Monday, 27 December 2021

মুখ্য প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের উৎপত্তিঃ-

 

সদানন্দযোগীন্দ্র সরস্বতী বেদান্তসারে বলিতেছেন-"পণ্ডিতেরা সেই প্রথমোৎপন্ন আকাশাদি পঞ্চভূতকে সূক্ষ্মভূত, তন্মাত্রা ও অপঞ্চীকৃত মহাভূত বলিয়া থাকেন।"-(বেদান্তসারঃ, ৫৯)

অপঞ্চীকৃত পঞ্চ সূক্ষ্মভূতকে পণ্ডিতেরা তন্মাত্র বলেন কেন?

ভগবান শঙ্করাচার্যের "অহংকারাৎ পঞ্চতন্মাত্রাণি" এই পঞ্চীকরণ সূত্রের বার্ত্তিকাভরণম্ এ অভিনবনারায়ণেন্দ্র সরস্বতী বলছেন-

বিষ্ণুপুরাণেও এইরূপ উক্ত হয়েছে- 'শব্দ স্পর্শাদি বিশেষ বিশেষ ধর্ম আকাশাদি পৃথক্ পৃথক্ ভূত সকলে তাদাত্ম্য সম্বন্ধেই থাকে, অন্যত্র থাকে না। অর্থাৎ শব্দ আকাশেই থাকে, স্পর্শ বায়ুতেই থাকে ইত্যাদি। এইজন্য স্মৃতি শাস্ত্রে উহাদের নাম তন্মাত্র বলা হয়েছে।'

সূক্ষ্মশরীর কি?

সদানন্দযোগীন্দ্র সরস্বতী বেদান্তসারে বলিতেছেন- "আকাশাদি এইসকল পাঁচটি সূক্ষ্মভূত থেকে সূক্ষ্মশরীর সকল উৎপন্ন হয়। সতেরটি অবয়ব বিশিষ্ট লিঙ্গশরীরকে সূক্ষ্মশরীর বলে। পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয়, পাঁচটি বায়ু, মন ও বুদ্ধি- এই সতেরোটি অবয়ব নিয়ে সূক্ষ্মশরীর গঠিত।"-(বেদান্তসার,৬০-৬২)

লিঙ্গশরীর কেন বলা হয়?

তদুত্তরে বলিব, ইহার দ্বারা আত্মা জ্ঞাপিত হয় বলিয়া ইহাকে বলা হয় 'লিঙ্গ'।

আনন্দ গিরি পঞ্চীকরণ বিবরণে তাহাই বলিতেছেন- "এই লিঙ্গ কোন প্রকারে প্রত্যাগাত্মার জ্ঞাপক- এইকারণে‌ ইহাকে 'লিঙ্গ' এইরূপে ব্যাখ্যা করা হয়। এই লিঙ্গের কার্য্যত্ব বলিয়া ফলতঃ ভৌতিকত্ব বলায় লিঙ্গে অহম্ অভিমান অর্থাৎ 'লিঙ্গই আমি' এইরূপ অভিমান অপ্রামাণিক- ইহাই মনে করিতেছেন। অতএব এই অপঞ্চীকৃত ভূতপঞ্চক্বই লিঙ্গ। এই পূর্বোক্ত সপ্তদশ অবয়বযুক্ত লিঙ্গ ভূতকার্য বলিয়া ভৌতিক।"-(পঞ্চীকরণ বিবরণ-১৩)

বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের প্রাণোৎপত্ত্যধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় পরমেশ্বর হইতে আকাশাদির ন্যায় ইন্দ্রিয়াদিও উৎপন্ন হইয়াছে। এক্ষণে সেই আকাশাদি মহাভূত হইতে লিঙ্গশরীরের উৎপত্তি বিষয়ক আলোচনার সূচনা হইবে। ইন্দ্রিয়সকল কি অনাদি অথবা পরমেশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ বলিতেছেন-

তথা প্রাণাঃ ৷৷ ব্রহ্মসূত্র ২.৪.১৷৷

ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য শারীরক মীমাংসা ভাষ্যে বলিতেছেন- এই স্থলে প্রাণ সকলের (-মুখ্য প্রাণ ও ইন্দ্রিয়সকলের) উৎপত্তিবোধক শ্রুতি বাক্যসকলই উদাহরণ, যথা-

'এতস্মাদাত্মনঃ সর্বে প্রাণাঃ সর্বে লোকাঃ সর্বে দেবাঃ সর্বাণি ভূতানি ব্যুচ্চরন্তি'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-২।১।১০)

"এই আত্মা হইতে সকল প্রাণ, সকল লোক, সকল দেবতা এবং সকল প্রাণী নানাভাবে উদ্গত হয়।"

উক্ত শ্রুতিবাক্যে যেমন লোক প্রভৃতি পরব্রহ্ম হইতে উৎপন্ন হয়, 'তথা'(-তদ্রূপ) প্রাণসকলও উৎপন্ন হয়, ইহাই অর্থ।

এইপ্রকারে 'এতস্মাজ্জায়তে প্রাণো মনঃ সর্বেন্দ্রিয়াণি চ৷ খং বায়ুর্জ্যোতিরাপঃ পৃথিবী বিশ্বস্য ধারিণী'-(মুণ্ডক উপনিষৎ-২।১।৩)

"ইঁহা হইতে প্রাণ, মন, ইন্দ্রিয়সকল, আকাশ, বায়ু, বহ্নি, জল এবং সকলের আধারভূতা পৃথিবী উৎপন্ন হয়।"

ইত্যাদি এইসকল শ্রুতিবাক্যেও আকাশাদির ন্যায় প্রাণ সকলের উৎপত্তি শ্রুত হয়। সুতরাং প্রাণসকল যে বিকার (-কার্য্য বস্তু) শ্রুতিপ্রমাণ হেতু তাহা সিদ্ধ হইল।

আবার ছান্দোগ্য শ্রুতিতে স্পষ্টতই বুঝাইতেছে যে, যে-ভূতবর্গ স্বয়ং ব্রহ্ম হইতে জাত সেই ভূতবর্গ হইতেই ইন্দ্রিয়াদি উৎপন্ন হইয়াছে। ছান্দোগ্যের এই প্রকরণেই বাগিন্দ্রিয়, প্রাণ ও মনের যথাক্রমে তেজঃ, জল ও ক্ষিতি হইতে উৎপত্তি পঠিত হইতেছে, যথা-

'অন্নময়ং হি সোম্য মন আপোময়ঃ প্রাণস্তেজোময়ী বাক্'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।৫।৪)

"হে সৌম্য, মন অন্নের বিকার (-কার্য্য), প্রাণ জলের বিকার এবং বাগেন্দ্রিয় তেজের বিকার" ইত্যাদি। এইস্থলে ক্ষিত্যাদি পরম্পরাতে প্রাণসকলের (-মুখ্য প্রাণ ও ইন্দ্রিয়সকলের) ব্রহ্মকার্য্যতাই সিদ্ধ হয়।........

Saturday, 25 December 2021

নর্মদাষ্টকং স্তোত্র

 


|| শ্রী গণেশায় নমঃ ||

সবিন্দুসিন্ধুসুস্খলত্তরঙ্গভঙ্গরঞ্জিতং

দ্বিষৎসু পাপজাতজাতকাদিবারিসংয়ুতম্ ।

কৃতান্তদূতকালভূতভীতিহারিশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||১||

ভাবার্থ - হে সুখদায়িনি, ( তোমার ) তরঙ্গভঙ্গ, বিন্দু এবং সিন্ধু ( নদীপ্রবাহ ) চুম্বিত দৃষৎ অর্থাৎ শিলাতটে আস্ফালিত হয়ে যার শোভা সম্পাদন করেছে, যা পাপরাশিবিনাশিনী ও পুনর্জন্মনিবারিণী তোমারই বারিধারার বিধৌত, যা প্রাণিগণের কৃতান্তদূতভীতি এবং মৃত্যুভীতি নিবারণ করে, দেবি নর্মদে তোমার সেই চরণকমলে আমি প্রণাম করছি ।

[ নর্মদাপ্রপাতস্থলে উপরিভাগে শিলাখণ্ড-স্খলিত জলবিন্দু যে শুত্র কুসুমরাশি বর্ষণ করছে, অধোদেশে দুগ্ধাবর্তবৎ প্রবাহ, –পাষাণময় উভয় তটে আস্ফালিত তরঙ্গমালা তুলে যে আবেগে ছুটেছে, এই বন্দনায় তার স্বরূপ অভিব্যক্ত। দুঃখ এই, পাঠ-বিকৃতি, এই অর্থকে এত দিন ফুটিতে দেয় নাই ] ||১||

ত্বদম্বুলীনদীনমীনদিব্যসম্প্রদায়কং

কলৌ মলৌঘভারহারিসর্বতীর্থনায়কম্ ।

সুমৎস্যকচ্ছনক্রচক্রবাকচক্রশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||২||

ভাবার্থ - হে মৎস্য-শোভিত-সজল-তটশালিনি, হে কুম্ভীর-চক্রবাক- মণ্ডল-সুখদায়িনী, দেবি নর্মদে, –তোমার জলে যে সকল নগণ্য মীন লয় প্রাপ্ত হয়, তাদের দিব্য সম্পৎপ্রাপ্তি যার প্রসাদে হয়, কলিমল-রাশি-ভারহারি সর্বতীর্থ-নায়িকা তোমার সেই চরণকমলে নমস্কার করি ||২||

মহাগভীরনীরপূরপাপধূতভূতলং

ধ্বনৎসমস্তপাতকারিদারিতাপদাচলম্ ।

জগল্লয়ে মহাভয়ে মৃকণ্ডুসূনুহর্ম্যদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৩||

ভাবার্থ - হে দেবী, যৎসংসৃষ্ট মহাগভীর জলস্পর্শে পাপগ্রস্তভূতল পূত হয়েছে, যদীয় গর্জনপরায়ণ বারি নিখিলপাতকবিনাশী এৰং পর্বত বিদীর্ণ করে প্রবাহিত, ভীতিপ্রদ মহা প্রলয়কালে হে মার্কণ্ডেয় মুনির আশ্রয়দায়িনী, হে দেবী নর্মদে! তোমার সেই চরণকমলে নমস্কার ||৩||

গতং তদৈব মে ভয়ং ত্বদম্বু বীক্ষিতং যদা

মৃকণ্ডুসূনুশৌনকাসুরারিসেবিতং সদা ।

পুনর্ভবাব্ধিজন্মজং ভবাব্ধিদুঃখশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৪||

ভাবার্থ - হে দেবি, মার্কণ্ডেয়-শৌনকাদি মুনিগণ ও সুরগণের সদাসেবিত ভবদীয় বারি আমি যখন দর্শন করছি, তখনই পুনঃ সংসার-সাগরে জন্মজনিত ভয় গিয়েছে, ( অতএব ) হে ভবসমুদ্রদুঃখবারিণী হে দেবি নর্মদে, তোমার চরণকমলে নমস্কার করি ||৪||

অলক্ষ্যলক্ষকিন্নরামরাসুরাদিপূজিতং

সুলক্ষনীরতীরধীরপক্ষিলক্ষকূজিতম্ ।

বসিষ্ঠশিষ্টপিপ্পলাদিকর্দমাদিশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৫||

ভাবার্থ - হে বশিষ্ট-শিষ্ট-পিপ্পলাদ-কর্দমাদি মহর্ষিগণসুখদায়িনী, দেবি নর্মদে, অসংখ্য কিন্নর অমর ও অসুর প্রভৃতি পুজিত সুলক্ষণ নীরতীরস্থ লক্ষপক্ষিকুজনসুচিত তদীয় চরণকমলে নমস্কার করি ||৫||

সনৎকুমারনাচিকেতকশ্যপাত্রিষট্পদৈঃ

ধৃতং স্বকীয়মানসেষু নারদাদিষট্পদৈঃ ।

রবীন্দুরন্তিদেবদেবরাজকর্মশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৬||

ভাবার্থ - হে সূর্য চন্দ্র দেবরাজ ও রাজা রন্তিদেবের কর্মানুসারে সুখবিধায়িনী দেবি নর্মদে, সনৎকুমার, নাচিকেত, কশ্যপ, অত্রি প্রমুখ ঋষির ছয়টি আশ্রমস্থানে ও ভ্রমরসদৃশ নারদাদি মুনিগণের মানসমধ্যে স্থিত ত্বদীয় চরণকমলে নমস্কার করি ||৬||

অলক্ষলক্ষলক্ষপাপলক্ষসারসায়কং

ততস্তু জীবজন্তুতন্তুভুক্তিমুক্তিদায়কম্ ।

বিরিঞ্চিবিষ্ণুশঙ্করস্বকীয়ধামশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৭||

ভাবার্থ - হে ব্রহ্মলোক, বিষ্ণুলোক ও শিবলোক-সুখ-বিধায়িনী দেবি নর্মদে, অলক্ষ্য লক্ষ লক্ষ পাপ যার ভেদ্য-লক্ষ্য–সেইরপ শরস্বরূপে যিনি অবস্থিত, যিনি ভূচর জীব, খেচর জন্ত এবং গ্রাহ প্রভৃতি জলচরকেও ভোগ-মোক্ষ প্রদান করেনঃ তোমার সেই বিশাল চরণকমলে নমস্কার করি ||৭||

