Friday, 24 January 2020

সাংখ্যদর্শনের ত্রিগুণাত্মক অচেতন প্রধানের সর্বজ্ঞতা অসম্ভবঃ-


শ্রীমন্মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীতম্ বেদান্তদর্শনের ‘ঈক্ষ্ণতের্ন অশব্দম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-১/১/৫) এই সূত্রের ভাষ্যে আচার্য্য শ্রীমৎ শঙ্কর ভগবৎপাদ্ লিখিতেছেন-
সাংখ্যমতালম্বীদের মতে অচেতন প্রধানের সর্ব্বজ্ঞতা সঙ্গত হয় এই প্রকারে-যাহাকে জ্ঞান মনে করিতেছ, তাহা সত্ত্বগুণের ধর্ম্ম, যেহেতু 'সত্ত্বগুণ হইতে জ্ঞান উৎপন্ন হয়'-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৪।১৭), এই প্রকার স্মৃতি আছে। আর সত্ত্বগুণের ধর্ম্ম যে জ্ঞান, তাহার দ্বারাই শরীর ও ইন্দ্রিয়যুক্ত পুরুষগণ সর্ব্বজ্ঞ যোগিরূপে প্রসিদ্ধ হইয়া থাকেন। কেবল নির্লেপ, শরীর ও ইন্দ্রিয়রহিত এবং জ্ঞানমাত্রস্বরূপ যে পুরুষ, তাহার সর্ব্বজ্ঞত্ব অথবা কিঞ্চিৎ-জ্ঞত্ব কল্পনা করা যায় না। কিন্তু অচেতন প্রধান গুণত্রয়াত্মক হওয়ায় সকলপ্রকার জ্ঞানের কারণস্বরূপ যে সত্ত্বগুণ, তাহা প্রধানাবস্থাতেও অর্থাৎ সৃষ্টির প্রাক্ কালে গুণত্রয় যখন সাম্যাবস্থাতে থাকে তখনও বিদ্যমান থাকে, এইহেতু অচেতন হইলেও প্রধানের সর্ব্বজ্ঞতা উপচরিত হয়।.................................
কিন্তু তাহা যুক্তিসঙ্গত হইতেছে না। যেহেতু প্রধানাবস্থাতে গুণসকলের সমতা থাকে বলিয়া সত্ত্বগুণের ধর্ম্ম যে জ্ঞান, তাহা সম্ভব হয় না।
কিন্তু যদি বলা হয়, সর্ব্ববিষয়ক জ্ঞানোৎপত্তির অনুকূল শক্তিযুক্ত হওয়ায় প্রধান সর্ব্বজ্ঞ হইবে-তদুত্তরে বলিব, তাহাও সঙ্গত হইতেছে না। কারণ গুণসকলের সমতা সত্ত্বেও সত্ত্বগুণে আশ্রিত জ্ঞানোৎপত্তির অনুকূল শক্তিকে অবলম্বন করতঃ যদি সাংখ্যের অচেতন প্রধানকে সর্ব্বজ্ঞ বলা হয়, তাহা হইলে রজোগুণ ও তমোগুণে আশ্রিত যে জ্ঞানের প্রতিবন্ধকতা শক্তি, তাহাকে আশ্রয় করতঃ প্রধানকে স্বচ্ছন্দে অল্পজ্ঞও বলা চলিবে। ...
আবার অচেতন জড় পদার্থ প্রকাশক বা জ্ঞাতা হইতে পারে না বলিয়া প্রধানের সর্ব্বজ্ঞতা যুক্তিসঙ্গত নহে। কিন্তু চেতন হন বলিয়া সত্ত্বগুণের উৎকর্ষ বশতঃ যোগিগণের সর্ব্বজ্ঞতা হয় যুক্তিসঙ্গত, সেইহেতু জড় প্রধানের সর্ব্বজ্ঞতা বিষয়ে তাহা উদাহরণরূপে গৃহীত হইতে পারে না।

No comments:

আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্

  খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...