা স্বপ্নে বহুবিধ দৃশ্য দেখি, বহু বিষয়ের সমাগমে ব্যবহারও করি। রাজা হই, ফকির হই ও তত্তৎ ব্যবহারাদিও করি। ঐ গুলির সৃজন বস্তুতঃপক্ষে জাগরণকালীন দৃষ্ট, অনুভূত বিষয়সমূহের সংস্কার থেকে হয়ে থাকে। সুতরাং জাগ্রত অবস্থার সংস্কারজনিত সমানবিষয়ক প্রত্যয় অর্থাৎ জ্ঞানই স্বপ্নাবস্থা। কিন্তু যখন আমরা গভীর নিদ্রাভিভূত থাকি তখন কোন বিষয় থাকে না, কোন দৃশ্য থাকে না। যেখানে সকল বিষয়ের অভাব সেই অবস্থাটি সুষুপ্তি অবস্থা।
মাণ্ডুক্য
উপনিষদে বর্ণিত এই জাগ্রতকালীন স্থূলশরীরাভিমানী
চৈতন্য হ'ল বিশ্ব।
স্বপ্নকালীন সূক্ষ্মশরীরাভিমানী চৈতন্যকে তৈজস বলে। সুষুপ্তিকালীন
কারণ শরীরাভিমানী চৈতন্য হ'ল প্রাজ্ঞ।
এইরূপে একই স্বপ্রকাশ চৈতন্যস্বরূপ
আত্মা উপাধির ভেদ বশতঃ বিশ্ব,
তৈজস ও প্রাজ্ঞ এই
তিন রূপে অবস্থিত আছেন।
আত্মা
অবস্থাত্রয়ের সাক্ষী কি প্রকারে? জাগ্রদাদি
অবস্থাত্রয় অতীতে ছিল, বর্তমানে রয়েছে
ও ভবিষ্যতে থাকবে। এইরূপ এই বিকারি অবস্থাত্রয়ের
থেকে ভিন্ন অবিকারী সত্ত্বারূপে আত্মাকে জানা যায়। ভগবান্
শঙ্করাচার্য মাণ্ডুক্যকারিকার ভাষ্যে স্পষ্ট বলছেন—চৈতন্য যেরূপ আত্মার স্বভাব সিদ্ধ, জাগ্রদাদি অবস্থাত্রয় সেরূপ আত্মার স্বভাব নয়; কারণ, স্বভাবের
কখনও ব্যভিচার হয় না; কিন্তু
পূর্বোক্ত অবস্থাত্রয়ের ব্যভিচার দৃষ্ট হয়; সেহেতু স্বপ্রকাশ
চৈতন্যস্বরূপ আত্মা পূর্বোক্ত অবস্থাত্রয় হতে বিলক্ষণ। পর্যায়ক্রমে
জাগ্রৎ স্বপ্ন সুষুপ্তির সহিত আত্মার সম্বন্ধ
হওয়ায় এবং "যে আমি এখন
জেগে আছি, সে আমিই
স্বপ্নে দেখেছি এবং সে আমিই
সুপ্ত ছিলাম"—এরূপ আত্মানুসন্ধান হেতু
এবং ধর্মাধর্ম, রাগদ্বেষাদি অবস্থাত্রয়ের ধর্ম বলে এবং
শ্রুতিতে উদাহৃত তিমি প্রভৃতি মহামৎস্য
জলাশয়ের উভয় কূলে পর্যায়ক্রমে
বিচরণ করলেও, উভয় কূল হতে
স্বতন্ত্র এবং উভয় কূলের
দোষগুণে লিপ্ত হয় না, এই
দৃষ্টান্ত অনুসারে আত্মা জাগ্রৎ স্বপ্ন সুষুপ্তি এই অবস্থাত্রয়ে অবস্থান
করলেও, অবস্থাত্রয় হতে স্বতন্ত্র, এক,
শুদ্ধ ও অসঙ্গ। সুতরাং
অবস্থাত্রয় হতে আত্মার স্বতন্ত্রতা,
একত্ব, শুদ্ধত্ব ও অসঙ্গত্ব সিদ্ধ
হল।.....
তথ্যসূত্রঃ-
১.
ভগবান্ শঙ্করাচার্যের মাণ্ডুক্যকারিকা ভাষ্য।
২.
ভগবান শঙ্করাচার্যের আত্মানাত্মবিবেকঃ।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
মে
১২, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment