কলাভ্যাং চূড়ালঙ্কৃতশশিকলাভ্যাং নিজতপঃ-
ফলাভ্যাং ভক্তেষু প্রকটিতফলাভ্যাং ভবতু মে ।
শিবাভ্যামস্তোকত্রিভুবনশিবাভ্যাং হৃদি পুন-
র্ভবাভ্যামানন্দস্ফুরদনুভবাভ্যাং নতিরিয়ম্ ||১||
ভাবার্থ - যদীয় চূড়ায় স্থান পেয়ে শশিকলা অলঙ্কৃত,
সেই ত্রিভুবন মহাকল্যাণহেতু, পুনর্জন্মবিনাশী, ভক্তাভীষ্টফলপ্রদ, আনন্দময় স্বপ্রকাশ
জ্ঞানস্বরূপ নিজ তপস্যালব্ধ অর্ধশিব ও অর্ধশিবার প্রতি আমার এই নমস্কার ( প্রযুক্ত
) হোক ||১||
গলন্তী শম্ভো ত্বচ্চরিতসরিতঃ কিল্বিষরজো
দলন্তী ধীকুল্যাসরণিষু পতন্তী বিজয়তাম্ ।
দিশন্তী সংসারভ্রমণপরিতাপোপশমনং
বসন্তী মচ্চেতোহ্রদভুবি শিবানন্দলহরী ||২||
ভাবার্থ - হে শম্ভো, তোমার চরণস্বরূপ নদী হতে ক্ষরিত
পাপরূপ-ধূলি-দলনকারিণী বুদ্ধিকুল্যাপথে প্রবাহিতা মদীয় চিত্তহ্রদ স্থানে অবস্থিতা সংসারভ্রমণতাপশান্তি
প্রদায়িনী শিবানন্দলহরীর জয় হোক ||২||
ত্রয়ীবেদ্যং হৃদ্যং ত্রিপুরহরমাদ্যং ত্রিনয়নং
জটাভারোদারং চলদুরগহারং মৃগধরম্ ।
মহাদেবং দেবং ময়ি সদয়ভাবং পশুপতিং
চিদালম্বং সাম্বং শিবমতিবিডম্বং হৃদি ভজে ||৩||
ভাবার্থ - ঋক্,যজুঃ ও সামবেদ দ্বারা বিজ্ঞেয় জটাভার
ভূষিত, কণ্ঠে দোদুল্যমান ভুজঙ্গহার, হস্তে মৃগ, আমার প্রতি সদয়ভাবযুক্ত জগতের আদিভূত,
অনুকরণের অতীত ত্রিপুরবিজয়ী চিদালম্ব ত্রিনয়ন পশুপতি মহাদেব দেব মদীয় প্রিয় সাম্ব শিবকে
হৃদয়ে ভজনা করি ||৩||
সহস্রং বর্তন্তে জগতি বিবুধাঃ ক্ষুদ্রফলদা
ন মন্যে স্বপ্নে বা তদনুসরণং তৎকৃতফলম্ ।
হরিব্রহ্মাদীনামাপি নিকটভাজামসুলভং
চিরং যাচে শম্ভো তব পদাম্ভোজভজনম্ ||৪||
ভাবার্থ - হে শম্ভু! সহস্ৰ দেবতা এই পৃথিবীতে বিদ্যমান,
যারা কেবল ক্ষুদ্র ফলই প্রদান করেন। এমনকি আমার স্বপ্নেও আমি তাদের অনুসরণ করি না,
তাদের প্রদত্ত ফলগুলিরো বিবেচনা করি না। হে শিব! আমি শুধু সর্বদা আপনার শ্রীচরণকমলের
পূজা করার ইচ্ছা প্রকাশ করি। যদিও এটি আপনার নিকটস্থ থাকা বিষ্ণু, ব্রহ্মা ইত্যাদি
দেবতাদেরও পক্ষে কঠিন। (তবুও আমি সেই ইচ্ছা রাখি) ||৪||
স্মৃতৌ শাস্ত্রে বৈদ্যে শকুনকবিতাগানফণিতৌ
পুরাণে মন্ত্রে বা স্তুতিনটনহাস্যেষ্বচতুরঃ ।
কথং রাজ্ঞাং প্রীতির্ভবতি ময়ি কোঽহং পশুপতে
পশুং মাং সর্বজ্ঞ প্রথিত কৃপয়া পালয় বিভো ||৫||
ভাবার্থ - আমি ন্যায়, ধর্মশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ,
শুভাশুভক্ষণের নির্ধারণ বিদ্যা, কবিতা, সংগীত, ব্যাকরণ, ইতিহাস পুরাণ, স্তব, স্তুতি,নৃত্য
এবং মনোরঞ্জনবিদ্যার নীতির বিষয়ে অদক্ষ। কিভাবে সেই অধিপতির (তথা যিনি এই বিদ্যার
অধিপতি অর্থাৎ শিবের) কৃপা আমার পক্ষে হবে? হে পশুপতি! আমি কে? আমি একটা পশু মাত্র।
হে সর্বজ্ঞ! হে বিভু! তোমার এই পরম মায়া থেকে আমাকে বাঁচাও ||৫||
ঘটো বা মৃৎপিণ্ডোঽপ্যণুরপি চ ধূমোঽগ্নিরচলঃ
পটো বা তন্তর্বা পরিহরতি কিং ঘোরশমনম্ ।
বৃথা কণ্ঠক্ষোভং বহসি তরসা তর্কবচসা
পদাম্ভোজং শম্ভোর্ভজ পরমসৌখ্যং ব্রজ সুধীঃ ||৬||
ভাবার্থ - ঘট বা মৃৎপিণ্ড কিংবা পরমাণু অথবা ধূম
বহ্নি পর্ব্বত কিংবা পট ও তন্তু ঘাের কৃতান্তকে কি এড়াতে পারে? তবে হে সুমতি, (এই
সব বিষয় লয়ে) জোর তর্কবাক্যে বৃথা কণ্ঠের ক্ষোভ করছ কেন? শিবের পাদপদ্ম ভজনা করো,
পরমসুখ প্রাপ্ত হবে ||৬||
মনস্তে পাদাব্জে নিবসতু বচঃ স্তোত্রফণিতৌ
করৌ চাভ্যর্চায়াং শ্রুতিরপি কথাকর্ণনবিধৌ ।
তব ধ্যানে বুদ্ধির্নয়নয়ুগলং মূর্তিবিভবে
পরগ্রন্থান্ কৈর্বা পরমশিব জানে পরমতঃ ||৭||
ভাবার্থ - হে আমার সর্ব্বোত্তম শিব, (আমার) মন
তােমার চরণ কমলে, (আমার) বাক্য তােমার স্তোত্র উচ্চারণে, (আমার) করযুগল তােমার অর্চ্চনায়,
(আমার) শ্রবণেন্দ্রিয় তােমার চরিতকথা শ্রবণে ,(আমার) বুদ্ধি তােমারই ধ্যানে, (আমার)
নয়নযুগল তােমার মূর্তিসৌন্দর্য্য-দর্শনে নিশ্চল হয়ে থাকুক, অতঃপর আমি কিসের দ্বারা
অপর গ্রন্থ জানতে পারব? (মন বুদ্ধি বাক্য চক্ষুঃ কর্ণ ইত্যাদিই জ্ঞানের উত্তম উপায়)
সেই সব যদি অন্যত্র নিযুক্ত হলো, তখন গ্রন্থজ্ঞান হবে কিরূপে? ||৭||
যথা বুদ্ধিঃ শুক্তৌ রজতমিতি কাচাশ্মনি মণি-
র্জলে পৈষ্টে ক্ষীরং ভবতি মৃগতৃষ্ণাসু সলিলম্ ।
তথা দেবভ্রান্ত্যা ভজতি ভবদন্যং জড়জনো
মহাদেবেশং ত্বাং মনসি চ ন মত্বা পশুপতে ||৮||
ভাবার্থ - যেমন শুক্তিতে রজতবুদ্ধি, কাচে মণিবুদ্ধি,
পিষ্টসলিলে (পিটুলি-গােলা জলে) দুগ্ধবৃদ্ধি, মরীচিকায় জলবুদ্ধি হয়। হে পশুপতে, সেইরূপ
নির্বোধ লােকে, দেবতাগণেরও মহান ঈশ্বর তােমাকে মনে না বুঝে দেবতাভ্রমে অন্যের ভজনা
করে ||৮||
গভীরে কাসারে বিশতি বিজনে ঘোরবিপিনে
বিশালে শৈলে চ ভ্রমতি কুসুমার্থং জড়মতিঃ ।
সমর্প্যৈকং চেতঃ সরসিজমুমানাথ ভবতে
সুখেনাবস্থাতুং জন ইহ ন জানাতি কিমহো ||৯||
ভাবার্থ - নিৰ্ব্বোধ ব্যক্তি (পূজার) পুষ্পর জন্য
গভীর (কমল) সরােবরে ও ঘাের নির্জন অরণ্যে প্রবেশ করে, বিস্তৃত পর্ব্বতেও ভ্ৰমণ করে।
হে উমানাথ, এক হৃৎপদ্ম আপনাকে অর্পণ করে সুখে অবস্থান করতে ঐ ব্যক্তি
জানে না কি? আশ্চর্য্য বটে! ||৯||
নরত্বং দেবত্বং নগবনমৃগত্বং মশকতা
পশুত্বং কীটত্বং ভবতু বিহগত্বাদি জননম্ ।
সদা ত্বৎপাদাব্জস্মরণপরমানন্দলহরী-
বিহারাসক্তং চেদ্ধৃদয়মিহ কিং তেন বপুষা ||১০||
ভাবার্থ - (হে মহেশ্বর) মন যদি তােমার চরণকমল স্মরণজনিত
পরমানন্দলহরী- বিলাসে আসক্ত থাকে তা হলে মনুষ্যত্ব দেবত্ব বানরত্ব মৃগত্ব মশকত্ব পশুত্ব
ও কীটত্ব অথবা পক্ষীত্ব প্রভৃতি যে কোন ভাবের জন্ম হোক, সেই দেহের জন্য কি হবে? ||১০||
বটুর্বা গেহী বা যতিরপি জটী বা তদিতরো
নরো বা যঃ কশ্চিদ্ ভবতু ভব কিং তেন ভবতি ।
যদীয়ং হৃৎপদ্মং যদি ভবদধীনং পশুপতে
তদীয়স্ত্বং শম্ভো ভবসি ভবভারং বহসি চ ||১১||
ভাবার্থ - ব্ৰহ্মচারী, গৃহী, সন্ন্যাসী, বানপ্রস্থ,
বা তদতিরিক্ত যে কোন মানবই হোক তাতে কি হবে, হে পশুপতে, যার হৃৎপদ্ম (কোন মতে) তােমাতেই
আসক্ত হয়, হে শম্ভো, তুমি তারই হয়ে থাকো এবং তার সংসারের ভারবহন তুমিই করো ||১১||
গুহায়াং গেহে বা বহিরপি বনে বাঽদ্রিশিখরে
জলে বা বহ্নৌ বা বসতু বসতেঃ কিং বদ ফলম্ ।
সদা যস্যৈবান্তঃকরণমপি শম্ভো তব পদে
স্থিতং চেদ্যোগোঽসৌ স চ পরময়োগী স চ সুখী ||১২||
ভাবার্থ - গিরিগুহা, বা গৃহ; বহির্দেশ, বা বন অথবা
পর্বতশিখর, বা ( শীতে ) জলাশয়, বা ( গ্রীষ্মে ) অগ্নিকুণ্ড যেখানেই বাস করুক, বাসস্থানের
ফল কি বলো। হে শম্ভো, ভাববশে যার অন্তঃকরণ সর্বদাই তোমার চরণে অবস্থিত তাই তার রোগ,
সে ব্যক্তিই পরমযােগী এবং সে-ই সুখী ||১২||
অসারে সংসারে নিজভজনদূরে জড়ধিয়া
ভ্রমন্তং মামন্ধং পরমকৃপয়া পাতুমুচিতম্ ।
মদন্যঃ কো দীনস্তব কৃপণরক্ষাতিনিপুণ-
স্ত্বদন্যঃ কো বা মে ত্রিজগতি শরণ্যঃ পশুপতে
||১৩||
ভাবার্থ - হে পশুপতে, নিজভজন হতে দূরবর্তী অসার
সংসারে বুদ্ধিদোষে ভ্রমণরত অন্ধ আমাকে নিজ পরম করুণ গুণে রক্ষা করা উচিত। কারণ, আমি
ব্যতীত এমন দীন কে আছে যে, তোমার দীন রক্ষার পরম উপযুক্ত হতে পারে, আর ত্রিভুবনে তুমি
ব্যতীত আমার শরণ্যই বা কে আছে ? ||১৩||
প্রভুস্ত্বং দীনানাং খলু পরমবন্ধুঃ পশুপতে
প্রমুখ্যোঽহং তেষামপি কিমুত বন্ধুত্বমনয়োঃ ।
ত্বয়ৈব ক্ষন্তব্যাঃ শিব মদপরাধাশ্চ সকলাঃ
প্রয়ত্নাৎ কর্তব্যং মদবনমিয়ং বন্ধুসরণিঃ ||১৪||
ভাবার্থ - হে পশুপতে, তুমি দীনগণের পরমবন্ধু, অতএব
প্রভু আমি দীনগণের প্রধান ( প্রধান না হলে প্রভু হতে পারে না, কাজেই তুমিও দীনগণের
প্রধান, আমিও দীনগণের প্রধান ) তবে আমাদের উভয়ের ( তোমার ও আমার ) বন্ধুত্ব না হবে
কেন ? ( সুতরাং ) হে শিব, আমার সকল অপরাধ তুমি ক্ষমা করো, আর যত্নপূর্বক আমার রক্ষা
তোমার কর্তব্য; কেন না, এটাই বন্ধুত্বের পদ্ধতি ||১৪||
উপেক্ষা নো চেৎ কিং ন হরসি ভবদ্ধ্যানবিমুখাং
দুরাশাভূয়িষ্ঠাং বিধিলিপিমশক্তো যদি ভবান্ ।
শিরস্তদ্ বৈধাত্রং ন ন খলু সুবৃত্তং পশুপতে
কথং বা নির্যত্নং করনখমুখেনৈব লুলিতম্ ||১৫||
ভাবার্থ - হে পশুপতে, যদি (আমর প্রতি তোমার) উপেক্ষ
না হতো, (তা হলে) ভবদীয় ধ্যানবিমুখী বিষয়াশাবহুলা বিধিলিপিকে (আমর ললাট হতে) মুছে
লয়ে যাচ্ছো না কেন? যদি তুমি অশক্ত, তা হলে ন ন খলু (নখচ্ছেদে অযোগ্য অথচ না না খলু
-এই তিনটি নিপাত দৃঢ় নিশ্চয়-দ্যোতক) সুবৃত্ত (সচ্চরিত্র অথচ সুদৃশ্য) বিধাতার মস্তক
অনায়াসে করনখরাগ্র দ্বারা ছিন্ন করলে কিরূপে? ||১৫||
বিরিঞ্চির্দীর্ঘায়ুর্ভবতু ভবতা তৎপরশির-
শ্চতুষ্কং সংরক্ষ্যং স খলু ভুবি দৈন্যং লিখিতবান্
।
বিচারঃ কো বা মাং বিশদ কৃপয়া পাতি শিব তে
কটাক্ষব্যাপারঃ স্বয়মপি চ দীনাবনপরঃ ||১৬||
ভাবার্থ - বিধাতা দীর্ঘজীবী হোন, আপনি তার অপর
চারটি মস্তক রেখে দিবেন, কারণ, ব্রহ্মা পৃথিবীতে ( মানবের ললাটে ) দৈন্য লেখেছেন (
অতএব এ বিষয়ে ) বিচার কি আছে। হে গিরিশ, ( দীন আছে বলে তো ) আপনি স্বয়ং দীনজনের রক্ষক
আর আপনার কৃপাকটাক্ষপাত আমাকে রক্ষা করছে। ( বিধাতা জীবিত না থাকলে দৈন্যের লিপি কারো
ললাটে পড়িত না, ভবিষ্যতেও পড়বে না, তা হলে আপনার দীনরক্ষক নাম লােপ হয় আর আমি দীনশ্রেণীর মধ্যে গণিত না
হলে আপনার কৃপাকটাক্ষপাতে আমার রক্ষা লাভ ঘটিত না) ||১৬||
ফলাদ্ বা পুণ্যানাং ময়ি করুণয়া বা ত্বয়ি বিভো
প্রসন্নেঽপি স্বামিন্ ভবদমলপাদাব্জয়ুগলম্ ।
কথং পশ্যেয়ং মাং স্থগয়তি নমঃ সম্ভ্রমজুষাং
নিলিম্পানাং শ্রেণীর্নিজকনকমাণিক্যমকুটৈঃ ||১৭||
ভাবার্থ - হে প্রভাে, (আমার) পুণ্যফলে বা আপনার
করুণাগুণে আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন হলেও হে নাথ, আপনার নির্ম্মল চরণ কমলযুগল আমি দেখি
কিরূপে ? ( কারণ ) আপনার প্রণামব্যগ্র দেবতাগণ স্ব স্ব মণিখচিত স্বর্ণমুকুটসমূহ দ্বারা
আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছেন। ( দেবতাগণের প্রণামার্থ অগ্রেসর কেউ বা প্রণম্র কেউ বা
ভুলুষ্ঠিত,দীর্ঘদেহ দীর্ঘমুকুট,-ক্ষুদ্র মানব আমি, আমার দৃষ্টিতে তদ্দ্বারা ব্যবধান ঘটছে,
আমার আর দেখার সাধ্য নাই ) ||১৭||
ত্বমেকো লোকানাং পরমফলদো দিব্যপদবীং
বহন্তস্ত্বন্মূলাং পুনরপি ভজন্তে হরিমুখাঃ ।
কিয়দ্ বা দাক্ষিণ্যং তব শিব মদাশা চ কিয়তী
কদা বা মদ্রক্ষাং বহসি করুণাপূরিতদৃশা ||১৮||
ভাবার্থ - হে শিব, তুমিই সর্বলােকের একমাত্র পরমফলদাতা,
বিষ্ণু প্রভৃতিও মূলতঃ তােমার হতেই দিব্য পদবী লাভ করে আবার তােমাকেই ভজনা করছেন,(
তাই ভাবি ) তােমার দাক্ষিণ্য ( বদান্যতা ) কতখানি, আমার আশাও বা কত বড়, ( কারণ ) করুণা
পূর্ণদৃষ্টিতে আমার রক্ষাভার কবে লবে। অর্থাৎ তােমার দাক্ষিণ্য যতই হোক, আর আমার আশাও
যত বড় হোক,হরি প্রভৃতি দেবতার পুনঃ পুনঃ তপস্যার ফলদানে তুমি এত ব্যগ্র যে, আমার রক্ষাভার
লইবার সময় তুমি যে পাবে, এটা তো মনে হয় না ||১৮||
দুরাশাভূয়িষ্ঠে দুরধিপগৃহদ্বারঘটকে
দুরন্তে সংসারে দুরিতনিলয়ে দুঃখজনকে ।
মদায়াসং কিং ন ব্যপনয়সি কস্যোপকৃতয়ে
বদেয়ং প্রীতিশ্চেত্তব শিব কৃতার্থাঃ খলু বয়ম্
||১৯||
ভাবার্থ - হে শিব, দুষ্টাশাসঙ্কুল দুষ্ট অধিপতির
গৃহ দ্বারা প্রবেশহেতু পাপমন্দির দুঃখজনক দুরন্ত সংসারে আমার গমনাগমন-ক্লেশ কেন অপনীত
করছ না? কার উপকার এতে হচ্ছে বলো—(তবে) যদি এ হতে তােমার প্রীতি, (আমাকে সংসারে ক্লেশ
প্রদানেই তােমার প্রীতি) তা হলে তো আমরা কৃতার্থই হলাম। তােমার প্রীতিতেই আমরা চরিতার্থ
||১৯||
সদা মোহাটব্যাং চরতি যুবতীনাং কুচগিরৌ
নটত্যাশাশাখাস্বটতি ঝটিতি স্বৈরমভিতঃ ।
কপালিন্ ভিক্ষো মে হৃদয়কপিমত্যন্তচপলং
দৃঢ়ং ভক্ত্যা বদ্ধ্বা শিব ভবদধীনং কুরু বিভো
||২০||
ভাবার্থ - হে কপালিন্ ভিক্ষুক, আমার হৃদয়রূপ বানর
অত্যন্ত চঞ্চল, সর্বদা মােহ কাননে যুবতীগণের কুচগিরিতে বিচরণ করে, আশা-তরুশাখানিচয়ে
নৃত্য করে, ক্ষিপ্রচরণে স্বেচ্ছায় ইতস্ততঃ দৌড়ে বেড়ায়, হে বিভাে শিব, একে ভক্তিপাশে
দৃঢ় বন্ধন করে আপনার অধীন করে লন। (বেদিয়ারা বানরের খেলা দেখিয়ে
অর্জন করে, কপাল হস্তে তােমাকে ভিক্ষা করতে হবে না, এই বানরটাকে ধরে পােষ মানাও)
||২০||
ধৃতিস্তম্ভাধারাং দৃঢগুণনিবদ্ধাং সগমনাং
বিচিত্রাং পদ্মাঢ্যাং প্রতিদিবসসন্মার্গঘটিতাম্
।
স্মরারে মচ্চেতঃ স্ফুটপটকুটীং প্রাপ্য বিশদাং
জয় স্বামিন্ শক্ত্যা সহ শিবগণৈঃ সেবিত বিভো ||২১||
ভাবার্থ - হে স্মরারি, আমার এই চিত্ত, বিশদ পটমণ্ডপ
(তাম্বু) রূপে প্রকাশিত, ধৃতি এর আধারস্তম্ভ, এ দৃঢ়গুণে (গুণরজ্জু এবং সত্ত্ব রজঃ
তমঃ) নিবদ্ধ, (অপর মণ্ডপের ন্যায় এ স্থাবর নহে) ইহা গতিযুক্ত, বিচিত্র পদ্মবিশিষ্ট,
(পটমণ্ডপ নানা বর্ণযুক্ত ও পদ্মকাটা; চিত্ত, নানা ভাবময় এবং দ্বাদশদল পদ্মবিশিষ্ট)
এবং প্রতিদিন সন্মার্গে (রাজপথে ও সদাচারে) স্থাপিত, হে বহুগণসেবিত নাথ শিব, হে প্রভু,
শক্তিসহ এসে পরিষ্কৃত এই স্থান জয় করে লন (অধিকার করুন) ||২১||
প্রলোভাদ্যৈরর্থাহরণপরতন্ত্রো ধনিগৃহে
প্রবেশোদ্যুক্তঃ সন্ ভ্রমতি বহুধা তস্করপতে ।
ইমং চেতশ্চোরং কথমিহ সহে শঙ্কর বিভো
তবাধীনং কৃত্বা ময়ি নিরপরাধে কুরু কৃপাম্ ||২২||
ভাবার্থ - উৎকট লােভাদি বশতঃ ধনহরণের জন্য ধনিগণের
ঘরে প্রবেশের উদ্যোগে এই (আমার) চিত্তস্বরূপ তস্কর, অনেকবার ঘুরে বেড়াচ্ছে,হে তস্করপতে,
আমি এ বিষয়ে আর সহ্য করতে পারছি না, হে প্রভু শঙ্কর, (তাকে) তােমার আজ্ঞাধীন করে নিরপরাধ
আমার প্রতি কৃপা কর। (যজুর্বেদে রুদ্রাধ্যায়ে শিবকে তস্কর-পতি বলা হয়েছে, তাই এস্থানেও
সেইরূপ সম্বােধন। ভাবার্থ এই যে, তুমি যখন চোরের রাজা তখন আমার চিত্তরূপী চোরের উপর
তােমার প্রভুত্ব আছেই, আমি তার দৌরাত্ম্য সহ্য করিতে পারছি না, তুমি তাকে শাসন কর)
||২২||
করোমি ত্বৎপূজাং সপদি সুখদো মে ভব বিভো
বিধিত্বং বিষ্ণুত্বং দিশসি খলু তস্যাঃ ফলমিতি ।
পুনশ্চ ত্বাং দ্রষ্টুং দিবি ভুবি বহন্ পক্ষিমৃগতা-
মদৃষ্ট্বা তৎখেদং কথমিহ সহে শঙ্কর বিভো ||২৩||
ভাবার্থ - হে প্রভু, আমি তােমার পূজা করছি, সদ্যঃ
সুখপ্রদান কর। পূজা-ফলে ব্রহ্মপদ বিষ্ণুপদ প্রদান কর বটে, কিন্তু তাতে বড় কষ্ট, পুনরায়
ত তােমাকে (তােমার লিঙ্গাকারের আদি অন্ত) দেখিবার জন্য আকাশে পক্ষী (হংস) এবং ভূতলে
পশু (বরাহ ) রূপ ধারণ করেও (তােমার আদি অন্ত) দেখিতে না পাওয়ায় কষ্ট (পাইতে হইবে)
হে প্রভু শঙ্কর, এ বার (সে কষ্ট) কেমন করে সহ্য করব? ||২৩||
কদা বা কৈলাসে কনকমণিসৌধে সহ গণৈ-
র্বসন শম্ভোরগ্রে স্ফুটঘটিতমূর্ধাঞ্জলিপুটঃ ।
বিভো সাম্ব স্বামিন্ পরমশিব পাহীতি নিগদন্
বিধাতৃৄণাং কল্পান্ ক্ষণমিব বিনেষ্যামি সুখতঃ
||২৪||
ভাবার্থ - আমি কবে বা কৈলাস পর্ব্বতে কনকমণিময়
সৌধে প্রমথগণের সহিত অবস্থিত হয়ে শিবের সম্মুখে মস্তকে সুস্পষ্টভাবে অঞ্জলিপুট স্থাপন
করে প্রভু সাম্ব (গৌরী সমেত) নাথ পরমশিব রক্ষা করুন, এই বাক্য উচ্চারণে বহু ব্ৰহ্মার
কল্পকাল (অধিকার কাল) ক্ষণবৎ সুখে অতিবাহিত করব ||২৪||
স্তবৈর্ব্রহ্মাদীনাং জয়জয়বচোভির্নিয়মিনাং
গণানাং কেলীভির্মদকলমহোক্ষস্য ককুদি ।
স্থিতং নীলগ্রীবং ত্রিনয়নমুমাশ্লিষ্টবপুষং
কদা ত্বাং পশ্যেয়ং করধৃতমৃগং খণ্ডপরশুম্ ||২৫||
ভাবার্থ - ব্ৰহ্মাদি দেবগণকৃত স্তোত্র পাঠ, সংযমিগণের
জয়-জয়-ধ্বনি, এবং প্রমথগণের ক্রীড়া সমম্বয়ে মদমত্ত মহাবৃষভের ককুদমণ্ডলে অবস্থিত
উমালিঙ্গিত মূর্তি মৃগপাণি খণ্ডপরশু ত্রিনেত্র নীলকণ্ঠ তােমাকে কবে বা দর্শন করব
||২৫||
কদা বা ত্বাং দৃষ্ট্বা গিরিশ তব ভব্যাঙ্ঘ্রিয়ুগলং
গৃহীত্বা হস্তাভ্যাং শিরসি নয়নে বক্ষসি বহন্ ।
সমাশ্লিষ্যাঘ্রায় স্ফুটজলজগন্ধান্ পরিমলা-
নলাভ্যাং ব্রহ্মাদ্যৈর্মুদমনুভবিষ্যামি হৃদয়ে
||২৬||
ভাবার্থ - হে গিরিশ, কবে বা তােমাকে দর্শন করে
তােমার শুভ চরণযুগল করদ্বয়ে ধারণপূ্র্বক মস্তকে নয়নে ও বক্ষস্থলে স্থাপন আলিঙ্গন
ও প্রফুল্লকমলতুল্য সৌরভ আঘ্রাণ করে ব্ৰহ্মাদির দুর্লভ আনন্দ হৃদয়ে অনুভব করব ||২৬||
করস্থে হেমাদ্রৌ গিরিশ নিকটস্থে ধনপতৌ
গৃহস্থে স্বর্ভূজাঽমরসুরভিচিন্তামণিগণে ।
শিরঃস্থে শীতাংশৌ চরণয়ুগলস্থেঽখিলশুভে
কমর্থং দাস্যেঽহং ভবতু ভবদর্থং মম মনঃ ||২৭||
ভাবার্থ - হে গিরিশ, হেমগিরি তােমার করতলস্থ, কুবের
নিকটে দণ্ডায়মান, স্বর্গ-মহীরুহ কল্পবৃক্ষাদি, দেব-সুরভি এবং চিন্তামণি সমূহ তােমার
ঘরেই রয়েছে, মস্তকে সুধাকর চরণতলে অশেষ কল্যাণ-তােমাকে কোন বস্তু দিব,
(তােমার কিছুরই তো অভাব নাই) তবুও আমার মন তােমার উদ্দেশ্যে দিব। অর্থাৎ এরূপ বহুরূপী
নিত্যচপল দুর্দমনীয় বস্তু তােমার আয়ত্তে নাই, তাই দিচ্ছি ||২৭||
সারূপ্যং তব পূজনে শিব মহাদেবেতি সঙ্কীর্তনে
সামীপ্যং শিবভক্তিযুক্তজনতাসাঙ্গত্যসম্ভাষণে ।
সালোক্যঞ্চ চরাচরাত্মকতনুধ্যানে ভবানীপতে
সায়ুজ্যং মম সিদ্ধমত্র ভবতি স্বামিন্ কৃতার্থোঽস্ম্যহম্
||২৮||
ভাবার্থ - হে ভবানীপতে, তােমাকে যখন পূজা করি তখন
স্বারূপ্য লাভ হয়, (দেবাে ভূত্বা দেবং যজেৎ আপনাকে দেবতারূপ চিন্তা করে পূজার আরম্ভ)
শিব মহাদেব ইত্যাদি নাম সঙ্কীর্তন কালে তােমার সামীপ্য লাভ হয়, (মদ্ভক্তা যত্র গায়ন্তি
তত্র তিষ্ঠামি নারদ ইত্যাদি ন্যায়াৎ) শিবভক্তগণের সহিত সম্মেলন ও সম্ভাষণ কালে সালােক্যলাভ
হয়, (যেহেতু, ভক্তগণের অবস্থিতি-স্থানই তােমার বাসস্থান-কৈলাস) আর তােমার চরাচরাত্মক
শরীর ধ্যান সময়ে সারূপ্য সামীপ্য সালােক্য ও সাযুজ্য এই চতু্র্ব্বিধ মুক্তিই ইহলােকেই
সিদ্ধ হয়েছে, অতএব হে নাথ, আমরা কৃতার্থ হয়েছি ||২৮||
ত্বৎপাদাম্বুজমর্চয়ামি পরমং ত্বাং চিন্তয়াম্যন্বহং
ত্বামীশং শরণং ব্রজামি বচসা ত্বামেব যাচে বিভো
।
বীক্ষাং মেদিশ চাক্ষুষীং সকরুণাং দিব্যৈশ্চিরং
প্রার্থিতাং
শম্ভো লোকগুরো মদীয়মনসঃ সৌখ্যোপদেশং কুরু ||২৯||
ভাবার্থ - হে প্রভাে, (প্রতিদিন) যেন তােমার চরণকমল
পূজা করিতে পারি, পরমবস্তু তােমার চিন্তায় যেন প্রতিদিন রত থাকি, ঈশ্বর তুমি, (প্রতিদিন)
তােমারই যেন শরণাপন্ন হয়ে থাকি, মুখ ফুটে যাচ্ঞা একমাত্র তােমার নিকটেই যেন করি। হে
লােকগুরু শম্ভু, স্বর্গবাসীর চিরপ্রার্থিত কৃপাকটাক্ষপাত আমার প্রতি কর, আমার মন যাতে
সুখী হয়, এইরূপ উপদেশ কর ||২৯||
বস্ত্রোদ্ধূতবিধৌ সহস্রকরতা পুষ্পার্চনে বিষ্ণুতা
গন্ধে গন্ধবহাত্মতাঽন্নপচনে বর্হির্মুখাধ্যক্ষতা
।
পাত্রে কাঞ্চনগর্ভতাস্তি ময়ি চেদ্ বালেন্দুচূড়ামণে
শুশ্রূষাং করবাণি তে পশুপতে স্বামিন্ ত্রিলোকীগুরো
||৩০||
ভাবার্থ - হে শশিকলাবতংস, আমি বস্ত্র সম্পর্কিত
বিধিপ্রসঙ্গে (বস্ত্ৰ দ্বারা তােমার পূজা, উপযুক্ত পাত্রে তার উপযােগ, তামার প্রীত্যর্থ
যতি, ব্রহ্মচারী ও গৃহস্থ ব্রাহ্মণকে বস্ত্ৰ দান ইত্যাদি কার্য্য) আমি যদি সহস্রকর
(সূর্য্য অথচ সহস্র হস্ত) হতে পারি, (সূর্য্য হতেই বৃষ্টি হয়, সূর্য্যের জল বর্ষণের
ন্যায়, আমি যদি অকাতরে বস্ত্র দান করতে পারি) পুষ্পদ্বারা পূজা কার্য্যে যদি বিষ্ণু
হতে পারি, (বিষ্ণু সহস্র পদ্মপুষ্প দ্বারা তােমার পূজা করতে বসে যখন দেখলেন একটি পদ্ম
কম, তখন তিনি নিজ নয়নপদ্ম উৎপাটন করে তা পূর্ণ করেন, পুষ্পদ্বারা পূজায় বিষ্ণুর এই
উৎকর্ষ যদি আমার হয়) গন্ধ সম্বন্ধে যদি গন্ধবহস্বরূপ হতে পারি, (গন্ধবহ অনায়াসে বিবিধ
গন্ধ আহরণ করেন) আমার করণীয় অন্নপাকে যদি দেবগণ অধ্যক্ষতা করেন, (আমার কোনরূপ আয়ােজন
বা শ্রম করতে হবে না দেবতারাই সব করে লবেন) পাত্র অর্থাৎ পূজা-যােগ্যতা বিষয়ে যদি
আমি হিরণ্যগর্ভ বলে নির্ণীত হতে পারি, তা হলে হে ত্রিলােকী গুরু নাথ পশুপতি, তােমার
শুশ্রষা (পূজাদি-সেবা) করি ||৩০||
নালং বা পরমোপকারকমিদং ত্বেকং পশূনাং পতে
পশ্যন্ কুক্ষিগতান্ চরাচরগণান্ বাহ্যস্থিতান্ রক্ষিতুম্
।
সর্বামর্ত্যপলায়নৌষধমতিজ্বালাকরং ভীকরং
নিক্ষিপ্তং গরলং গলে ন গিলিতং নোদ্গীর্ণমেব ত্বয়া
||৩১||
ভাবার্থ - হে পশুপতে, (লােক প্রতীতি-অনুসারে) বহিঃস্থিত
চরাচরগণকে স্বীয় জঠরস্থ দেখে সর্বদেবগণ পলায়নজনক ঔষধ অতিদাহকর ভীষণ গরল তুমি (নিজ)
গলদেশে নিক্ষেপ করলে কিন্তু তা গিলেও ফেল নাই উদগীর্ণ ও করো নাই, (ব্রহ্মাণ্ড তােমার
জঠরে, সুতরাং গরল গিলে ফেললে প্রকৃতপক্ষে ব্ৰহ্মাণ্ডের সর্বপ্রাণী বিধ্বস্ত হবে, উদগীর্ণ
করলে লােকপ্রতীতি মতে বাইরে পড়াতে বাইরের তাবৎ প্রাণীই মরে যাবে। এই জন্যই তুমি সেই
গরল আপন গলদেশেই রেখেছ, উদরেও দাও নাই, বাইরেও ফেল নাই) এই একটি মাত্র কার্য্য কিন্তু
পরম উপকারক (এ) পর্য্যাপ্ত নয় কি? ||৩১||
জ্বালোগ্রঃ সকলামরাতিভয়দঃ ক্ষেলঃ কথং বা ত্বয়া
দৃষ্টঃ কিং চ করে ধৃতঃ করতলে কিং পক্বজম্বূফলম্
।
জিহ্বায়াং নিহিতশ্চ সিদ্ধঘুটিকা বা কণ্ঠদেশে ভৃতঃ
কিং তে নীলমণির্বিভূষণময়ং শম্ভো মহাত্মন্ বদ
||৩২||
ভাবার্থ - উগ্র জ্বালাকুল সৰ্ব্বদেব-মহাভীতিপ্রদ
(যে ভয়ে তারা পলায়ন-তৎপর) সেই কালকূট তুমি (নিরুদ্বেগে) দেখলে কিরূপে? (কেবল দেখা
নয়) আবার হস্তে গ্রহণ করলে! (আহা) করতলে পক্ক জম্বুফল লইলে না কি (কেবল হস্ত লওয়াও
নয়) আবার জিহ্বায় রাখলে!! ওটা কি সিদ্ধবটিকা! আবার কণ্ঠদেশেও যে স্থান দিলে !! ওটা
কি তােমার কণ্ঠভূষণ না নীলমণি? মহাত্মন শম্ভো বল, —অর্থাৎ প্রশ্নের উত্তর দাও ||৩২||
নালং বা সকৃদেব দেব ভবতঃ সেবা নতির্বা নুতিঃ
পূজা বা স্মরণং কথাশ্রবণমপ্যালোকনং মাদৃশাম্ ।
স্বামিন্নস্থিরদেবতানুসরণায়াসেন কিং লভ্যতে
কা বা মুক্তিরিতঃ কুতো ভবতি চেৎ কিং প্রার্থনীয়ং
তদা ||৩৩||
ভাবার্থ - হে দেব, মাদৃশ ব্যক্তির পক্ষে একবার
ও আপনার সেবা, নমস্কার, স্তব, পূজা, স্মরণ, কথা শ্রবণ ও প্রতিমা বা লিঙ্গে দর্শনও যথেষ্ট
নয় কি? হে নাথ, অনিত্য দেবতার অনুবর্তন ক্লেশে (সালােক্যাদির মধ্যে) লাভ করা যায়,
কোনও মুক্তি লাভ করা যায় কি? যদি বল এ (অনিত্য) দেবতা-সেবায় কোথায় হতে তা হবে তাহলে
(আমি বলি) আর প্রার্থনীয় কি আছে ||৩৩||
কিং ব্রূমস্তব সাহসং পশুপতে কস্যাস্তি শম্ভো ভব-
দ্ধৈর্যং চেদৃশমাত্মনঃ স্থিতিরিয়ং চান্যৈঃ কথং
লভ্যতে ।
ভ্রশ্যদ্দেবগণং ত্রসন্মুনিগণং নশ্যৎপ্রপঞ্চং লয়ং
পশ্যন্নির্ভয় এক এব বিহরত্যানন্দ সান্দ্রো ভবান্
||৩৪||
ভাবার্থ - হে পশুপতে, তােমার সাহসের বর্ণনা কি
করব, হে শম্ভো, ঈদৃশ ধৈর্য্য হওয়া (অন্য) কার সম্ভবপর? তােমার এইরূপ স্থিরতা অন্যে
কি পেতে পারে? আপনি দেখলেন, দেবগণ একে একে স্থানভ্রষ্ট হচ্ছেন, মুনিগণ শঙ্কায় আকুল
(অধিক কি) সমগ্র জগৎ বিনষ্ট হল—ঘাের প্রলয়কাল, (কিন্তু) এক আপনি নির্ভয়ে আনন্দঘনস্বরূপে
বিহার করে থাকেন ||৩৪||
যোগক্ষেমধুরন্ধরস্য সকলশ্রেয়ঃপ্রদোদ্যোগিনো
দৃষ্টাদৃষ্টমতোপদেশকৃতিনো বাহ্যান্তরব্যাপিনঃ ।
সর্বজ্ঞস্য দয়াকরস্য ভবতঃ কিং বেদিতব্যং ময়া
শম্ভো ত্বং পরমান্তরঙ্গ ইতি মে চিত্তে স্মরাম্যন্বহম্
||৩৫||
ভাবার্থ - হে শম্ভো, আপনি যােগক্ষেমধুরন্ধর, ভক্তগণের
অলব্ধ বস্তু সংগ্রহ এবং লব্ধের সংরক্ষণ ভার আপনি স্বয়ং গ্রহণ করে থাকেন,আপনার নিত্য
উদযােগ সর্বিধ শ্রেয়ঃপ্রদ, আপনি দৃষ্ট ফল চিকিৎসাদি শাস্ত্র এবং অদৃষ্ট ফল যজ্ঞাদি
শাস্ত্র উপদেশে কৃতী, (অধিক কি বলিব) আপনি বাহ্য ও অভ্যন্তর সর্ব্ব্যাপী, আপনি সর্ব্বজ্ঞ,
কৃপাময়, আমি জানতে সমর্থ হই, এমন আপনার কি আছে (আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান, আপনার অনন্ত মহিমার
কোন অংশই আয়ত্ত করতে সমর্থ নয়) আপনি আমার পরম অন্তরঙ্গ, এই কথা নিরন্তর মনে মনে স্মরণ
করিতেছি ||৩৫||
ভক্তো ভক্তিগুণাবৃতে মুদমৃতাপূর্ণে প্রসন্নে মনঃ
কুম্ভে সাম্ব তবাঙ্ঘ্রিপল্লবয়ুগং সংস্থাপ্য সংবিৎফলম্
।
সত্বং মন্ত্রমুদীরয়ন্নিজশরীরাগারশুদ্ধিং বহন্
পুণ্যাহং প্রকটীকরোমি রুচিরং কল্যাণমাপাদয়ন্
||৩৬||
ভাবার্থ - হে অর্দ্ধনারীশ্বর, ভক্তিসূত্রে আবৃত,
আনন্দসলিলে আপূরিত, প্রসন্ন মদীয় মনােরূপ কুম্ভে জ্ঞানফলযুক্ত ভবদীয় চরণপল্লবযুগল
স্থাপন করে ভক্ত আমি সত্ত্বগুণরূপ মন্ত্রযােগে শরীররূপ গৃহশুদ্ধি সম্পাদনার্থ মঙ্গলাচরণরূপে
রমণীয় পুণ্যাহ' প্রকাশ করছি ||৩৬||
আম্নায়াম্বুধিমাদরেণ সুমনঃ সঙ্ঘাঃ সমুদ্যন্ মনো
মন্থানং দৃঢ়ভক্তিরজ্জুসহিতং কৃত্বা মথিত্বা তবঃ
।
সোমং কল্পতরুং সুপর্বসুরভিং চিন্তামণিং ধীমতাং
নিত্যানন্দসুধাং নিরন্তররমাসৌভাগ্যমাতন্বতে ||৩৭||
ভাবার্থ - ( হে শিব ) সুমনঃসমূহ, পূর্ণ উদ্যমশীল
মনঃস্বরূপ মন্থনদণ্ডকে তােমার প্রতি দৃঢ়ভক্তিরূপ রজ্জুসংযুক্ত করে তােমার আম্নায়রূপ
সমুদ্রকে সাদরে মন্থন করত, সােম, কল্পতরু, দেবসুরভি, চিন্তামণি, নিত্যানন্দসুধা এবং
নিরন্তর শ্রীসৌভাগ্য উপযুক্ত ধীসম্পন্নদিগের জন্য সম্পন্ন করেছেন ||৩৭||
প্রাক্ পুণ্যাচলমার্গদর্শিতসুধামূর্তিঃ প্রসন্নঃ
শিবঃ
সোমঃ সদ্গুণসেবিতো মৃগধরঃ পূর্ণস্তমোমোচকঃ ।
চেতঃ পুষ্করলক্ষিতো ভবতি চেদানন্দবারাংনিধিঃ
প্রাগল্ভ্যেন বিজৃম্ভতে সুমনসাং বৃত্তিস্তদা জায়তে
||৩৮||
ভাবার্থ - সদ্গণসেবিত মৃগধর শিব প্রসন্ন হয়ে
( যখন ) পূর্ণ ( তখন তিনি ) সােম, প্রাক্পুণ্যাচলমার্গে ( পূর্বকৃত পুণ্যকার্য্যের
স্থির পদ্ধতি অনুসারে ) তার সুধা ( প্রণব ) মূর্তি সন্দর্শিত হয়, তখন তিনি তমােমোচক
( অজ্ঞান বা তমােগুণ হতে মুক্তিদান করেন ) মনঃপুষ্করে ( হৃৎকমলে ) তাকে যদি দেখা যায়
তাহলে আনন্দ সমুদ্র প্রবলবেগে উচ্ছলিত হয়, তখন উৎকৃষ্ট ধীবৃত্তি সমূহ অর্থাৎ প্রশান্তবাহি
তা হয়ে থাকে। ( লােক প্রসিদ্ধ সােমপক্ষে ) পুরাকালে পবিত্র মন্দর
পর্বত দ্বারা অন্বেষণ অর্থাৎ আলােড়ন ফলে যে সুধামূর্তি দৃষ্টিগােচর হন তিনি সােম,
তিনি স্বরূপ অর্থাৎ শিবের সপ্তমী মূর্তি, তিনি মৃগধর মৃগচিহ্নধারী শশাঙ্ক, তিনি সজ্জনগণের