অহোঽমৃতং সমং শ্রুতং মহেশকেশজাতটে

কিরাতসূতবাড়বেষু পণ্ডিতে শঠে নটে ।

দুরন্তপাপতাপহারি সর্বজন্তুশর্মদে

ত্বদীয়পাদপঙ্কজং নমামি দেবি নর্মদে ||৮||

ভাবার্থ - হে সর্বজীবসুখবিধায়িনী দেবী নর্মদে, তোমার এই অমৃত ( জল ) গোদাবরীতটে, কিরাত, সূত ও বাড়ব জাতিতে এবং পণ্ডিত ও শঠে সর্বত্র সমান, এ শান্ত্রে শত হয়েছে, অতএব তোমার চরণকমলে নমস্কার করি ||৮||

ইদং তু নর্মদাষ্টকং ত্রিকালমেব যে সদা

পঠন্তি তে নিরন্তরং ন যান্তি দুর্গতিং কদা ।

সুলভ্যদেহদুর্লভং মহেশধামগৌরবং

পুনর্ভবা নরা ন বৈ বিলোকয়ন্তি রৌরবম্ ||৯||

ভাবার্থ - হে দেবি! যে ব্যক্তি প্রতিদিন প্রাতঃকালাদি সন্ধ্যাত্রয়ে ভক্তিপূর্বক এই নর্মদাষ্টক পাঠ করে, সে কখনো দুঃখভোগ করে না, এই নিত্য লভ্য দেহে দুর্লভ মহেশ্বরলোকের গৌরবলাভ করে, আর সেই ব্যক্তি পুনর্বার সংসারযাতনা ভোগ করে না এবং কখনও তার রৌরব নরকদর্শন হয় না ||৯||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ নর্মদাষ্টকং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য ভগবতঃ বিরচিত নর্মদাষ্টক স্তোত্র সমাপ্ত

 

Thursday, 9 December 2021

প্রলয়কালে সৃষ্টির বিপরীতক্রমে ভূতসকলের লয়ঃ-


অদ্বৈতবেদান্তে সৃষ্টিক্রম বিষয়ক ধারাবাহিক আলোচনায় আজকের আলোচ্য বিষয় প্রলয়ে উৎপত্তিক্রমের বৈপরীত্য। বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রের বিপর্যয়াধিকরণম্ এর প্রতিপাদ্য বিষয় প্রলয়কালে সৃষ্টির বিপরীতক্রমে ভূতবর্গ লয় প্রাপ্ত হয়। এখন প্রশ্ন হইতেছে- বিশ্বের প্রলয়ের সময় পদার্থসমূহ যে ব্রহ্মে লীন হয় তাহা কি সৃষ্টিকালীন ক্রমানুসারে না বিপরীতক্রমে? ভগবান সূত্রকার বাদরায়ণ সিদ্ধান্ত করিতেছেন-

বিপর্যয়েণ তু ক্রমোত উপপদ্যতে চ৷৷ ব্রহ্মসূত্র-২.৩.১৪

ভগবান ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য এই সূত্রের ভাষ্যে সিদ্ধান্ত করিতেছেন- সেহেতু আমরা বলিতেছি- প্রলয়ের ক্রম এই উৎপত্তিক্রম হইতে বিপরীতভাবেই হওয়া উচিত। যেহেতু লোকমধ্যে সেইপ্রকারই পরিদৃষ্ট হইতেছে, যে ক্রমে সোপানে আরূঢ় হয়, তাহার বিপরীতক্রমে অবরোহন করে। আর দেখাও যাইতেছে- মৃত্তিকা হইতে উৎপন্ন ঘট ও শরা প্রভৃতি বিলয়কালে মৃত্তিকাভাবই প্রাপ্ত হয়, আবার জল হইতে উৎপন্ন হিমশিলা প্রভৃতি বিলয়কালে মৃত্তিকাভাবই প্রাপ্ত হয়, ইত্যাদি। এইহেতু ইহা সঙ্গত যে, পৃথিবী জল হইতে উৎপন্ন হইয়া স্থিতিকাল অতীত হইলে জলে লয় প্রাপ্ত হইবে, আর জলও তেজঃ হইতে উৎপন্ন হইয়া তেজে লয় প্রাপ্ত হইবে। এই প্রকারে ক্রমশঃ সূক্ষ্ম ও সূক্ষ্মতর অনন্তর অনন্তর কারণে লয় প্রাপ্ত হইয়া সমস্ত কার্য্য-প্রপঞ্চ পরমকারণ ও পরমসূক্ষ্ম ব্রহ্মে বিলীন হয়, এইপ্রকার অবগত হইতে হইবে। যেহেতু নিজের কারণকে অতিক্রম দ্বারা কারণ এর কারণে কার্য্যের বিলয় ন্যায্য নহে। স্মৃতিতেও তত্তৎস্থলে-

জগত্প্রতিষ্ঠা দেবর্ষে পৃথিব্যপ্সু প্রলীয়তে৷ জ্যোতিষ্যাপঃ প্রলীৎন্তে জ্যোতির্বায়ৌ প্রলীয়তে'-(মহাভারত, শান্তিপর্ব-৩৩৯।২৯)

"হে দেবর্ষি, জগতের প্রতিষ্ঠা (উপাদান) পৃথিবী জলে প্রলীন হয়, জল তেজে প্রলীন হয়, তেজঃ বায়ুতে প্রলীন হয়", ইত্যাদি এইসকল স্থলে উৎপত্তিক্রমের বিপরীতভাবেই প্রলয়ের ক্রম প্রদর্শিত হইয়াছে।

উৎপত্তিক্রম কিন্তু ভুতসকলের উৎপত্তিতেই শ্রুত হইয়াছে বলিয়া প্রলয়েও গৃহীত হইতে পারে না। আর তাহা (—সেই শ্রৌত উৎপত্তিক্রম) অযোগ্য হওয়ায় প্রলয়কর্ত্তৃক আকাঙ্ক্ষিত হয় না, কার্য্য ধ্রিয়মাণ (—কারণাবলম্বনে বর্ত্তমান) থাকিলে কারণের প্রলয় নিশ্চয়ই সঙ্গত নহে, যেহেতু কারণের নাশ হইলে কার্য্যের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত নহে। কিন্তু কার্য্যের বিনাশ হইলে কারণের অবস্থান যুক্তিসঙ্গত, যেহেতু মৃত্তিকা প্রভৃতিতে এইপ্রকার পরিদৃষ্ট হয়।

Thursday, 25 November 2021

ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের দ্বারা যাঁহাকে কেহ আঘ্রাণ করিতে পারে না, পক্ষান্তরে যাঁহার নিমিত্ত ঘ্রাণেন্দ্রিয় স্ববিষয়াভিমুখে প্রেরিত হয়, তিনিই ব্রহ্মঃ-

                                    

ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের দ্বারা যাঁহাকে কেহ আঘ্রাণ করিতে পারে না, পক্ষান্তরে যাঁহার নিমিত্ত ঘ্রাণেন্দ্রিয় স্ববিষয়াভিমুখে প্রেরিত হয়, তুমি তাঁহাকে শুদ্ধ ব্রহ্ম বলিয়া জানিবে। সামবেদীয় কেন উপনিষদে বর্ণিত আছে-

যৎ প্রাণেন ন প্রাণিতি যেন প্রাণঃ প্রণীয়তে। তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি....-( কেন উপনিষৎ-১/৮)

শাঙ্কর ভাষ্যানুবাদঃ- ভগবান শঙ্করাচার্য ভাষ্যে বলিতেছেন- মনোবৃত্তি ও প্রাণবৃত্তির সহিত নাসারন্ধ্রে অবস্থিত পার্থিব প্রাণ অর্থাৎ ঘ্রাণেন্দ্রিয় দ্বারা যাঁহাকে (যে ব্রহ্মকে) লোকে গন্ধের মতো বিষয় করিতে পারে না, পক্ষান্তরে যে আত্মচৈতন্যজ্যোতিঃ দ্বারা অবভাসিতরূপে প্রাণ অর্থাৎ ঘ্রাণেন্দ্রিয় স্ববিষয়াভিমুখে প্রেরিত হইয়া থাকে তাঁহাই ব্রহ্ম।

 

Wednesday, 24 November 2021

পূর্ব্ব কার্য্যোপাধিক ব্রহ্ম উত্তর কার্য্যের কারণঃ-

অদ্বৈতবেদান্তের সৃষ্টিক্রম বিষয়ক ধারাবাহিক আলোচনায় আজকের আলোচ্য বিষয় হইল-পরমেশ্বরের ধ্যানের দ্বারাই সৃষ্টি-ক্রমের ধারা চলিতেছে। ব্রহ্মই আকাশাদির অন্তরাত্মারূপে বর্ত্তমান থাকিয়া পর পর সৃষ্টি রচনা করেন। ব্রহ্মেরই একমাত্র সৃষ্টিকর্ত্তার লক্ষণ আছে, আকাশাদির নাই। আকাশাদির স্রষ্টৃত্ব মূলত ব্রহ্মেরই কর্ত্তৃত্ব। বেদান্তমীমাংসা শাস্ত্রের তদভিধ্যানাধিকরণের প্রতিপাদ্য বিষয় পূর্ব্বকার্য্যরূপ উপাধিযুক্ত ব্রহ্ম হইতে উত্তরকার্য্যোৎপত্তি।

তদভিধ্যানাদেব তু তল্লিঙ্গাত্সঃ ৷৷ ব্রহ্মসূত্র ২.৩.১৩ ৷৷

ভগবান্ ভাষ্যকার শঙ্করাচার্য্য ভাষ্যে বলিতেছেন- এই আকাশাদি ভূতসকল কি নিজেই নিজের কার্য্যসকলকে সৃজন করে, অথবা পরমেশ্বরই সেই সেই স্বরূপে অবস্থানকরতঃ অভিধ্যান করিয়া সেই সেই কার্য্যকে সৃজন করেন, এইপ্রকার সন্দেহ হইলে, একপক্ষ বলেন-আকাশাদি ভূতসকল নিজেই নিজ নিজ কার্য্যকে সৃজন করে, কিভাবে?- যেহেতু 'আকাশ হইতে বায়ু উৎপন্ন হইল', 'বায়ু হইতে অগ্নি উৎপন্ন হইল'-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।১), ইত্যাদিরূপে স্বাতন্ত্র্য শ্রুত হইতেছে। কিন্তু স্বতন্ত্র অচেতন ভূতসকলের প্রবৃত্তি প্রতিষিদ্ধ হইয়াছে, তদুত্তরে তাহারা বলিতেছেন-ইহা দোষ নহে, যেহেতু 'সেই তেজঃ ঈক্ষণ করিলেন', 'সেই জল ঈক্ষণ করিলেন'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩,৪)-এই প্রকারে ভূতসকলের চৈতন্য শ্রুত হইতেছে।

এইপ্রকার অপসিদ্ধান্ত প্রাপ্ত হইলে কথিত হইতেছে, সেই পরমেশ্বরই সেই সেই স্বরূপে (-তত্তৎ ভূতরূপ উপাধিযুক্তরূপে) অবস্থান করিয়া অভিধ্যান (-ঈক্ষণ) করতঃ সেই সেই পরবর্ত্তী কার্য্যকে সৃষ্টি করেন। কোন প্রমাণ বলে? যেহেতু তদ্বোধক লিঙ্গপ্রমাণ আছে। সেই বিষয়ে শাস্ত্র এই-

'যঃ পৃথিব্যাং তিষ্ঠন্যঃ পৃথিব্যা অন্তরো যং পৃথিবী ন বেদ যস্য পৃথিবী শরীরং যঃ পৃথিবীমন্তরো যময়তি' -(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৩।৭।৩)

"যিনি পৃথিবীতে অবস্থান করেন, যিনি পৃথিবীর অভ্যন্তরবর্ত্তী, পৃথিবীদেবতা যাঁহাকে জানেন না, পৃথিবী যাঁহার শরীর, যিনি অভ্যন্তরে থাকিয়া পৃথিবীদেবতাকে নিয়মন করেন", ইত্যাদি এইজাতীয় শাস্ত্র অধ্যক্ষবিশিষ্ট ভূতসকলেরই প্রবৃত্তি প্রদর্শন করিতেছেন।

'সোকামযত বহু স্যাং প্রজাযেযেতি' ইতি প্রস্তুত্য, 'সচ্চ ত্যচ্চাভবৎ"-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।৬)

এইরূপে "তিনি কামনা করিয়াছিলেন-বহু হইব, প্রকৃষ্টরূপ উৎপন্ন হইব", এইরূপ আরম্ভ করিয়া "তিনি সৎ (-স্থুল) এবং ত্যৎ (-সূক্ষ্ম) হইলেন।' এবং

'তদাত্মানং স্বয়মকুরুত'-(তৈত্তিরীয় উপনিষৎ-২।৭)

"তিনি নিজেই নিজেকে এইরূপ করিয়াছিলেন", ইত্যাদি শ্রুতিসকল তাঁহারই সর্ব্বাত্মভাব প্রদর্শন করিতেছেন।

আর জল ও তেজের যে ঈক্ষণের কথা শ্রুতিতে বর্ণিত হইয়াছে, তাহাকে পরমেশ্বরের আবেশ (-অন্তর্যামিরূপে সম্বন্ধ) বশতঃই অবগত হইতে হইবে, যেহেতু-

'নান্যোতোস্তি দ্রষ্টা'-(বৃহদারণ্যক উপনিষৎ-৩।৭।২৩)

"ইঁহা হইতে ভিন্ন দ্রষ্টা কেহ নাই", এই প্রকারে অন্য ঈক্ষণকর্ত্তারও প্রতিষেধ হইয়াছে। আর যেহেতু-

'তদৈক্ষত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি'-(ছান্দোগ্য উপনিষৎ-৬।২।৩)

'"তিনি (-সেই সদ্রূপ পরমেশ্বর) ঈক্ষণ করিলেন-বহু হইব প্রকৃষ্টরূপে উৎপন্ন হইব", ইত্যাদি এইস্থলে সৎস্বরূপ ঈক্ষণকর্ত্তা (-পরমেশ্বর) প্রস্তাবিত হইয়াছেন।

 

দশশ্লোকীস্তুতি/সাম্বস্তুতিঃ অথবা সাম্বদশকম্

|| শিবোৎকর্ষদশশ্লোকীস্তুতিঃ ||

সাম্বো নঃ কুলদৈবতং পশুপতে সাম্ব ত্বদীয়া বয়ং

সাম্বং স্তৌমি সুরাসুরোরগগণাঃ সাম্বেন সংতারিতাঃ ।

সাম্বায়াস্তু নমো ময়া বিরচিতং সাম্বাৎপরং নো ভজে

সাম্বস্যানুচরোঽস্ম্যহং মম রতিঃ সাম্বে পরব্রহ্মণি ||১||

ভাবার্থ - সাম্ব অর্থাৎ অম্বিকা-সমম্বিত শিব আমাদের কুলদেব ; হে সাম্ব-পশুপতে, আমরা তােমারই ; আমি সাম্ব-তােমার স্তুতিবাদ করছি। ( যখন সাগরমন্থনকালে কালকুট উৎপন্ন হয়, তখন ) দেব, দানব ও সর্পগণ সাম্ব-তােমা কর্তৃক নিস্তারিত ( রক্ষিত ) হয়েছিলেন। সাম্ব-তােমার উদ্দেশ্যে আমার কৃত এই প্রণত সমর্পিত হোক। সাম্ব-তােমা হতে ভিন্ন আমি অন্য কারও আরাধনা করি না; আমি সাম্ব-তােমারই কিঙ্কর ; পরব্রহ্মরূপী সাম্ব তােমাতে আমার রতি ( অনুরাগ ) হোক। ( পদার্থবাচক প্রথমা সম্বোধনে প্রথম প্রভৃতি সাতটি বিভক্তি যোগে এই শ্লোকে স্তব করা হয়েছে ) ||১||

বিষ্ণ্বাদ্যাশ্চ পুরত্রয়ং সুরগণা জেতুং ন শক্তাঃ স্বয়ং

যং শম্ভুং ভগবন্বয়ং তু পশবোঽস্মাকং ত্বমেবেশ্বরঃ ।

স্বস্বস্থাননিয়োজিতাঃ সুমনসঃ স্বস্থা বভূবুস্তত-

স্তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||২||

ভাবার্থ - বিষ্ণু প্রভৃতি সুররন্দ ত্রিপুরাসুরকে স্বয়ং পরাভূত করতে অক্ষম হয়ে যে মহেশ্বরের ( শরণাগত হয়ে বলেছিলেন ) "ভগবন, আমরা পশুসদৃশ ; একমাত্র তুমিই আমাদের ঈশ্বর, এর পরে ( তােমারই শক্তিতে ত্রিপুরবিজয় হলে ) সুরগণ স্বস্বস্থানে নিয়োজিত হয়ে স্বস্থতা লাভ করেন, সেই পরব্রহ্ম সাম্ব-শিবে আমার মন আনন্দ সহকারে রত হোক ||২||

ক্ষোণী যস্য রথো রথাঙ্গয়ুগলং চন্দ্রার্কবিম্বদ্বয়ং

কোদণ্ডঃ কনকাচলো হরিরভূদ্বাণো বিধিঃ সারথিঃ ।

তূণীরো জলধির্হয়াঃ শ্রুতিচয়ো মৌর্বী ভুজঙ্গাধিপ-

স্তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৩||

ভাবার্থ - ( যখন ) ত্রিপুরাসুরের সহিত যুদ্ধ ঘটে, তখন বসুমতী যার রথ, চন্দ্ৰ-সূর্য্য রথের চক্রযুগল, কনকপৰ্বত সুমেরু শরাসন, শ্রীহরি শর, ব্ৰহ্মা সারথি, সাগর তূণীর, বেদসকল অশ্ব ও অনন্তদেব মৌর্ব্বী হয়েছিলেন, মদীয় চিত্ত সেই পরব্রহ্মরূপী সাম্ব-শঙ্করে সানন্দে রত হোক ||৩||

যেনাপাদিতমঙ্গজাঙ্গভসিতং দিব্যাঙ্গরাগৈঃ সমং

যেন স্বীকৃতমব্জসম্ভবশিরঃ সৌবর্ণপাত্রৈঃ সমম্ ।

যেনাঙ্গীকৃতমচ্যুতস্য নয়নং পূজারবিন্দৈঃ সমং

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৪||

ভাবার্থ - যিনি অনঙ্গের অঙ্গভস্ম দিবা অঙ্গরাগের সমান করেছেন, অর্থাৎ কন্দর্পদেবকে ভষ্মীভূত করে সেই বিভূতি দ্বারা স্বকীয় অঙ্গ বিলিপ্ত করেছেন ; যিনি ( রােষবশে ) কমলযােনি ব্ৰহ্মার একটি মস্তকচ্ছেদন করে কাঞ্চনপাত্রের সমান তা গ্রহণ করেছিলেন এবং ( একদা শ্রীহরি সহস্রসংখ্য পদ্ম দ্বারা অর্চনায় প্রবৃত্ত হয়ে একটি পদ্ম ন্যূন দর্শন করলে ) যিনি পূজোপহার পদ্মপুষ্পগুলির সঙ্গে হরির একটি নয়নকমল গ্রহণ করেছিলেন, সেই গৌরীসমবেত সাম্ব শঙ্করে মদীয় চিত্ত সানন্দে রত হোক ||৪||

গোবিন্দাদধিকং ন দৈবতমিতি প্রোচ্চার্য্য হস্তাবুভা-

বুদ্ধৃত্যাথ শিবস্য সন্নিধিগতো ব্যাসো মুনীনাং বরঃ ।

যস্য স্তম্ভিতপাণিরানতিকৃতা নন্দীশ্বরেণাভবৎ

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৫||

ভাবার্থ - একদা মুনিগণপ্রবর দ্বৈপায়ন "গােবিন্দ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দেবতা অন্য কেউ নাই" এই বাক্য উচ্চারণ পূর্ব্বক বাহুদ্বয় উত্তোলন করে শিব সকাশে সমাগত হলে যদীয় সেবক নন্দিকেশ্বর তার বাহুদ্বয় স্তম্ভিত করেছিলেন, সেই সাম্ব পরমব্রহ্মরূপী শঙ্করে মদীয় চিত্ত সানন্দে রত হোক ||৫||

আকাশশ্চিকুরায়তে দশদিশাভোগো দুকূলায়তে

শীতাংশুঃ প্রসবায়তে স্থিরতরানন্দঃ স্বরূপায়তে ।

বেদান্তো নিলয়ায়তে সুবিনয়ো যস্য স্বভাবায়তে

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৬||

ভাবার্থ - নভােমণ্ডল যার কেশপাশরূপে বিদ্যমান, দশদিক যার পট্টবসনস্বরূপ, চন্দ্ৰ যার পুষ্প-ভূষণস্বরূপ ; নিত্য আনন্দ যার স্বরূপ, বেদান্ত অর্থাৎ উপনিষৎ মধ্যে যিনি অধিষ্টিত, সুবিনয় যার স্বভাব, সেই সাম্ব পরব্রহ্মরূপী শঙ্করে মদীয় চিত্ত সানন্দে রত হোক ||৬||

বিষ্ণুর্যস্য সহস্রনামনিয়মাদম্ভোরুহৈরুদ্ধর-

ন্নেকোনোপচিতেষু নেত্রকমলং নৈজং পদাব্জদ্বয়ে ।

সম্পূজ্যাসুরসংহতিং বিদলয়ংস্ত্রৈলোক্যপালোঽভবৎ

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৭||

ভাবার্থ - যার সহস্র নামের একৈক নামে এক এক পদ্ম প্রদানে কৃতসঙ্কল্প শ্রীহরি, তা হতে একটি পদ্ম ন্যূন দেখে নিজ নয়নকমল উৎপাটন করত চরণকমলযুগল পূজা করায় অনুরনিকরকে দলিত করে ত্রিলােকপালকতা লাভ করেন,সেই গৌরীসমেত পরব্রহ্মরূপী শঙ্কর মদীয় চিত্তে সানন্দে রত হোন ||৭||

শৌরিং সত্যগিরং বরাহবপুষং পাদাম্বুজাদর্শনে

চক্রে যো দয়যা সমস্তজগতাং নাথং শিরোদর্শনে ।

মিথ্যাবাচমপূজ্যমেব সততং হংসস্বরূপং বিধিং

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৮||

ভাবার্থ - বিষ্ণু বরাহরূপ ধারণ করে পাতালপ্রদেশে যার বিরাট মূর্তির চরণকমলের সন্ধান পান নাই, আর সেই সত্য কথা প্রকাশ করাতে যিনি বিষ্ণুকে কৃপা পূর্ব্বক সমস্ত জগতের আধিপত্য প্রদান করেছিলেন, ব্রহ্মা হংসরূপ ধারণ করে ( উর্দ্ধে উত্থিত হয়ে ) যার ( বিরাটমূর্তি ) মস্তক দর্শন না হলেও দর্শন করেছি, এইরূপ মিথ্যা বলাতে যিনি তাকে সতত অপূজ্য করে দেন,–সাম্ব পরব্রহ্মরূপী সেই শঙ্করে মদীয় চিত্ত সানন্দে রত হোক ||৮||

যস্যাসন্ ধরণীজলাগ্নিপবনব্যোমার্কচন্দ্রাদয়ো

বিখ্যাতাস্তনবোঽষ্টধা পরিণতা নান্যত্ততো বর্ততে ।

ওঙ্কারার্থবিবেচনী শ্রুতিরিয়ং চাচষ্ট তুর্যং শিবং

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||৯||

ভাবার্থ - যার মূর্তি ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ, বােম, চন্দ্র, সুর্য, যজমান এই অষ্টধা পরিণত বলে কীর্তিত হয় ; ব্ৰহ্মাণ্ডে যা হতে অতিরিক্ত আর কোন বস্তুই নাই ; প্রণবের অর্থবিচারিণী শ্রুতি যাকে তুরীয় পুরুষ শিব বলে বর্ণন করেন, সেই উমাসহচর পরব্রহ্মরূপী শঙ্করে মদীয় চিত্ত সানন্দে রত হোক ||৯||

বিষ্ণুব্রহ্মসুরাধিপপ্রভৃতয়ঃ সর্বেঽপি দেবা যদা

সম্ভূতাজ্জলধের্বিষাৎপরিভবং প্রাপ্তাস্তদা সত্বরম্ ।

তানার্তান্ শরণাগতানিতি সুরান্যোঽরক্ষদর্ধক্ষণাৎ

তস্মিন্মে হৃদয়ং সুখেন রমতাং সাম্বে পরব্রহ্মণি ||১০||

ভাবার্থ - সমুদ্রমন্থনকালে সমুদ্র হতে কালকুট সমুৎপন্ন হলে শ্রীহরি, ব্ৰহ্মা ও ইন্দ্র প্রমুখ সুরবৃন্দ যখন সেই মহাবিষ হতে পরাভব প্রাপ্ত হলেন, তখন তাদেরকে কাতর ও শরণাপন্ন দর্শনে যিনি অর্দ্ধক্ষণমধ্যে ( সেই কালকুট পান করে ) সকলের রক্ষাবিধান করেছিলেন, সেই সাম্ব পরব্রহ্মরূপী শঙ্করে মদীয় চিত্ত সানন্দে রত হোক ||১০||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবৎপাদ কৃতৌ দশশ্লোকীস্তুতিঃ সম্পূর্ণং ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ্ শিষ্য শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য ভগবান্ বিরচিত দশশ্লোকীস্তুতিঃ সমাপ্ত।

 

Saturday, 13 November 2021

শ্রীবিষ্ণুপাদাদিকেশান্তস্তোত্রম্

লক্ষ্মীভর্তুর্ভুজাগ্রে কৃতবসতি সিতং যস্য রূপং বিশালম্

নীলাদ্রেস্তুঙ্গশৃঙ্গস্থিতমিব রজনীনাথবিম্বং বিভাতি ।

পায়ান্নঃ পাঞ্চজন্যঃ সদিতিসুতকুলত্রাসনৈঃ পূরয়ন্ স্বৈঃ

নিধ্বানৈর্নীরদৌঘ ধ্বনিপরিভবদৈরম্বরং কম্বুরাজঃ ||১||

ভাবার্থ - যার বিশাল শুভ্ররূপ শ্রীপতির ভূজাগ্রে অবস্থিত হয়ে নীলাচলের তুঙ্গ শৃঙ্গে অধিষ্ঠিত চন্দ্রমণ্ডলের ন্যায় শোভা পেয়ে থাকে, সেই শঙ্খরাজ পাঞ্চজন্য দৈত্যকুল-বিত্রাসন ঘনঘটা গর্জনবিজয়ী স্বীয় নির্ঘোষে গগনমণ্ডল পূর্ণ করতঃ আমাদেরকে রক্ষা করুন ||১||

আহুর্যস্য স্বরূপং ক্ষণমুখমখিলং সূরয়ঃ কালমেতম্

ধ্বান্তস্যৈকান্তমন্তং যদপি চ পরমং সর্বধাম্নাং চ ধাম ।

চক্রং তচ্চক্রপাণের্দিতিজতনুগলদ্রক্তধারাক্তধারম্

শশ্বন্নো বিশ্ববন্দ্যং বিতরতু বিপুলং শর্ম ঘর্মাংশুশোভম্ ||২||

ভাবার্থ - পণ্ডিতগণ ক্ষণ প্রভৃতি নিখিল কালকে যার স্বরূপ বলে থাকেন, এবং যিনি ধ্বান্তজালের একান্ত ধ্বংসকারী, সর্বতেজের পরম তেজঃ, দৈত্যগণ তনু বিগলিত রুধিরধারার রঞ্জিতধার, -চক্রপাণির সেই বিশ্ববন্দ্য চক্র আমাদেরকে বারংবার বিপুল সুখ প্রদান করুন ||২||

অব্যান্নির্ঘাতঘোরো হরিভুজপবনামর্শনাধ্মাতমূর্তেঃ

রস্মান্ বিস্মেরনেত্র ত্রিদশনুতিবচঃসাধুকারৈঃ সুতারঃ ।

সর্বং সংহর্তুমিচ্ছোররিকুল ভুবনং স্ফার বিস্ফার নাদঃ

সংয়ৎ কল্পান্তসিন্ধৌ শরসলিলঘটাবার্মুচঃ কার্মুকস্য ||৩||

ভাবার্থ - নারায়ণ-হস্তরূপ সমীরণের সঞ্চালনে যার মুর্তি টঙ্কার-মুখর, যিনি যুদ্ধরূপ প্রলয়সাগরে শরনিকররূপ বারিধারা-বর্ষণে মেঘতুল্য, সেই কার্মুক যেন নিখিল রিপুকুলস্থান-সংহারে অভিলাষী হয়ে নির্ঘাত-ঘাের, বৃহৎ হতে বৃহত্তর ধ্বনি করেছেন, বিস্ময়পূর্ণ-দৃষ্টি দেবগণের স্তববাক্যে ও সাধুবাদের সম্মেলনে উচ্চতর সেই ধ্বনি আমাদেরকে রক্ষা করুন ||৩||

জীমূতশ্যামভাসা মুহুরপি ভগবদ্বাহুনা মোহয়ন্তী

যুদ্ধেষূদ্ধূয়মানা ঝটিতি তটিদিবালক্ষ্যতে যস্য মূর্তিঃ ।

সোঽসিস্ত্রাসাকুলাক্ষত্রিদশরিপুবপুঃ শোণিতাস্বাদ তৃপ্তো

নিত্যানন্দায় ভূয়ান্ মধুমথন মনোনন্দনো নন্দকো নঃ ||৪||

ভাবার্থ - যার মূর্তি ঘনশ্যামকান্তি নারায়ণ বাহু দ্বারা যুদ্ধস্থলে পুনঃ পুনঃ সঞ্চালিত হয়ে মােহপ্রদায়িনী সৌদামিনীর ন্যায় ক্ষণতরে পরিদৃষ্ট হয়েছে, ভয়চকিত নেত্র দেবারিগণের শরীরশােণিতা স্বাদ-পরিতৃপ্ত, মধুসুদনের হৃদয়ানন্দ বিধায়ী সেই, নন্দক নামক অসি, আমাদের নিত্য আনন্দের হেতু হোন ||৪||

কম্রাকারা মুরারেঃ করকমলতলেনানুরাগাদ্গৃহীতা

সম্যগ্বৃত্তা স্থিতাগ্রে সপদি ন সহতে দর্শনং যা পরেষাম্ ।

রাজন্তী দৈত্যজীবাসবমদমুদিতা লোহিতালেপনার্দ্রা

কামং দীপ্তাংশুকান্তা প্রদিশতু দয়িতেবাস্য কৌমোদকী নঃ ||৫||

ভাবার্থ - মুরারি, অনুরাগ সহকার নিজ করকমলতলে যাকে গ্রহণ করেছেন যিনি সম্যগ্বৃতা ( সুশীল অথচ সুগঠিতা ), অগ্রে অবস্থিত হয়েও যিনি ক্ষণকালের জন্যও পরপুরুষ-( পুরুষান্তর এবং শত্রু ) দর্শন সহিতে পারেন না দৈত্যজীবন-সুরামদে আনন্দিত ( যে সুরা দৈতাগণের জীবন, অথচ দৈত্যগণের প্রাণই যে সুরাস্থানীয়, তার পানজনিত মত্ততায় আনন্দিতা ) লোহিতালেপনে ( কুঙ্কুমলেপনে অথচ শক্রগণের রক্তে লিপ্ত হয়ে ) আর্দ্রা, দীপ্তাংশুকান্তা ( উজ্জল- বন্ত্রপরিধানা অথচ উজ্জল কিরণে সুশোভিতা ), কমনীয়াকারা শোভমানা মুরারির দয়িতা-সদৃশী সেই কৌমোদকী-নাম্নী গদা আমাদের অভিলাষ পূর্ণ করুন ||৫||

যো বিশ্বপ্রাণভূতস্তনুরপি চ হরের্যানকেতুস্বরূপো

যং সঞ্চিন্ত্যৈব সদ্যঃ স্বয়মুরগবধূবর্গগর্ভাঃ পতন্তি ।

চঞ্চচ্চণ্ডোরু তুণ্ড ত্রুটিত ফণি বসারক্ত‌ পঙ্কাঙ্কিতাস্যম্

বন্দে ছন্দোময়ং তং খগপতিমমল স্বর্ণবর্ণং সুপর্ণম্ ||৬||

ভাবার্থ - যিনি বিশ্বের প্রাণস্বরূপ এবং নারায়ণের দ্বিতীয় মূর্তিস্বরূপ হয়েও তার রথের কেতুস্বরূপ, যাকে চিন্তা করামাত্র ভুজঙ্গরমণীগণের গর্ভ সন্তঃ স্বয়ং পতিত হয়, প্রচণ্ড-চঞ্চল-বিশাল-তুণ্ডাঘাতে বিদীর্ণ ভুজঙ্গগণের বসারক্ত পঙ্কে লাঞ্ছিতবদন নির্মল স্বর্ণবর্ণ সেই ছন্দোময় খগরাজ সুপর্ণকে বন্দনা করি ||৬||

বিষ্ণোর্বিশ্বেশ্বরস্য প্রবরশয়নকৃৎ সর্বলোকৈকধর্তা

সোঽনন্তঃ সর্বভূতঃ পৃথুবিমলয়শাঃ সর্ববেদৈশ্চ বেদ্যঃ ।

পাতা বিশ্বস্য শশ্বৎ সকলসুররিপুধ্বংসনঃ পাপহন্তা

সর্বজ্ঞঃ সর্বসাক্ষী সকলবিষভয়াৎ পাতু ভোগীশ্বরো নঃ ||৭||

ভাবার্থ - বিশ্বেশ্বর বিষ্ণুর উৎকৃষ্ট শয়নীয়-সম্পাদক, সর্বলােকের অদ্বিতীয় ধারণকর্তা, সর্ববেদবেদ্য, বিশাল নির্মল কীর্ত্তিসম্পন্ন, বিশ্বরক্ষক, বারংবার নিখিল সুরারিগণের বিনাশক, পাপহন্তা, সর্বজ্ঞ, সর্বসাক্ষী, সর্বস্বরপ সেই ভুজঙ্গরাজ অনন্ত আমাদেরকে নিখিল বিধভয় হতে রক্ষা করুন ||৭||

বাগ্ভূগৌর্যাদিভেদৈর্বিদুরিহ মুনয়ো যাং যদীয়ৈশ্চ পুংসাং

কারুণ্যার্দ্রৈঃ কটাক্ষৈ সকৃদপি পতিতৈ সম্পদঃ স্যু সমগ্রাঃ।

কুন্দেন্দু স্বচ্ছমন্দ স্মিত মধুর মুখাম্ভোরুহাং সুন্দরাঙ্গীম্

বন্দে বন্দ্যামসেষৈরপি মুরভিদুরোমন্দিরামিন্দিরাং তাম্ ||৮||

ভাবার্থ - মুনিগণ যাকে বাগদেবী, ভূমি এবং গৌরী প্রভৃতি মূর্তিভেদ-সম্পন্না বলে ইহ-জগতে অবগত আছেন, যদীয় করুণার্দ্র মহনীয় কটাক্ষ একবার মাত্র নিপতিত হলেও পুরুষদের সমগ্র সম্পৎ লাভ হয়ে থাকে, কুন্দেন্দু সুন্দর মৃদুমন্দ ঈষৎ হাস্যে মনােহর বদনকমলা, সুন্দরাঙ্গী, অশেষজন বন্দনীয়া মুরারিবক্ষঃস্থলবাসিনী সেই ইন্দিরা দেবীকে বন্দনা করি ||৮||

যা সূতে সত্যজালং সকলমপি সদা সন্নিধানেন পুংসো

ধত্তে যা তত্ত্বয়োগাচ্চরমচরমিদং ভূতয়ে ভূতজাতম্ ।

ধাত্রীং স্থাত্রীং জনিত্রীং প্রকৃতিমবিকৃতিং বিশ্বশক্তিম্বিধাত্রীম্

বিষ্ণোর্বিশ্বাত্মনস্তাং বিপুলগুণময়ীং প্রাণনাথাং প্রণৌমি ||৯||

ভাবার্থ - যিনি পুরুষের ( পরমাত্মার ) সান্নিধ্য বশতঃ সদা নিখিল বস্তু প্রসব করেন, যিনি মহদাদি তত্ত্বাযোগে এই চরাচর ভূতসমূহকে ধারণ করেন, ধাত্রী বিশ্বাত্ম বিষ্ণুর বিপুলগুণময়ী প্রাণাধীশ্বরী সর্ববিধানদক্ষা মাতৃস্বরূপা চিরস্থিরা সেই বিশ্বশক্তি অবিকৃতপ্রকৃতিকে সম্পদের জন্য স্তব করি ||৯||

যেভ্যোঽসূয়দ্ভিরুচ্চৈঃ সপদি পদমুরু ত্যজ্যতে দৈত্যবর্গৈ

র্যেভ্যো ধর্তুং চ মূর্ধ্না স্পৃহয়তি সততং সর্বগীর্বাণবর্গঃ ।

নিত্যং নির্মূলয়েয়ুর্নিচিততরমমী ভক্তিনিঘ্নাত্মনাং নঃ

পদ্মাক্ষস্যাঙ্ঘ্রিপদ্মদ্বয়তলনিলয়াঃ পাংসবঃ পাপপঙ্কম্ ||১০||

ভাবার্থ - দৈত্যবর্গ যাদের প্রতি অসূয়া হেতু অবিলম্বে নিজ নিজ স্বীয় উচ্চ মহৎ পদ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়,সমস্ত দেবগণ মস্তকে ধারণ করার জন্য যে সকলের প্রতি সদা স্পৃহা-সম্পন্ন, পুণ্ডরীকাক্ষের চরণকমলযুগলতল নিলীন সেই রেণুরাজি ভক্তিপরতন্ত্রচেতা আমাদের অতিপূর্বসঞ্চিত পাপ পঙ্ককে যেন নিত্য নির্ম্মূল করেন ||১০||

রেখা লেখাদিবন্দ্যাশ্চরণতলগতাশ্চক্রমৎস্যাদিরূপাঃ

স্নিগ্ধাঃ সূক্ষ্মাঃ সুজাতা মৃদুললিততরক্ষৌমসূত্রায়মাণাঃ।

দদ্যুর্নো মঙ্গলানি ভ্রমরভরজুষা কোমলেনাব্ধিজায়াঃ

কম্রেণাম্রেড্যমানাঃ কিসলয়মৃদুনা পাণিনা চক্রপাণেঃ ||১১||

ভাবার্থ - ক্ষীরােদ-সম্ভবার অলিকুল সেবিত কিশলয় কোমল কমনীয়- কর-সংবাহনে পুনঃ পুনঃ স্পৃষ্ট, দেবাদি-বন্দনীয়, মৃদু-ললিত-ক্ষৌম-সূত্রসদৃশ সু্ক্ষ্ম, স্নিগ্ধ, সুজাত, চক্রপাণি চরণস্থ কমনীয় চক্র-মৎস্যাদি রেখা-সমূহ যেন আমাদেরকে মঙ্গল বিতরণ করেন ||১১||

