নব্যন্যায়ের অভ্যুত্থান, বৈষ্ণবমতের জাগরণ ও সাংখ্যমতের বিকাশ প্রভৃতির ফলে খৃষ্টীয় পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে অদ্বৈতবাদের সহিত যে বাদযুদ্ধ ঘনীভূত হয়ে আসছিল, সেই যুদ্ধে অদ্বৈতবাদী প্রকাশানন্দ, নৃসিংহাশ্রম, অপ্পয় দীক্ষিত প্রমুখ আচার্যগণ অগ্রসর হয়ে তাঁদের প্রতিভার অমল জ্যোতিতে সর্বপ্রকার অদ্বৈত-বিরোধী সিদ্ধান্তের অন্ধকাররাশি ভেদ করে অদ্বৈতবেদান্তের গৌরব-পতাকা বহন করেন। তন্মধ্যে অগ্রজ আচার্য হলেন প্রকাশানন্দ সরস্বতী। আচার্য জ্ঞানানন্দের শিষ্য ছিলেন তিনি। কাশীধামে অবস্থান করে তিনি "বেদান্ত-সিদ্ধান্তমুক্তাবলী" নামে এক উপাদেয় গ্রন্থ রচনা করে অদ্বৈতবাদের বিশেষ পুষ্টি সাধন করেন। প্রকাশানন্দ বিদ্যারণ্য মুনীশ্বরের পঞ্চদশী হতে উদাহরণ আহরণ করেছেন বলে মনে হয়, এদিকে অপ্পয় দীক্ষিত তদীয় সিদ্ধান্তলেশ-সংগ্রহে বেদান্ত-সিদ্ধান্তমুক্তাবলীর উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। আচার্য অপ্পয় দীক্ষিত ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে আবির্ভূত হন, বিদ্যারণ্য মুনীশ্বর খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতকে প্রকট হন সুতরাং প্রকাশানন্দের স্থিতিকাল খৃষ্টীয় পঞ্চদশ শতক বলে নিশ্চিতরূপে নির্ণয় করা যায়।
প্রকাশানন্দ
সিদ্ধান্তমুক্তাবলীতে মণ্ডনমিশ্রের ব্রহ্মসিদ্ধিতে প্রদর্শিত "দৃষ্টিসৃষ্টিবাদ" বিবিধ যুক্তিতর্কের সাহায্যে স্থাপন করেছেন। গৌড়পাদ্ প্রভৃতি প্রবীণ আচার্যগণ বিশ্ব-সৃষ্টিকে স্বপ্ন-সৃষ্টির সহিত তুলনা করেছেন।
বিশ্বপ্রপঞ্চ স্বপ্ন-সৃষ্টির তুল্য হলে দৃষ্টিসৃষ্টিবাদই সঙ্গত
বলে মনে হয়। প্রকাশানন্দের
বেদান্ত-সিদ্ধান্তমুক্তাবলীর উপর নানাদীক্ষিত সিদ্ধান্ত-দীপিকা নামে টীকা রচনা
করে প্রকাশানন্দের মত জিজ্ঞাসুর নিকট
সুগম করে দিয়েছেন। বেদান্ত-সিদ্ধান্তমুক্তাবলী ব্যতীত প্রকাশানন্দ তারা-ভক্তি-তরঙ্গিণী,
মনোরমাতন্ত্র-রাজ-টীকা, মহালক্ষ্মী-পদ্ধতি, শ্রীবিদ্যা-পদ্ধতি প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করে তন্ত্র-রহস্য প্রকাশ করেন। তিনি একাধারে তান্ত্রিক
সাধক ও অদ্বৈতবেদান্তী ছিলেন।
প্রকাশানন্দ নামে শ্রীচৈতন্যদেবের এক
শিষ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। চৈতন্যদেবের শিষ্য প্রকাশানন্দ বেদান্ত-সিদ্ধান্তমুক্তাবলীর রচয়িতা প্রকাশানন্দ হতে ভিন্নব্যক্তি।.......
তথ্যসূত্রঃ-
"বেদান্তদর্শন—অদ্বৈতবাদ",
প্রথম খণ্ড, শ্রীআশুতোষ শাস্ত্রী, কাব্য-ব্যাকরণ-সাংখ্য-বেদান্ততীর্থ বিদ্যাবাচস্পতি।
শ্রীশুভ
চৌধুরী
ফেব্রুয়ারি
২৮, ২০২৪ খৃষ্টাব্দ।
No comments:
Post a Comment