প্রথমেই শ্রীগীতার ভগবৎবচন দিয়ে আরম্ভ করি। ভগবান্ বলছেন—"প্রকৃতিং পুরুষং চৈব বিদ্ধ্যনাদী উভাবপি।"-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৩/২০) অর্থাৎ প্রকৃতি ও পুরুষ উভয়কেই অনাদি বলে জানবে। এই প্রকৃতি হচ্ছেন ঈশ্বরের বিকার-কারণ-শক্তি ত্রিগুণাত্মিকা মায়া। গীতার এই শ্লোকের ভাষ্যে ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য তাই বলেছেন— "প্রকৃতিঃ ঈশ্বরস্য বিকারকারণশক্তিঃ ত্রিগুণাত্মিকা মায়া।" তাছাড়া শ্রুতিতেও প্রকৃতিকে মায়া বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে —"মায়াং তু প্রকৃতিং বিদ্যান্মায়িনং তু মহেশ্বরম্"-(শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ-৪/১০) অর্থাৎ প্রকৃতিকে মায়া বলে জানবে এবং মহেশ্বরকে মায়াধীশ বলে জানবে।
এই
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদেই অনাদি প্রকৃতিকে অজা অর্থাৎ জন্মরহিত
বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যথা—অজামেকাং লোহিতশুক্লকৃষ্ণাং বহ্বীঃ প্রজাঃ সৃজমানাং সরূপাঃ। -(শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ-৪/৫) ইত্যাদি।
মাণ্ডুক্য
কারিকার আগম প্রকরণে বর্ণিত
আছে—
"অনাদিমায়য়া সুপ্তো
যদা জীবঃ প্রবুধ্যতে। অজমনিদ্রমস্বপ্নমদ্বৈতং
বুধ্যতে তদা।"
অর্থাৎ
অনাদি মায়া বিমোহিত, অজ্ঞাননিদ্রায় সুপ্ত, তত্ত্বজ্ঞানবিমূঢ় জীব যখন জাগরিত
হয় অর্থাৎ গুরু কর্তৃক উপদিষ্ট
হয়ে শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসনপূর্বক ব্রহ্মাত্মৈক্য
জ্ঞান লাভ করে, তখন
সেই সাধক জন্ম-মৃত্যুরহিত,
অন্যথাগ্রহণরূপ বিপরীত জ্ঞানবর্জিত, অজ্ঞাননিদ্রা রহিত অদ্বৈত ব্রহ্মাত্মতত্ত্ব
অবগত হয়।
তাছাড়া
অথর্ববেদীয় সর্বসারোপনিষদে অনাদি অনির্বচনীয় মায়ার স্বরূপ অত্যন্ত স্পষ্টরূপেই বর্ণিত আছে—
"অনাদিরন্তর্বত্নী প্রমাণাপ্রমাণসাধারণা
ন সতী নাসতী, ন
সদসতী স্বয়ম্ অবিকারাৎ বিকারহেতৌ নিরূপ্যমাণেঽসতী। অনিরূপ্যমানে সতী লক্ষণশূন্যা স
মায়েত্যুচ্যতে।"
-(সর্বসারোপনিষৎ-১৩)
"আদি নেই
কিন্তু অন্ত আছে, প্রমাণ
আছে আবার প্রমাণ নেই,
আছে বলা যায় না
আবার নেইও বলা যায়
না। সৎ ও অসৎ
একসঙ্গে বলা যায় না,
(ব্রহ্ম) স্বয়ং বিকারশূন্য হওয়ায় বিকারের হেতুরূপে নিরূপ্যমান (জ্ঞাত) হলে নেই এবং
বিকারের হেতুরূপে নিরূপিত না হলে আছে-এইরূপ লক্ষণশূন্য যা (ভাব) তাই-ই মায়া বলে
কথিত হয়।"
শ্রীশুভ
চৌধুরী
ফেব্রুয়ারি
৯, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment