শ্রীমহাভারতের উদ্যোগপর্বের দ্বি-চত্বারিংশোহধ্যায়ের সনৎ-সুজাতীয় সম্বাদে পরমপ্রাচীন সনাতন ঋষি ভগবান সনৎ-সুজাত বলিতেছেন-
ন বৈ মানং চ মৌনং চ সহিতৌ বসতঃ সদা।
অয়ং হি লোকো মানস্য হ্যসৌ মৌনস্য তদ্বিদুঃ।।৪১
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের শাঙ্করভাষ্য অনুসারে ভাবার্থঃ-মান ও মৌন সর্বদা সহাবস্থান করে না অর্থাৎ মান আর মৌন সহচারী নহে। যেহেতু এই প্রত্যক্ষগোচর জগৎ প্রপঞ্চ মানের বিষয় এবং মৌনের বিষয় হইল পরলোক যাহা 'তৎ' বা ব্রহ্মনামে নিশ্চিতরূপে বিদ্বানগণের অনুভব প্রসিদ্ধ। 'তৎ' শব্দবাচ্য ব্রহ্মই মৌনের বিষয়। 'তত্সদিতি নির্দেশো ব্রহ্মণস্ত্রিবিধঃ স্মৃতঃ৷-(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-১৭।২৩) অর্থাৎ 'ॐ তৎ সৎ' এই তিনটি শব্দ ব্রহ্মের নির্দ্দেশ সূচক নাম স্বীকৃত হইয়া থাকে।
মান দ্বারা সংসার প্রাপ্তি ও মৌনদ্বারা ব্রহ্মভাব প্রাপ্তিই এখানে সূচিত হইল। হিরণ্যগর্ভ সংহিতাতেও বলা হইয়াছে-'অন্ন,অঙ্গনাদি ভোগ্যপদার্থে মনের প্রবৃত্তিই মান নামে কথিত হইয়া থাকে, আর মৌন ব্রহ্মানন্দ সুখ প্রাপ্তির হেতুরূপে প্রসিদ্ধ।' বস্তুত মান লোকানুরঞ্জনের সাধন। মৌনধারণ আত্মচিন্তনের সহায়ক বলিয়া উহা পরমার্থ বা ব্রহ্মানন্দ প্রাপ্তির সাধন। এইজন্য মানের বিষয় ইহলোক ও মৌনের বিষয় পরলোক-এইরূপে কথিত হইয়াছে।
No comments:
Post a Comment