অথর্ববেদীয়া মাণ্ডুক্য শ্রুতিতে আত্মার দ্বিতীয় পাদ কথিত হইতেছে—স্বপ্নদর্শন ইহার স্থান, অন্তরে (অবাহ্য বিষয়ে) ইহার জ্ঞান, সুতেজঃপ্রভৃতি পূর্বোক্ত সাতটি ইহার অঙ্গ, এবং পূর্ব্বোক্ত জ্ঞানেন্দ্রিয়াদি একশটি ইহার মুখ, কেবল সংস্কারোপস্থাপিত বিষয়ভোগী এই তৈজস (তেজোময় অন্তঃকরণস্বামী [আত্মার] দ্বিতীয় পাদ।।
Sunday, 20 September 2020
ব্রহ্মের তৈজস-সংজ্ঞক দ্বিতীয় পাদ কথনঃ-
Friday, 18 September 2020
বৈশ্বানরই আত্মার প্রথমপাদঃ-
ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি ব্রহ্ম চতুষ্পাৎ এবং ব্রহ্ম যখন নিষ্কল, নিরংশ, তখন বাস্তবিকপক্ষে তাহারও 'পাদ' ব্যবহার আরোপ মাত্র, সত্য নহে। ব্রহ্ম চতুষ্পাৎ কি প্রকারে?-অথর্ববেদীয়া মাণ্ডুক্য শ্রুতি বলিতেছে-
স্বপ্নকালীন ও জাগ্রৎকালীন জ্ঞানদ্বয়ের বৈধর্ম্য আছেঃ-
জাগ্রৎ এবং স্বপ্নাবস্থার চেতনার মধ্যে পার্থক্য আছে বলিয়া, জাগ্রৎ অবস্থার অভিজ্ঞা স্বপ্নাবস্থার অভিজ্ঞার অনুরূপ নহে। শ্রীমণ্মহর্ষি বাদরায়ণ ভগবৎ প্রণীত বেদান্ত মীমাংসা শাস্ত্রে বর্ণিত আছে-
জাগ্রদবস্থাঃ-
ইতোমধ্যে আলোচনা করিয়াছি জাগ্রদবস্থা যাহার স্থান বা ভোগক্ষেত্র সেই বৈশ্বানরই আত্মার প্রথমপাদ। শুক্ল-যজুর্ব্বেদীয় বৃহদারণ্যক শ্রুতিতে জাগ্রৎ অবস্থাকে 'বুদ্ধান্ত' অবস্থা বলা হইয়াছে-
Wednesday, 16 September 2020
ব্রহ্মের পাদ-চতুষ্টয় নিরূপণঃ-
অথর্ববেদীয় মাণ্ডুক্য উপনিষদে ব্রহ্মের সর্ব্বাত্মকতা, আত্মস্বরূপতা নিরূপণ করার পর ব্রহ্মের পাদ-চতুষ্টয় নিরূপণ করা হইয়াছে-
....সোঽয়মাত্মা চতুষ্পাৎ ।। -(মাণ্ডুক্য উপনিষৎ-২)
ভগবৎপাদ্ শ্রী শঙ্করাচার্য্য প্রণীত 'শাঙ্করভাষ্য' অনুসারে ভাবার্থঃ- পরাপর ব্রহ্মভাবে অবস্থিত ওঙ্কার শব্দার্থ সেই এই আত্মা কার্যাপণের (কাহণের ন্যায়) চতুষ্পাৎ (চারি অংশ বিশিষ্ট)। 'বিশ্ব' প্রভৃতি পাদত্রয়ের মধ্যে পূর্ব্ব পূর্ব্ব পাদের বিলোপ সাধন দ্বারা (অসত্যতা প্রতিপাদন দ্বারা) তুরীয় ব্রহ্মের উপলব্ধি হইয়া থাকে; এইজন্য 'পাদ' শব্দটি করণবাচ্যে নিষ্পন্ন করিতে হয়; কিন্তু 'পাদ' শব্দটি যখন তুরীয়ের বোধক হয় তখন 'যাহা প্রাপ্ত হওয়া যায়' এই অর্থে উহা কর্ম্মবাচ্যে নিষ্পন্ন করিতে হয়।
টীকাঃ- ষোল পণে এক কাহণ কড়ি হয়। তাহার প্রত্যেক চারি পণকে একপাদ বলিয়া ব্যবহার করা হয়; বস্তুত ঐ কাহণ ও পাদ ব্যবহার কড়িতে আরোপিত হয় মাত্র। উহা কড়ির স্বাভাবিক ধর্ম্ম নহে। ব্রহ্ম যখন নিষ্কল, নিরংশ, তখন বাস্তবিকপক্ষে তাহারও পাদ ব্যবহার আরোপ মাত্র, সত্য নহে।