যস্মাদাক্রামতো দ্যাং গরুড়মণিশিলাকেতুদণ্ডায়মানাৎ

আশ্চ্যোতন্তী বভাসে সুরসরিদমলা বৈজয়ন্তীব কান্তা ।

ভূমিষ্ঠো যস্তথান্যো ভুবনগৃহবৃহৎস্তম্ভশোভাং দধৌ নঃ

পাতামেতৌ পয়োজোদরললিততলৌ পঙ্কজাক্ষস্য পাদৌ ||১২||

ভাবার্থ - মরকতমণিময় ধ্বজদণ্ড সদৃশ যে চরণ স্বর্গ আক্রমণে উত্থিত হলে, তা হতে নির্মলা সুরধুনী ক্ষরিত হয়ে কমনীয়া বৈজয়ন্তীর ( পতাকার ) হযায় শােভা পেয়েছিলেন, আর যে অপর চরণ ভূতলব্যাপী হয়ে ভুবনমণ্ডলরূপ গৃহের স্তম্ভবৎ শােভাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, পুণ্ডরীকাক্ষের কমল- গর্ভ-মনােহর-তল-সম্পন্ন সেই চরণদ্বয় আমাদেরকে রক্ষা করুন ||১২||

আক্রামদ্ভ্যাং ত্রিলোকীমসুরসুরপতী তৎক্ষণাদেব নীতৌ

যাভ্যাং বৈরোচনীন্দ্রৌ যুগপদপি বিপৎ সম্পদোরেকধাম।

তাভ্যাং তাম্রোদরাভ্যাং মুহুরহমজিতস্যাঞ্চিতাভ্যামুভাভ্যাম্

প্রাজ্যৈশ্বর্যপ্রদাভ্যাং প্রণতিমুপগতঃ পাদপঙ্কেরুহাভ্যাম্ ||১৩||

ভাবার্থ - যারা ত্রৈলােক্য আক্রমণ করে তৎক্ষণাৎ অসুররাজ বলি এবং সুররাজ ইন্দ্রকে যুগপৎ ( যথাক্রমে ) বিপত্তি ও সম্পত্তির একাধিকারী করেছিলেন, তামর-তল-মনােহর প্রভূত ঐশ্বর্যপ্রদ সর্বলােক-পুজিত সেই নারায়ণ- চরণকমলযুগলে আমি বারংবার প্রণাম করছি ||১৩||

যেভ্যো বর্ণশ্চতুর্থশ্চরমত উদভূদাদিসর্গে প্রজানাম্

সাহস্রী চাপি সংখ্যা প্রকটমভিহিতা সর্ববেদেষু যেষাম্ ।

প্রাপ্তা বিশ্বম্ভরা যৈরতিবিতততনোর্বিশ্বমূর্তের্বিরাজো

বিষ্ণোস্তেভ্যো মহদ্ভ্যঃ সততমপি নমোস্ত্বংঘ্রি পঙ্কেরুহেভ্যঃ ||১৪||

ভাবার্থ - প্রজাগণের আদিসৃষ্টি কালে, যে সমস্ত হতে শেষে চতুর্থ বর্ণ উদ্ভূত, সর্ব্ববেদে যাদের সহস্রসংখ্যা স্পষ্ট ভাবে কথিত, যারা ভূমণ্ডলকে ব্যাপ্ত করেছেন, অতি বিশালকায় বিশ্বমূর্তি বিরাট পুরুষ বিষ্ণু সেই মহৎ শ্রীচরণকমলনিকরের উদ্দেশে আমার সতত নমস্কার ||১৪||

বিষ্ণোঃ পাদদ্বয়াগ্রে বিমলনখমণিভ্রাজিতা রাজতে যা

রাজীবস্যেব রম্যা হিমজলকণিকালঙ্কৃতাগ্রা দলালী ।

অস্মাকং বিস্ময়ার্হাণ্যখিলজন মনঃ প্রার্থনীয়া হি সেয়ম্

দদ্যাদাদ্যানবদ্যা ততিরতিরুচিরা মঙ্গলান্যঙ্গুলীনাম্ ||১৫||

ভাবার্থ - যিনি শ্রীবিষ্ণুর চরণযুগলের অগ্রভাগে, নির্মল নখপ্রভায় উদ্ভাসিত হয়ে হিমজলকণিকা-ভূষিতাগ্র রমণীয় কমলদলনিকরবৎ শােভা পাচ্ছেন; অখিল-জন-মনঃ-প্রার্থনীয়, জগৎসৃষ্টির পূর্বে প্রকাশিত সেই নির্দোষ অঙ্গুলিরাজি আমাদের বিশ্ময়কর কল্যাণ পরস্পরা যেন প্রদান করেন ||১৫||

যস্যাং দৃষ্ট্বামলায়াং প্রতিকৃতিমমরাঃ সম্ভবন্ত্যানমন্তঃ

সেন্দ্রাঃ সান্দ্রীকৃতের্ষ্যাস্ত্বপরসুরকুলাশঙ্কয়াতঙ্কবন্তঃ ।

সা সদ্যঃ সাতিরেকাং সকলসুখকরীং সম্পদং সাধয়েন্নঃ

চঞ্চচ্চার্বংশুচক্রা চরণনলিনয়োশ্চক্রপাণের্নখালী ||১৬||

ভাবার্থ - ইন্দ্রসমন্বিত দেবগণ প্রণাম করার সময়ে, নির্মলতা হেতু যার ভিতরে নিজ নিজ প্রতিবিম্ব দর্শনে, অপর দেবতাগণের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কা হওয়ায় প্রগাঢ় ঈর্ষ্যা সহ আতঙ্ক প্রাপ্ত হয়েন, মনােহর-কিরণাবলি-প্রসারিণী, চক্রপাণির পদকমলবিরাজিত সেই নখররাজি আমাদের সর্বসুখবিধায়িনী অত্যধিক সম্পদ অবিলম্বে সম্পন্ন করুন ||১৬||

পাদাম্ভোজন্মসেবাসমবনতসুরব্রাতভাস্বৎকিরীট-

প্রত্যুপ্তোচ্চাবচাশ্ম প্রবরকরগণৈশ্চিত্রিতং যদ্বিভাতি ।

নম্রাঙ্গানাং হরের্নো হরিদুপলমহাকূর্মসৌন্দর্যহারি-

চ্ছায়ং শ্রেয়ঃপ্রদায়ি প্রপদয়ুগমিদং প্রাপয়েৎ পাপমন্তম্ ||১৭||

ভাবার্থ - চরণকমল-সেবার্থ প্রণত দেববৃন্দের উজ্জ্বল কিরীট-নিবন্ধ বিবিধ উৎকৃষ্ট মণিময়ুখজালে বিবিধ বর্ণ খারণ করতঃ যিনি শােভা পেয়ে থাকেন, মরকতমণিময় মহাকৃুর্মপৃষ্টের ন্যায় সুশ্রী সুঠাম সেই শ্রেয়ঃপ্রদ শ্রীহরি- প্রপদযুগল, নম্রকায় আমাদের যেন পাপসমূহ বিনাশ করেন ||১৭||

শ্রীমত্যৌ চারুবৃত্তে করপরিমলনানন্দহৃষ্টে রমায়াঃ

সৌন্দর্যাঢ্যেন্দ্রনীলোপলরচিতমহাদণ্ডয়োঃ কান্তিচোরে ।

সূরীন্দ্রৈঃ স্তূয়মানে সুরকুলসুখদে সূদিতারাতিসঙ্ঘে

জঙ্ঘে নারায়ণীয়ে মুহুরপি জয়তামস্মদংহো হরন্ত্যৌ ||১৮||

ভাবার্থ - উৎকৃষ্ট শ্রীসম্পন্ন, সুবৃত্ত ( সুগােল ) লক্ষ্মীকরকমল সম্পাদিত সংবাহন-সুখে রােমাঞ্চিত, ইন্দ্রনীল-মণিরচিত সুন্দর মহাদগুযুগলের কান্তিহরণকারী, সুরিশ্রেষ্ঠগণের স্তুতিভাজন, অরাতিসঙ্ঘবিজয়ী, সুরকুলমুখদায়ী নারায়ণজঙ্ঘা- যুগল বারংবার আমাদের পাপহরণ করতঃ জয়যুক্ত হোন ||১৮||

সম্যক্সাহ্যং বিধাতুং সমমিব সততং জঙ্ঘয়োঃ খিন্নয়োর্যে

ভারভূতোরুদণ্ডদ্বয়ীভরণকৃতোত্তম্ভভাবং ভজেতে ।

চিত্তাদর্শং নিধাতুং মহিতমিব সতাং তে সমুদ্গায়মানে

বৃত্তাকারে বিধত্তাং হৃদি মুদমজিতস্যানিশং জানুনী নঃ ||১৯||

ভাবার্থ - যারা ( উরুভারবহনে ) খিন্ন জঙ্ঘাযুগলের সতত সমভাবে সম্যক সহায়তা করার জন্যই যেন উরুদণ্ডযুগলভার বহন করে স্তব্ধভাব প্রাপ্ত হয়েছেন, এবং যারা সজ্জনগণের প্রশংসনীয় মনােদর্পণ স্থাপনের সম্পুটক তুল্য, অজিতের ( নারায়ণের ) সেই বৃত্তাকার জানুদ্বয় আমাদের হৃদয়ে সতত আনন্দবিধান করুন। [ মণিদর্পণ বড় আকারের কৌটামধ্যে রাখার ব্যবস্থা ছিল। এখানে ভক্ত কবি, জঙ্ঘা ও উরুর মধ্যস্থিত জানুর ( হাঁটুর ) বর্ণনায় উৎপ্রেক্ষা করে বললেন, প্রভুর ঐ যে সুঠাম জানু, ওটা জানু নয়, বড় আকারের কৌটা, উপরে তারাই ঢাকুনি দেখা যায়। ঐ কৌটার ভিতরে একখানি উৎকৃষ্ট গােলাকৃতি মণিদর্পণ আছে ; সজ্জনগণের মনই সেই দৰ্পণ। এটাই তৃতীয় চরণের ভাবার্থ]

দেবো ভীতিং বিধাতুঃ সপদি বিদধতৌ কৈটভাখ্যং মধুঞ্চা-

প্যারোপ্যারূঢ়গর্বাবধিজলধি যয়োরাদিদৈত্যৌ জঘান ।

বৃতাবন্যোন্যতুল্যৌ চতুরমুপচয়ং বিভ্রতাবভ্রনীলৌ

ঊরূ চারূ হরেস্তৌ মুদমতিশয়িনীং মানসে নো বিধত্তাম্ ||২০||

ভাবার্থ - সহসা ব্রহ্মার ভীতি সম্পাদক, গর্বিত আদি-দৈত্য মধু ও কৈটভকে দেব নারায়ণ যথায় রেখে জলধিমধ্যে নিহত করেছিলেন, সুবৃত্ত ( সুগোল ) পরস্পরতুল্য উপযুক্ত উপচয়প্রাপ্ত শ্রীহরির সেই সুচারু উরুযুগল আমাদের হরে অধিকতর আনন্দবিধান করুন ||২০||

পীতেন দ্যোততে যচ্চতুর পরিহিতেনাম্বরেণাত্যুদারম্

জাতালঙ্কারয়োগং জলমিব জলধের্বাড়বাগ্নি প্রভাভিঃ ।

এতৎ পাতিত্যদান্নো জঘনমতিঘনাদেনসো মাননীয়ম্

সাতত্যেনৈব চেতোবিষয়মবতরৎপাতু পীতাম্বরস্য ||২১||

ভাবার্থ - যিনি, নিপুণভাবে পরিহিত পীতবর্ণ অম্বর দ্বারা বাড়বাগ্নি প্রভাভূষিত জলধিজলের ন্যায় অতি উত্তমরূপে শােভা পেয়ে থাকেন, পীতাম্বরের এই সেই মাননীয় জঘন আমাদের হৃদয়ে সতত উপস্থিত হইয়া পাতিতাপ্রদ অতি নিবিড় পাপরাশি হতে আমাদেরকে রক্ষা করুন ||২১||

যস্যা দাম্না ত্রিধাম্নো জঘনকলিতয়া ভ্রাজতেঽঙ্গং যথাব্ধেঃ

মধ্যস্থো মন্দরাদ্রির্ভুজগপতিমহাভোগসম্নদ্ধমধ্যঃ ।

কাঞ্চী সা কাঞ্চনাভা মণিবর কিরণৈরুল্লসদ্ভিঃ প্রদীপ্তা

কল্যাং কল্যাণদাত্রী মম মতিমনিশং কম্ররূপা করোতু ||২২||

ভাবার্থ - যদীয় দাম অর্থাৎ গােছা জঘনদেশে ধারণ করায় ত্রিধামা নারায়ণের দেহ, নাগরাজের মহাভােগে আবদ্ধ-নিতম্ব ক্ষীরোদসমুদ্রমধ্যস্থ মন্দর পর্বতের ন্যায় শােভা পেয়ে থাকেন, উল্লসিত মণিবরকিরণজালে উদ্দীপ্ত সেই কমনীয়কান্তি কাঞ্চনবর্ণা কাঞ্চী ( কটিভূষণ ) নিরন্তর কল্যাণদাত্রী হয়ে আমার বুদ্ধিকে নিরাময় করুন ||২২||