দ্বিজগণের সেবিত, দ্বিজরাজ; তিনি নির্মল ও পূর্ণ হয়ে তমােমােচক অর্থাৎ অন্ধকার বিনাশ
করেন। চেতঃ ( চ+ই তঃ ) এই পৃথিবী হতে পুষ্করে অর্থাৎ আকাশে লক্ষিত হলে, আনন্দযুক্ত
সমুদ্র সত্বর উচ্ছলিত হয়ে উঠে এবং সুমনঃ কুমুদ প্রভৃতি পুষ্প তৎকালে প্রস্ফুটিত হয়,
অথবা সুমনাঃ দেবগণ তাদের বৃত্তি জীবনরক্ষা তখন অর্থাৎ সােম আর্বিভাবেই হলো
||৩৮||
ধর্মো মে চতুরঙ্ঘ্রিকঃ সুচরিতঃ পাপং বিনাশং গতং
কামক্রোধমদাদয়ো বিগলিতাঃ কালাঃ সুধাবিষ্কৃতঃ ।
জ্ঞানানন্দমহৌষধিঃ সুফলিতা কৈবল্যনাথে সদা
মান্যে মানসপুণ্ডরীকনগরে রাজাবতংসে স্থিতে ||৩৯||
ভাবার্থ
- সদামান্য কৈবল্যনাথ রাজাবতংস অর্থাৎ চন্দ্রমৌলি যখন আমার মানসপুণ্ডরীকনগরে হৎপদ্মপুরে
অবস্থিত তখন ( বুঝেছি ) আমার চতুষ্পাদ ধৰ্ম উত্তমরূপে আচরিত হয়েছে, পাপ বিনষ্ট হয়েছে
কামক্রোধাদি (ষড়-রিপু) চলে গিয়েছে। অমৃতপ্রদকাল উপস্থিত, এবং জ্ঞানানন্দ ফলপ্রসবিনী উৎকৃষ্ট
ওষধি ফলিত হয়েছে ||৩৯||
বিশেষ কথা-ভগবান্ শঙ্করাচার্য যখন পাণ্ডুরঙ্গ দর্শন
করেন, তখনই সম্ভবতঃ এই শ্লোকটি আচার্য্যের শ্রীমুখ হতে নিঃসৃত হয়েছিল। মূলের 'পুণ্ডরীক'
ও 'রাজাবতংস' এই দুইটি শব্দ হতে ওটা লক্ষ্য হয়। পাণ্ডুরঙ্গ যে স্থানে অবস্থিত তা প্রাচীন
পুণ্ডরীকপুর, পুণ্ডরীক নগর তারই প্রতিশব্দ। পাণ্ডুরঙ্গ নামক পুণ্ডরীকপুররাজের
অবতংস শিবলিঙ্গ। এতে রাজার (পাণ্ডুরঙ্গ দেবের) অবতংস এইরূপ অর্থ হয় পদটি তৎপুরুম সমাস
নিষ্পন্ন হল। রাজা শব্দের অর্থ চন্দ্র ও আছে, চন্দ্র অর্থ হলে 'রাজাবতংস' পদ বহুব্রীহি
সমাস নিষ্পন্ন ; সর্বসাধারণে প্রসিদ্ধ বলে তার অনুবাদ হয়েছে -চন্দ্রমৌলি'। কিন্তু
চন্দ্রাবতংসে না বলে রাজাবতংসে' বলাতেই মনে হয়, পাণ্ডুরঙ্গের শিরােভূষণ স্বরূপ শিবলিঙ্গ
দেখেই এই পদ রচিত।
ধীয়ন্ত্রেণ বচোঘটেন কবিতাকুল্যোপকুল্যা ক্রমৈ-
রানীতৈশ্চ সদাশিবস্য চরিতাম্ভোরাশিদিব্যামৃতৈঃ
।
হৃৎকেদারয়ুতাশ্চ ভক্তিকলমাঃ সাফল্যমাতন্বতে
দুর্ভিক্ষান্মম সেবকস্য ভগবন্ বিশ্বেশ ভীতিঃ কুতঃ
||৪০||
ভাবার্থ - ( পূর্ব মনীষিগণের ) কবিতারূপ কুল্যা
( খাল ) এবং উপকুল্যা ( নালী ) হতে পরম্পরাক্রমে বুদ্ধিরূপ যন্ত্রে বাক্যরূপ ঘটে সংগৃহীত
দিব্য অমৃততুল্য সদাশিবের চরিত সলিল দ্বারা অভিষিক্ত হৃদয়ক্ষেত্রে রােপিত ভক্তিস্বরূপ
কলমধান্য, সফলতা ( সদাশিবের প্রসন্নতা বা মুক্তিরূপ শস্যসম্পদ ) বিস্তার করে, হে ভগবন্
বিশ্বনাথ,-সেচক আমার দুরভক্ষ হতে ভয় কি হেতু হবে? ( এখানে 'দুর্ভিক্ষ' শব্দের অর্থ-
শিবকৃপা লাভের অভাব বা সংসার তপ ) ||৪০||
পাপোৎপাতবিমোচনায় রুচিরৈশ্বর্যায় মৃত্যুঞ্জয়
স্তোত্র ধ্যান নতি প্রদক্ষিণ সপর্যালোকনাকর্ণনে
।
জিহ্বাচিত্তশিরোঽঙ্ঘ্রি হস্তনয়নশ্রোত্রৈরহং প্রার্থিতো
মামাজ্ঞাপয়তন্নিরূপয় মুহুর্মামেব মা মেঽবচঃ ||৪১||
ভাবার্থ - হে মৃত্যুঞ্জয়, পাপের উৎপাতনিবৃত্তি
ও উত্তম ঐশ্বর্য্য লাভের জন্য জিহ্বা তােমার স্তোত্রপাঠের, চিত্ত তােমার ধ্যানের, মস্তক
তােমার প্রণামের, পাদদ্বয় তোমার প্রদক্ষিণের, হস্তদ্বয় তােমার পূজার, নয়ন তােমার
মূর্তি দর্শনের, শ্রােত্র তােমার চরিতকথা শ্ৰবণের জন্য আমার নিকটে প্রার্থনা করেছিল,-তুমি
আমাকে ( সেই প্রার্থনা পুরণ ) আজ্ঞা প্রদান কর, অথবা বারংবার আমাকেই ( সেই সেই অবয়ব
দ্বারা ) সেই সেই কার্য্য সম্পাদন-কর্তৃত্ব প্রদান কর, আমার প্রতি নিরুত্তর থাকিও না
||৪১||
গাম্ভীর্যং পরিখাপদং ঘনধৃতিঃ প্রাকার উদ্যদ্ গুণ-
স্তোমশ্চাপ্তবলং ঘনেন্দ্রিয়চয়ো দ্বারাণি দেহে স্থিতঃ
।
বিদ্যা বস্তুসমৃদ্ধিরিত্যখিলসামগ্রী সমেতে সদা
দুর্গাতিপ্রিয়দেব মামকামনোদুর্গে নিবাসং কুরু
||৪২||
ভাবার্থ - হে দুর্গাতিপ্রিয় ( দুর্গার অতিপ্রিয়
অথচ দুর্গের প্রতি অতীব প্রীতিসম্পন্ন ) আমার হৃদয় দুর্গে সদা বাস কর; ( এই হৃদয়
দুর্গে ) গাম্ভীর্য্যই পরিখাস্থানাপন্ন, প্রভূত ধৃতি এর প্রাকার, মৈত্রীকরুণাদি উদীয়মান
গুণসমূহ বিশ্বস্ত সৈন্য, শরীরস্থ সংঘত ইন্দ্রিয়সমূহ এর দ্বার, আর বিদ্যা এর দ্রব্যসমৃদ্ধি
এই প্রকার পরিপূর্ণতা এই দুর্গে আছে ||৪২||
মা গচ্ছত্বমিতস্ততো গিরিশ ভো ময়্যেব বাসং কুরু
স্বামিন্নাদিকিরাত মামকমনঃকান্তারসীমান্তরে ।
বর্তন্তে বহুশো মৃগা মদজুষো মাৎসর্যমোহাদয়-
স্তান্ হত্বা মৃগয়াবিনোদ রুচিতালাভং চ সম্প্রাপ্স্যসি
||৪৩||
ভাবার্থ - হে গিরিশ, এথা সেথা করে ঘুরো না, হে
নাথ, আমাতেই স্থির হয়ে থাক। হে আদি-কিরাত, আমার মনঃস্বরূপ কান্তারসীমান্ত মধ্যে মাৎসর্য্যমােহ
প্রভৃতি স্বরূপ বহু বহু মৃগ বর্তমান, তাহারা মদযুক্ত; ( মৃগমদ মৃগনাভি, অথচ মদগর্ব
) এদেরকে নিহত করে মৃগয়াবিনােদ জীবিত প্রীতিলাভও করতে পারবে ||৪৩||
করলগ্নমৃগঃ করীন্দ্রভঙ্গো
ঘনশার্দূলবিখণ্ডনোঽস্তজন্তুঃ ।
গিরিশো বিশদাকৃতিশ্চ চেতঃ-
কুহরে পঞ্চমুখোঽস্তি মে কুতো ভীঃ ||৪৪||
ভাবার্থ - পঞ্চাস্য-সিংহ যার বশীভূত হয়ে তারই
নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষার্থ বাস করে, তার অপর প্রাণীর আক্রমণভীতি থাকে না, আমার হৃদয়রূপ
গিরিগুহাতেও যে পঞ্চাস্য আসীন, আমার ভয় কোথা হতে হবে? ||৪৪||
ছন্দঃশাখিশিখান্বিতৈর্দ্বিজবরৈঃ সংসেবিতে শাশ্বতে
সৌখ্যাপাদিনি খেদভেদিনি সুধাসারৈঃ ফলৈর্দীপিতে
।
চেতঃপক্ষিশিখামণে ত্যজ বৃথাসঞ্চারমন্যৈরলং
নিত্যং শঙ্করপাদপদ্ময়ুগলীনীড়ে বিহারং কুরু ||৪৫||
ভাবার্থ - হে চিত্তস্বরূপ পক্ষি-শিরােরত্ন ! অন্য
কর্মে ফল নাই, বৃথা সঞ্চরণ পরিত্যাগ কর। শঙ্করের পাদপদ্মযুগ স্বরূপ সুখপ্রদ দুঃখহারী
অমৃতরসপূর্ণ ফলসমূহে মনােহর, শাশ্বত বিশ্রামনীড়ে সর্বদা বিহার কর, ছন্দঃশাখি-শিখা-সমন্বিত
দ্বিজ শ্রেষ্ঠগণ ( চরণপক্ষে বেদশাখাভিজ্ঞ ও বেদান্তবিদ্ ব্রাহ্মণগণ ; নীড়পক্ষে
অভিলাষানুরূপ বৃক্ষবিহারী, চূড়াশােভিত উত্তম পক্ষিকুল ) ঐ চরণনীড়ের সম্যক সেবনে তৎপর
||৪৫||
আকীর্ণে নখরাজিকান্তিবিভবৈরুদ্যৎসুধাবৈভবৈ-
রাধৌতেঽপি চ পদ্মরাগললিতে হংসব্রজৈরাশ্রিতে ।
নিত্যং ভক্তিবধূগণৈশ্চ রহসি স্বেচ্ছাবিহারং কুরু
স্থিত্বা মানসরাজহংস গিরিজানাথাঙ্ঘ্রি সৌধান্তরে
||৪৬||
ভাবার্থ - হে মানস-রাজহংস, ( মনঃস্বরূপ রাজহংস,
অথচ মানস সরােবরবিহারী রাজহংস ) নখরাজির শুভ্রকান্তির উৎকর্ষে সুধালেপের সমৃদ্ধিসম্পন্ন,
ও সুপ্রক্ষালিত, পদ্মরাগ-মণির ন্যায় মনােহর, হংসকুলের ( সিদ্ধসন্ন্যাসিগণের অথচ মরালকুলের
) আশ্রয়, গিরিজাপতিচরণসৌধাভ্যন্তরে অবস্থিত হয়ে নির্জনে ভক্তিরূপিণী বধূগণের সহিত
সদা স্বেচ্ছাবিহার কর ||৪৬||
শম্ভুধ্যানবসন্তসঙ্গিনি হৃদারামেঽঘজীর্ণচ্ছদাঃ
স্রস্তা ভক্তিলতাচ্ছটা বিলসিতাঃ পুণ্যপ্রবালশ্রিতাঃ
।
দীপ্যন্তে গুণকোরকা জপবচঃ পুষ্পাণি সদ্বাসনা
জ্ঞানানন্দসুধামরন্দলহরী সংবিৎ ফলাভ্যুন্নতিঃ
||৪৭||
ভাবার্থ - শিবধ্যানরূপ বসন্তকালের সমাগমে হৃদয়
উদ্যানের পাপরূপ জীর্ণপত্র সমূহ স্খলিত, পুণ্যরূপ কিশলয়মণ্ডিত ভক্তিলতা-পত্রসমূহ শােভান্বিত
হয়েছে,গুণরূপ কলিকা এবং জপবচনরূপ পুষ্পরাজি শােভা পাচ্ছে, সদ্বাসনাত্মক জ্ঞানানন্দসুধাময়
মকরন্দধারা তাতে বয়ে যাচ্ছে; সংবিৎ অর্থাৎ পরমাত্মসাক্ষাৎকার তারই উৎকৃষ্ট ফল ||৪৭||
নিত্যানন্দরসালয়ং সুরমুনিস্বান্তাম্বুজাতাশ্রয়ং
স্বচ্ছং সদ্দ্বিজসেবিতঃ কলুষহৃৎসদ্বাসনাবিষ্কৃতম্
।
শম্ভুধ্যানসরোবরং ব্রজ মনো হংসাবতংস স্থিরং
কিং ক্ষুদ্রাশ্রয়পল্ললভ্রমণসঞ্জাতশ্রমং প্রাপ্স্যসি
||৪৮||
ভাবার্থ - হে মনঃস্বরূপ হংসরাজ, পল্বলসদৃশ ক্ষুদ্র
বিষয়ে ভ্রমণজনিত শ্রম বৃথা অর্জন করবে কেন? নিশ্চল স্বচ্ছ শিবধ্যান-সরােবরে গমন কর।
তাঁর রস নিত্যানন্দময়, দেবতা ও মুনিগণের হৃদয়পদ্ম তথায় বিকসিত, ওটা সদ্ দ্বিজগণের
( ব্রাহ্মণ ও জলচর পক্ষিবৃন্দের ) সেবিত, মলিনতা হরণে সক্ষম ও সদ্বাসনা ( উত্তম সংস্কার
ও সৌরভ ) দ্বারা আবিষ্কৃত ||৪৮||
আনন্দামৃতপূরিতা হরপদাম্ভোজালবালোদ্যতা
স্থৈর্যোপঘ্নমুপেত্য ভক্তিলতিকা শাখোপশাখান্বিতা
।
উচ্ছৈর্মানসকায়মানপটলীমাক্রম্য নিষ্কল্মষা
নিত্যাভীষ্টফলপ্রদা ভবতু মে সৎকর্মসংবর্ধিতা
||৪৯||
ভাবার্থ - শিবচরণকমলরূপ আলবাল হতে উত্থিতা, আনন্দামৃতরসপূরিতা,
নির্মল ভক্তিলতা স্থৈর্যরূপ আশ্রয়লাভে শাখা-প্রশাখাসম্পন্না, মন ও শরীরের অহঙ্কারসমূহকে
আক্রমণ পূর্ব্বক উন্নতি প্রাপ্ত এবং সৎ কর্ম দ্বারা সংবর্ধিত হয়ে আমার নিত্য অভীষ্ট
ফলপ্রদায়িনী হোক ||৪৯||
সন্ধ্যারম্ভবিজৃম্ভিতং শ্রুতিশিরস্থানান্তরাধিষ্ঠিতং
সপ্রেমভ্রমরাভিরামমসকৃৎ সদ্বাসনাশোভিতম্ ।
ভোগীন্দ্রাভরণং সমস্তসুমনঃপূজ্যং গুণাবিষ্কৃতং