'বিশ্বাদি' পদে বিশ্ব, বৈশ্বানর, তৈজস ও প্রাজ্ঞ এই চারিটী পাদ বুঝিতে হইবে। এখানে আশঙ্খা হইয়াছিল যে, 'পদ্যতে যেন (যাহা দ্বারা পাওয়া যায়), এইরূপ 'করণ' অর্থে যদি 'পাদ' শব্দ নিষ্পন্ন করা হয়, তাহা হইলে 'পাদ' শব্দে ব্রহ্মপ্রাপ্তির সাধন (করণ) বিশ্বাদিকে মাত্র বুঝাইতে পারে; কিন্তু তুরীয় ব্রহ্মকে আর 'পাদ' বলা যাইতে পারে না। কারণ তুরীয় ব্রহ্ম স্বয়ং জ্ঞেয় স্বরূপই বটে, জ্ঞানসাধন নহে। আবার 'পাদ' শব্দটি যদি 'পদ্যতে'যঃ, স পাদঃ (যাহা প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহাই পাদ), এইরূপ কর্ম্মবাচ্যে নিষ্পন্ন করা হয়, তাহা হইলে 'পাদ' শব্দে কেবল তুরীয়কেই বুঝাইতে পারে, বিশ্ব তৈজসাদিকে আর বুঝাইতে পারে না; কারণ বিশ্বাদিরা কেবলই জ্ঞান সাধন, কিন্তু জ্ঞেয় নহে। তাই ভাষ্যকার ভগবান শঙ্কর বলিলেন যে 'পাদ' শব্দটি বিশ্বাদি অর্থে করণসাধন, আর তুরীয় অর্থে কর্ম্ম সাধন।
Tuesday, 15 September 2020
অদ্বৈতই পরমার্থঃ-
অথর্ববেদীয়
মাণ্ডুক্য উপনিষৎ-৭ এর উপর পরমগুরু আচার্য্য গৌড়পাদ্ বিরচিত মাণ্ডুক্যকারিকায় বর্ণিত
আছে-
প্রপঞ্চো
যদি বিদ্যেত নিবর্তেত ন সংশয়ঃ ।
মায়ামাত্রমিদং
দ্বৈতমদ্বৈতং পরমার্থতঃ ॥ ১৭॥
ভগবৎপাদ্
শঙ্করাচার্য্য প্রণীত 'শাঙ্করভাষ্য' অনুবাদঃ- প্রপঞ্চ
নিবৃত্তিতে যদি প্রতিবোধ হয়, তবে প্রপঞ্চ নিবৃত্তি না হইলে অদ্বৈত হয় কি রূপে? উত্তর
বলা হইতেছে- নিশ্চয় এই আপত্তি হইতে পারিত, প্রপঞ্চ যদি বিদ্যমান থাকিত অর্থাৎ সত্য
হইত; বাস্তবিক পক্ষে ইহা নাই-রজ্জুতে কল্পিত সর্পের ন্যায় ইহা অসৎ। আর যদি বিদ্যমানই
থাকিত, তাহা হইলে নিশ্চয় নিবৃত্ত হইত, ইহাতেও সংশয় নাই।
দেখ
ভ্রমবশতঃ রজ্জুতে যে সর্প কল্পিত হয়, সেই সর্প কখনই সেখানে সত্তা লাভ করিয়া বিবেকজ্ঞানের
সাহায্যে নিবৃত্ত হয় না,; এবং মায়াবী ঐন্দ্রজালিক কর্তৃক প্রযুক্ত মায়া (ভেল্কী) প্রথমে
সত্তা লাভ করিয়া যে, দর্শকবৃন্দের চক্ষুদোষ অপনীত হইলে নিবৃত্ত (অদৃশ্য) হইয়া যায় তাহা
নহে।
এই প্রপঞ্চ নামক দ্বৈতও ঠিক তদ্রূপ কেবল মায়ামাত্র (অসৎ), আর উক্ত রজ্জু ও মায়াবীর ন্যায় অদ্বৈতই পরমার্থ সৎ। অভিপ্রায় এই যে প্রপঞ্চ বলিয়া কোন পদার্থ প্রবৃত্ত বা নিবৃত্ত নাই।....