উন্নম্রং কম্রমুচ্চৈরুপচিতমুদভূদ্ যত্র পত্রৈর্বিচিত্রৈঃ

পূর্বং গীর্বাণপূজ্যং কমলজমধুপস্যাস্পদং তৎপয়োজম্।

যস্মিন্নীলাশ্মনীলৈস্তরলরুচিজলৈঃ পূরিতে কেলিবুদ্ধ্যা

নালীকাক্ষস্য নাভীসরসি বসতুনশ্চিত্তহংসশ্চিরায় ||২৩||

ভাবার্থ - সৃষ্টির প্রথমাবন্থায় বিচিত্র-দলপূর্ণ, কমনীয়, উন্নত, চতুরানন মধুকরের আসন, দেবগণ-পূজ্য সেই পদ্ম, যথায় উদ্ভূত ড়য়েছিল, নীলকান্তমণির ন্যায় নীলবর্ণ মেখলা-মধ্যমণির কান্তি-সলিলে পরিপূর্ণ পুণ্ডরীকাক্ষের সেই নাভি সরােবরে আমাদের চিত্তরূপী হংস, কেলিবােধে চিরতরে বাস করুক ||২৩||

পাতালং যস্য নালং বলয়মপিদিশাং পত্রপংক্তির্নগেন্দ্রান্

বিদ্বাংসঃ কেসরালীর্বিদুরিহ বিপুলাং কর্ণিকাং স্বর্ণশৈলম্ ।

ভূয়াৎ গায়ৎ স্বয়ম্ভূ মধুকরভবনং ভূময়ং কামদং নো

নালীকং নাভিপদ্মাকর ভবমুরু তন্নাগশয়্যস্য শৌরেঃ ||২৪||

ভাবার্থ - পাতালকে যার নাল বলে, দিঙ্মণ্ডলকে দলসমূহ বলে, শ্রেষ্ঠ পর্বতদিগকে কেসরাবলি বলে এবং সুমেরু পর্ব্বতকে বিপুল কর্ণিকা বলে জগতের পণ্ডিতগণ জ্ঞাত আছেন, বেদগানরত ব্ৰহ্মা যথায় গুঞ্জনপরায়ণ ভ্ৰমরব নিষণ্ন, ভুজঙ্গশয্যায় শয়ান নারায়ণের নাভিকমলসম্ভূত সেই ভূমণ্ডলরূপ মহৎপদ্ম আমাদের অভীষ্টসাধন করুন ||২৪||

আদৌ কল্পস্য যস্মাৎ প্রভবতি বিততং বিশ্বমেতদ্বিকল্পৈঃ

কল্পান্তে যস্য চান্তঃ প্রবিশতি সকলং স্থাবরং জঙ্গমঞ্চ ।

অত্যন্তাচিন্ত্যমূর্তেশ্চিরতরমজিতস্যান্তরিক্ষস্বরূপে

তস্মিন্নস্মাকমন্তঃকরণমতিমুদা ক্রীড়তাৎ ক্রোড়ভাগে ||২৫||

ভাবার্থ - কল্পের প্রারম্ভে এই বিকল্পূর্ণ বিশাল বিশ্ব যা হতে উদ্ভূত হয়, আর কল্পান্তে সকল স্থাবর-জঙ্গম যার অন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে থাকে, অত্যন্ত অচিন্তামূর্তি অজিতের ( নারায়ণের ) আকাশরূপ সেই ক্রোড়ভাগে ( উদরের একাংশে ) আমাদের অন্তঃকরণ অতি আনন্দ সহকারে চিরতরে ক্রীড়া করুক ||২৫||

কান্ত্যম্ভঃ পূরপূর্ণে লসদসিতবলীভঙ্গভাস্বত্তরঙ্গে

গম্ভীরাকারনাভী চতুরতর মহাবর্তশোভিন্যুদারে ।

ক্রীড়ত্বানদ্ধহেমোদরনহনমহাবাড়বাগ্নিপ্রভাঢ্যে

কামং দামোদরীয়োদরসলিলনিধৌ চিত্তমৎস্যশ্চিরং নঃ ||২৬||

ভাবার্থ - কান্তিসলিলে পরিপূর্ণ, ( মরকতমণির ন্যায় ) মনােহর নীলবর্ণ ত্রিবলীতরঙ্গে শােভিত, গম্ভীরাকার অতিসুন্দর নাভিস্বরূপ বিশাল আবর্তে বিরাজিত, সুবর্ণময় উদরবন্ধরূপ ( উদরবৃদ্ধি নিবারণের জন্য দেশবিশেষে ব্যবহৃত রজ্জু আকারে নির্মিত অলঙ্কার উদরবন্ধ নামে কথিত ) বাড়বানল প্রভায় উদ্ভাসিত, সুচারুদর্শন, নারায়ণের উদর-রূপ-সমুদ্রে আমাদের চিত্ত-মৎস্য চিরকাল ক্রীড়া করুক ||২৬||

নাভীনালীকমূলাদধিকপরিমলোন্মোহিতানামলীনাং

মালানীলেব যান্তী স্ফুরতি রুচিমতী বক্ত্রপদ্মোন্মুখী যা ।

রম্যা সা রোমরাজির্মহিতরুচিকরী মধ্যভাগস্য বিষ্ণোঃ

চিত্তস্থা মা বিরংসীচ্চিরতরমুচিতাং সাধয়ন্তী শ্রিয়ং নঃ ||২৭||

ভাবার্থ - নাভিকমল হতে অধিক পরিমল-লােভমুগ্ধ হয়ে মুখকমলাভিমুখে উত্থিত রুচির কৃষ্ণবর্ণ-ভ্ৰমরপঙ্ক্তির ন্যায় যিনি শােভা পাচ্ছেন, জগৎপূজিত ( দেবখষি ) গণের আকাঙ্ক্ষিত নারায়ণ-মধ্যাঙ্গ বিরাজিত সেই রমণীয় রােমাবলি আমাদের মনে অবস্থান করে চিরতরকাল স্থায়ী উপযুক্ত ঐশ্বর্য্য সম্পাদন কার্য্য হতে যেন বিরত না হয়েন। ভাবার্থ,নারায়ণের নাভিস্থান হতে বক্ষ:স্থল পর্য্যন্ত উত্থিত যে রােমাবলি, তাতে কবির উৎপ্রেক্ষা এই যে, নাভিপদ্মে স্থিত অলিপুঞ্জ মুখকমলের অধিক সুগন্ধে লুব্ধ হয়ে শ্রেণীবদ্ধভাবে উপরে উঠছে, রােমাবলি তারই রূপ ||২৭||

সংস্তীর্ণং কৌস্তুভাংশুপ্রসরকিসলয়ৈর্মুগ্ধমুক্তাফলাঢ্যম্

শ্রীবৎসোল্লাসি ফুল্লপ্রতিনববনমালাঙ্কি রাজদ্ভুজান্তম্ ।

বক্ষঃ শ্রীবৃক্ষকান্তং মধুকরনিকরশ্যামলং শার্ঙ্গপাণেঃ

সংসারাধ্বশ্রমার্তৈরুপবনমিব যৎ সেব্যতে তৎ প্রপদ্যে ||২৮||

ভাবার্থ - নবপল্লব সদৃশ কৌস্তভমণি কিরণজালে আকীর্ণ, রমণীয় মুক্তাফল-সম্পন্ন শ্রীবৎস-শােভিত নব নব প্রফুল্প বনমালা অঙ্কিত ভুজান্ত বিরাজিত শ্রীবৃক্ষকান্ত মধুকর-নিকর-শ্যামল, যে নারায়ণ বক্ষঃস্থলকে সংসার-কান্তার-ভ্রমণ-শ্রমার্তগণ উপবনবৎ সেবা করেন, আমি তার প্রপন্ন হচ্ছি ||২৮||

কান্তং বক্ষো নিতান্তং বিদধদিবগলং কালিমা কালশত্রো

রিন্দোর্বিম্বং যথাঙ্কো মধুপ ইব তরোর্মঞ্জরীং রাজতে যঃ ।

শ্রীমান্নিত্যং বিধেয়াদবিরলমিলিতঃ কৌস্তুভশ্রীপ্রতানৈঃ

শ্রীবৎসঃ শ্রীপতেঃ স শ্রিয় ইব দয়িতো বৎস উচ্চৈঃশ্রিয়ং নঃ ||২৯||

ভাবার্থ - নীলিমা যেমন মৃত্যুঞ্জয়ের কণ্ঠদেশকে বিশেষ শােভাযুক্ত করেছে, কলঙ্ক যেমন চন্দ্রবিম্বকে অধিক শােভাসম্পন্ন করেছে, ভ্রমর যেমন তরুকুসুমমঞ্জরীকে অধিক শােভাযুক্ত করে, যিনি কৌস্তুভমণি-প্রভা-সমূহের সহিত নিরন্তর মিলিত থেকে শ্রীপতির বক্ষঃস্থলকে সেইরূপ অধিকতর শােভান্বিত করছেন, শ্রীর ( সর্বশােভাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মীদেবীর ) প্রিয় পুত্রতুল্য সেই শ্রীবৎস ( মণিবিশেষ, মতান্তরে রোমাবর্ত, অন্যমতে ভৃগুপদচিহ্ন ) আমাদের উচ্চ সম্পৎ সম্পাদন করুন ||২৯||

সম্ভূয়াম্ভোধিমধ্যাৎসপদি সহজয়া যঃ শ্রিয়া সংন্নিধত্তে

নীলে নারায়ণোরঃস্থলগগনতলে হারতারোপসেব্যে ।

আশাঃ সর্বাঃ প্রকাশা বিদধদপিদধচ্চাত্মভাসান্যতেজাং-

স্যাশ্চর্যস্যাকরো নোদ্যুমণিরিব মণিঃ কৌস্তুভঃ সোঽস্তু ভূত্যৈ ||৩০||

ভাবার্থ - যিনি সমুদ্রমধ্য হতে ( মন্থনকালে) উদ্ভূত হয়ে হার স্বরূপ তারকামালা-মণ্ডিত নারায়ণ-বক্ষঃস্থলরূপ নীল নভস্তলে, সহজাতা লক্ষ্মীর সহিত আশ্রয় লাভ করেছেন, যিনি সূর্য্যের ন্যায় সর্বদিঙ্মণ্ডল-প্রকাশক ও নিজ প্রভায় অন্য তেজকে আচ্ছন্ন করেছেন, সেই আশ্চর্য্যাকর কৌস্তুভমণি আমাদের ঐশ্বর্য্য জনক হোন ||৩০||

যা বায়াবানুকূল্যাৎ সরতি মণিরুচা ভাসমানাঽসমানা

সাকং সাকম্পমংসে বসতি বিদধতী বাসুভদ্রং সুভদ্রম্ ।

সাঽরং সারঙ্গসঙ্ঘৈর্মুখরিতকুসুমা মেচকান্তা চ কান্তা

মালা মালালিতাস্মান্ন বিরমতু সুখৈর্যোজয়ন্তী জয়ন্তী ||৩১||

ভাবার্থ - যার সাম্য বা উপমা অন্যত্র নাই, অনুকুল বায়ু-বহনে চঞ্চলভাবে ( নারায়ণের ) স্কন্ধদেশে

হারমণি-কিরণসহ উজ্জ্বলমূর্তিতে যিনি অবস্থিত, যিনি অবস্থিত, যিনি বাসুভদ্র অর্থাৎ বিষ্ণুভক্তকে পরম মঙ্গলাস্পদ করে থাকেন, যার কুসুমচয় অলিকুলে মুখরিত ও যার স্বরূপ ( অলিসঙ্গে ) নীলিমাপ্রাপ্ত, সেই লক্ষ্মীলালিত জয়ন্তী অর্থাৎ বৈজয়ন্তী-নাম্নী কমনীয় মালা আমাদেরকে অবিলম্বে সুখী করতে বিরত না হোন ||৩১||

হারস্যোরুপ্রভাভিঃ প্রতিনববনমালাংশুভিঃ প্রাংশুরূপৈঃ

শ্রীভিশ্চাপ্যঙ্গদানাং কবলিতরুচি যন্নিষ্কভাভিশ্চ ভাতি ।

বাহুল্যেনৈব বদ্ধাঞ্জলিপুটমজিতস্যাভিয়াচামহে তৎ

বন্ধার্তিং বাধতাং নো বহুবিহতিকরীং বন্ধুরং বাহুমূলম্ ||৩২||

ভাবার্থ - হারের মহতী প্রভা, অভিনব বনমালার উচ্চদীপ্তি, কেয়ূরের আভা ও নিষ্ক-নামক স্বর্ণময় বক্ষোভূষণের দ্যুতি, যার শ্যাম কান্তিকে গ্রাস করেছে ; আমরা কৃতাঞ্জলিপুটে বহুলভাবে প্রার্থনা করি, নারায়ণের সেই সুন্দর বাহুমুল, বহু ব্যাঘাতদায়িনী আমাদের ভববন্ধনব্যথাকে বিনষ্ট করুন ||৩২||

বিশ্বত্রাণৈকদীক্ষাস্তদনুগুণগুণক্ষত্রনির্মাণদক্ষাঃ

কর্তারো দুর্নিরূপাঃ স্ফুটগুরুয়শসাং কর্মণামদ্ভুতানাম্ ।

শার্ঙ্গং বাণং কৃপাণং ফলকমরিগদে পদ্মশঙ্খৌ সহস্রম্

বিভ্রাণাঃ শস্ত্রজালং মম দধতু হরের্বাহবো মোহহানিম্ ||৩৩||

ভাবার্থ - যারা বিশ্বরক্ষায় একমাত্র ব্ৰতী, রক্ষাকার্য্যের অনুকুল গুণসম্পন্ন সেই ক্ষত্রিয়বর্ণের উৎপত্তি যথা হতে হয়েছে, অসংখ্যেয় সুপ্রকাশিত গুণকীর্ত্তির নিদান অদ্ভুত কৰ্ম যারা করেছেন, শার্ঙ্গধনু, বাণ, ( নন্দক ) অসি, বর্ম, ( সুদর্শন ) চক্র, ( কৌমােদকী ) গদা, পদ্ম, ( পাঞ্চজন্য ) শঙ্খ প্রমুখ শস্ত্রসমূহধারী শ্রীহরির সহস্র বাহু আমার মােহ ধ্বংস করুন ||৩৩||

কণ্ঠাকল্পোদ্গতৈর্যঃ কনকময়লসৎকুণ্ডলোত্থৈরুদারৈঃ

উদ্যোতৈঃকৌস্তুভস্যাপ্যুরুভিরুপচিতশ্চিত্রবর্ণো বিভাতি ।

কণ্ঠাশ্লেষে রমায়াঃ করবলয়পদৈর্মুদ্রিতে ভদ্ররূপে

বৈকুণ্ঠীয়েঽত্র কণ্ঠে বসতু মম মতিঃ কুণ্ঠভাবং বিহায় ||৩৪||

ভাবার্থ - যিনি, কণ্ঠভূষণ হতে উদ্গত সুশােভিত কনক-কুণ্ডলোত্থিত উৎকৃষ্ট দ্যুতি দ্বারা, বিশেষভঃ কৌস্তুভমণির অত্যুজ্জল জ্যোতির্মণ্ডলে সংবর্ধিত হয়ে, বিচিত্র বর্ণে শোভা পাচ্ছেন। আলিঙ্গনের সময় লক্ষ্মীকর বলয়চিহ্নাঙ্কিত চারুমূর্তি সেই নারায়ণ কণ্ঠে আমার বুদ্ধি সঙ্কোচ ত্যাগ করে অবস্থিত হোক ||৩৪||

পদ্মানন্দপ্রদাতা পরিলসদরুণশ্রীপরীতাগ্রভাগঃ

কালে কালে চ কম্বুপ্রবরশশধরাপূরণে যঃ প্রবীণঃ ।

বক্ত্রাকাশান্তরস্থস্তিরয়তি নিতরাং দন্ততারৌঘশোভাম্

শ্রীভর্তুর্দন্তবাসোদ্যুমণিরঘতমোনাশনায়াস্ত্বসৌ নঃ ||৩৫||

ভাবার্থ - যিনি পদ্মানন্দকারী ( পদ্মা-লক্ষ্মী, তার আনন্দ, সূর্য্য পক্ষে পদ্মপুষ্পের প্রফুল্লতা ), যার অগ্রভাগ অরুণ শ্রীশােভিত, ( ওষ্ঠ পক্ষে অগ্রভাগ-প্রান্ত ; অরুণ শ্ৰী, রক্ত আভা। সূর্যপক্ষে অগ্রভাগ সূর্য্যরথের সম্মুখভাগ বা সূর্য্যোদয়ের পূর্বাবস্থা, অরুণ-সূর্যের সারথি, বা তৎপূর্বোদিত সূর্য্যকিরণ, তদীয় শ্ৰীতদীয় শােভা ) যিনি সময়ে সময়ে ( একপক্ষে যুদ্ধ ও উৎসবসময়ে পক্ষান্তরে শুক্লপক্ষের প্রতিপদ হতে পূর্ণিমা পর্য্যন্ত ) শঙ্খরাজ স্বরূপ চন্দ্রের আপূরণে ( ওষ্ঠপক্ষে, বাদনার্থ মুখবায়ুর দ্বারা আপূরণে, সূর্যপক্ষে চন্দ্রের ক্ষীণ কলাকে পূর্ণ করতে) সুদক্ষ ; যিনি বদনাকাশাভ্যন্তরে অবস্থিত হয়ে দন্তপংক্তিস্বরূপ নক্ষত্রাবলীর শােভা হরণ করেন, শ্রীনাথের সেই ওষ্ঠাধররূপী সূর্য্য আমাদের পাপরূপ অন্ধকার বিনাশের কারণ হোন ||৩৫||

নিত্যং স্নেহাতিরেকান্নিজকমিতুরলং বিপ্রয়োগাক্ষমা যা

বক্ত্রেন্দোরন্তরালে কৃতবসতিরিবাভাতি নক্ষত্ররাজিঃ ।

লক্ষ্মীকান্তস্য কান্তাকৃতিরতিবিলসন্মুগ্ধমুক্তাবলিশ্রীঃ

দন্তালী সন্ততং সা নতিনুতিনিরতানক্ষতান্ রক্ষতান্নঃ ||৩৬||

ভাবার্থ - প্রেমের আতিশয্যে নিজ কান্তের ( চন্দ্রের ) দীর্ঘ বিচ্ছেদ সহ্য করতে অসমর্থ হয়েই যেন নারায়ণ-মুখচন্দ্রের অভ্যন্তরে সদা অবস্থিত নক্ষত্ররাজির ন্যায় যারা শােভা পেয়ে থাকেন, সুবিন্যস্ত সুন্দর মুক্তা-পঙক্তি-শােভনা লক্ষ্মীকান্তের সেই দশনপঙক্তি সদা স্তুতিনতিপরায়ণ আমাদেরকে রক্ষা করুন, এবং যেন আমরা অক্ষত থাকি ||৩৬||

ব্রহ্মন্ব্রহ্মণ্যজিহ্মাং মতিমপি কুরুষে দেব সম্ভাবয়ে ত্বাং

শম্ভো শক্র ত্রিলোকীমবসি কিমমরৈর্নারদাদ্যাঃ সুখং বঃ।

ইত্থং সেবাবনম্রং সুরমুনিনিকরং বীক্ষ্য বিষ্ণোঃ প্রসন্ন-

স্যাস্যেন্দোরাস্রবন্তী বরবচনসুধাহ্লাদয়েন্মানসং নঃ ||৩৭||

ভাবার্থ - “হে ব্ৰহ্মন! বেদে অবক্র বুদ্ধি রেখেছ ত? হে দেব শম্ভো, আপনার সম্বর্ধনা করছি। হে ইন্দ্র, দেবগণ সহযোগে ত্রৈলোক্য রক্ষায় রত আছ ত? নারদাদি মুনিগণ, তােমরা সুখে আছ ত?” সেবা বিনম্র দেবতা ও মুনিগণকে অবলােকন করে নারায়ণের প্রসন্ন মুখচন্দ্র-নিঃসৃত ( পূর্বোক্ত ) উৎকৃষ্ট বচনামৃত যেন আমাদের হৃদয়কে আপ্যায়িত করেন ||৩৭||

কর্ণস্থস্বর্ণকম্রোজ্জ্বলমকরমহাকুণ্ডলপ্রোতদীপ্যন্-

মাণিক্যশ্রীপ্রতানৈঃ পরিমিলিতমলি শ্যামলংকোমলং যৎ।

প্রোদ্যৎসূর্যাংশুরাজন্মরকতমুকুরাকারচোরং মুরারেঃ

গাঢামাগামিনীং নঃ শময়তু বিপদং গণ্ডয়োর্মণ্ডলং তৎ ||৩৮||

ভাবার্থ - নারায়ণের ভ্রমর-কৃষ্ণ কােমল গণ্ডমণ্ডল, কর্ণস্থিত সুবর্ণময় উজ্জ্বল কমনীয় মকরাকৃতি মহাকুণ্ডলনিবন্ধ প্রদীপ্ত মাণিক্য-প্রভাপুঞ্জে সম্মিলিত হয়ে, যিনি উদীয়মান সূর্যকিরণােদ্ভাসিত মরকতমণিদর্পণের আকার অপহরণ করেছেন, তিনি আমাদের আগামিনী গাঢ় বিপদ শমিত করুন

বক্ত্রাম্ভোজে লসন্তং মুহুরধরমণিং পক্ববিম্বাভিরামম্

দৃষ্ট্বা দষ্টুং শুকস্য স্ফুটমবতরতস্তুণ্ডদণ্ডায়তে যঃ ।

ঘোণঃ শোণীকৃতাত্মা শ্রবণয়ুগলসৎকুণ্ডলোস্রৈর্মুরারেঃ

প্রাণাখ্যস্যানিলস্য প্রসরণসরণিঃ প্রাণদানায় নঃ স্যাৎ ||৩৯||

ভাবার্থ - যিনি শ্রােত্রযুগল-বিরাজিত মণিকুণ্ডলকিরণপাতে অরুণবর্ণ হওয়াতে, ( নারায়ণের ) মুখকমলবিরাজিত পক্ব-বিম্ব-রমণীয় অধরমণি দর্শন করে দংশনার্থ অবতীর্ণ শুক পক্ষীর তুণ্ড-দণ্ড অর্থাৎ চঞ্চুপুটের সাদৃশ্য স্পষ্টরূপে প্রাপ্ত হয়েছেন, নারায়ণের প্রাণানিলসঞ্চারণমার্গ সেই নাসিকা আমাদেরর প্রাণদানের হেতু হন ||৩৯||

দিক্কালৌ বেদয়ন্তৌ জগতি মুহুরিমৌ সঞ্চরন্তৌ রবীন্দূ

ত্রৈলোক্যালোকদীপাবভিদধতি যয়োরেব রূপং মুনীন্দ্রাঃ।

অস্মানব্জপ্রভে তে প্রচুরতরকৃপানির্ভরং প্রেক্ষমাণে

পাতামাতাম্রশুক্লা সিতরুচিরুচিরে পদ্মনেত্রস্য নেত্রে ||৪০||

ভাবার্থ - ত্রৈলােক্যদর্শন দীপ, দিক্-কাল-পরিজ্ঞাপক সূর্য্য ও চন্দ্রকে যদীয় রূপ বলে মুনীন্দ্রগণ নির্দেশ করেন, পুণ্ডরীকাক্ষের আতাম্র-কৃষ্ণ-শুভ্রবর্ণে ( প্রান্তে আতাম্র, তারকায় কৃষ্ণ এবং তৎপার্শ্বে শুভ্রবর্ণ ) মনােহর সেই নয়নযুগল, প্রচুরতর কৃপাপূর্ণভাবে দৃষ্টিপাত করতঃ আমাদেরকে রক্ষা করুন ||৪০||

পাতাৎ পাতালপাতাৎ পতগপতিগতের্ভ্রূয়ুগং ভুগ্নমধ্যম্

যেনেষচ্চালিতেন স্বপদনিয়মিতাঃ সাসুরা দেবসঙ্ঘাঃ ।

নৃত্যল্লালাটরঙ্গে রজনিকরতনোরর্ধখণ্ডাবদাতে

কালব্যালদ্বয়ং বা বিলসতি সময়া বালিকা মাতরং নঃ ||৪১||

ভাবার্থ - যার ঈষৎ সঞ্চালনে অনুর ও দেবগণ স্ব স্ব পদে স্থির থাকেন, যিনি চন্দ্রবিম্বের অর্ধখণ্ডাকার নির্মল ললাটরঙ্গে নৃত্যরত ( বলেই যেন ) ভূগ্নমধ্য, এবং বিনি কৃষ্ণসর্পযুগলের ন্যায় অথবা মাতৃসমীপে বালিকার ন্যায় শােভা পাচ্ছেন, গরুড়বাহন নারায়ণের সেই ভ্রূগল আমাদেরকে পাতালপাত অর্থাৎ অধঃপাত হইতে রক্ষা করুন ||৪১||

লক্ষ্মাকারালকালিস্ফুরদলিকশশাঙ্কার্ধসন্দর্শমীলন্-

নেত্রাম্ভোজপ্রবোধোৎসুকনিভৃততরালীনভৃঙ্গচ্ছটাভে ।

লক্ষ্মীনাথস্য লক্ষ্যীকৃতবিবুধগণাপাঙ্গবাণাসনার্ধ-

চ্ছায়ে নো ভূরিভূতিপ্রসবকুশলতে ভ্রূলতে পালয়েতাম্ ||৪২||

ভাবার্থ - অলকাবলি ( ঝাঁপটা চুল ) যার কলঙ্ক আকারে প্রতীয়মান, সেই ললাটস্বরূপ অর্দ্ধচন্দ্রদর্শনে মুদ্রিত, নয়ন-কমলের প্রবােধসময়ের অপেক্ষার অতি নিশ্চলভাবে অবস্থিত ভ্ৰমরকুলের সাদৃশ্য যথায় বর্তমান, লক্ষ্যীকৃত-দেব-সংহতির প্রভূত ঐশ্বর্য্য-সম্পাদন-কুশল, লক্ষ্মীকান্তের অপাঙ্গ-চাপার্দ্ধ-সমাকৃতি, সেই দুই ভ্রূলতা আমাদেরকে রক্ষা করুন ||৪২||

রূক্ষস্মারেক্ষুচাপচ্যুতশরনিকরক্ষীণলক্ষ্মীকটাক্ষ-

প্রোৎফুল্লৎপদ্মমালাবিকসিতমহিতস্ফাটিকৈশানলিঙ্গম্।

ভূয়াৎ ভূয়ো বিভূত্যৈ মম ভুবনপতের্ভ্রূলতাদ্বন্দ্বমধ্যা-

দুত্থং তৎ পুণ্ড্রমূর্ধ্বং জনিমরণতমঃখণ্ডনং মণ্ডনঞ্চ ||৪৩||

ভাবার্থ - কামদেবের ইক্ষুদণ্ড-চাপ-নিঃসৃত রুক্ষ-শরনিকরসম্পাতে ক্ষীণ ( হলেও ) লক্ষ্মীদেবীর কটাক্ষরূপ প্রস্ফুটিত পদ্মমালার অর্পণে পূজিত, স্ফটিক শিবলিঙ্গাকৃতি যে উর্দ্ধপুণ্ড্র, ভুবনপতি নারায়ণের ভ্রযুগলমধ্য হতে উত্থিত হয়েছে, তিনি আমার বহুতর বিভূতির নিমিত্ত অলঙ্কারম্বরূপ হন, এবং আমার জন্মমরণ-ধ্বান্ত বিনাশ করুন ||৪৩||

পীঠীভূতালকান্তং কৃতমুকুটমহাদেবলিঙ্গপ্রতিষ্ঠে

লালাটে নাট্যরঙ্গে বিকটতরতটে কৈটভারেশ্চিরায় ।

প্রোদ্ঘাট্যৈবাত্মতন্দ্রীপ্রকটপটকুটীং প্রস্ফুরন্তী স্ফুটাঙ্গম্

পট্বীয়ং ভাবনাখ্যাং চটুলমতিনটী নাটিকাং নাটয়েন্নঃ ||৪৪||

ভাবার্থ - যথায় অলকাগ্রভাগ পীঠস্বরূপ, ও মুকুটরূপী শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত, কৈটভসুদনের সেই অতিসুন্দর ললাটতলস্বরূপ নাট্যরঙ্গক্ষেত্রে আত্মবিষয়ে অজ্ঞানরূপ পটগৃহ উদ্ঘাটন করে সুব্যক্তাবয়বে আবির্ভূতা নিপুণা এই চঞ্চল বুদ্ধিরূপা নটী, ভাবনানাম্নী ( ধ্যানরূপা ) নাটিকা আমাদের সমীপে অভিনয় করুন ||৪৪||

মালালীবালিধাম্নঃ কুবলয় কলিতা শ্রীপতেঃ কুন্তলালী

কালিন্দ্যারুহ্য মূর্ধ্নো গলতি হরশিরঃস্বর্ধুনীস্পর্ধয়া নু ।

রাহুর্বা যাতি বক্ত্রং সকলশশিকলাভ্রান্তিলোলান্তরাত্মা

লোকৈরালোক্যতে যা প্রদিশতু সততং সাখিলং মঙ্গলম্নঃ ||৪৫||

ভাবার্থ - এ কি ভ্ৰমরকুলের আভা—বহুমালাকারে সজ্জিত, ( এ কি ভ্ৰমরবাসস্থানের শ্রেণীবদ্ধভাবে বিভিন্ন সঙ্ঘে বিন্যাস ) কিংবা যমুনা, শিবমস্তক ও গঙ্গার প্রতি স্পৰ্ধা করে ( নারায়ণের ) মস্তকে আরােহণ করে তথা হতে ক্ষরিত হচ্ছেন, অথবা পূর্ণ শশধর ও শশিখণ্ড ভ্রমে ( ললাট দর্শনে শশিখণ্ড ভ্ৰম) লুন্ধ হয়ে রাহু মুখমণ্ডলের প্রতি ধাবিত হচ্ছে–লােকে এইরূপ ( বিতর্ক সহ ) শ্রীপতির যে কুবলয়শােভিত কেশপাশকে অবলােকন করে, তিনি আমাদেরকে সদা অখিল কল্যাণ প্রদান করুন ||৪৫||

সুপ্তাকারাঃ প্রসুপ্তে ভগবতি বিবুধৈরপ্যদৃষ্টস্বরূপা

ব্যাপ্তব্যোমান্তরালাস্তরলমণিরুচা রঞ্জিতাঃ স্পষ্টভাসঃ ।

দেহচ্ছায়োদ্গমাতা রিপুবপুরগরুপ্লোষরোষাগ্নিধূম্যাঃ

কেশাঃ কেশিদ্বিষো নো বিদধতু বিপুলক্লেশপাশপ্রণাশম্ ||৪৬||

ভাবার্থ - যখন ভগবান্ প্রসুপ্ত থাকেন, তখন ( প্রলয়াবস্থায় ) দেবগণ ও যাদেরকে দর্শন করতে সমর্থ হয়েন না, যারা আকাশমণ্ডলকে ব্যাপ্ত করে অবস্থিত ; হারমধ্যমণি-প্রভায় রঞ্জিত স্পষ্টপ্রকাশ ও সুররিপুশরীররূপী অগুরুবনদাহক রােষানলের ধূমস্বরূপ ; কেশিহন্তা নারায়ণের উদ্ধোত্থিত কলেবর-কান্তি সদৃশ ( জলদকৃষ্ণ ) সেই কেশসমূহ আমাদের বিপুল ক্লেশবন্ধন বিনষ্ট করুন ||৪৬||

যত্র প্রত্যুপ্তরত্নপ্রবরপরিলসদ্ভূরিরোচিষ্প্রতান-

স্ফূর্ত্যা মূর্তির্মুরারের্দ্যুমণিশতচিতব্যোমবদ্ দুর্নিরীক্ষ্যা ।

কুর্বৎ পারে পয়োধি জ্বলদকৃশশিখাভাস্বদৌর্বাগ্নিশঙ্কাং

শশ্বন্নঃ শর্ম দিশ্যাৎ কলিকলুষতমঃপাটনং তৎকিরীটম্ ||৪৭||

ভাবার্থ - যদীয় উৎকষ্ট রত্ন-রাজি-নিঃস্থত প্রভানণ্ডলফুরণে, মুরারির মূর্তি শত-সূর্য্য-সমুদ্ভাসিত গগণতলের ন্যায় দুর্দশ হয়ে থাকেন, সমুদ্রপারে প্রজ্বলিত বিপুল শিখাভাস্বর বাড়বানল-শঙ্কা-সম্পাদনকারী কলিকলুষান্ধকার বিধ্বংসী সেই ( মুরারি ) কিরীট, আমাদেরকে সর্ব্বদা সুখ প্রদান করুন ||৪৭||

ভ্রান্ত্বা ভ্রান্ত্বা যদন্তস্ত্রিভুবনগুরুরপ্যব্দকোটীরনেকাঃ

গন্তুং নান্তং সমর্থো ভ্রমর ইব পুনর্নাভিনালীকনালাৎ ।

উন্মজ্জন্নূর্জিতশ্রীস্ত্রিভুবনমপরং নির্মমে তৎ সদৃক্ষম্

দেহাম্বোধিঃ স দেয়ান্নিরবধিরমৃতং দৈত্যবিদ্বেষিণো নঃ ||৪৮||

ভাবার্থ - ত্রিভুবনগুরু উজ্জিতশ্রী ‍‍ব্রহ্মাণ্ড যার অভ্যন্তরে বহু ‍কোটি বৎসর ভ্ৰমণ করেও অন্ত প্রাপ্ত হয়েন নাই, তখন নাভিকমলনাল হতে ভ্রমরবৎ উন্মগ্ন হয়ে তার অনুকরণে ক্ষুদ্র ত্রিভুবন নির্ম্মাণ করেন, দৈত্যারি নারায়ণের সেই অবধিহীন দেহ-সমুদ্র আমাদেরকে অমৃত প্রদান করুন ||৪৮||

মৎস্যঃ কূর্মো বরাহো নরহরিণপতির্বামনো জামদগ্ন্যঃ

কাকুৎস্থঃ কংসঘাতী মনসিজবিজয়ী যশ্চ কল্কির্ভবিষ্যন্।

বিষ্ণোরংশাবতারা ভুবনহিতকরা ধর্মসংস্থাপনার্থাঃ

পায়াসুর্মাং ত এতে গুরুতরকরুণাভারখিন্নাশয়া যে ||৪৯||

ভাবার্থ - মৎস্য, কূৰ্ম, বরাহ, নরসিংহ, বামন, জামদগ্ন্য-রাম, কাকুৎস্থ রাম, কংসঘাতী, মারজিৎ ( বুদ্ধ ) আর যিনি ভবিষ্যৎ অবতার কল্কি, –এরা বিষ্ণুর ভুবনহিতকর, ধর্মসংস্থাপনার্থ অংশাবতার গুরুতর করুণাভারখিন্নচেতা এই সেই এরা আমাকে রক্ষা করুন ||৪৯||

যস্মাদ্ বাচো নিবৃত্তাঃ সমমপি মনসা লক্ষণামীক্ষমাণাঃ

স্বার্থালাভাৎ পরার্থব্যপগমকথনশ্লাঘিনো বেদবাদাঃ ।

নিত্যানন্দং স্বসংবিন্নিরবধি বিমলস্বান্তসংক্রান্তবিম্ব-

চ্ছায়াপত্ত্যাপি নিত্যং সুখয়তি যমিনো যত্তদব্যান্মহো নঃ ||৫০||

ভাবার্থ - লক্ষণা পর্য্যালােচনা করত যা হতে বাক্য নিবৃত্ত হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে মনও ( নিবৃত্ত হয়েছে ), বেদবাক্য স্বার্থকে লাভ না করাতে পরার্থ নিবৃত্তিকথন দ্বারা আত্মপ্রতিষ্ঠা রক্ষা করেছেন ; যিনি নিরবধি নিত্যানন্দ ও স্বপ্রকাশ,নিৰ্ম্মল চিত্তে প্রতিফলিত বিম্বরূপ স্বকীয় ছায়াপাতে যিনি যমপরায়ণদেরকে সুখী করে থাকেন, সেই জ্যোতিঃ আমাদেরকে রক্ষা করুন ||৫০||

আপাদাদা চ শীর্ষাদ্ বপুরিদমনঘং বৈষ্ণবং যঃ স্বচিত্তে

ধত্তে নিত্যং নিরস্তাখিলকলিকলুষে সন্ততান্তঃপ্রমোদঃ ।

জুহ্বজ্জিহ্বাকৃশানৌ হরিচরিতহবিঃ স্তোত্রমন্ত্রানুপাঠৈঃ

তৎপাদাম্ভোরুহাভ্যাং সততমপি নমস্কুর্মহে নির্মলাভ্যাম্ ||৫১||

ভাবার্থ - যিনি এই স্তোত্রমন্ত্র পাঠ করতঃ জিহ্বারূপ অনলে হরিচরিতানুবাদ স্বরূপ হব্য অর্পণ পূর্ব্বক পাদ হতে মস্তক পর্য্যন্ত শবিষ্ণুর এই সততা নন্দপ্রবাহজনক নির্মলমূর্তি, নিহত-নিখিল-কলি-কলুষ-শুদ্ধ নিজ চিত্তে ধারণ করেন, আমরা তদীয় নির্মল চরণকমলযুগলে সদা প্রণাম করি ||৫১||

মোদাৎ পাদাদিকেশস্তুতিমিতি রচিতাং কীর্তয়িত্বা ত্রিধাম্নঃ

পাদাব্জদ্বন্দ্বসেবাসময়নতমতির্মস্তকে না নমেদ্যঃ ।

উন্মুচ্যৈবাত্মনৈনোনিচয়কবচকং পঞ্চতামেত্য ভানোঃ

বিম্বান্তর্গোচরং স প্রবিশতি পরমানন্দমাত্মস্বরূপম্ ||৫২||

ভাবার্থ - ত্রিধামা বিষ্ণুর পাদাদি কেশ পর্য্যক্ত বিষয় বিরচিত এই চরণকমলযুগলসেবা সময়ে ভক্তিনম্রবুদ্ধি সহকারে কীর্তন করে যে ব্যক্তি ভূমিতে মস্তক রেখে প্রণাম করবেন, তিনি স্বয়ং পাপরাশিময় বর্ম উন্মোচন পূর্বক মৃত্যুর পরে সুর্য্যমণ্ডলান্তর্বত্তী আত্মস্বরূপ পরমানন্দে প্রবিষ্ট হয়েন ||৫২||

|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ বিষ্ণুপাদাদিকেশান্তস্তোত্রং সম্পূর্ণম্ ||

ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্য শ্রীগোবিন্দ ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্য ভগবান শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য বিরচিত বিষ্ণুপাদাদিকেশান্ত স্তোত্র সমাপ্ত।


 

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...