Tuesday, 19 November 2024

অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টির স্বরূপঃ-

 


সৃষ্টির্নাম ব্রহ্মরূপে সচ্চিদানন্দবস্তুনি।

অব্ধৌ ফেনাদিবৎ সর্বনামরূপপ্রসারণা।।

-(দৃগ্দৃশ্যবিবেক-১৪)

সমুদ্রে ফেনাদিবিস্তারের ন্যায় ব্রহ্মস্বরূপ সচ্চিদানন্দ বস্তুতে যাবতীয় নামরূপ বিস্তারের নাম সৃষ্টি। ভাবার্থ এই যেব্রহ্মে যে বিক্ষেপাত্মিকা মায়া রয়েছে, সেই ব্রহ্মেই সেই মায়ার যে সমস্ত নাম রূপাকারে বিবর্তন তাকেই সৃষ্টি বলে। এই বিষয়ে আচার্য দৃষ্টান্ত দিচ্ছেনএই সমস্তকেই (দৃশ্যমান প্রপঞ্চকেই) জলে ফেনার ন্যায় দেখতে হবে। জলে যে ফেনাদি দেখা যায় তা জল হতে ভিন্ন নয়। কেননা, জলকে ছেড়ে নিরূপিত হতে পারে, এরূপ স্বরূপ তার নেই, পক্ষান্তরে সেই ফেনাদি জল হতে অভিন্নও নয়, কেননা তাদেরকে পৃথকভাবে দেখা যায়। আবার তারা জল হতে ভিন্নাভিন্ন নয়; কেননা, তদুভয়ের স্বরূপ পরস্পরবিরুদ্ধ। এরূপে জগৎ- চিদাত্মা হতে ভিন্ন নয়, কেননা চিদ্রূপের বাইরে তার স্বতন্ত্রভাবে নিরূপণ হয় না। আবার তা হতে অভিন্নও নয়, কেননা চিদাত্মা হতে জগৎ পৃথকভাবে প্রতীত হয় এবং তা ইন্দ্রিয়গোচর, জড়, স্থূল বিবিধপ্রকার। সেহেতু এই জগৎ অধিষ্ঠানভূত ব্রহ্ম হতে পৃথক অপৃথক বলে অনির্বচনীয়ই, এটা পরমার্থ নয়।

যেহেতু সৃষ্টি মায়াময়, এই হেতু অধিষ্ঠানরূপে রজ্জু সর্পাকারে বিবর্তিত হলে, রজ্জুকে যেমন সর্পের কারণ বলা হয়, সেইরূপ ব্রহ্মও রজ্জুর ন্যায় কূটস্থ (নির্বিকার) থেকে, মায়াকে সত্তা প্রকাশ দিয়ে, মায়ার অনুগমনমাত্র করে বলে ব্রহ্মকে কারণ বলা হয়ে থাকে। পারমার্থিকভাবে ব্রহ্মকে কারণ বলা হয় না।

তথ্যসূত্রঃ- ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য (মতান্তরে ভারতী তীর্থ) বিরচিত "দৃগ্দৃশ্যবিবেকঃ", আনন্দ গিরি ব্রহ্মানন্দ ভারতীর টীকা সমেত।

শ্রীশুভ চৌধুরী

নভেম্বর , সোমবার, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...