স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী তাঁহার 'জ্ঞানীগুরু' শীর্ষক গ্রন্থে বলিয়াছেন-
"নানাবিধ শ্রুতিপ্রমাণে জানা যায়, অদ্বৈতই পরমার্থ এবং দ্বৈত সেই অদ্বৈতের কার্য। যখন সমাধি উপস্থিত হয় তখন দ্বৈতবুদ্ধি থাকে না। যাঁহারা দ্বৈতবাদী, তাঁহারা ভ্রান্ত; কারণ শ্রুতিতে উক্ত আছে যে 'একমেবাদ্বিতীয়ম্'-সেই পরমাত্মা এক ও অদ্বিতীয়, সুতরাং অদ্বৈত বৈদিক মত সর্বথা অবিরুদ্ধ।"
আচার্য শ্রীহর্ষ ও খণ্ডনখণ্ডখাদ্যম্
খৃষ্টীয় দশম ও একাদশ শতকে অদ্বৈতবেদান্তের ক্ষেত্র অনুর্বর হলেও অপরাপর দর্শনের ক্ষেত্র যে বিবিধ চিন্তা - শস্যসম্ভারে সমৃদ্ধ ...

-
"মোহমুদগর" ও ইহার ভাবার্থঃ- আচার্য্য শঙ্কর ভগবৎপাদের 'মোহমুদগর' রচনাটি একটি মোহনাশক জ্ঞানবৈরাগ্যমূলক রচনা। ...
-
" শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ " ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্ একটি কৃষ্ণভক্তিমূলক স্তোত্র। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু...
-
কলিযুগে ভারতবর্ষে বৈদিক ধর্মের পূনর্জাগরণের অগ্রপুরুষ জগৎগুরু ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য। কলিযুগের প্রারম্ভে বেদান্তবেদ্য, সচ্চিৎ-সুখস্...
-
ভগবৎপাদ্ আদি শঙ্করাচার্য্য বিরচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ও ইহার বঙ্গানুবাদঃ- ॥ শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম্ ॥ দেবি সুরেশ্বরি ভগবতি গঙ্গে ত...
-
ভগবৎপাদ্ শঙ্করাচার্য্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় স্তোত্রগুলির একটি হইল শিবপঞ্চাক্ষরস্তোত্র। ' নমঃ শিবায় ' এই পঞ্চাক্ষর মহ...
-
"বেদসারশিবস্তোত্রম্" ও ইহার ভাবার্থঃ- শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের এই প্রখ্যাত স্তোত্রম্ ভক্তদের নিত্যপাঠ্য। আচার্য্য এই...
-
শাঙ্করভাষ্যম্ উপক্ৰমণিকা ‘ মঙ্গলাচরণম্ ’ ॐ নারায়ণঃ পরোঽব্যক্তাত্ অণ্ডমব্যক্তসম্ভবম্ । অণ্ডস্যান্তস্ত্বিমে লোকাঃ সপ্তদ্বীপা চ ...
-
“ সাংখ্যযোগ ” সঞ্জয় উবাচ। তন্তথা কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্। বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ || ১ || সঞ্জয় বলিলেন -...
-
পারমার্থিক দৃষ্টিতে জগৎ মিথ্যা হওয়ায় সেই কল্পিত জগতের কর্তৃত্ব ব্রহ্মে পরমার্থতঃ না থাকিলেও , ব্যবহারিক দৃষ্টিতে জগতের জন...
-
শঙ্কর ভগবৎপাদাচার্য্যের ভবান্যষ্টকম্ একটি সংসার মোহনাশক শাক্ত সাধনামূলক রচনা। আচার্য্য বলছেন-কেহ পিতা নয়, কেহ মাতা নয়, কেহ বন্ধু নয়, ...