Saturday, 27 September 2025

অমলানন্দ স্বামী—

 


অদ্বৈতবেদান্তের আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হলো অমলানন্দ স্বামী। বেদান্ত কল্পতরুর রচয়িতা অমলানন্দ স্বামী খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকের শেষভাগে দক্ষিণ ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। আচার্যের অপর নাম ব্যাসাশ্রম। যাদববংশীয় রাজা শ্রীকৃষ্ণের সময় অমলানন্দ কল্পতরু রচনা করেন। তিনি কল্পতরুর আরম্ভে গ্রন্থের রচনাকাল নির্দেশ করেছেন। তিনি রাজা শ্রীকৃষ্ণ বলে সম্ভবতঃ যাদবরাজ রামচন্দ্রকে গ্রহণ করেছেন। রাজা রামচন্দ্র মহাদেবের ভ্রাতা। রামচন্দ্রের পূর্বে মহাদেব দেবগিরির রাজা ছিলেন মহাদেবের নামও অমলানন্দ কল্পতরুর আরম্ভ শ্লোকে উল্লেখ করেছেন। এটা দ্বারা অমলানন্দ উভয়ের রাজত্বকালেই গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, এরূপ মনে করা অস্বাভাবিক নয়। মহাদেব ১২৬০ থেকে ১২৭১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন, পরে রামচন্দ্র রাজা হন। এটা হতে অমলানন্দ স্বামীর আবির্ভাবকালও খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকের শেষ ভাগ বলে নিশ্চয় করা যায়।

অমলানন্দের গুরুর নাম অনুভবানন্দ, আর বিদ্যাগুরু সুখপ্রকাশ। সুখপ্রকাশ চিৎসুখাচার্যের শিষ্য, সুতরাং অমলানন্দ চিৎসুখাচার্যের প্রশিষ্য ছিলেন। অমলানন্দ বাচস্পতি মিশ্রের ভামতী টীকার উপর 'বেদান্তকল্পতরু' নামে এক পূর্ণাঙ্গ টীকা প্রণয়ন করেন। কল্পতরু ব্যতীত অমলানন্দ 'শাস্ত্রদর্পণ' নামে একখানা গ্রন্থ রচনা করেন। শাস্ত্রদর্পণে ব্রহ্মসূত্রের প্রত্যেক অধিকরণের বাচস্পতি-মতানুযায়ী তাৎপর্য অতি প্রাঞ্জল ভাষায় অমলানন্দ বিবৃত করেছেন। তাছাড়া পদ্মপাদাচার্যের পঞ্চপাদিকার উপর 'পঞ্চপাদিকা-দর্পণ' নামে একখানা টীকা রচনা করে অমলানন্দ স্বামী ভগবান্ শঙ্করাচার্যের ভাষ্যধারার বিশেষ পুষ্টিসাধন করেছিলেন বলে জানা যায়। এই কল্পতরুর উপর অপ্পয় দীক্ষিত 'কল্পতরু-পরিমল' খৃষ্টীয় ১৭শ শতকে কোণ্ডভট্টের পুত্র লক্ষ্মীনৃসিংহ 'আভোগ' নামে টীকা রচনা করে কল্পতরুর দানভাণ্ডার পূর্ণ করেছেন। লক্ষ্মীনৃসিংহ তদীয় টীকা রচনায় অনেক স্থলে অপ্পয় দীক্ষিতের বেদান্ত-কল্পতরু-পরিমলের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল বলে মনে হয়।.....

তথ্যসূত্রঃ-

. বেদান্তদর্শনঅদ্বৈতবাদ, প্রথম খণ্ড, আশুতোষ ভট্টাচার্য শাস্ত্রী বিদ্যাবাচস্পতি।

. অদ্বৈতসিদ্ধি মধুসূদন সরস্বতী, শ্রীব্যোমকেশ ভট্টাচার্য, ভাগবত-রত্ন।

শ্রীশুভ চৌধুরী

সেপ্টেম্বর ১৯, শুক্রবার, ২০২৫ খৃষ্টাব্দ।

No comments:

তুরীয় ব্রহ্মের স্বরূপঃ-

  মাণ্ডুক্য উপনিষদে তুরীয় ব্রহ্মতত্ত্বের উপদেশ রয়েছে। ঐ দুর্জ্ঞেয় তুরীয় তত্ত্ব বুঝানোর জন্য ওঁকার বা প্রণবকে ব্রহ্মের প্...