সেবে শ্রীগিরিমল্লিকার্জুনমহালিঙ্গং শিবালিঙ্গিতং
||৫০||
ভাবার্থ - (১) শ্রীশৈলস্থিত মল্লিকার্জুন নামক
মহাশিবলিঙ্গকে আমি সেবা করি, (২) সেই মহালিঙ্গ পাৰ্বতী কর্তৃক আলিঙ্গিত, (৩) সন্ধ্যারম্ভে
আরাত্রিক উৎসবে তার শােভাবৃদ্ধি হয়, (৪) বেদান্ত ভাগের অভ্যন্তরে তার অধিষ্ঠান অর্থাৎ
উপনিষদ স্বীয় নিগূঢ় অর্থে তদধিষ্ঠিত তত্ত্বের প্রতিপাদন করে থাকেন, (৫) তিনি ভক্তজনের
প্রতি প্রেমাম্বিত এবং সেই মহালিঙ্গ ভ্রমরকৃষ্ণ, (৬) বারংবার সুগন্ধ অঙ্গসংস্কারে,
অথবা সদাশয়গণের কামনা অনুসারে সুশােভিত, (৭) সর্পরাজ তার ভূষণ, (৮) সমস্ত দেবগণের
তিনি পূজ্য এবং (৯) তিনি ত্রিগুণা প্রকৃতির গুণেই আবিষ্কৃত হয়েছেন! এই মহাশিবলিঙ্গ সেবা যে তৃপ্তিপ্রদ, তা বুঝার জন্য
সংস্কৃত শ্লোকটিকে দ্ব্যর্থ করে রচনা করা হয়েছে, দ্বিতীয়ার্থ যথা,--(১) সৌন্দর্য্যের
উন্নত আকর–মল্লিকা কুসুমস্বরূপ শ্বেতবর্ণের মহৎ চিহ্নকে আমি সেবন করি, ( সেই বর্ণ দেখলে
মনে হয় ) (২) শিব তাকে আলিঙ্গন করে আছেন,( মল্লিকা পুষ্প শিবপ্রিয় মল্লিকার বর্ণ
শুভ্র, শিবের বর্ণও শুভ্র ) (৩) মল্লিকাকুসুম সন্ধ্যার আরম্ভে বিকসিত হতে থাকে, (৪)
সেই পুষ্প সেবন সময়ে কর্ণে, মস্তকে, এবং কণ্ঠ প্রভৃতি অপর স্থানে তা ধারণ করতে হয়,
(৫) অনুরক্ত ভ্রমরগণ তার রমণীয়তা বৃদ্ধি করে থাকে, (৬) বারংবার সুগন্ধ ও শােভাবিস্তার
তার কার্য্য; (৭) ভােগরত প্রধান ব্যক্তিগণের ওটা ভূষণ, (৮) সমস্ত পুষ্পসমূহের মধ্যে
আদরণীয় এবং (৯) সৌরভগুণে সুপ্রকাশিত। তাৎপর্য্য এই যে-বিলাসীর মল্লিকাকুসুমসেবনের
ন্যায় শ্ৰীশৈলস্থিত শিবলিঙ্গ সেবা আমায় অনাবিল আনন্দ প্রদান করে থাকেৎ||৫০||
ভৃঙ্গীচ্ছানটনোৎকটঃ করমদিগ্রাহী স্ফুরন্মাধবাহ্লাদো
নাদয়ুতো মহাসিতবপুঃ পঞ্চেষুণা চাদৃতঃ ।
সৎপক্ষঃ সুমনোবনেষু স পুনঃ সাক্ষান্মদীয়ে মনো-
রাজীবে ভ্রমরাধিপো বিহরতাং শ্রীশৈলবাসী বিভু:
||৫১||
ভাবার্থ - (১) যিনি ভৃঙ্গীর ইচ্ছায় নৃত্যমত্ত,
(২) গজমদহারী অর্থাৎ গজাসুরের দর্পহারী (৩) শ্রীনারায়ণহর্ষপ্রদাতা, (৪) নাদে মিলিত
অথবা নৃত্যকালীন ঢক্কা নিনাদে সঙ্গত, (৫) মহাসিত দেহ অতীব শুভ্রদেহ, (৬) কামাদৃত (কামের
অদৃত কামদেবের বৈরপাত্র (৭) সুমনােঽবনে–দেবগণের রক্ষা কার্য্যে, সৎপক্ষ প্রকৃষ্ট সাহায্যকর্ত্তা,
সেই সাক্ষাৎ শ্রীশৈলবাসী মহেশ্বর, আজ আমার হৃদয় পদ্মে (৮) ভ্রমরাধিপরূপে বিহার করুন।
( এ প্রার্থনা অসঙ্গত নয়, কারণ, ভ্রমরাধিপও যে ভৃঙ্গীর ( ভ্রমরীর )
লালসায় নেচে থাকে, ভ্রমরও গজমদহারী অর্থাৎ গজের মদজল গ্রহণ করে থাকে এবং মহাসিতদেহ
অতীব অসিতদেহ কৃষ্ণবর্ণ, ভ্রমরও কামাদৃত ( কামের আদর পাত্র ) ভ্রমরও সুমনােবনে অর্থাৎ
পুষ্পকাননে সৎপক্ষ সঞ্চরণশীল, (এইরূপে ভ্রমর ও শিবের সমধর্মতা আছে; কিন্তু হৃৎপদ্মে
বিহার নাই, আমার হৃৎপদ্মে তিনি বিহার করলে ভ্রমরের সমস্ত ধর্মই পালন করা হয়) ||৫১||
কারুণ্যামৃতবর্ষিণং ঘনবিপদ্ গ্রীষ্মচ্ছিদাকর্মঠং
বিদ্যাশস্যফলোদয়ায় সুমনঃসংসেব্যমিচ্ছাকৃতিম্ ।
নৃত্যদ্ভক্তময়ূরমদ্রিনিলয়ং চঞ্চজ্জটামণ্ডলং
শম্ভো বাঞ্ছতি নীলকন্ধর সদা ত্বাং মে মনশ্চাতকঃ
||৫২||
ভাবার্থ - হে শম্ভো, হে নীলকন্ধর, ( নীলকণ্ঠ অথচ
নীলমেঘ ) আমার মনােরূপী চাতক তােমার অভিলাষী, তুমি কারুণ্যামৃতবর্ষী, তুমি ঘন বিপজ্জালরূপ
গ্রীষ্ম-নিবারণনিপুণ, বিদ্যারূপ শস্যফললাভার্থ সজ্জনগণ তােমার সেবক-আশ্রিত হয়। ভক্ত
ময়ূরগণ তােমার জন্য নৃত্য করে থাকে, তােমার জটামণ্ডল দোদুল্যমান-মেঘের ও জটাকৃতি মণ্ডল-ইতস্ততঃ
সঞ্চরণশীল,-( তুমি ও মেঘ উভয়েই কামরূপী ও শৈলনিলয়, –শিব কৈলাসবাসী, মেঘ পৰ্ব্বতে
নিলীন হয়, অতএব মেঘ সদৃশ তােমাকে আমার চাতকতুল্য মন যে অভিলাষ করবে এটাতো স্বাভাবিক
||৫২||
আকাশেন শিখী সমস্তফণিনাং নেত্রা কলাপী নতা-
ঽনুগ্রাহি প্রণবোপদেশনিনদৈঃ কেকীতি যো গীয়তে ।
শ্যামাং শৈলসমুদ্ভবাং ঘনরুচিং দৃষ্ট্বা নটন্তং
মুদা
বেদান্তোপবনে বিহাররসিকং তং নীলকণ্ঠং ভজে ||৫৩||
ভাবার্থ - [ নীলকণ্ঠ, শিব এবং ময়ূর, ভক্ত এ স্থলে
শিবে ময়ূর-রূপ আরােপ করছেন, ময়ূর শিখী, কলাপী এবং কেকী–মেঘের শ্যাম শােভা দর্শনে
ময়ূর নৃত্য করে, -এই সকল নাম ও কার্য্য ভাষাচাতুর্য্যে শিবেও আরােপিত হয়েছে]
যিনি আকাশ দ্বারা শিখী ( বিরাটরূপে আকাশ যার শিখা-মস্তকাগ্র
) অখিল ফণিরাজ দ্বারা কলাপী ( কলাপ কটিহার, ফণিরাজ যার কটিহার ) ভক্তদেরকে অনুগ্রহ
করে যে প্রণব উপদেশ করেন, সেই ধ্বনিদ্বারা যিনি 'কেকী' নামে গীত, ( প্রণব ধ্বনি যার
কেকা রব ) এবং যিনি শৈলসম্ভবা মেঘকান্তি শ্যামাকে দেখে আনন্দে নৃত্য করেন। ( মূল শ্লোকে
পদবিন্যাস আছে শৈলসম্মিলিত শ্যামা মেঘকান্তি দর্শনে আনন্দে নৃত্য
করেন, এইরূপ অর্থও হয় বলে ময়ূরধর্ম আরােপিত হয়েছে। ) বেদান্ত উপবনে সরস বিহারী সেই
নীলকণ্ঠকে আমি ভজনা করি ||৫৩||
সন্ধ্যা ঘর্মদিনাত্যযো হরিকরাঘাতপ্রভূতানক-
ধ্বানো বারিদগর্জিতং দিবিষদাং দৃষ্টিচ্ছটা চঞ্চলা
।
ভক্তানাং পরিতোষবাষ্পবিততির্বৃষ্টির্ময়ূরী শিবা
যস্মিন্নুজ্জ্বলতাণ্ডবং বিজয়তে তং নীলকণ্ঠং ভজে
||৫৪||
ভাবার্থ - সন্ধ্যাই বর্ষাকাল, নারায়ণের করাঘাত
জনিত তুমুল ঢক্কাধ্বনিই মেঘগর্জন; ( দশনার্থ সমাগত ) দেবগণের দৃষ্টিকিরণাবলীই বিদ্যুৎ;
ভক্তগণের আনন্দাশ্রসমূহই বৃষ্টি। ভবানীই ময়ূরী এবং যার উজ্জ্বল তাণ্ডব নৃত্য, সর্বোৎকৃষ্ট
সেই নীলকণ্ঠকে ভজনা করি। ( পূর্বশ্লোকের ন্যায় এই শ্লোকেও নীলকণ্ঠ শব্দের অর্থদ্বয়
শিব ও ময়ূর; সেই অর্থশ্লেষমূলক রূপক এখানে আছে। সন্ধ্যাকালে নারায়ণবাদিত ঢক্কাধ্বনি
যােগে নীলকণ্ঠ মহাদেব তাণ্ডবনৃত্য-পরায়ণ, দর্শক দেবগণ, জগজ্জননী ভবানী তথায় আসীনা;
ভক্তগণ আনন্দাশ্রু বর্ষণ করছেন। পক্ষান্তরে, ময়ূরনৃত্য
বর্ষাকালে হয়, তখন মেঘগর্জন, বিদ্যুৎস্ফুরণ, বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, ময়ূরী নিকটেই থাকে।
এই পক্ষদ্বয় মিলিয়ে রূপকের ভাব হৃদয়ঙ্গম করিবে ) ||৫৪||
আদ্যায়ামিততেজসে শ্রুতিপদৈর্বেদ্যায় সাধ্যায় তে
বিদ্যানন্দময়াত্মনে ত্রিজগতঃ সংরক্ষণোদ্যোগিনে
।
ধ্যেয়ায়াখিলয়োগিভিঃ সুরগণৈর্গেয়ায় মায়াবিনে
সম্যক্ তাণ্ডবসম্ভ্রমায় জটিনে সেয়ং নতিঃ শম্ভবে
||৫৫||
ভাবার্থ - যিনি আদ্য অমিততেজা বেদবাক্যবেদ্য সাধনার
বস্তু; যার স্বরূপ চিদানন্দ, যিনি ত্রিজগৎ সংরক্ষণে সদা উদ্যত ; যিনি অখিল যােগিগণের
ধ্যেয় ও সুরগণের গেয়, যার তাণ্ডবে সকলেই সন্ত্রম-চকিত অথবা যার তাণ্ডবজনিত অঙ্গসঞ্চালন
অতীব উৎকৃষ্ট; সেই মায়াবী জটাধারী শম্ভুর উদ্দেশে আমার এই নমস্কার ||৫৫||
নিত্যায় ত্রিগুণাত্মনে পুরজিতে কাত্যায়নীশ্রেয়সে
সত্যায়াদিকুটুম্বিনে মুনিমনঃ প্রত্যক্ষচিন্মূর্তয়ে
।
মায়াসৃষ্টজগত্ত্রয়ায় সকলাম্নায়ান্তসঞ্চারিণে
সায়ং তাণ্ডবসম্ভ্রমায় জটিনে সেয়ং নতিঃ শম্ভবে
||৫৬||
ভাবার্থ - যিনি নিত্য সত্ত্ব রজঃ ও তমঃ - এই ত্রিগুণ
যােগে মূর্তিগ্রহণ করেন, যিনি ত্রিপুরবিজয়ী ও কাত্যায়নীর প্রিয়তম, যিনি সত্যস্বরূপ
ও যােগিপ্রত্যক্ষ, চিৎস্বরূপ হয়ে যিনি ( বিশ্বসংসারে ) প্রথম গৃহস্থ, যিনি নিজ মায়াবলে
ত্রিভুবন সৃষ্টি করেছেন, সর্ববেদান্তই যার সঞ্চরণ-স্থান, ( অর্থাৎ বেদান্তানুসন্ধান
ব্যতীত যাকে দেখতে পাওয়া যায় না ) সায়ংকালীন তাণ্ডবে আদরযুক্ত সেই জটাধর শম্ভুর
উদ্দেশে আমার এই নমস্কার ||৫৬||
নিত্যং স্বোদরপূরণায় সকলানুদ্দিশ্য বিত্তাশয়ো
ব্যর্থং পর্যটনং করোমি ভবতঃ সেবাং ন জানে বিভো
।
মজ্জন্মান্তরপুণ্যপাকবলতস্ত্বং শর্ব সর্বান্তর-
স্তিষ্ঠস্যেব হি তেন বা পশুপতে তে রক্ষনীয়োঽস্ম্যহম্
||৫৭||
ভাবার্থ - হে প্রভাে, আমি নিজের উদরপূরণের জন্য
সর্বদা সকলের উদ্দেশে অর্থাৎ সকলের দ্বারে ব্যর্থ পর্যটন করি, তােমার সেবা জানি না।
তথাপি হে শর্ব, আমার পূর্ব্বজন্মকৃত পুণ্যফলেই হোক বা তুমি সর্বান্তরূপে অবস্থিত, এই
কারণেই হোক, হে পশুপতে! আমি তােমারই রক্ষণীয় ||৫৭||
একো বারিজবান্ধবঃ ক্ষিতিনভো ব্যাপ্তং তমোমণ্ডলং
ভিত্বা লোচনগোচরোঽপি ভবতি ত্বং কোটিসূর্যপ্রভঃ
।
বেদ্যঃ কিং ন ভবস্যহো ঘনতরং কীদৃগ্ ভবেন্মত্তম-
স্তৎসর্বং ব্যপনীয় মে পশুপতে সাক্ষাৎ প্রসন্নো
ভব ||৫৮||
ভাবার্থ - একটি মাত্র সূর্য্য পৃথিবীব্যাপী তমােমণ্ডল
ভেদ করেও লােকের নয়নগােচর হয়ে থাকেন, আর তুমি কোটিসূর্য্যপ্রভ হলেও আমি তােমাকে দেখতে
পাচ্ছি না, অহাে! আমার তমঃ কিরূপ অধিকতর নিবিড় !!! হে পশুপতে!
( যাই হোক ) সেই সমস্ত তম অপনীত করে প্রসন্নভাবে সাক্ষাৎকৃত হও ||৫৮||
হংসঃ পদ্মবনং সমিচ্ছতি যথা নীলাম্বুদং চাতকঃ
কোকঃ কোকনদপ্রিয়ং প্রতিদিনং চন্দ্রং চকোরস্তথা
।
চেতো বাঞ্ছতি মামকং পশুপতে চিন্মার্গমৃগ্যং বিভো
গৌরীনাথ ভবৎপদাব্জয়ুগলং কৈবল্যসৌখ্যপ্রদম্ ||৫৯||
ভাবার্থ - যেমন হংস পদ্মবনকে, চাতক নীলজলধরকে,
চক্রবাক কমলিনীবল্পভকে, এবং চকোর চন্দ্রকে আকাঙ্ক্ষা করে, হে প্রভাে পশুপতে গৌরীনাথ,
সেইরূপ আমার মন, জ্ঞানমার্গে অন্বেষণীয় মােক্ষসুখপ্রদ ভবদীয় পাদপদ্মযুগল লাভে বাঞ্ছা
করিয়া থাকে ||৫৯||
রোধস্তোয়হৃতঃ শ্রমেণ পথিকশ্ছায়াং তরোর্বৃষ্টিতো
ভীতঃ স্বস্থগৃহং গৃহস্থমতিথির্দীনঃ প্রভুং ধার্মিকম্
।
দীপং সন্তমসাকুলশ্চ শিখিনং শীতাবৃতস্ত্বং তথা
চেতঃ সর্বভয়াপহং ব্রজ সুখং শম্ভোঃ পদাম্ভোরুহম্
||৬০||
ভাবার্থ - জলস্রোতে নীয়মান ব্যক্তি তীরকে, শ্রান্ত
পথিক তরুচ্ছায়াকে, বৃষ্টিত্রস্ত ব্যক্তি সুস্থিত গৃহকে, অতিথি গৃহস্থকে, দীনব্যক্তি
ধার্মিক রাজাকে, ঘাের অন্ধকারে আকুল মানব প্রদীপকে এবং শীতার্ত ব্যক্তি অগ্নিকে সুখজনক
বােধে আশ্রয় করে, হে আমার চিত্ত! সেইরূপ, তুমি শম্ভুর পদকমলকে আশ্রয় কর, সর্বভয়
দূর হবে, সুখলাভ করবে ||৬০||
অঙ্কোলং নিজবীজসন্ততিরয়স্কান্তোপলং সূচিকা
সাধ্বী নৈজবিভুং লতা ক্ষিতিরুহং সিন্ধুঃ সরিদ্বল্লভম্
।
প্রাপ্নোতীহ যথা তথা পশুপতেঃ পাদারবিন্দদ্বয়ং
চেতোবৃত্তিরুপেত্য তিষ্ঠতি সদা সা ভক্তিরিত্যুচ্যতে
||৬১||
ভাবার্থ - যেমন, অঙ্কোল বৃক্ষের অর্থাৎ আঁকোড়
গাছের বীজসমূহ অঙ্কোল বৃক্ষকে, সূচি ( ছুঁচ ) অয়স্কান্ত মণিকে, ( চুম্বককে ) সাধ্বী
নিজ পতিকে, লতা বৃক্ষকে ও নদী সমুদ্রকে প্রাপ্ত হয়, সেইরূপ হে পশুপতে, চিত্তবৃত্তি
তােমার চরণারবিন্দযুগল প্রাপ্ত হয়ে স্থিরভাবে থাকলে তাই ভক্তি নামে কথিত হয় ||৬১||
আনন্দাশ্রুভিরাতনোতি পুলকং নৈর্মল্যতশ্ছাদনং
বাচা শঙ্খমুখে স্থিতৈশ্চ জঠরাপূর্তিং চরিত্রামৃতৈঃ
।
রুদ্রাক্ষৈর্ভসিতেন দেব বপুষো রক্ষাং ভবদ্ভাবনা-
পর্যঙ্কে বিনিবেশ্য ভক্তিজননী ভক্তার্ভকং রক্ষতি
||৬২||
ভাবার্থ - ভক্তিরূপিণী মাতা, আনন্দাশ্রুবর্ষণে
ভক্তবালকের নির্মলতাসম্পাদন করে ( তাকে ) পুলকস্বরূপ আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত করেন, বাক্যরূপ
শঙ্খপাত্রে ( ঝিনুক বা গােন্দলে ) স্থাপিত শিবচরিত্রামূতে উদরপূর্ত্তি সম্পাদন করেন,
রুদ্রাক্ষ ও ভস্ম দ্বারা দৈহিক রক্ষা বিধান করে হে দেব, ভবদীয় ভাবনারূপ পর্য্যঙ্কে
স্থাপন করে ঐ ভক্ত বালককে রক্ষা করে থাকেন ||৬২||
মার্গাবর্তিতপাদুকা পশুপতেরঙ্গস্য কূর্চায়তে
গণ্ডূষাম্বুনিষেচনং পুররিপোর্দিব্যাভিষেকায়তে ।
কিঞ্চিদ্ ভক্ষিতমাংসশেষকবলং নব্যোপহারায়তে
ভক্তিঃ কিং ন করোত্যহো বনচরো ভক্তাবতংসায়তে ||৬৩||
ভাবার্থ - পথে পতিত ছিন্ন পাদুকা শিব দেহে ( পাষাণময়
শিবলিঙ্গে ) কূর্চ্চ ( কুচির ) কার্য্যে ব্যবহৃত হয়, গণ্ডুষ জল ( মুখের কুল-কুচা
) সেচন দিব্য অভিষেকবৎ হয়, এবং ভক্ষিতাবশিষ্ট মাংসকবলও নুতন অব্যবহৃত অযাতযাম উপহার
তুল্য হয়-ভক্তির অসাধ্য কি আছে? বনচর ব্যাধও ভক্তচূড়ামণিবৎ হয়ে থাকেন।
[এক ব্যাধ পূর্ব্বজন্মাজ্জিত কর্মফলে শিবভক্তিযুক্ত
হয়েছিল, কিন্তু জাতিদোষ বশতঃ তার শৌচাশৌচ জ্ঞান ছিল না, তার বিবেচনা মত অনাদি শিবলিঙ্গের
সেবা করত, পথে পতিত পাদুকাদ্বারা শিবলিঙ্গের অঙ্গ মার্জনা করত, পাত্রাভাবে মুখে করে
নদী হতে জল বারংবার এনে সেই জলে শিবলিঙ্গকে স্নান করাত, নিজের ভুক্তাবশিষ্ট মাংস শিবকে
অর্পণ করত। ব্যাধের এইরূপ শিবসেবা একদিন এক ব্রাহ্মণের দৃষ্টিগােচর হলে, তিনি তাকে
তিরস্কার করেন ও প্রহার করেন, ব্যাধের রক্তপাত হয়, তৎপরে ব্রাহ্মণ শিবলিঙ্গে সেইরূপ
প্রহার চিহ্ন ও রক্তপাত দর্শনে ভীত ও বিস্মিত হয়ে শিবসমীপেই অনশনে থাকেন, তখন শিবের
প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হলেন, "ব্যাধ পরমভক্ত, তৎকৃত সকল সেবাই আমার প্রিয়, সেই ব্যাধ পূর্ব্ববৎ মদীয়
সেবায় নিযুক্ত থাকলে আমার প্রহারচিহ্ন ও রক্তপাত দূর হবে।" ব্রাহ্মণ ব্যাধের
প্রতি ভগবান্ শিবের কৃপাদর্শনে বুঝিলেন, সেই ব্যাধ ভক্তচূড়ামণি। ব্রাহ্মণ তার নিকটে
ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, তার জ্ঞান বিশ্বাস মত অবাধে সেবা করতে বললেন, তার সেবা ফলে
শিব প্রসন্ন ও অক্ষত দেহ হইলেন] ||৬৩||
বক্ষস্তাড়নমন্তকস্য কঠিনাপস্মারসংমর্দনং
ভূভৃৎপর্যটনং নমঃ সুরশিরঃকোটীরসঙ্ঘর্ষণম্ ।
কর্মেদং মৃদুলস্য তাবকপদদ্বন্দ্বস্য গৌরীপতে
মচ্চেতো মণিপাদুকাবিহরণং শম্ভো সদাঙ্গীকুরু ||৬৪||
ভাবার্থ - হে শম্তো, যমরাজের দৃঢ় বক্ষস্থলতাড়ন,
কঠিন অপস্মার দানবের সংমর্দ্দন, শ্ৰীশৈল প্রভৃতি পৰ্ব্বতপর্যটন এবং প্রণামপরায়ণ দেবগণের
মুকুটে সংঘর্মণ-এই সব কার্য তােমার কোমল চরণযুগলের কি যােগ্য! (তাই বলি) সৰ্বদা আমার
চিত্তরূপ মণিময় পাদুকা ব্যবহার স্বীকার কর অর্থাৎ তােমার চরণ-যুগল হতে আমার মন যেন
বিযুক্ত না হয় ||৬৪||
বক্ষস্তাড়নশঙ্কয়া বিচলিতো বৈবস্বতো নির্জরাঃ
কোটীরোজ্জ্বলরত্নদীপকলিকা নীরাজনং কুর্বতে ।
দৃষ্ট্বা মুক্তিবধূস্তনোতি নিভৃতাশ্লেষং ভবানীপতে
যচ্চেতস্তব পাদপদ্মভজনং তস্যেহ কিং দুর্লভম্
||৬৫||
ভাবার্থ - হে ভবানীপতে, তােমার পাদপদ্মভজনযুক্ত
যদীয় চিত্ত দর্শন করে যমরাজ বক্ষঃস্থলে তাড়িত হবার আশঙ্কায় বিচলিত হয়েন, দেবগণ
স্ব স্ব মুকুটস্থিত উজ্জ্বল রত্নদীপিকা দ্বারা যার নীরাজনা করেন, এবং মুক্তিস্বরূপিণী
বধূ যাকে নিভৃতে আলিঙ্গন করেন, -এ জগতে তার দুর্লভ কি আছে? [ চিত্ত শিবচরণকমল ভজনা
করছে - এ দেখে যম সেদিকে আসতে অক্ষম, ভয়েই অস্থির, কারণ ঐ চরণের আঘাত বক্ষঃস্থলে পাবার ভয় তার আছে। দেবগণ সেই চরণকমলে প্রণত হলে-চিত্তও
সেই রত্নকিরণে নীরাজিত হয়ে থাকে। মুক্তি তাকে সকল বিষয়সম্পর্ক শূন্য করে অধিষ্ঠিত
হয়] ||৬৫||
ক্রীড়ার্থং সৃজসি প্রপঞ্চমখিলং ক্রীডামৃগাস্তে
জনাঃ
যৎ কর্মাচরিতং ময়া চ ভবতঃ প্রীত্যৈ ভবত্যেব তৎ
।
শম্ভো স্বস্য কুতূহলস্য করণং মচ্চেষ্টিতং নিশ্চিতং
তস্মান্মামকরক্ষণং পশুপতে কর্তব্যমেব ত্বয়া ||৬৬||
ভাবার্থ - হে শম্ভো, তুমি ক্রীড়ার জন্য অখিল জগৎ
সৃষ্টি করেছ, অতএব সমস্ত লােকই তােমার ক্রীড়ামৃগ; ( আমিও তন্মধ্যে অন্যতম ) সুতরাং
আমি যে কার্য্যই করি, তা তােমার প্রীতিকর হবেই। ( ক্রীড়ারত ব্যক্তি তদীয় ক্রীড়নক
বস্তুর প্রত্যেক কার্য্যেই আনন্দিত হয় ) হে শম্ভো, আমার প্রযত্ন তােমার কুতূহলের হেতু
অবশ্যই হবে। সুতরাং আমাকে রক্ষা করা তােমার কর্তব্য ||৬৬||
বহুবিধপরিতোষবাষ্পপূরস্ফুট
পুলকাঙ্কিতচারুভোগভূমিম্
।
চিরপদফলকাঙ্ক্ষিসেব্যমানাং
পরমসদাশিবভাবনাং প্রপদ্যে ||৬৭||
ভাবার্থ - বহু প্রকার আনন্দাশ্রু প্রবাহ দ্বারা
এবং স্ফুটপুলকাদি ( শারীরিক আনন্দ বােধক চিহ্ন ) দ্বারা অঙ্কিত অর্থাৎ চিহ্নিত, মনােরম
ভােগের বিষয় এবং যা চিরপদকেই ( অর্থাৎ শাশ্বত বা নিত্য পদকেই ) ফলরূপে আকাঙ্ক্ষা করেন-এরূপ
পুরুষকর্তৃক সেব্যমান শ্রেষ্ঠ সদাশিবচিন্তাকে আশ্রয় করছি ||৬৭||
অমিতমুদমৃতং মুহুর্দুহন্তীং
বিমলভবৎপদগোষ্ঠমাবসন্তীম্ ।
সদয় পশুপতে সুপুণ্যপাকাং
মম পরিপালয় ভক্তিধেনুমেকাম্ ||৬৮||
ভাবার্থ - বারংবার অপরিমিত আনন্দরূপ দুগ্ধদানকারিণী,
মলরহিত আপনার ( সদাশিবের ) পদরূপ গােষ্ঠে ( গােশালাতে ) অবস্থিতিকারিণী, সুপুণ্যের
পরিণতিরূপা মদীয়া ভক্তিস্বরূপিণী ধেনুকে হে সদয় পশুপতি, ( আপনি ) পালন করুন ||৬৮||
জডতা পশুতা কলঙ্কিতা
কুটিলচরত্বং চ নাস্তি ময়ি দেব ।
অস্তি যদি রাজমৌলে
ভবদাভরণস্য নাস্মি কিং পাত্রম্ ||৬৯||
ভাবার্থ - হে দেব! আমাতে জড়তা, পশুত্ব, কলঙ্কিত্ব,
কুটিলচরত্ব ( কুটিলতা বা কুটিলগমন ) নাই কি? ( অর্থাৎ আমি কি জড় ও পশুভাবাপন্ন, কলঙ্কযুক্ত
ও কুটিল নই? ) হে রাজমৌলে ( হে চন্দ্রচূড় ) তবে আমি কি ঐগুলি ( জড়তাদি ) থাকায় আপনার
আভরণস্থানীয় হতে পারি না? ( অর্থাৎ চন্দ্রমা প্রভৃতি জড়, পশু, কলঙ্কী ও কুটিলগামী
হওয়ায় যদি আপনার আভরণ হতে পারে তবে আমার ও ঐগুলি থাকায় আমিই অনুপযুক্ত কি? ) পরশু,
মৃগ, চন্দ্রমা ও সর্প শিবের আভরণ; ওদের যথাক্রমে জড়তাদি ধর্ম আছে অর্থাৎ আভরণের যেরূপ
তােমার সহিত নিত্যযােগ আছে, ওটা আমার সহিত হওয়ায় বাধা কি? ||৬৯||
অরহসি রহসি স্বতন্ত্রবুদ্ধ্যা
বরিবসিতুং সুলভঃ প্রসন্নমূর্তিঃ ।
অগণিতফলদায়কঃ প্রভুর্মে
জগদধিকো হৃদি রাজশেখরোঽস্তি ||৭০||
ভাবার্থ - প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে স্বতন্ত্র
বুদ্ধিদ্বারা ( বিষয়ভােগপরতন্ত্র নয় , এরূপ বুদ্ধি দ্বারা ) পূজাতে সুলভ ( অর্থাৎ
বিষয়ভােগবিমুখ বুদ্ধি দ্বারা সহজপ্রাপ্য ) প্রসন্নমূর্তি, অগণিত ফলদায়ক (অনন্তফলদাতা)
জগদ্ব্যাপক চন্দ্রশেখর প্রভু আমার হৃদয়ে আছেন ||৭০||
আরূঢভক্তিগুণকুঞ্চিতভাবচাপ-
যুক্তৈঃ শিবস্মরণবাণগণৈরমোঘৈঃ ।
নির্জিত্য কিল্বিষরিপূন্ বিজয়ী সুধীন্দ্রঃ
সানন্দমাবহতি সুস্থিররাজলক্ষ্মীম্ ||৭১||
ভাবার্থ - উদ্গতভক্তিরূপী গুণ ( রজ্জু দ্বারা
) ( আকৃষ্ট হওয়ায় ) কুঞ্চিত ভাবরূপ ধনুতে যােজিত অমােঘ শিবস্মরণরূপ বাণসমূহ দ্বারা
পাপ ও রিপুবর্গকে পরাজিত করে বিজয়ী সদবুদ্ধিশালী ব্যক্তি আনন্দযুক্ত হয়ে অচঞ্চল রাজলক্ষ্মী
(শােভা) প্রাপ্ত হন ||৭১||
ধ্যানাঞ্জনেন সমবেক্ষ্য তমঃপ্রদেশং
ভিত্বা মহাবলিভিরীশ্বরনামমন্ত্রৈঃ ।
দিব্যাশ্রিতং ভুজগভূষণমুদ্বহন্তি
যে পাদপদ্মমিহ তে শিব তে কৃতার্থাঃ ||৭২||
ভাবার্থ - ধ্যানাঞ্জন ( ধ্যানরূপ অঞ্জন ) দ্বারা
তমঃ অজ্ঞানান্ধকারযুক্ত স্থান হৃদয়কে সম্যক্ পর্যবেক্ষণ করে মহাবলশালী শিবনাম ও তৎ
মন্ত্র দ্ধারা ঐ অন্ধকার প্রদেশ ভেদ করিয়া যে ব্যক্তি দিব্যগণের আশ্রয়, সর্পভূমিত,
তােমার পাদপদ্ম ধারণ করে, হে শিব, সেই ব্যক্তি কৃতার্থ ||৭২||
ভূদারতামুদবহদ্ যদপেক্ষয়া শ্রী-
ভূদার এব কিমতঃ সুমতে লভস্ব ।
কেদারমাকলিতমুক্তিমহৌষধীনাং
পাদারবিন্দভজনং পরমেশ্বরস্য ||৭৩||
ভাবার্থ - যার ( শিবভক্তির ) অপেক্ষাতেই ( অভাবেই
) কি শ্রীবরাহ ( রূপধারী বিষ্ণু) বরাহতাগ্রস্ত হয়েছিলেন? হে ( আমার ) সদবুদ্ধি, অত
এব ( সেই বাঞ্ছিত ) মুক্তিরূপ মহৌষধির ক্ষেত্রস্বরূপ পরমেশ্বরের ভক্তিলাভ কর ||৭৩||
আশাপাশক্লেশদুর্বাসনাদি-
ভেদোদ্যুক্তৈর্দিব্যগন্ধৈরমন্দৈঃ ।
আশাশাটীকস্য পাদারবিন্দং
চেতঃপেটীং বাসিতাং মে তনোতু ||৭৪||
ভাবার্থ - আশাপাশজনিত ক্লেশ ও দুষ্ট বাসনাদির নাশে
নিযুক্ত তীব্র দিব্যগন্ধযুক্ত তােমার পাদপদ্ম আশারূপ শাটী (শাড়ী) বিশিষ্ট আমার সুগন্ধি
চিত্তপেটিকাকে বিস্তার করুক ||৭৪||
কল্যাণিনাং সরসচিত্রগতিং সবেগং
সর্বেঙ্গিতজ্ঞমনঘং ধ্রুবলক্ষণাঢ্যম্ ।
চেতস্তুরঙ্গমধিরুহ্য চর স্মরারে
নেতঃ সমস্তজগতাং বৃষভাধিরূঢ় ||৭৫||
ভাবার্থ - হে মদনান্তক, সমস্ত জগতের নেতা, বৃষভবাহন,
তুমি আমার চিত্তরূপ কল্যাণযুক্ত, সরস ও বিচিত্রগতিসম্পন্ন, বেগবান্ , সর্বপ্রকার ইঙ্গিতজ্ঞ,
নির্দোষ, চিত্তরূপ অশ্বে আরােহণ করে ভ্রমণ কর ||৭৫||
ভক্তির্মহেশপদপুষ্করমাবসন্তী
কাদম্বিনী চ কুরুতে পরিতোষবর্ষম্ ।
সম্পূরিতো ভবতি যস্য মনঃস্তটাক-
স্তজ্জন্ম শস্যমখিলং সফলং চ নাঽন্যৎ ||৭৬||
ভাবার্থ - মহেশপাদপদ্মাশ্রিতা ভক্তি মেঘমালার ন্যায়
আনন্দধারা বর্ষণ করে। তদ্দ্বারা যার মনােরূপ তড়াগ পূর্ণ হয়, তা হতে উৎপন্ন নিখিল
শস্যরাজিই সফল, অন্যগুলি নয় ||৭৬||
বুদ্ধিঃ স্থিরা ভবিতুমীশ্বরপাদপদ্ম-
সক্তা বধূর্বিরহিণীব সদা স্মরন্তী ।
সদ্ভাবনাস্মরণদর্শনকীর্তনাদি
সংমোহিতেব শিবমন্ত্রজপেন বিন্তে ||৭৭||
ভাবার্থ - ঈশ্বর ( শিব ) পাদপদ্মাসক্তা বুদ্ধি
সদা স্মরণকারিণী বিরহিণী বধূর ন্যায় সদ্ভাবনা স্মরণদর্শন কীর্তনাদি দ্বারা সংমুগ্ধার
ন্যায় স্থির হবার জন্য শিবমন্ত্র জপ দ্বারা বিচার করে ||৭৭||
সদুপচারবিধিষ্বনুবোধিতাং
সবিনয়াং সহৃদয়ং সদুপাশ্রিতাম্ ।
মম সমুদ্ধর বুদ্ধিমিমাং প্রভো
বরগুণেন নবোঢ়বধূমিব ||৭৮||
ভাবার্থ - হে প্রভাে! সদুপচার বিধিতে অনুবােধিত
বিনীত সুহৃদব্যক্তিতে আশ্রিত, আমার বুদ্ধিকে নববিবাহিত বধূকে বরের ( পতির ) গুণের ন্যায়
উদ্ধার কর ||৭৮||
নিত্যং যোগিমনঃ সরোজদলসঞ্চারক্ষমস্ত্বৎক্রমঃ
শম্ভো তেন কথং কঠোরযমরাড্ বক্ষঃকবাটক্ষতিঃ ।
অত্যন্তং মৃদুলং ত্বদঙ্ঘ্রিয়ুগলং হা মে মনশ্চিন্তয়-
ত্যেতল্লোচনগোচরং কুরু বিভো হস্তেন সংবাহয়ে ||৭৯||
ভাবার্থ - হে শম্ভো, তােমার পদক্ষেপ সদা যােগীদের
হৃদয়পদ্মদলে সংচরণযােগ্য ( সুতরাং অত্যন্ত কোমল ) ওটা দ্বারা যমরাজের কঠোর বক্ষঃকপাটের
ক্ষতি কিরূপে হতে পারে? ( যাই হোক ) হে প্রভাে, আমার মন তােমার অত্যন্ত মৃদুপাদযুগল
চিন্তা করে এটা তুমি নেত্রগােচর কর ( আমি তােমার পদযুগল ) হস্ত দ্বারা সংবাহন করছি
||৭৯||
এষ্যত্যেষ জনিং মনোঽস্য কঠিনং তস্মিন্ নটানীতি
মদ্
রক্ষায়ৈ গিরিসীম্নি কোমলপদন্যাসঃ পুরাভ্যাসিতঃ
।
নো চেৎ দিব্যগৃহান্তরেষু সুমনস্তল্পেষু বেদ্যাদিষু
প্রায়ঃ সৎসু শিলাতলেষু নটনং শম্ভো কিমর্থং তব
||৮০||
ভাবার্থ - এ জন্মলাভ করবে ( উৎপন্ন হবে বা আসবে
) এর মন কঠিন, তাতে আমাকে ( শিবকে ) নৃত্য করতে হবে – এজন্য ( আমার প্রতি কৃপাবশতঃ
) আমাকে রক্ষা করার জন্যই পৰ্ব্বত উপত্যকায় কোমলভাবে পদক্ষেপ অভ্যাস করেছ, অন্যথা
দিব্য গৃহে, পুষ্পাস্তীর্ণ ( অতএব কোমল নৃত্যোপযােগী ) বেদীসকল থাকা সত্বেও কি জন্য
তােমার নৃত্য প্রায় শিলাতলেই ( পৰ্ব্বতখণ্ডের উপর ) হয়ে থাকে। ( অর্থাৎ কবে আমার
হৃদয়ে নৃত্য করবে এজন্য আমার হৃদয়ের ধারণাশক্তির অনুযায়ী তুমি তােমার পদক্ষেপ পর্য্যন্ত
অভ্যাস করে অপেক্ষা করেছ-এটা তােমার অপার করুণার নিদর্শন) ||৮০||
কঞ্চিৎ কালমুমামহেশ ভবতঃ পাদারবিন্দার্চনৈঃ
কঞ্চিৎ ধ্যানসমাধিভিশ্চ নতিভিঃ কঞ্চিৎ কথাকর্ণনৈঃ
।
কঞ্চিৎ কঞ্চিৎ বেক্ষনৈশ্চ নুতিভিঃ কঞ্চিৎ দশামীদৃশীং
যঃ প্রাপ্নোতি মুদা ত্বদর্পিতমনা জীবন্ স মুক্তঃ
খলু ||৮১||
ভাবার্থ - হে উমামহেশ, যে ব্যক্তি আনন্দের সহিত
কিছু কাল আপনার পদারবিন্দার্চন দ্বারা, কিছু কাল ( আপনার ) ধ্যান সমাধি ও নমস্কারাদির
দ্বারা, কিছু কাল আপনার ( সম্বন্ধীয় )কথাদি শ্রবণ দ্বারা, কিছু কাল (আপনার) দর্শন
ও স্তুতি দ্বারা এইরূপ কোনও দশাকে প্রাপ্ত হয়েন-সেই আপনাতে দত্তচিত্ত ব্যক্তি জীবিত
থাকা সত্ত্বেও নিশ্চয়ই মুক্ত ||৮১||
বাণত্বং বৃষভত্বমর্ধবপুষা ভার্যাত্বমার্যাপতে
ঘোণিত্বং সখিতা মৃদঙ্গবহতা চেত্যাদি রূপং দধৌ ।
ত্বৎপাদে নয়নার্পণং চ কৃতবাংস্ত্বদ্দেহভাগো হরিঃ
পূজ্যাৎ পূজ্যতরঃ স এব হিন চেৎ কো বা তদান্যোঽধিকঃ
||৮২||
ভাবার্থ - পার্বতীপতি, তােমার দেহাংশভূত বিষ্ণু
( তােমার ) বাণ, বৃষভ, অর্দ্ধশরীর দ্বারা স্ত্রী, শূকর, সখি, মৃদঙ্গবহ প্রভৃতি রূপ
ধারণ করেছিলেন, এবং তােমার পাদপদ্মে নয়ন অর্পণ করেন ( এজন্য ) তিনিই পূজ্য হতে পূজ্যতর,
অন্যথা তদ্ভিন্ন কে তদপেক্ষা অধিক (পূজ্য) হতে পারে? ||৮২||
জননমৃতিয়ুতানাং সেবয়া দেবতানাং
ন ভবতি সুখলেশঃ সংশয়ো নাস্তি তত্র ।
অজনিমমৃতরূপং সাম্বমীশং ভজন্তে
য ইহ পরমসৌখ্যং তে হি ধন্যা লভন্তে ||৮৩||
ভাবার্থ - জন্মমৃত্যুযুক্ত দেবতাগণের সেবা দ্বারা
সুখের লেশও হয় না - এতে সংশয় নাই। যে ব্যক্তিগণ ইহলােকে উৎপত্তিশূন্য ও অমৃতরূপ
( উৎপত্তি ও মৃত্যুরহিত ) সাম্বশিবকে ভজনা করেন, সেই ধন্য ব্যক্তিগণই পরমসুখ প্রাপ্ত
হয়েন ||৮৩||
শিব তব পরিচর্যাসন্নিধানায় গৌর্যা
ভব মম গুণধুর্যাং বুদ্ধিকন্যাং প্রদাস্যে ।
সকলভুবনবন্ধো সচ্চিদানন্দসিন্ধো
সদয় হৃদয়গেহে সর্বদা সংবস ত্বম্ ||৮৪||
ভাবার্থ - হে শিব! গৌরী কর্তৃক তােমার পরিচর্য্যাকালে
সান্নিধ্যের জন্য ( অর্থাৎ তােমার পরিচর্য্যায় গৌরীকে সাহায্য করার জন্য ) হে ভব,
আমার গুণবতী কন্যা বুদ্ধিকে তােমাকে প্রদান করছি। হে সকলভুবনবন্ধো, সচ্চিদানন্দসাগর,
দয়ালাে, সৰ্বদা তুমি আমার হৃদয় মন্দিরে বাস কর ||৮৪||
জলধিমথনদক্ষো নৈব পাতালভেদী
ন চ বনমৃগয়ায়াং নৈব লুব্ধঃ প্রবীণঃ ।
অশনকুসুমভূষাবস্ত্রমুখ্যাং সপর্যাং
কথয় কথমহং তে কল্পয়ানীন্দুমৌলে ||৮৫||
ভাবার্থ - আমি সমুদ্রমন্থনকুশল নই, পাতালভেদ সামর্থ্যও
রাখি না, বনে মৃগয়া করতে প্রবীণ ব্যাধও নই ( সুতরাং ) হে চন্দ্রশেখর, বল কি ভাবে আমি
তােমার পূজার ভােজ্য, পুষ্প, অলঙ্কার বস্ত্রাদি সংগ্রহ করি। ( কারণ সমুদ্রমন্থনজাত
বিষ তােমার ভােজ্য, পাতালস্থ পুষ্পই তােমার প্রিয়, সর্প তােমার ভূষণ, ও চর্ম
তােমার বস্ত্ৰ ওটা সমুদ্রমন্থনাদি সামর্থ্য না থাকলে সংগ্রহ করা যায় না ||৮৫||
পূজাদ্রব্যসমৃদ্ধয়ো বিরচিতাঃ পূজাং কথং কুর্মহে
পক্ষিত্বং ন চ বা কিটিত্বমপি ন প্রাপ্তং ময়া দুর্লভম্
।
জানে মস্তকমঙ্ঘ্রিপল্লবমুমাজানে ন তেঽহং বিভো
ন জ্ঞাতং হি পিতামহেন হরিণা তত্ত্বেন তদ্রূপিণা
||৮৬||
ভাবার্থ - পূজার দ্রব্যাদি সংগ্রহ করেছি কিন্তু
দুর্লভ পক্ষিত্ব প্রাপ্ত হলাম না বা শূকরত্বও প্রাপ্ত হলাম না। সুতরাং ( তােমার ) পূজা
কিরূপে করব? হে প্রভু, উমাপতি, আমি তােমার মস্তক বা পদপল্লব কিছুরই জ্ঞানবান নই ( কারণ
) পক্ষি বা শূকররূপী ব্রহ্মা বা বিষ্ণুও যথার্থ ভাবে তােমার পরিচয় জ্ঞাত হন নাই (
আমি অতি ক্ষুদ্র, কি ভাবে জানিব? ) ||৮৬||
অশলং গরলং ফণী কলাপো
বসনং চর্ম চ বাহনং মহোক্ষঃ ।
মম দাস্যসি কিং কিমস্তি শম্ভো
তব পাদাম্বুজভক্তিমেব দেহি ||৮৭||
ভাবার্থ - হে শস্তো! তােমার খাদ্য গরল, ভূষণ সর্প,
বস্ত্র চর্ম, বাহন বৃষভ ( ব্যতীত ) কি আছে? আমাকে কি দিবে? ( সুতরাং ) তােমার পাদপদ্মে
ভক্তিই আমাকে দাও। ( অর্থাৎ ভগবদনুগ্রহ ব্যতীত ভগবদ্ভক্তি লাভ হয় না ) ||৮৭||
যদা কৃতাম্ভোনিধিসেতুবন্ধনঃ
করস্থলাধঃকৃতপর্বতাধিপঃ ।
ভবানি তে লঙ্ঘিতপদ্মসম্ভবঃ
তদা শিবার্চাস্তবভাবনক্ষমঃ ||৮৮||
ভাবার্থ - যখন ( আমি ) সেতুবন্ধনকারী, করস্থল দ্বারা
হিমালয়কে হীন প্রতিপাদনকারী ( অর্থাৎ অতি বিশাল পরিমাণ ) ব্রহ্মাকে লঙ্ঘনকারী হতে
পারব, তখন হে শিব, তােমার অর্চনা, স্তব ও চিন্তা করার সামর্থ্যশালী হতে পারব। এস্থলে
তাৎপর্য এই যে "শিবাে ভূত্বা শিবং যজেৎ" শিব না হলে শিবের উপাসনাদি সম্পন্ন
হতে পারে না। সুতরাং আচার্য্য বলেন যে, সেতুবন্ধনকারী রাম, জগৎ স্রষ্টা ব্রহ্মা ও ব্রহ্মাকে
হত্যাকারী শিব ভিন্ন শিবােপাসনা করার সামর্থ্য কারও নাই, সুতরাং যদি
ঈশ্বরেচ্ছায় আমার ব্রহ্মত্ব বিষ্ণুত্ব অথবা শিবত্ব লাভ হয় তবেই শিবােপাসনা সম্ভব
||৮৮||
নতিভির্নুতিভিস্ত্বমীশপূজা-
বিধিভির্ধ্যানসমাধিভির্ন তুষ্টঃ ।
ধনুষা মুসলেন চাশ্মভির্বা
বদ তে প্রীতিকরং তথা করোমি ||৮৯||
ভাবার্থ - হে শিব, তুমি প্রণাম, স্তব, পূজা, ধ্যান,
সমাধি প্রভৃতির দ্বারা তুষ্ট নও ( এজন্য ) বল ধনু, মুসল প্রস্তরাদি দ্বারা তােমার প্রীতিকর
( কার্য্য ) করি ||৮৯||
বচসা চরিতং বদামি শম্ভো-
রহমুদ্যোগবিধাসু তেঽপ্রসক্তঃ ।
মনসা কৃতিমীশ্বরস্য সেবে
শিরসা চৈব সদাশিবং নমামি ||৯০||
ভাবার্থ - তােমার বিষয়ে উদ্যোগ শূন্য ( অর্থাৎ
তােমার প্রাপ্তির জন্য বাহ্য যত্নাদিরহিত ) আমি শম্ভুর চরিত বাক্য দ্বারা বলি ও মনে
ঈশ্বরের রূপ চিন্তা করি। ( অর্থাৎ এ ব্যতীত তােমাকে প্রাপ্ত হওয়ার জন্য অন্য কোনও
উদ্যোগাদি আমার নাই।) ||৯০||
আদ্যাঽবিদ্যা হৃদ্গতা নির্গতাসীৎ
বিদ্যা হৃদ্যা হৃদ্গতা ত্বৎপ্রসাদাৎ ।
সেবে নিত্যং শ্রীকরং ত্বৎপদাব্জং
ভাবে মুক্তের্ভাজনং রাজমৌলে ||৯১||
ভাবার্থ - হে চন্দ্রমৌলি! তােমার প্রসাদে হৃদয়স্থিত
আদি অবিদ্যা নির্গত হইয়াছে ও বাঞ্ছিত বিদ্যা হৃদয়ে উপস্থিত। সিদ্ধিদায়ক ও মুক্তিভাজন
তােমার পদকমল নিত্য সেবা ও চিন্তা করি ||৯১||
দূরীকৃতানি দুরিতানি দুরক্ষরাণি
দৌর্ভাগ্যদুঃখদুরহঙ্কৃতিদুর্বচাংসি ।
সারং ত্বদীয়চরিতং নিতরাং পিবন্তং
গৌরীশ মামিহ সমুদ্ধর সৎকটাক্ষৈঃ ||৯২||
ভাবার্থ - হে গৌরীপতে, ( মৎ কর্তৃক ) দুরিত সকল,
দুর্বাক্য সকল, দৌর্ভাগ্য ( দুর্ভাগ্য ) দুঃখ, দূরহঙ্কারও দূরীকৃত হয়েছে; এক্ষণে অত্যন্ত
সারভূত তােমার চরিতামৃতপায়ী আমাকে সৎকটাক্ষের দ্বারা ( ঈষৎ কটাক্ষপাত দ্বারা ) উদ্ধার
কর ||৯২||
সোমকলাধরমৌলৌ কোমলঘনকন্ধরে মহামহসি ।
স্বামিনি গিরিজানাথে মামকহৃদয়ং নিরন্তরং রমতাম্
||৯৩||
ভাবার্থ - শিরােদেশে চন্দ্রকলাধারী, কোমল ও নিবিড়
গ্রীবাবিশিষ্ট, মহাতেজস্বী গিরিজাপতি, প্রভূতে (শিবে) আমার হৃদয় নিরন্তর রত থাকুক
||৯৩||
সা রসনা তে নয়নে তাবেব করৌ স এব কৃতকৃত্যঃ ।
যা যে যৌ যো ভর্গং বদতীক্ষেতে সদার্চতঃ স্মরতি
||৯৪||
ভাবার্থ - তাই জিহ্বা যা শিব ( নাম ) উচ্চারণ করে,
তাই নয়ন যা শিব ( রূপ ) দর্শন করে, তাই হস্ত যা শিবকে সৰ্ব্বদা অর্চ্চনা করে, সেই
( ব্যক্তিই ) কৃতার্থ যে সর্ব্বদা শিব স্মরণ করে ||৯৪||
আদ্যাঽবিদ্যা হৃদ্গতা নির্গতাসীৎ
বিদ্যা হৃদ্যা হৃদ্গতা ত্বৎপ্রসাদাৎ ।
সেবে নিত্যং শ্রীকরং ত্বৎপদাব্জং
ভাবে মুক্তের্ভাজনং রাজমৌলে ||৯১||
ভাবার্থ - হে চন্দ্রমৌলি! তােমার প্রসাদে হৃদয়স্থিত
আদি অবিদ্যা নির্গত হইয়াছে ও বাঞ্ছিত বিদ্যা হৃদয়ে উপস্থিত। সিদ্ধিদায়ক ও মুক্তিভাজন
তােমার পদকমল নিত্য সেবা ও চিন্তা করি ||৯১||
দূরীকৃতানি দুরিতানি দুরক্ষরাণি
দৌর্ভাগ্যদুঃখদুরহঙ্কৃতিদুর্বচাংসি ।
সারং ত্বদীয়চরিতং নিতরাং পিবন্তং
গৌরীশ মামিহ সমুদ্ধর সৎকটাক্ষৈঃ ||৯২||
ভাবার্থ - হে গৌরীপতে, ( মৎ কর্তৃক ) দুরিত সকল,
দুর্বাক্য সকল, দৌর্ভাগ্য ( দুর্ভাগ্য ) দুঃখ, দূরহঙ্কারও দূরীকৃত হয়েছে; এক্ষণে অত্যন্ত
সারভূত তােমার চরিতামৃতপায়ী আমাকে সৎকটাক্ষের দ্বারা ( ঈষৎ কটাক্ষপাত দ্বারা ) উদ্ধার
কর ||৯২||
সোমকলাধরমৌলৌ কোমলঘনকন্ধরে মহামহসি ।
স্বামিনি গিরিজানাথে মামকহৃদয়ং নিরন্তরং রমতাম্
||৯৩||
ভাবার্থ - শিরােদেশে চন্দ্রকলাধারী, কোমল ও নিবিড়
গ্রীবাবিশিষ্ট, মহাতেজস্বী গিরিজাপতি, প্রভূতে (শিবে) আমার হৃদয় নিরন্তর রত থাকুক
||৯৩||
সা রসনা তে নয়নে তাবেব করৌ স এব কৃতকৃত্যঃ ।
যা যে যৌ যো ভর্গং বদতীক্ষেতে সদার্চতঃ স্মরতি
||৯৪||
ভাবার্থ - তাই জিহ্বা যা শিব ( নাম ) উচ্চারণ করে,
তাই নয়ন যা শিব ( রূপ ) দর্শন করে, তাই হস্ত যা শিবকে সৰ্ব্বদা অর্চ্চনা করে, সেই
( ব্যক্তিই ) কৃতার্থ যে সর্ব্বদা শিব স্মরণ করে ||৯৪||
অতিমৃদুলৌ মম চরণাবতিকঠিনং তে মনো ভবানীশ ।
ইতি বিচিকিৎসাং সন্ত্যজ শিব কথমাসীদ্গিরৌ তথা প্রবেশঃ
||৯৫||
ভাবার্থ - হে ভবানীপতি, তােমার ( উপাসকের ) মন
অতি কঠিন ও আমার ( শিবের ) চরণদ্বয় অতিমৃদু, এই সন্দেহ ত্যাগ কর; হে শিব, ( তা না
হলে তােমার ) পর্ব্বতে সেই রূপ বেশ কিরূপে ছিল? অর্থাৎ পাদস্থাপনের জন্য যদি তােমার
মৃদু ও কোমল স্থান আবশ্যক মনে কর, তবে পর্ব্বতে তুমি কি ভাবে ভ্রমণ করতে? সুতরাং তুমি
পৰ্ব্বতভ্রমণাভ্যস্ত আমার মনে বা হৃদয়ে ( ওটা কঠিন হওয়া সত্ত্বেও ) তােমার কষ্ট না
হওয়াই উচিত ||৯৫||
ধৈর্যাঙ্কুশেন নিভৃতং রভসাদাকৃষ্য ভক্তিশৃঙ্খলয়া
।
পুরহর চরণালানে হৃদয়মদেভং বধান চিদ্যন্ত্রৈঃ
||৯৬||
ভাবার্থ - হে পুরহর ( শিব ) আমার হৃদয়স্বরূপ মদমত্ত
হস্তীকে ধৈর্য্যরূপ অঙ্কুশ দ্বারা বলপূ্ব্বক আকর্ষণ করে একান্ত ভক্তিরূপ শৃঙ্খল দ্বারা
চিৎ ( জ্ঞানরূপ ) যন্ত্রের দ্বারা ( তােমার ) চরণরূপ আলানে ( হস্তিবন্ধনস্থানে ) বন্ধন
কর ||৯৬||
প্রচরত্যভিতঃ প্রগল্ভবৃত্ত্যা মদবানেষ মনঃকরী গরীয়ান্
।
পরিগৃহ্য নয়েন ভক্তিরজ্জ্বা পরম স্থাণুপদং দৃঢং
নয়ামুম্ ||৯৭||
ভাবার্থ - গরীয়ান্ মত্ত এই মনঃস্বরূপ হস্তী প্রগল্ভতার
সহিত চতুর্দিকে ভ্রমণ করছে, একে ভক্তিরজ্জু দ্বারা কৌশলে আবদ্ধ করে সুদৃঢ় (ও) শ্রেষ্ঠ
শিব পদে লয়ে যাও। ( অর্থাৎ আমার বিক্ষিপ্ত মনকে ভক্তি দ্বারা তােমার পদে স্থান দাও
- এ তােমারই সাধ্য ) এ স্থলে আচার্য এই প্রকাশ করছেন যে, ভক্তের নিজ কর্তৃব্য কিছুই
নাই, ভগবান্ নিজেই ভক্তকে অপার করুণা দ্বারা নিজ পদে স্থান দেন। এতে অনেকে মনে করেন
যে, আমিই ( ভক্তই ) ভক্তি দ্বারা ভগবৎপদ লাভ করলাম। ওটা অহঙ্কার প্রযুক্তই হয়। শরণাগতির
এমন চূড়ান্ত উদাহরণ আর কি হয়? এই ভাবে ইতঃপূর্ব্বেও কয়েকটি শ্লোক আছে, বিস্তৃতিভয়ে
অধিক ব্যাখ্যায় নিরস্ত হলাম ||৯৭||
সর্বালঙ্কারয়ুক্তাং সরলপদয়ুতাং সাধুবৃত্তাং সুবর্ণাং
সদ্ভিঃ সংস্তূয়মানাং সরসগুণয়ুতাং লক্ষিতাং লক্ষণাঢ্যাম্।
উদ্যদ্ভূষাবিশেষামুপগতবিনয়াং দ্যোতমানার্থরেখাং
কল্যাণীং দেব গৌরীপ্রিয় মম কবিতাকন্যকাং ত্বং গৃহাণ
||৯৮||
ভাবার্থ - হে দেব, গৌরীপ্রিয়, আমার এই সর্বালঙ্কারযুক্তা
সরল পদবতী, সুন্দরস্বভাবা, সুরূপা, সদ্ব্যক্তির প্রশংসনীয়া, সরসগুণবতী, লক্ষণসম্পন্না,
শােভাযুক্তা ( শোভনা ) উপদেশাদিপ্রাপ্তা, ( করতলে ) অর্থরেখাযুক্তা কল্যাণী কবিতা
কন্যাকে তুমি গ্রহণ কর। [ কবি এ স্থলে শ্লোকটি দ্ব্যর্থবােধক করে রচনা করায় ( পূ্র্ব্বে
কন্যাপক্ষে অর্থ উক্ত হয়েছে; এক্ষণে কবিতা পক্ষে অর্থ প্রদর্শিত হবে। ) আমার এই সমস্ত
( কাব্যের ) অলঙ্কারযুক্ত সরসশব্দ গ্রথিত সুন্দর ছন্দোবিশিষ্ট, সুন্দর শব্দঘটিত, সাধু
ব্যক্তি দ্বারা প্রশংসার্হ, ( কাব্যের ) রসযুক্ত গুণ ( কাব্যের ) যুক্ত, কাব্যলক্ষণযুক্ত,
বিশেষ সৌন্দর্য্যবিশিষ্ট ও সংযত, স্পষ্টার্থযুক্ত, কল্যাণকর, কবিতাস্বরূপ কন্যাকে তুমি
গ্রহণ কর ] ||৯৮||
ইদং তে যুক্তং বা পরমশিব কারুণ্যজলধে
গতৌ তির্যগ্রূপং তব পদশিরোদর্শনধিয়া ।
হরিব্রহ্মাণৌ তৌ দিবি ভুবি চরন্তৌ শ্রময়ুতৌ
কথং শম্ভো স্বামিন্ কথয় মম বেদ্যোঽসি পুরতঃ ||৯৯||
ভাবার্থ - হে করুণাসাগর পরমশিব, তােমার ( অন্ত
আছে মনে করে ) পদ ও শীর্ষদেশ দর্শন ( সম্ভব ) জ্ঞানমাত্রেই অত্যন্ত শ্রমী হরি ও ব্রহ্মা
উভয়ে আকাশ ও পৃথিবীচারী তির্যগযােনিত্ব প্রাপ্ত হলেন ( এমতাবস্থায় ) হে স্বামিন্
শম্ভু, ( তুমি ) কিরূপে আমার সম্মুখে বেদ্য ( জ্ঞেয় ) হও'বল-এ কি তােমার পক্ষে উচিত?
( এ স্থলে আচার্য্য ভক্তির প্রাবল্য প্রদর্শন করার জন্য বলছেন যে, ভক্তিশূন্য ভ্রান্তিমূলক
বিচার অবলম্বনপূর্বক তােমার অন্ত নির্ণয় করার চেষ্টায় হরি ও ব্রহ্মা পশু
ও পক্ষিরূপ প্রাপ্ত হয়ে পৃথিবী ও আকাশে বিচরণ করছেন; এমতাবস্থায় তুমি যে আমার সম্মুখে
আমার দৃশ্য বা জ্ঞেয়রূপে আগত হলে-এতে তােমার পক্ষপাত দোষ হওয়ার সম্ভাবনা হয় ) এর
দ্বারা কৌশলে ভক্তি দ্বারা অন্তহীন শিবকেও যে সহজেই ধারণা করা যায়,
তাই প্রদর্শিত হইল ||৯৯||
স্তোত্রেণালমহং প্রবচ্নি ন মৃষা দেবা বিরিঞ্চাদয়ঃ
স্তুত্যানং গণনাপ্রসঙ্গসময়ে ত্বামগ্রগণ্যং বিদুঃ
।
মাহাত্ম্যাগ্রবিচারণপ্রকরণে ধানাতুষস্তোমবদ্
ভূতাস্ত্বাং বিদুরুত্তমোত্তমফলং শম্ভো ভবৎসেবকাঃ
||১০০||
ভাবার্থ - ইন্দ্রাদি দেবগণ স্তুত্য ( স্তব করার
যােগ্য ) দেবতাগণের গণনা প্রসঙ্গে তােমাকে অগ্রগণ্য বলে জানেন, আপনার সেবক ( সুতরাং
শিবভক্তের পক্ষে তাদের নিকট প্রার্থনীয় কিছুই থাকিতে পারে না ) মাহাত্ম্যাদি বিচার
উপস্থিত হলে ধান্যতুষ সমষ্টির ন্যায় অবস্থিত, সেই ইন্দ্রাদি দেবগণ তােমাকে উত্তম হতে
উত্তম ( পরমােত্তম ) ফল দান সমর্থ বলে জানেন। ধান্যতুষ সমূহ যেমন অন্তঃসারশূন্য সেইরূপ ওরা ফলদান
বিষয়ে সামর্থ্যহীন বুঝতে হবে। হে শম্ভো, এ স্তবমাত্র নয়, আমি এ মিথ্যা বলছি না, অর্থাৎ
এ যথার্থ ||১০০||
|| ইতি শ্রীমৎপরমহংস পরিব্রাজকাচার্য্যস্য শ্রীগোবিন্দ
ভগবৎ পূজ্যপাদ শিষ্যস্য শ্রীমচ্ছঙ্কর ভগবতঃ কৃতৌ শিবানন্দলহরী সম্পূর্ণ ||
ভগবান শ্রীশঙ্করাচার্য বিরচিত শিবানন্দলহরী সম্পূর্ণ।