Tuesday, 17 October 2023

স্বয়ংসিদ্ধ ব্রহ্মের সাথে কোন পদের বাচ্যবাচকভাব সম্ভব না হওয়ায় ব্রহ্মবিষয়ে শ্রুতিকেই কিভাবে প্রমাণ বলা হয়?

 


স্বপ্রকাশ জ্ঞানাত্মক ব্রহ্ম 'বাচামগোচরঃ' হলে ব্রহ্মসূত্রের শাস্ত্রযোনিত্বাধিকরণের সাথে বিরোধ হয়, কেননা তাতে ব্রহ্মবিষয়ে শ্রুতিকেই প্রমাণ বলা হয়েছে। অথচ নির্ধর্মক ব্রহ্মের সাথে কোন পদের বাচ্যবাচকভাব সম্ভব না হওয়ায় শ্রুতি ব্রহ্মকে প্রতিপাদন করতে পারে না। এটার উত্তরে 'খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্' গ্রন্থে আচার্য শ্রীহর্ষ বলেছেন

শ্রুত্যুক্ত নিত্য, সত্য, জ্ঞান, আনন্দ ইত্যাদি পদ শক্তিদ্বারা ব্রহ্মকে প্রতিপাদন না করলেও উপলক্ষণ ন্যায়ের দ্বারা ব্রহ্মে স্বীয়তাৎপর্য প্রকাশ করে। উপলক্ষণ শব্দের অর্থ হল পরিচায়ক, যা ইতরব্যবর্তক অথচ বস্তুর স্বরূপের অন্তর্গত নয়। যেমন 'কাকৈর্গৃহং পশ্য' অর্থাৎ কাকযুক্ত গৃহকে দেখ-এই স্থলে কাক হল গৃহের উপলক্ষণ। কাক গৃহের অঙ্গিভূত পদার্থ নয়, অথচ অন্য গৃহ হতে ভেদবুদ্ধি জন্মাচ্ছে। তেমনি শ্রুতি প্রমাণ, ব্রহ্মস্বরূপের অন্তর্গত নয় এরূপ অন্যপদার্থের দ্বারা ব্রহ্মে স্বীয় তাৎপর্য প্রকাশ করে।

এই কারণেই বস্তুতঃ বাচ্যবাচকভাব না থাকলেও ব্রহ্মে শ্রুতির তাৎপর্য থাকায় আপাততঃ অবিদ্যা অবস্থায় অন্যদর্শনের রীতি অনুসারে শ্রুতিকে ব্রহ্ম বিষয়ে প্রমাণ বলা হয়। বস্তুতঃ চৈতন্যস্বরূপ ব্রহ্ম স্বয়ংসিদ্ধ, প্রমাণসিদ্ধ নয়। ভগবান শঙ্করাচার্য ব্রহ্মসূত্রের অধ্যাস ভাষ্যে বলেছেন"অবিদ্যাবদ্বিষয়াণি এব প্রত্যক্ষাদীনি প্রমাণানি শাস্ত্রাণি চ।" অর্থাৎ প্রত্যক্ষাদি প্রমাণসকল এবং শাস্ত্রসকল অবিদ্যাযুক্ত পুরুষকেই বিষয় করে।......

তথ্যসূত্রঃ-

. ভগবান শঙ্করাচার্যের "শারীরক-মীমাংসা ভাষ্যম্"

. 'কবি-তার্কিক চক্রবর্ত্তি' আচার্য শ্রীহর্ষ বিরচিত "খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্", প্রমাত্বখণ্ডন। মহামহোপাধ্যায় শ্রীমোহন ভট্টাচার্য তর্কবেদান্ততীর্থ অনুদিত।

শ্রীশুভ চৌধুরী

অক্টোবর , ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...