যোগবাশিষ্ঠে বর্ণিত আছে—
সর্বমেকমিদং
শান্তমাদিমধ্যান্তবর্জিতম্।
ভাবাভাববিনির্মুক্তমিতি
জ্ঞাত্বা সুখী ভব।
—দৃশ্যমান এই
জগৎ আদি-মধ্য-অন্ত-রহিত, ভাব-অভাব অতীত,
শান্ত, অদ্বিতীয় ব্রহ্ম ব্যতীত আর কিছুই নয়—এরূপ জেনে সুখী
হও।
ভগবান্
শঙ্করাচার্য অপরোক্ষানুভূতিতে এই তত্ত্বটিকে খুব
সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আচার্য বলেছেন— জগৎপ্রপঞ্চের উপাদান ব্রহ্ম ভিন্ন অন্য কিছু নয়,
সুতরাং এই প্রপঞ্চসমূহে ব্রহ্মই
আছেন অন্য কিছুই নেই।
যেরূপ পৃথিবী ঘট নামে, তন্তুসকল
পট (বস্ত্র) নামে প্রতীত হয়,
সেরূপ চৈতন্যও জগৎ নামে আভাসিত
হয়। ঘট ও পট
নামের তিরোধান হলে মৃত্তিকা ও
তন্তুকে জানা যায়। যেরূপ
রজ্জুতে সর্প, আকাশে নীলবর্ণ, মরুমরীচিকায় জল দর্শন ভ্রমবশতঃ
হয়ে থাকে, সেরূপ চৈতন্যসত্তায় জগৎপ্রপঞ্চের ভ্রমদর্শন ঘটে। নামরূপ মিথ্যা।
ঘট, পট, কুণ্ডল—নামরূপের
সত্যতা নেই। মৃত্তিকা, তন্তু,
সুবর্ণই সত্য। ছান্দোগ্য শ্রুতি বলছে—"বাচারম্ভনং বিকারো নামধেয়ম্ মৃত্তিকেত্যেব সত্যম্।" ঘট ও মৃত্তিকায়
যে কার্য-কারণ সম্পর্ক, প্রপঞ্চ
ও ব্রহ্মেও তা বিদ্যমান; কিন্তু
এখানে কার্যকে কারণ হতে ভিন্ন
করা যায় না। কারণ
জগৎ প্রপঞ্চের উপাদান ও নিমিত্ত কারণ
ব্রহ্মই। "স য এষোঽণিমৈতদাত্ম্যমিদং
সর্বং"।-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬/৮/৭);
"সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম"।-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৩/১৪/১)
বিচার
করলে ঘটের নাম ও
রূপ তিরোহিত হয়ে এক মৃত্তিকাই
দৃঢ়ভাবে উপস্থিত হয়, তদ্রূপ বিচার
করলে জগৎও স্বয়ংপ্রকাশ ব্রহ্মরূপেই
অবশিষ্ট থাকে। জীবের সকল ব্যবহার ব্রহ্মের
মধ্য দিয়েই হয়ে থাকে, কিন্তু
অজ্ঞানবশে যেরূপ ঘট প্রভৃতি স্বরূপতঃ
যে মৃত্তিকাই তা যেমন জানতে
পারে না, তদ্রূপ সে
তা জানতে পারে না। এখন
প্রশ্ন হল, সবই যদি
ব্রহ্মস্বরূপ হয়, তবে আত্মা
ও অনাত্মা এরূপ বিভাগ কেন
করা হয়? তদুত্তরে আচার্য
শ্রীশঙ্কর বলেছেন— যেরূপ ঘট মৃত্তিকা নির্মিত
সেরূপ দেহও চৈতন্যময়। অজ্ঞান
কর্তৃক আত্মা ও অনাত্মার বিভাগ
বৃথাই কৃত হয়।...
তথ্যসূত্রঃ-
১.
"যোগবাশিষ্ঠসারঃ",
স্বামী ধীরেশানন্দ।
২.
ভগবান্ শঙ্করাচার্যের "অপরোক্ষানুভূতি"।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
নভেম্বর
২২, শুক্রবার, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment