অনেকে মনে করেন ভগবান্ শঙ্করাচার্যের অনির্বাচ্যবাদ্ বৌদ্ধোক্ত মায়াবাদ বা চতুষ্কোটি বিনির্মুক্ত শূন্যবাদ হতে গৃহীত হয়েছে। 'লঙ্কাবতারসূত্র', 'প্রজ্ঞাপারমিতা' প্রভৃতি গ্রন্থে অনির্বাচ্য মায়াবাদের বিবরণ দেখতে পাওয়া যায়। এই সকল প্রাচীন বৌদ্ধগ্রন্থ হতেই আচার্য শঙ্কর অনির্বাচ্যবাদ এবং জগন্মিথ্যাত্ববাদ্ গ্রহণ করে, তাঁর অদ্বৈতবেদান্ত মত প্রচার করেছেন বলে ধারণা এদের। অদ্বৈতদর্শনের ব্যাখ্যায় শঙ্করের নিজস্ব কোন দান নেই বলে দাবি করেন এরা।
এই
অপবাদের নিরসনে বলব—ভারতীয় দর্শন
চিন্তায় ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্যের অবদান কতখানি তা নিশ্চয়ই সুধীপাঠকের
অজানা নয়। স্বীকারই করলাম
যে অনির্বাচ্যবাদ শঙ্করের উদ্ভাবিত নয়, কিন্তু তার
জন্য বৌদ্ধের নিকট ধার করতে
হবে কেন? ঋগ্বেদীয় প্রসিদ্ধ
'নাসদীয় সূক্তে'ই অনির্বাচ্যবাদের মূলসূত্র
নিহিত আছে।
নাসদাসীন্নোসদাসীত্তদানীম্।।
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধান্যন্নপরং কিঞ্চনাস। ঋগ্বেদ্ ১০ম মণ্ডল, ১৩৯
সূক্ত, ১ম ও ২য়
মন্ত্র।
উল্লেখিত
মন্ত্রের ব্যাখ্যায় সায়নাচার্য স্পষ্টই বলেছেন যে, সৃষ্টির ঊষায়
জাগতিক বস্তুসকল সত্যরূপেও নির্ধারণের যোগ্য ছিল না, আবার
আকাশ কুসুমের ন্যায় অসৎও ছিল না।
সমস্ত বস্তুরাজিই তখন অনির্বাচ্য ছিল—"উভয়বিলক্ষণমনির্বাচ্যমাসীৎ' সায়নভাষ্য। আলোচ্য শ্রুতিতেই অনির্বাচ্যবাদের স্পষ্ট নির্দেশ আছে। আচার্য মধুসূদন
সরস্বতী উল্লেখিত শ্রুতিদ্বয়কেই অনির্বাচ্যের শ্রৌত প্রমাণরূপে 'অদ্বৈতসিদ্ধিতে'
উল্লেখ করেছেন।......
তথ্যসূত্রঃ-
বেদান্তদর্শন—অদ্বৈতবাদ, তৃতীয় খণ্ড, আশুতোষ শাস্ত্রী বিদ্যাবাচস্পতি।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
আগস্ট
২২, শুক্রবার, ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment